জল থামাতে জলের আয়োজন!


                              পাঞ্জাবী ট্রডিশনাল ড্রিংকস! সবাই জলের মত খায়!

প্রতিদিনকার খাবার, তবে একটু আয়েশি।  খাবারের সাথে ঘি, ভাজা জিরা, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজের টুকরো সামনে আনলে জিভে জল না আসে পারে। সে জল থামানোর জন্য আবার জলের আয়োজন।   ছাতু আর লাচ্ছি। হেলদি লাচ্ছি, অল্প মিষ্টিতে ঘুঁটে দেয়া হবে আপনার সামনে। কাঁচামরিচের চায়ের মত কাঁচা মরিচ ডোবানো ছাতু। এ সব পাঞ্জাবী খাবারে আলাপ। 

ভারতের পাঞ্জাব নগরের রমণীদের সুনাম আছে। শেষ বিকালে অস্তমায়ন সূর্যের রঙ নাকি ছুঁয়ে থাকে কিশোরী-তরুণীর মুখ। সে  নগরের খাবারের সুনাম ছড়িয়েছে ইনডিয়ায়। বিশেষত সাউথ ইনডিয়াজুড়েই তো এর সুনাম। বঙ্গেও এর সুনাম আছে। পর্যটক হিসাবে আমরা যারা সিমলায়-মানালী ঢুকি, তাদের একবার  পাঞ্জাব থামতে হয়। ডাল মাখানিতে নান ডুবিয়ে খেতে খেতে অনেকেরই মনে হয়েছে- আহা! অমৃত! 

সে খবার এবার রাজধানি ঢাকায়ও আসলো।  তবে সায়েবি কায়দায়। লা মেরিডিয়ানে  গেছিলাম, সোমবার।  লিফটের ১৬ নম্বর বোতাম টিপলে চোখের সামনে একটা পাঞ্জাবী যুগল-ট্রাকের উপর! সেটা থেকে একটু সামনে এগোলে সাদা কুর্তা আর লাল ট্রাউজার পরা, মাথায় পাগড়ি দেয়া  তরুণ, এগিয়ে ধরে কাঁচা মরিচ চুবানো মাঠা জাতীয় পানীয়ের গ্লাস।



পানীয় পরিবেশন প্রস্তুতি!

হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ছিলো সাজানো সব পাঞ্জাবী খাবার। তবে এত খাবার পাঞ্জাবে একসাথে দেখিনি। রেস্টুরেন্টে আমার মত কাল্লুর কাছে খাবারের অর্ডার নিতে ২০০২ সালে বিকালে যে তরুণি এসেছিল, চোখ কচলে তাকে দেখেছি আগে! তারপর খাবারের অর্ডার করে একগ্লাস পানি খেলাম! 
সেই খাবার অনেকদিন পর আবার খেলাম পাঁচতারকা হোটেলের রেস্টুরেন্টে! 
খাবারের টেবিলটা সাজানো- একটা বাটিতে চামচ তিন ঘি, তিন পিস পোড়ানো মুরগি, একবাটি ভেড়ার খুরার সুপ! এক বাটি ডাল মাখানি। দু চামচের মত পোড়ানো জিরা গুঁড়া, পেঁয়াজ, লেবু আর কাঁচামরিচ জমা করা একটা বাটি। আনা হলো- তিন পদের রুটি। 

                                        খাবার সাজানো হলো টেবিলে!

জিভের জল সামলানো কঠিন। 
সে কঠিনকে আরো কঠিন করে দিলে ফুডলাউঞ্জে গুর্দে কাপুরি নাল কিমা কলিজা। সে রকম খাবার। গরুর কলিজার সাথে গুর্দার কিমা মিক্সড করে রান্না করা খাবারের সাথে নান- আহ! কত দিনপর গালে পুরলাম। 
                                         নাল কিমা কলিজা, জল আটকাতে পারছি না!
খাবারের ফাঁকে ইনডিয়ান শেফ শমসের সাথে কথা। বললেন, মুরগি, ভেড়ার খুরার সুপ, রুটি আর ঘি মাখিয়ে খেযে নেওয়ায় তাদের রেওয়াজ। 
ভেড়ার খুরার সুপটাকে তার অর্গানিক বলে। কারণ এর সাথে দেয়া সব কিছুই লোকাল। 
একটা রেসিপিও জেনে নেয়া গেলো তার কাছ থেকে--KHARODEY DA RAS (এটার উচ্চারণ কি হবে? খারুদি দা রাস!) সে নাম যাই হোক খাবারটা সিরাম! 

ল্যাম্ব ট্রটার্স নিয়ে সিদ্ধ করে পানির সাথে আদা, রসুন, ধইন্নার গোটা, কুচি করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে রান্না শুরু করে দিলেই হলো। 
এটার নিয়ম নাকি এ রকম---একটি পাতিলে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি লাল হওয়া পর্যন্ত আগুনে পোড়াতে হবে। ভেড়ার পা এবং আদা রসুন বাটা দই ঝাঁটা এবং পেঁয়াজ পেস্ট ভেড়ার গোশতের সাথে যোগ করতে হবে। লিগানের সাথে শুকনো মসলা মিশিয়ে রান্না চলাকালেই ভেড়ার গোশত ঢেকে দিতে হবে। রান্না হয়ে গেলে সস মিশিয়ে আদার কুচি দিয়ে পরিবেশন। 
                                      ঢোকার আগেই!!

উত্তরবঙ্গে গিয়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানান না!

পারলে উত্তর বঙ্গে গিয়ে  তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানান না! ফারাক্কা বাঁধ আর গজল ডোবায় তিস্তার পানি আটকে রেখে তো পুরা উত্তরবঙ্গ মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছেন। তো সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে না; তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। হতে পারে না। কারণ হলো নদীর সব পানি আটকে নদী মেরে দিয়েছেন মনমহন, শন মহন আর মোডি কাকুরা। তা কাঁচামাল নেবেন কেমনে। রাস্তারও তেরটা বেজে আছে।

তো রামপাল।

ফারাক্কার প্রভাবে এমনিতেই সুন্দরবনের শিরা উপশিরার নদী গুলোর পানি নোনতা হয়ে আছে। বাড়তে আছে নোনতার আধিপত্য। তার ওপর এখানে ট্রলার চলবে, কাঁচামাল আসবে, ছাই উড়বে আর সুন্দরবন ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে ক্যান্সারে। মরে যাবে চোখের সামনে। কিছু নরাধম সে জমি দখল করে ঘের বানাবে। 

পরিবেশবাদিদের প্রতিবাদের মুখে সরকারের অধিদপ্তর ---ইনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদন দিয়েছে। সে অনুযায়ী ১৩২০ মেগাওয়াটের এ প্রকল্পের জন্য বছরে ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হবে।

যেখানে ১ টন কয়লা পুড়লে ২ দশমিক ৮৬ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। সেই হিসাবে এই প্রকল্প ৮০ শতাংশ লোড ফ্যাক্টরে উৎপাদন করলেও বছরে ১ কোটি ৮ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হবে। যদিও সরকারের প্রতিবেদনে সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করায় উদ্যোক্তাদের হিসাব মতেই, ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে বাকি কার্বন ফ্লাই অ্যাশে যোগ হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।

উদ্যোক্তাদের হিসাব সঠিক বলে ধরে নেয়া হলেও প্রশ্ন থা্কছে--- ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কী কম ক্ষতিকর! যত উঁচু চিমনিই ব্যবহার করা হোক না কেন বাতাসের চেয়ে ভারী এই গ্যাস তো এই দেশেই ফিরে আসবে, ফিরে আসবে সুন্দরবনের বুকে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড (বছরে ৫১ হাজার ৮৩০ টন) ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (বছরে ৩১ হাজার ২৫ টন) নির্গত হবে। বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস সুন্দরবনের বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বর্তমান ঘনত্বের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গোটা সুন্দরবন ধ্বংস করবে--- তারপরেও সন্দেহ জাগে!

রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের প্রতি একজন দলিত জনতার আর্জি



রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের প্রতি একজন দলিত জনতার আর্জি

 জনাব

সাধারণ ডায়েরি যে থানায় কোনো গুরুত্ব পায় না, এটা নিশ্চিতভাবেই আপনারা এখন উপলব্ধি করছেন।  নইলে এত দিন ধরে নিখোঁজ তরুণরা 'জঙ্গি' হিসাবে আত্ম-প্রকাশ করছে। অথচ পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই। গোয়েন্দারা কানামাছি খেলছেন। এটা কীভাবে বিশ্বাস করি। বিডিআর বিদ্রোহের মত এক স্পর্শকাতর ঘটনার পরও গোয়েন্দাদের সামর্থ বাড়েনি ।  এটা  বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার ছিল। তা করা হয়নি। সময় এখনো শেষ হয়নি, এখনো করা যেতে পারে।

নিখোঁজ বাংলাদেশে এক নৈমেত্তিক  ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ও বিরোধীদল দু'পক্ষ একে অন্যকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। কিন্তু একটি গুম, একটি নিখোঁজ, একটি খুন, একটি অপমৃত্যু-একটি পরিবারের জন্য কী দুঃসহ সময় নিয়ে আসে! মানবিক হৃদয় দিয়ে তা অনুভব করুন। মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবুন। মানুষকে হয়রানির করার কোনো অধিকার কারো আছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবেই মনে করি না।

জনাব

এ দেশে হয়রানি একটি  উদ্ভাবনী বাণিজ্য। কোনো কিছু আরোপ করে এখানে মানুষ খুন করা একটা সাধারণ ঘটনা। এখানে সোশ্যাল মিডিয়ার পারদ উঁচুতে। গল্পবাজারে ছেড়েই আপনি মজা দেখতে পারবেন। বিচিমুক্ত লোকে  দেশ ভরে গেছে।  প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। তাই অপাত্রে বীর্যস্খলন ঘটাচ্ছে বহুন তরুণ-তরুণী। তাদের কাছে জ্ঞানের ভাণ্ডার নেই। ইতিহাসের নির্মোহ শিক্ষা নেই। দলীয় সংকর্ণীতা, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিকার আর  মুহুর্তে চোখ উল্টানো স্বভাবের নাম ওরা দিয়েছে  'কর্পোরেট'।  এখান থেকে বের হওয়ার উপায় আছে। তবে সে জন্য আগে আমাদেরই ঠিক হতে হবে, আমরা কি হতে চাই। আমরা কি একটি মানবিক রাষ্ট্র হতে চাই। নাকি একটি অমানবিক।

 জনাব

ধর্ম নিয়ে শঙ্কায় থাকি। বক্তিগতভাবে আমি একজন পাপি মানুষ। কিন্তু  প্রতিপালকের ওপর অবিচল আস্থা আমার আছে।  তবে ধর্মকর্ম নিয়ে বিস্তর পড়াশোনার ইচ্ছা অনেকের।  ভয়ে পড়তে পারেন  না। কারণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী ক'দিন পর পর 'জিহাদি' বই উদ্ধার করে মানুষকে হয়রানি করে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, 'জিহাদি' বইয়ের সংজ্ঞা, নামধাম, তালিকা কোনোটাই আপনারা করেন নি। তাহলে 'জিহাদি' বই মানে কি দাঁড়ায়। জঙ্গি বানানোর উপকরণ। দয়া করে জিহাদি বইকে সংজ্ঞায়িত করুণ।  একই সাথে তালিকা প্রকাশ করে ওই সব বই বাজেয়াপ্ত করুন এবং  এর জন্য দণ্ড ঠিক করুন।তাহলে নিরীহ মানুষ  দুুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকরার সুযোগ পাবে।  

 জনাব

 আমি জানি, আপনাদের আবেগ আছে। প্রেম প্রীতি-ভালোবাসা আছে।  আমরা তার আবেগ অনুভূতি ও ভালোবাসার প্রকাশটা দেখতে চাই। আশা করছি আপনাদের প্রীতি সব ধরণের শঙ্কা উড়িয়ে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করবে। 

সন্তান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা মা বাবাকে জ্ঞান দেয়ার আগে- আরেকবার ভাবুন


আইএস ইসুতে ব্যাপক হারে মা বাবাকে জ্ঞান দিচ্ছেন অনেকে। বলি জনাব, জনাবা- নিজের চরকায় তেল দেন ।
মা বাবার ব্যস্ততা বা সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণ একটাই, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা। ভোগ প্রতিযোগিতাই এখানে মুখ্য । তো ভোগ করতে হলে তো ব্যস্ত থাকতেই হবে । 

স্কুল ফিসের উপর ভ্যাট বসাবেন , দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণহীন থাকবে, কৃষক তার ফসলের সঠিক মুল্য পাবেন না, সিনেমা হল তুলে দেবেন, মসজিদে-মন্দিরে-গির্জায় গেলে তাচ্ছিল্য করবেন, খেলার মাঠ দখল করে রাজনীতি করবেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ক্যাডার নিয়োগ দিবেন, বাস-রেলের ভাড়া বাড়বেন, বিদেশি নায়িকা এনে নাচাবেন, গ্যাস, পানি, কারেন্টের দাম বাড়াবেন ---

আর মা বাবাদের তুলে কথা বলবেন, তা ত চলতে পারে না ।

সুখ অসুখের গল্প ৮ : কিছু সতর্কতা আপনার চিকিৎসাকে সহজ করবে।



সুখ অসুখের গল্প ৮ : কিছু সতর্কতা আপনার চিকিৎসাকে সহজ করবে।

ইনডিয়া মানে সব ভালো ডাক্তার তা কিন্তু নয়। আপনাকে সেখানে যাওয়ার আগে সতর্কতার সাথে ডাক্তার এবং হসপিটাল সিলেক্ট করতে হবে। কলকাতা অনেকটা দালার ঠাঁসা। আর হেলথ টুরিজমের নামে আপনাকে অনেক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এবং এ সব ক্ষেত্রে শুরুতেই বলবে, স্যার আমরা আপনাকে ফ্রি কন্সালটেশন দিচ্ছি। পরে বলবে, স্যার আপনাকে সেবা দেওয়ার জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। তাও বলবে ঘটনার শেষে!

সুতরাং আপনি যদি কোন ইনডিয়ান এজেন্টের সাথে জানতে  কথা বলে থাকেন, তাহলে আগেই সার্ভিস ফি'র বিষয়টি জেনে নিন। তারপর  আলাপ করুণ। আমি নিজে ইনটেক্সরে সাথে কথা বলেছিলাম। তারা প্রথমে জানালো আমাকে কোন টাকা গুনতে হবে না। পরে ্তাদের আরেকজন আলাপকালে বললো, স্যার সার্ভিস শেষে আপনাকে ১শ ডলার পে করতে হবে! তারপর আমি আর ও মুখো হইনি!

 তবে আপনি একটু চোখকান খোলা রাখলে নিজেই নিজের কাজটি করে ফেলতে পারেন।  এখন অনলাইনের যুগ, আপনি চাইলে সব কিছুই দেশে বসেই সেরে নিতে পারেন।

 আপনি যদি শখে শখে ডাক্তার দেখাতে না চান, তাহলে আপনার বাংলাদেশের ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র থাকার কথা। এবং  টেস্টের রিপোর্টও। আপনি টেস্টের রিপোর্ট পাঠাতে পারেন, হসপিটালে। কর্পোরেট হসপিটাল, মানে টাকা পয়সা কামাই করার হসপিটালে বিদেশিদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্টই আছে। এর নাম ইন্টারন্যশনাল পেশেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, বা কারো  লাউঞ্জ কারো সার্ভিস এ সব নামে থাকে। আপনি যে হসপিটালে যাচ্ছেন, তার ওয়েবসাইটে গেলেই এর লিঙ্ক পাবেন। লাইভ চ্যাট অপশনও আছে।  সেখানে মেইল করুণ। তবে এটা ইংরেজিতেই করতে হবে।

 নিজে ইংরেজি না জানলে, পরিচিত কারো সহায়তা নিতে পারেন।  মেইল করলে আপনি সবচে দ্রুত রেসপন্স পাবেন এ্পলো, রিলায়েন্স, আম্বানি , লীলাবতি হসপিটালের। তবে পাবলিক বা দাতব্য হসপিটালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়ক সিএমসি ভেলর। এখানকার খরচও কম। হসপিটালটি আপনার মেইলের ভিত্তিতে খরচ এর  হিসাবসহ জানিয়ে দিবে।  আপনি আপনার  মেডিকেল রিপোর্ট পাঠিয়ে দিলে তারা রিভিউ করে  ট্রিটমেন্টপ্ল্যান মেইল করে দিবে।

 এ জন্য অবশ্যই আপনাদের নির্দিষ্ট ডাক্তার বা ডিপার্টমেন্টে মেইল পাঠাতে হবে। যেমন নিউরো লজির জন্য  নিউরো ওয়ান  বা নিউরো টুতে আপনি  আপনার সমস্যা অনুযায়ী ডকুমেন্ট পাঠালে তারা আপনাকে ডিটেইল জানাবে।  সেখানে চিকিৎসার জন্য  কেমন সময় লাগবে তাও জানিয়ে দেবে।

দিল্লি এইমস হসপিটাল ইনডিয়ার নম্বর ওয়ান হসপিটাল। সেখানেও এখন বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাইভেটের মত ঝটপট চাওয়া মাত্র সেবা পাওয়া যাবে না। কিছুটা সময় নিতে হবে। সেখানে চাইলে  আপনি কেবিনও নিতে পারবেন।  ইনডিয়ার দ্বিতীয় বেস্ট হসপিটাল চণ্ডিগড় পোস্ট গ্রাজুয়েট হসপিটাল। সেখানে আপনাকে সরাসরি গিয়ে তারপর ডাক্তারের সিরিয়াল দিতে হবে। তবে দিল্লি এইমসে আপনি ইনডিয়া পৌছেই সিরিয়াল দিতে পারবেন। সে জন্য আপনার একটিভ ইনডিয়ান মোবাইল সংযোগ লাগবে।

সিএমসি ভেলোরে ডাক্তার দেখানোর জন্য প্রাইভেট ও  নরমাল দু রকম সিস্টেমই আছে। প্রাইভেটে দেখাতে ৬০০ রুপি লাগে। পাবলিকে ২০০ রুপি।  আরো কমেও আউটডোরে দেখানো সম্ভব।

আর এপোলো টাইপের হসপিটালে দেখাতে ডাক্তার ভেদে ১০০০ থেকে ১২০০ রুপি খচর করতে হবে। তবে মনে রাখবেন এপোলো টাইপের হসপিটালে  টেস্টের খরচ বেশি। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার কি কি টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে তা একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আইসিডিডিআরবি'র  মহাখালী থেকে টেস্টগুলো করিয়ে নিতে পারেন। রাখবেন, তারা বঙ্গীয় ব্রাক্ষণ ডাক্তার নন যে, যেখানে তার কমিশন আছে সেখান থেকে টেস্ট করা হবে। আপনার টেস্ট থাকলেই হলো! তবে কিছু টেস্ট আপনাকে হয়ত নতুন করে করাতে হতে পারে।

জেনে রাখুন, বড় হসপিটালগুলো অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানো হার খুবই কম! এটা তারা খুব ভালো মানুষ বলে নয়, এটা ইনডিয়ার আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে।  কারণ ইনডিয়ানরা খরচের ব্যাপারে খুবই  সতর্ক। তাই মন চাইলো আর টেস্ট দিলো, সেটা করে ডাক্তারের চেম্বারে হুমড়ি খেয়ে পড়বে এমনটা নয়।

 মাস তিনেক ধরে ইনডিয়ার হসপিটাল গুলোর খবর নিছিলাম। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আপনি যদি কেবল চেক আপ এবং ডাক্তার দেখাতে চান , সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য দিল্লি এপোলো বেস্ট অপশন। কম টাকায় প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য সিএমসি।  এর বাইরে মুম্বাইয়ের আম্বানি হসপিটাল ভালো।  ব্যাঙ্গালোরের  দেবীশেঠির হসপিটালরের কথা সবাই জানেন । কিন্তু মিস্টার শেঠিকে আপনি কলকাকতায়ও দেখাতে পারেন। কারণে তার হসপিটালের যাত্রা কিন্তু কলকাতায়। এবং রবীন্দ্র নাথের নামে একটা ট্রাস্ট এটি পরিচালনা করে থাকে বলে শুনেছি।

 কোন রকমের দ্বিধা- না করে যে কোন বিষয়ে ডাক্তারের সাথেই কথা বলুন। কোন রকমের সমস্যা হবে না। এটা বঙ্গীয় ডাক্তার নয় যে, বিরক্ত হবেন। তার সিরিয়াল দেয়া লোকটা দেখিয়ে বলরেন, ওর সাথে আলাপ করুন।ডোক্তাররা মেইলের পাশপাশি হোয়াটসঅ্যাপে খুব স্বচ্ছন্দবোধ করেন!

 ইনডিয়ার হসপিটালে গেলে আপনার এক বাংলাভাষি গাইড দরকার হতে পারে। কর্পোরেট হসপিটালে আপনি বিনাপয়সায় এ সেবা পাবেন। পাবলিক হসপিটালের জন্য কিছু টাকা দিলে আপনি এ রকম কাউকে পেয়ে যেতে পারে।  সেটা টাকা  ২০০ থেকে ৩০০ রুপির বেশি নয়।

আমি বলছি না তারা তাদের দেশের রোগীদের সাথে তারা এ রকম অনন্য ব্যবহার করেন। তবে বাইরের রোগীদের তারা বিশেষ যত্ন নিয়ে দেখেন। কারণ তারা চান দেশটাকে রেমিটেন্স আসুক এবং তাদের সুনাম ছড়িয়ে যাক। তাদের সুনামের কারণে কিন্তু এখন ঢাকায় এপোলো, স্কয়ারে বেশ কয়েকজন ইনডিয়ান ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখছেন।  আমরা যাচ্ছিও।

সুখ অসুখের গল্প ৭ :: আমাদেরও রোগীবান্ধব ডাক্তার আছেন!

 সুখ অসুখের গল্প ৭ :: আমাদেরও রোগীবান্ধব ডাক্তার আছেন!

নিশ্চিত করে বলছি, আমাদের অত্যন্ত মেধাবী এবং রোগী বান্ধব ডাক্তার আছেন। খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন। তবে তাঁদের পর্যন্ত পৌছানো অনেক দুরহ হয়, কখনো কখনো। নিউরোলজির জন্য ডাক্তার কাজী দীন মোহাম্মদের কথা বলতে হবে। তাঁর কাছে পৌছাতে তিন মাসের মত সময় লাগে। তবে তাঁর রোগী দেখে দ্রুততার সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো পরামর্শ দিতে পারেন।

আমি যখন উচচ রক্তচাপ নিয়ে বিপাকে ছিলাম, তার শরণাপন্ন হলাম।  তিনি আমাকে কোনো রকমের টেস্ট ছাড়াই ওষুধের  দিলেন। এর আগে বেশ কয়েকমাস ধরেই আমি  হাইব্লডাপ্রেসার নিয়ে বিপদে ছিলাম। এই, হুটহাট প্রেসার বেড়ে যাওয়ার একটা ভয়ঙ্কার ব্যাপার ছিল।

 দীন মোহাম্মদ স্যারের অধীনে আমি বছর দু চিকিৎসা নেয়ার পর তার সাথে  ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে তার সাথে দেখা করা কঠিন হয়ে গেলে, আব্বার ডাক্তার বরেণ চক্রবর্তীর শরণাপ্ন্ হলাম।

 বরেণ দা, আমার দেখা অসাধারণ ডাক্তার।  তিনি মনযোগ দিয়ে রোগীর কথা শোনেন। পায়ে হাত দিয়ে অন্তত পালসটা দেখেন। যেটা অন্য ডাক্তারদের অনেকেই করতে চান না।

 ইন্টারনাল মেডিসিনের ডাক্তার বরেণ চক্রবর্তী, ওষুধও  রয়ে সয়ে  লিখেন। এবং রোগীদের তিনি ফোনেও সময় দেন। দরকার হলে ওষুধ পরিবর্তন করেও দেন।  গত চার বছরে আমাকে দুবার কিছু টেস্ট করতে দিয়েছেন।

বরেণ দা এক সময় দিনে ১৫ জন রোগী দেখতেন।  এখন কর্পোরেট হসপিটালে বসার কারণে এ সংখা চারগুণ হয়েছে।  তবে তার একটা  গুণ হলো- অত্যন্ত যত্ন করে রোগী দেখেন। আমি এবার আব্বার সাথে ইনডিয়ায়  যাওয়ার পর তাঁর চিকিৎসার  কাগজপত্র এপোলোর অমিত মিত্তালকে দেখালাম। তিনি বরেণ দা'র চিকিৎসাটা ঠিক রাখলেন। তবে দুটো টেস্ট দিয়ে বল্লেন,  টেস্টের রিপোর্টটা যেন বরেণ দাকে দেখাই এবং চাইলে অমিতকেও আমি এটা পাঠাতে পারি।

ডাক্তার মুরতুজা খায়েরও রোগীবান্ধব।  রেসপেরেটরি মেডিসিনের এ চিকিৎসক মূলত বসেন একটি বড় কর্পোরেট হসপিটালে। রোগী দেখেন নির্ভারভাবে। তার সবচে যে বিষয়টা ভালো, সেটি হলো তিনি রোগীর কথা শোনেন এবং ওষুধগুলো তিনি কেন দিচ্ছেন, জানতে চাইলে ব্রিফ করেন। আরেকটা বিষয় হলো, তিনি ওষুধের জেনেরিক নাম লিখে থাকেন।  এতে করে আপনি যেখানেই যান, আপনার ওষুধ কিনতে কোন সমস্যা হবে না।

যেহেতু বক্ষব্যাধি একটা ক্রনিক ডিজিস, এর ওষুধ যে কোন সময় কেনার দরকার পড়তে পারে। মিস্টার খায়েরের এন্টিবায়োটিক বাতিক নেই। তবে তার বিদেশি ওষুধের প্রতি দূর্বলতা আছে। আমি গ্রিন উইচে একবার এক বিলেতি চিকিৎসককে তাঁর প্রেসক্রিপনি দেখিয়েছিলাম, তিনি দেখে বললেন, ভালো ডায়গনসিস করেছে। ওষুধও ঠিক আছে।

রেসপেরেটরি মেডিসিনের আরেকজন চিকিৎসক আলি আহসানও বেশ ভালো। তার চিকিৎসাও  প্রশংসা করার মত। আমি শুরুর দিকে তার রোগী ছিলাম। তবে তার চেম্বার ভয়াবহ ভিড়ের কারণে এখন যাই না।  ফুসফুসের একটি টেস্ট তিনি ১৬০০ টাকায় চেম্বার একজন জুনিয়র ডাক্তারের সহায়তায় করিয়ে নেন।  এ্কই টেস্ট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ তিনেক টাকার মধ্যে করা সম্ভব। আমি এখন তাই করি।

 রিউম্যাটিক ফিভারে অসাধারণ ডাক্তার নজরুল ইসলাম।  একজন চিকিৎসক কতটা ভরসা দিতে পারেন, তা জানতে একবার তার দপ্তরে যেতে হবে।  টেস্ট ? ,দরকার না হলে কখনোই না।  আমার ছোট বোনের একবার  রিউমিটিক ফিভারের কথা জানালো স্থানীয় ডাক্তার। পরে তার দপ্তরে হাজির হলাম। ওষুধ তো দিলেনই না। কোনো টেস্টই নয়।  দিলেন কেবল দু'টা ব্যায়াম। এটা কেবল দেশের বাইরে দেখেছি।

মেডিসিনের ডাক্তার মধ্যে আমাদের পরিবারের সবারই পছন্দ ডাক্তার আইয়ুব আলী চৌধুরী। ভদ্রলোক বদলেছেন, এখন অনেক। ২০০২ সালে আব্বার  ডেঙ্গু হয়েছিল।  নোয়াখালীর ডাক্তাররা ধরতে পারেননি। ঢাকা থেকে  হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের একজন  সহকারি অধ্যাপক  নোয়াখালীর প্রাইমে যেতেন, তাঁর কাছে নিলে বললেন, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এখনই হসপিটাইলাইজ করুন।

পরে ঢাকায় আনার পর তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়লো। চারদিনের ট্রিটমেন্ট করলেন ডাক্তার আইয়ুব আলী চৌধুরী ।  মিস্টার চৌধুরী সে সময়কার  চিকিৎসা আর এখনকার মধ্যে ফারাক আছে। এখন তিনি দিনে ৬০ জন রোগী দেখেন চেম্বারে। হসপিটাল তো আছেই!  তবুও আমরা এখনো মেডিসিন বলতে তাঁকে বুঝি। তার একটা বড় কারণ তিনি  ওষুধের পরিমাণ টা কম দেন।  এন্টিবায়যোটিক এবং ভিটামিন ওষুধ প্রীতি তার নেই।  অপ্রায়োজনীয় টেস্টও না।

গাইনোকলজির জন্য বস ডাক্তার জাকিউর রহমান। তাঁর ডাক্তারি দেশি ডাক্তারদের সাথে যায় না। মিস্টার রহমান রোগীকে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় দেন। এবং মানবিক ডাক্তার বলতে যা বোঝায়, তিনি তাই! তার কাছে ওষুধের চেয়ে  বিকল্প পদ্ধতি- ব্যায়াম, ডায়েটই উপযুক্ত ওষুধ।

শিশু ডাক্তারদের মধ্যে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী।  তাঁকে দেখছি অন্তত ৭ বছর ধরে।  রোগীর মায়েদের অভিযোগ তিনি সময় দিয়ে রোগী দেখেন না। তার ওষুধ কাজ করতে বেশ সময় লাগে।  কিন্তু আমার তা মনে হয়নি। যদিও তার হিস্টরি লিখেন একজন। আর তিনি ফাইনাল দেখেন। তবে তার  রোগ নির্ণয় ও ওষুধ নির্বাচন খুবই চমৎকার। এন্টিবায়োটিক তিনি একটা শিশুর উপর কখন প্রয়োগ করবেন, সেটা ভালো বোঝেন।  আর সাধারণ ওষুধের বদলে আর্য়ুবেদিক ওষুধেই তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। সাথে ওষুধ না খাইয়ে কীভাকে রোগ সরানো যায় তাও বলে দেন।   এ রকম শিশু ডাক্তার আমার চোখে কম পড়েছে।  মায়েরা  গুঁড়ো দুধ খাওয়ার জন্য জানতে চাইলে, বেশ বিরক্ত হন।

 সার্জারি ডাক্তার ফিরোজ কাদিরকে মনে পড়ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটভাই নুরুল ইসলাম আকাশের টানা ৮ ঘণ্টা  অপারেশন করেছিলেন তিনি। ঢাকা মেডিকেলের  অপারেশন থিয়েটার পুরো একটা নির্ঘুম রাত কাটানোর পরেও তার মুখে হাসি ছিল, বলছিলেন, অপারেশন ভালোভাবে করতে পেরেছি।  চার্জ?  ওটা না শুনলেও চলবে।

 সার্জারি ডাক্তারদের এ রকম, অসাধারণ  দেখার সুযোগ  সবার হয় না।  তবে ছোটভাই আকাশ বাঁচেনি। আইনসইউতে থাকার সময় তার  জণ্ডিস ধরা পড়ে এবং মারা যায় ছেলেটি।

ডাক্তার মোবিন খান। লিভারের জন্য  বস ।   রোগীকে দেখেন দেড় থেকে দু মিনিট। কিন্তু তার স্মৃতিশক্তি কতটা প্রখর তার একটা বর্ণণা দিই। একজন রোগীকে আমি ২০০৩ সালে তার চেম্বারে নিয়ে গেছিলাম। ২০০৭ সালে ওই রোগীকে আবার নিয়ে গেলে,তিনি মুখস্তই বলে দিলেন তাকে কি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছির এবং এখন কি দিতে হবে। আমার একটা বিজনেস কার্ড এগিয়ে দিতে বললেন, আপনারা একটা কার্ড আমার কাছে আছে। এবং সেটি  যে আছে তা রোগীর  রেফারেন্স বুক উল্টে দেখালেন। বললেন, লং টার্ম চিকিৎসা লাগবে রোগীর। ভালো হয়ে যাবে।

রোগীকে তিনি যা ঘটনা তা বলে দিতে পছন্দ করেন। যদিও খারাপ অবস্থা সম্পর্কে রোগীকে বলা ঠিক নয় বলে আমরা মনে করি। তার কথা ভিন্ন, রোগীর অবস্থা তার জানা উচিৎ।

ইউরোলজি ডাক্তারদের মধ্যে ডাক্তার সালামকে এক নম্বর ধরা হয়। এবং আসলে বেটা এক নম্বর। আপনি যার  প্রেসক্রিপশনই নিয়ে যান না কেন, তিনি সে চিকিৎসকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। তবে টেস্টের ব্যাপারে তার সমস্যা আছে। আব্বাকে  নিয়ে গেছিলাম। ১ দিন আগে স্কয়ারে টেস্ট করা হযেছিল। বললেন, আবার করেন। কমফোর্টেই করেন। করলাম। রেজাল্ট একই।  পরে বললেন, ওষুধ লাগবে না। চারমাস পর আবার চেক করানোর নির্দেশনা দিলেন।  একই রকম  কথা অবশ্য ইনডিয়ান ডাক্তারও বলেছেন।

 ডাক্তার জাহিদ সম্ভবত একমাত্র ডাক্তার যিনি রোগীর সঙ্গ উপভোগ করেন। আব্বাকে নিয়ে তার চেম্বারে যতবারই গেছি, কমপেক্ষ তিরিশ মিনিট সময় দিয়েছেন।  পরে জানলাম, অন্য রোগীদেরও তিনি একই রকম সময় দিয়ে থাকেন।

 সাইফুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষ ডেন্টাল সার্জন। রোগ ণির্ণয় করতে পারেন সহজে। তারচে সহজে তিনি বড় অপারেশন করেন, হাসি মুখে। খরচও অত্যন্ত কম। ইসলামি ব্যাংক হসপিটালের শাহজাহান পুর ব্রাঞ্চে বসেন তিনি। ভিসিট তিনশ টাকার কম। রিপোর্ট দেখাতে টাকা লাগে না।  একমাসের  মধ্যে  আবার সাক্ষাৎ দেখানোও মাগনা।

আম্মার দাঁতের ইনফেকশন হলো ২০০২ সালে। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগে আমার ডিপার্টমেন্টের ম্যাডামের হাজব্যান্ড বিভাগীয় প্রধান। নিয়ে গেলে অত্যন্ত যত্ন করে দেখলেন। কিন্তু মূল সমস্যা বার করতে পারেননি। পরে নিয়ে গেলাম, সাইফুল ইসলামের কাছে। তুলনা রহিত চিকিৎসা।

 দাঁতের আরেকজন ডাক্তারে কথা মনে পড়ছে। নোয়াখলীতে বসেন। ডাক্তার বিএল নাগ।  তার চেম্বারে ৯৩ সালে গেছিলাম। আমার  দাঁত ভেঙ্গে গেছিল। তিনি বললেন, দাঁত ফিলআপ করতে টাকা লাগবে ৪০০। আমার কাছে তখন শ দুশ টাকা ছিল।  আমি বললাম, তাহলে পরে আসবো। কিন্তু তিনি চিকিৎসা করলেন, বাকিতে। পরে যখন টাকা ফেরৎ দিতে গেলাম, যেন-আসমান থেকে পড়লেন।  খুশী হয়ে আমার মাড়ির দুটো দাঁত মাগনা ফিলআপ করে দিলেন। আমার সামনের মেরামত করা দাঁড় ৯৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভালো  আছে। কৃতজ্ঞতা, বিএল নাগ।

বাংলাদেশের আউটডোরেও অসাধারণ কিছু চিকিৎসকের দেখা মিলবে। তবে এটা দেখবেন খুব কম। তবে আছে। বঙ্গবন্ধুর আউটডোরে বসেন ডাক্তার নাহিদ। মেডিসিনের ডাক্তার। অত্যন্ত বিনয়ী এবং অল্টারনেটিভি মেডিসিন এবং ব্যায়ামেই তিনি রোগীকে ভরসা দিতে চান।

বঙ্গবন্ধুতে চর্মরোগ ডিপার্টমেন্টটাও দারুণ। আউটডোরের ডাক্তাররা  চর্মরোগ ভালোভাবেই বিচার করে ওষুধ দিতে জানেন। এটা আমার ও আমাদেে বন্ধুদের অনেকেই পরিক্ষীত।

 আমাদের এ রকম বহু চিকিৎসক আছেন। কিন্তু কিছু শঠ, তঞ্চক,ভণ্ড, লোভী চিকিৎসকের কারণে সে সব আলোতে আসে না।  কারণ চিকিৎসকরা এখন আর মানুষরে সাথে যে ব্যবহার করেন , কতাঁদের যে আচরণ এবং মানুষ ঠকানোর প্রবণতা তা  ভালো চিকিৎসকদের সফলতাকেও ঢেকে দেয়।

সুখ অসুখের গল্প-৬: ডাক্তার বাবু বনাম স্যার!


বঙ্গে ডাক্তার মহোদয়কে 'স্যার' 'স্যার' বলে ফেনা তোলার পরেও তাঁদের দিলে হয় না।  তবুও রোগী বলে কথা, মানুষ্য যন্ত্রের বিকলতা সারাতে আমরা সরাই কারখানায় যাই। ডাক্তার মহোদয়রা যা ইচ্ছা তা বলে বিদায় করেন, অনেকটা পুরনো জমিদারি আমলের মত, যাও বাবা যাও!  এত কথা বলো কেন, ৫/৭ শ টাকা গুণে এত (!)  বলাটা  যেন, অপরাধ!

তাই আমরা রোগীরাও কাঁচুমাচু করে ফিরে আসি। আসার পর মনে হয়, আমার তো আরেকটা সমস্যা ছিল বলা হয়নি! বলা হবে কেমনে, ডাক্তার স্যার যেভাবে দ্রুততার সাথে রোগীর মনের  সব খবর 'কপি' করে নিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখে ফেলেছেন, তাতে আমার মনে হয়েও বা লাভ কি?

ইনডিয়াতে এসে দেখলাম, ব্যতিক্রম। টাকাটা উনারা হালাল করে নেন। বের হবার আগেও আবার জিগেশ করেন, 'স্যার' আর কিছু বলবেন! বলতে পারেন।  আমি শুনতে চাই। এত দূর থেকে এসেছেন, বলুন না।

বিস্মিত হবার কারণ নেই, ডাক্তার সাহেব রোগীকে স্যারই বলবেন, এটাই কর্পোরেট হসপিটালের নিয়ম।
তো বঙ্গেও করপোরেট হসপিটাল আছে? ইনডিয়া্নরা ত এখানেও আসেন, কই তা তো বলেন না!  বঙ্গে আসলে সবাই তো সে জমিদারি পেয়ে বসেন জনাব!  তাই হয় ত তারা রোগীকে সম্মান করতে চান না!

আব্বাকে নিয়ে ডাক্তার অমিত মিত্তালের চেম্বারের সামনে বসে আছি।  তার প্রাইভেট সেক্রেটারি এগিয়ে বললেন, স্যার আসুন। আমরা একটু ইতস্তত করে জিগেশ করলাম, আমাদের বলছেন? ভদ্রলোক আরেকটু বিনয়ের সাথে বললেন, 'ইয়েস স্যার'!

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই ডাক্তার মিত্তাল উঠে দাঁড়ালেন। হাত বাড়িয়ে মোলাকাত করলেন।  চেয়ারটা টেনে দিয়ে বললেণন, প্লিস বসুন।
 আব্বা এবং আমি বসলাম।

 আব্বার কাছে প্রথমেই জানতে চাইলেন, কখন এসেছেন। এখানে কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা।
আব্বা বলছেন, তিনি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছেন।  উর্দুতেই বাৎচিৎ চলছে। টেস্ট দিলেন। সাথে সাথে করার ব্যবস্থাও করে দিলেন। কিউটা একটু বেশি, তাই ক্ষমা চাইলেন, কয়েকবার।

রিপোর্ট দেখার জন্য ডাক্তার মিত্তাল অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু তার নির্ধারিত চেম্বারের সময়েরও  পরেও তা হয়নি।  উনি আগামীকাল রিপোর্ট দেখবেন বলে জানালেন। যাওয়ার সময় নিজে এসে ওয়েটিং রুমে বলে গেলেন, আমরা যেন তার সিনিয়র ডাক্তার মোহন্তীকে একবার দেখিয়ে যাই।

 রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিকাল তিনটার দিকে ডাক্তার মোহন্তীর  রুমে ঢুকতেই ডাক্তার হেসে বললেন, আসুন প্লিজ। বসুন।  রিপোর্ট দেখলেন। বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি শুনে, বাংলায় কথা বলছেন মোহন্তী। চেন্নাইয়ের সিএমসিতে হার্টের অধ্যাপক ছিলেন। এখন এপোলোর হার্ট সেন্টারের প্রধান।  রিপোর্ট দেখে, তিনি আব্বাকে তার সমস্যা নেই বলে জানালেন।  সমস্যা নেই, এটি তিনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন, সেটিও ব্রিফ করলেন।

 ওষুধ লিখে বললেন, আপনি দিন কয়েক খেয়ে ওষুধ ম্যাচ হয়েছে কিনা আমাকে জানিয়ে যাবেন। ওঠার পর মোহন্তী  তার চেম্বারের দরজা পর্যন্ত আব্বাকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, বহু লোকের উচ্চ রক্তচাপ আছে! কিন্তু এর কারণ নির্ণয় হয়নি, তাই আমরা এটাকে বংশগত বলে আপনাদের  বলি!

 একদিন পর আব্বা বলছেন, রিপোর্ট করতে দিয়েছে, ডাক্তার মিত্তাল। তাকে একবার দেখানোে গেলে ভালো হতো। আমি  ইন্টারন্যাশনাল পেশেন্ট লাউঞ্জে  সুনিতাকে  বললে, সে হেসে বলল, আপনি যত বার ইচ্ছা দেখাতে পারেন। এ জন্য কোন ফিও লাগবে না।

 মিত্তালের চেম্বারে  বসে আছি। তিনি  রাউন্ডে গেছেন। তাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি জানালেন, ডাক্তার আসতে মিনিট ১৫ সময় লাগবে। আমরা জোহরের নামাজ পড়ে এসে দেখলাম, ডাক্তার অপেক্ষা করছেন। রিপোর্ট দেখে তিনি ডাক্তার মোহন্তীর লেখা একটা ওষুধ বাদ দিলেন।

 বললেন, ঠিক হয়ে যাবে! প্রেসারের ওষুধ সব সময় খেতে হবে। আর কোলেস্টরের ওষুধ তিন মাস। বঙ্গের ডাক্তারের দেয়া  কোলেস্টরের কয়েক বছর ধরে  জারি রেখা ওষুধ  বদলে দিলেন। বললেন, ওষুধ খেতে নেই। যত পারেন , কম ওষুধ খান।  ওষুধ কম খেলে বেশি দিন বাঁচবেন।

 আব্বার প্রেসার চেক করতে চান।  মিত্তাল উঠে এসে প্রেসার মাপলেন। বললেন, আপনি ভালো আছেন।
 ওষুধ এবং  দেশে আসার পর আমাদের করণীয়ও ঠিক করে দিলেন তিনি। বললেন, সমস্যা হলে যেন তাঁকে মেইল করি।  তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইলফোন নম্বর এবং ই মেইল আইডি দিলেন।

 উঠে আসার সময় বললেন,  টেনশন নিবেন না। সুস্থ্য হয়ে যাবেন।

 ফেরার দিন ডাক্তার মোহন্তী হোম প্ল্যান করে দিলেন। বলে দিলেন, মিত্তাল অথবা তাঁকে যেন সমস্যা হলেই জানানো হয়। ব্যস্ততার ভেতর ফোন ধরবেন কি না, সেটাও জানতে চাইলেন আব্বা। বললেন, স্যার রোগীর সেবা করাটাই আমার কাজ। ফোন ধরবো!


 দু'জন ডাক্তারকে ৪ বাজার দেখালাম, সাকুল্যে ১০০০ রুপি ভিসিট দিলাম!

আব্বার মূল সমস্যা ছিল স্পাইনের।  এর জণ্য ডাক্তার সুধীর তিয়াগি  দেখলেন। আব্বার  বস বলছিলেন , আমরা যেন ভিপি সিংয়ের দপ্তরেও একবার যাই। ভিপি সিংও নিউরো এন্ড স্পাইন সার্জন।

 রিপোর্ট দেখলেন। সুধীর বাবুর প্রেসক্রিপশনও দেখলেন।  কোনো রকমের পাণ্ডিত্য না ফলিয়ে বললেন,  সুধীর বাবুর ট্রিটমেন্টই চলবে।

 তবে এ রোগের জন্য ওষুধের চে ব্যায়মা্টা খুব কাজে দিবে। সেটিও  বললেন।

ভাবছিলাম, সুধীর বাবুকে দেখোনো অপরাধ হিসাবে গণ্য করবেন  মিস্টার ভিপি সিং। বরং উল্টো !  অথচ এপ্রিল মাসে আমার ছোট বোনের শাশুড়িকে স্কয়ারে  রেসপেরেটরি মেডিসিনের ডাক্তার দেখানোর পর  ময়মনসিং মেডিকেলের মেডিসিনের প্রধান ডাক্তার জহির চেম্বার গেলে' কুত্তার' মত 'ঘেউ' করে ওঠে। 'শুয়র'টা থাপড়াইতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু বোনের শাশুড়ি সামনে বলে সামলে এসেছি।

এখানকার ডাক্তার সহনশীলতা দেখে মনে হলো, কেন ১২১ টি দেশ থেকে এপেলোতে এত রোগী আসে। আর আমাদের দেশ থেকে আমরা কেন  অপমান সয়ে ভিসা  নিয়ে ইনডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া আর সিঙ্গাপুরে যেতে বাধ্য হই! 

সুখ অসুখের গল্প:: ৫:: হলি সাইট, ধর্মীয় পর্যটন।




 সুখ অসুখের গল্প:: ৫:: হলি সাইট, ধর্মীয় পর্যটন।


প্রচণ্ড গরম। জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য দিল্লি জুমা্ মসজিদে যাচ্ছি। আমরা যদিও বড় মসজিদকে জামে মসজিদ বলি, এখানে দিল্লির সবচে বড় মসজিদের নাম জুমা মসজিদ।  কয়েকশ বছরের পুরনো মসজিদ।  যে সময় মসজিদ  তৈরি হয়, সে সময়  বিদ্যুতের এত অগ্রগতি ছিল না। তাই সহজেই যে প্রকৃতির আলো বাতাস  আসা যাওযা করতে পারে, সে ভাবেই তৈরি করা। এর নিমাণ শৈলিও মোগল স্থাপত্য নকশায়।

জুম্মার দিন মসজিদের তিন গেট দিয়ে কয়েজ হাজার  মুসল্লী নামাজে সমবেত হন।

আমরা নামজ পড়ার পর মেহরাবের কাছে পৌঁছালাম। আব্বা বলছিলেন,  যেখানে ইমাম সাহেব দাঁড়ান, তার ঠিক পেছেন মোগল সম্রাটরা নামাজ পড়তেন। এ মসজিদ তৈরির সময়  মোগল সম্রাটের ঘোষণা ছিল- যিনি আছর নামাজের সুন্নত কাজা করেননি এমন লোক  মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করবেন।

এ রকম অনেক  অজানা তথ্য জানতে জানতে মসজিদ ঘুরে দেখছিলাম। মসজিদের উন্মুক্ত স্থানে ওজু করার জন্য একটি পুকুর। এর চারপাশে ওজু করার ব্যবস্থা। প্রচণ্ড রোদ থেকে মুসল্লিদের স্বস্তির জন্য টাঙ্গানো হয় সামিয়ানা।

 দিল্লি জামে মসজিদে আমরা  বেশ কিছুটা সময় কাটালাম।  গরমে পুড়তে পুড়তে তিনটি গেটই ঘুরে এসে বের হওয়ার সময় জানলাম শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেসে দেহলভীর  সমাধি মসজিদের কাছে। মিনিট কুড়ির পথ। আব্বা আর আমি দুজনে একটা অটোতে চড়লাম, পৌঁচালাম  পাঞ্চ পীর মসজিদে। মসজিদটি  খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।  কারণ পাঞ্চ পীর মসজিদের কোনো নিশানা নেই।

এটা অনেকটা কলোনীর মত জায়গার পাশে একটা কবরস্থানের মত এলাকা্। এখানেই ওলামায়ে জমিয়তে হিন্দের অফিস। সেটি পার হয়ে গেলে একটি কওমী মাদরাসা। তারপর একটা মসজিদ। মসজিদের পাশে একটা ঘরে শাহ  ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভীর সমাধি। সাথে তার পীর ও তার সন্তানের সমাধিও সেখানে। ইনডিয়াতে ইংরেজ তা্ড়ানোর আন্দোলনে তিনি অগ্র সেনানী ছিলেন।

আব্বার জীবনের একটি  সুপ্ত ইচ্ছা ছিল শাহ ওয়ালীউল্লাহর সমাধিতে আসা। সে ইচ্ছা পূরণ ও শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ: কবর জেয়ারতের পর এমনটাই জানালেন।

জেয়ারতের পর আমরা বের হচ্ছি, তার সমাধিতে খুব কম লোকের আনা গোনা।  তবে যারা আসছেন, অনেকক্ষণ ধরে থাকছেন।

বের হতে হতে আব্বার কাছে শাহ ওয়ালীউল্লাহর  জীবন থেকে না রকমের কথা শুনছিলাম, তার মেধা,জীবন এবং ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর ভূমিকা্  সম্পর্কে।

 রোদের উত্তাপ বাড়ছে। আমাদের গন্তব্য কুতুব মিনার। পাঞ্চপীর মসজিদ থেকে এর দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। আমরা অটোতে আসলাম। কুতুব মিনারে এস আব্বা অস্থির। হাঁপিয়ে গেলেন। এত লম্বা জার্ণি শেষে আমরা মিনারের অভ্যন্তরে ঢুকতে যাবো, দেখি টিকেট লাগে।

টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি ইনডিয়াদের জন্য ৩০ রুপি আর  ফরেনারদের জন্য ৫০০ রুপি।  কাউন্টারে টাকা দিলে আমাকে তিরিশ রুপির দুটা টিকিট দিলো।  ভাবলাম, ফরেনার পরিচয় দিয়ে ৫০০ রুপি খরচ করব, পরে মনে হলো--- আমি তো পরিচয় লুকাইনি, তাহলে  বাড়তি টাকা গুনতে যাব কোন দুঃখে। ২০০৬-০৭ এ একবার সিদ্ধান্ত হলো ইনডিয়া তার দেশের  পর্যটন স্পটের জন্য সার্কের আলাদা ফিস ঠিক করবে।  তবে সেটির আর চূড়ান্ত করেনি। বঙ্গীয় মোছলমানদের থেকে যতটাকা চুষে নেয়া যায়, ততই লাভ!

কারণ পরিসংখ্যান বলছে, ইনডিয়ার  রেমিটেন্স আহরণের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। অথচ তারা সৌদি বাশশার সাথে সমীহ করে কখা বলে। আর আমাদের বঙ্গীয় মুসলমানদের হয়রানি করে। গরীব বলে হয়ত। কিন্তু আমরা গরীব হলেও তাদের জিডিপিতে বড় ধরণের অবদান রাখছি, সেটা তারা ভুলে যায়।

সে যাক কুতুব মিনারের অভ্যন্তরে ইমাম হামজার সমাধি ও  আ'লাই দরজা পরিদর্শন, মিনার এলাকা ঘুরে মোঘল মসজিদে আছরের নামাজ পড়লাম।  কিছুটা সময় বসে  আব্বা আর আমি বের হলাম। প্রচণ্ড ক্লান্ত আব্বা। ফের একটা অটো ধরে চলে এলাম হোটেলে। সে সাথে ইনডিয়ান  হলি সাইট ভ্রমণের সমাপ্তি!  

সুখ অসুখের গল্প : ৪:: নিজামউদ্দিন আউলিয়া আর মির্যা গালিবের মাজারে একদিন।




সুখ অসুখের গল্প : ৪:: নিজামউদ্দিন আউলিয়া আর মির্যা গালিবের মাজারে একদিন।

ডাক্তারের কাছ থেকে 'অপারেশন লাগবে না'- সিদ্ধান্তের পর  হাতে অনেকটা সময় পাওয়া গেলো। এ সময়টা আব্বার তার শিক্ষাজীবনের প্রিয় কিছু নায়কের কবর জিয়ারতে যেতে চান। আমাকে এমনটা্ই বললেন।

আমি দিল্লি বেশ কয়েকবার আসলেও দিল্লি জামে মসজিদ আর কারিম'স রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্য  ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাওয়া হয়নি। তাই চিনতে বেশ সমস্যা হচ্ছিলো।

দিল্লি এপোলোর পেশেন্ট লাউঞ্জের পশ্চিম মাথায় একটা  নামাজের জায়গা আছে। সেখানকার ইমামকে আব্বা খুঁজে বের করলেন।  তাঁর কাছেই তিনি শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী, মির্যা গালিব আর  নিজামউদ্দিন আউলিয়ার সমাধি সম্পর্কে  জানতে চান? এমন প্রশ্ন করতে ইমাম সাহেব কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকালেন। পরে আব্বার পরিচয় জানতে পেরে তিনি  সব কিছুর সঠিক ঠিকানা সংগ্রহ করে দিলেন।

প্রথম দিন ১৬ জুন, আব্বার ফিজিওথেরাপি শেষ করে ইমাম সাহেবের  ঠিক করে দেওয়া  টেক্সি করে গেলাম নিজাম উদ্দিন  রহ: এর সমাধি ও খিলজি মসজিদে। সারিতা বিহার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। গাড়ি থেকে নেমে অনেক দূর হেঁটে আমরা পৌছালাম  নিজামউদ্দিন আউলিয়ার  সমাধিতে!

পথে পথে মাজারে দেয়ার জন্য ফুল, ক্যালিগ্রাফি সমেত সবুজ কাপড় আর লোবান-মোমবাতি বিক্রি হচ্ছিলো। যেমনটা হিন্দি সিনামায় দেখা মেলে।  বহু পুণ্যার্খী সেখানে এসেছেন। ধর্ম-বর্ণ-বিচার নেই।

আব্বার সাথে যাওয়ার পর আমার গাইডের দরকার পড়লো না। নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মা'রেফাতের  বিষয়ে বিস্তারিত শুনছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম, এটা জেনে যে, আধ্যাত্মিক শক্তিও  মোগল সম্রাজের বিকাশে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

ভেতরে ঢুকলে  মানুষের কিছু আচরণকে যে কারো  খারাপ লাগবে। আব্বা বিরক্তি প্রকাশ করছেন।  কিন্তু এটা তো সত্য যে, এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।

 তার মতে, এখানে যারা পুণার্থী তাঁদের প্রায় সবাই ধর্ম অবমাননা করছেন। নিজামউদ্দিন আউলিয়ারা যে জন্য ধর্ম ও মুসলামনের সম্রাজ্য বিস্তারে পরিশ্রম করেছেন, তারা তার বিপরীতে চলছেন।

তবে এটাও সত্য যে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে  বঙ্গীয় মাজারের মত সিজদায় পড়ে থাকার সুযোগ নেই।  নামাজ পড়ার জন্য  মো্গল আমলের খিলজি মসজিদ আছে।

নিজাম উদ্দিন আ্উলিয়ার  মাজারের  পুরো আঙ্গিনা আমরা ঘুরে দেখলাম,  খিলজি মসজিদেও যাওয়া হলো। মোগল আমলে অন্য সব মসজিদের মতই লাল ইটের গাঁথুনি অনন্য এক মসজিদ। অসাধারণ স্থাপত্য নকশা যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

 সমাধিতে ফুল আর সবুজ কাপড় বিছানো এখানে যেন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। আমাদের খালি হাত আর  ঘুরতে দেখে অনেকে বিস্ময়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকাচ্ছেন।

 নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার সমাধি জিয়ারতের পর আমরা বেরিয়ে আসলাম।

 বাইরে প্রচণ্ড রোদ্দুর। গেটের বাইরে আসতে তাবলীগ জমাতের মারকাজ।  তার একটু আগেই মির্যা গালিব একাডেমি। আব্বার চোখ পড়তেই এগিয়ে গেলেন। গালিবের   সমাধি কোথায়? জানতে চাইতে দেখিয়ে দিলেন, সেখানকার একজন ।  সমাধধি প্রাসঙ্গে উন্মুক্ত মঞ্চ। মঞ্চের সামনে খোলা মাঠ। সেখানে কিশোররা ক্রিকেট খেলছে।  তাদের  কাছ থেকে  সমাধির ঠিকানা জানতে চাইলে  তারা সিকিউরিটি গার্ডকে দেখিয়ে দিল। গার্ড তালা খুলে আমাদের নিয়ে গেলেন সমাধিতে।

 আব্বা বলছিলেন,  মির্যা গালিব  কেবল মুসলিম জাগরণের কবিই নন, তিনি একজন দার্শনিকও। তার বহু কবিতা আব্বা জানেন। সেখান থেকেও কিছু কবিতার পটভূমি আমাকে জানালেন। এটা একেবারেই আমার প্রথমবার জানা।

 আব্বা কিছুটা আক্ষেপ করেই বললেন, মির্যা গালিব সম্পর্কে আমাদের অনেকেই জানেন না। আর আমরা যেহেতু উর্দু জানি না, তাই মির্যা গালিবের কবিতা বোঝা মুশকিল।

 আমি ব্যক্তিগতভাবে  ভূপেন হাজারিকার গান 'আমি এক যাযাবর' এ প্রথম মির্যা গালিবের  নাম শুনেছি। এ টুকুই!

 মির্যা গালিবের মাজার  এলাকা খুবই সুরক্ষিত এবং পরিচ্ছন্ন। আব্বা  মির্যা গালিবের  সমাধি জেয়ারত করলেন।  বললেন, জীবনে আর কখনো হয়ত আসা হবে না। তাই  দেখে  গেলাম।

আমরা বেরিয়ে আসছি।   পরে গালিব একাডেমি থেকে আব্বা একটা কবিতা সঙ্কলন কিনলেন।  স্মৃতি হিসাবে সংরক্ষিত থাকরেব। কারণ আব্বা ছাড়া আমরা কেউ উর্দু পড়তে পারি না! সুতরাং এটি স্মৃতিতে চলে যাবে!। তবে গালিবের কিছু কবিতা ইংরেজি ভাষায় রয়েছে।  এর একটা সংকলন  পাওয়া যাবে। সেটি থেকে কিছু কবিতা পাঠ করার চেষ্টা করছি।

 একটি অনন্য অভিজ্ঞতা আর অসাধারণ  দিন কাটলো আমাদের। আব্বা মাজার ও মাজার ঘিরে মানুষের যে সব  কর্মকাণ্ড এ সবের প্রচণ্ড বিরোধী হবার কারণে, একজন পর্যটনকর্মী হিসাবেও আমি যখনই যে নগরে গেছি খুব বিখ্যাত কোন মাজার না হলে সেখানে আমরা যাওয়া হয়নি।

তবে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের যাবার পর মনে হযেছে, সব মাজারে যাওয়া উচিৎ এবং এখানেও মানুষের আচরণ -অসহায়ত্ব দেখার একটা সুযোগ আছে।   যেহেতু আমি মানুষ  ও তাদের আচরণ  দেখতে পছন্দ করি এবং সেটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকি,তাই এ সব জায়গায় না যাওয়াটা আমার একটা ভুল ছিল।

কেউ কেউ মাজারে যাওয়াকে শিরক মনে করেন।  অন্য শিরক করছে, আপনি বা আমি যাচ্ছি কেন?  আমি ব্যক্তিগতভাবে  মাজারে যাওয়ার বিরোধি নই। এবং ছোট ভাই হিরো আমাকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের পর আমি যে টুকু পড়েছি, তাতে মা্জারে যেতে বাধা আছে এমন কোন তথ্য ধর্মীয় বিধি নিষেধ পাইনি। বরং আমার মনে হয়েছে, আমরা এ সব জায়গা এড়িযে যাবার কারণে, কিছু ভণ্ড, ধান্ধাবাজ আর ভয়ঙ্কর রকমের অপরাধীরা মাজারকে তাদের দখলে নিয়ে অপকর্ম করছে। এ সব অপকর্ম থেকে মনিষীদের মাজারকে মুক্ত করার জন্য আমাদের মাজার পূজারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।

 আর এটা তো সত্য মৃত ব্যক্তি  অসহায়। তাঁর কারো জন্য কিছু করার থাকে না। 

সুখ অসুখের গল্প-৩ : কুখ্যাত ডাকাত বনাম-ডাক্তার!


ইনডিয়া যাওয়ার জন্য প্রয়োজনে অর্থনৈতিক প্রস্তুতি আগেই ছিল। আব্বা নিজেই নিজের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার আমার একাউন্টে জমা করিয়েছেন। তবুও আমি কিছু হাতে রাখলাম।

ওড়ার জন্য প্রস্তুতির ফাঁকে কয়েকটা এয়ারলাইন্সে খোঁজ নেয়া হলো, জানা গেলে জেট-ই বেস্ট। অনটাইম ফ্লাইট। ওয়াকার ভাই জানালেন, গুগলের একটা সাইট থেকে টিকিট কেনা যাচ্ছে, সাশ্রয়ী মূল্যে।

তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে না গিয়ে আমার পুরনো সুহৃদ সুমন ভাইয়ের কাছ থেকেই টিকিট নিলাশ। কারণ আব্বার টাইম আর হসপিটালিটির ব্যাপারে সেনসেটিভ !

আল্লাহর নামে বাপ বেটা উড়াল দিলাম রোজার শুরুর দিকে সকাল ১০ টা ১০ এর ফ্লাইটে।
ভাবছিলাম, উড়ালের সাথে সাথে ভিসা বিষয়ক জেরা সমাপ্ত!

না ঠিক তা হলো না! একটা হুজুর মানুষ এয়ারে চড়ে দিল্লি ঢোকে কেমনে? তাকে সহজে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হবে না ধরে নিয়ে জেরা করার জরুরী মনে হলো ইমগ্রেশন কর্মকর্তার।

সাড়ে ১২ টায় দিল্লি এয়ারপোর্টে নামার পর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কোশ্চেন! ভিসার জন্য ৩ বার এপ্লাই করছিলেন ক্যান? অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পারলাম না।

জন্মগতভাবে মাথা গরম! আপনাদের এম্বাসি তো কইছিলো ৪ বার পর্যন্ত এপ্লাই করা জায়েজ!
কর্তা ব্যক্তি উঠে পড়লেন, বড় কর্তাকে ডেকে আনলেন। তিনি ভিসা দেখে বললেন, ঠিক আছে ছেড়ে দেন। লোক কইলকাতার। তাই বাংলায় কথা কইলো।

এ ফাঁকে আরেকজন বাংলােদেীশ একই রকম কোশ্চৈন শেষ পরে ওপারে গিয়েছেন, তিনি উকি দিয়ে বললেন, দাড়ি টুপি দেখলেই উনাদের সমস্যা! এটা একটা ফাউজলামি।

আমি মৃদু হেসে উনার বক্তব্যকে সমর্থন করলাম।

এ দিকে হসপিটাল থেকে আমাদের রিসিভ করতে আসা যুবরাজ বিরক্তি নিয়ে ঘুরছে। বলল, ইমিগ্রেশন ব্যাটারা এমনই! লাগেজ টেনে এনে হসপিটালের ভাড়া করা গাড়ি করে সরাসরি চলে এলাম ইন্টারন্যাশনাল পেশেন্ট লাউঞ্জে (আইপিএল)।

ডাক্তার আগে থেকে ওরা সেট করে রেখেছে। নাম সুধীর কুমার তেয়াগি। ওরা উচ্চারণ করে 'ছুদির তেয়াগি'। দিল্লি এপোলোর ব্যস্ত নিউরো ও স্পাইন সার্জন। তার সাথে অপারেশন থিয়োটারের পাশের চেম্বার মোলাকাত হলো।

আব্বার এমআরআই রিপোর্টটা রট লাইটের ওপরে ফালাইয়া দেখলেন। বললেন, মাথায় কোনো সমস্যা নাই। মেরুদণ্ডে সমস্যা আছে।

'অপারেশন দরকার নাই!'- ঘোষণাও দিলেন সুধীর। বললেন, তবে ফিজিও থেরাপি লাগবে। ৫ দিনের ওষুধ ও ৫ দিনের ফিজিও থেরাপি পরামর্শ দিলেন।

বল্লাম, আরেকবার টেস্ট করে দেখন যাইবো! বললেন, না, শুধু শুধু টাকা খরচ করবেন কেন?
আব্বা খুব খুশী, কারণ ডাক্তার তাকে পুরো বিষয়টা ব্রিফ করলেন, বললেন, আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

আর এ রিপোর্ট দেখে, ইবনে সিনার কুখ্যাত নিউরোলজিস্ট ডাকাত আবদুল হাই প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন তাকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে ভর্তি করার জন্য। তার নাকি ম্যাসিভ স্ট্রোক হয়েছে! আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহকে এ রকম এক কুখ্যাত জানোয়ারের হাত থেকে রক্ষা করেছেন-আমীন।

আর ল্যাব এইডের আরেক কুখ্যাত ডাকাত সিরাজুল হক বলেছিলেন, স্পাইনের ডিস্কের মাঝখান থেকে জেল বেরিয়ে যাচ্ছে! তাই ব্যথা হচ্ছে।

তাও ঠিক নয়।

আর আজহারুল হক ওরফে রংপুরীয় বলদ নিউরোলজিস্টরে কথা আর কি বলবো!

তবে আজহার ও সিরাজুল হককে আব্বা অনেক বড় ডাকাত বলেই জানলেন। সুধীর বাবুর ওষুধ খাওয়ার পর আব্বাকে বল্লাম, দেশের এত বড় বড় ডাক্তার দেখাইলেন, তারা তো বড় সমস্যা কইছে। চলেন , ডাক্তার ভিপি সিং-কে দেখাই।

ভিপি সিংও এপালোর নিউরো সার্জন। সুধীর বাবুর চে বয়সে বড়ো। অভিজ।ঞাতায়ও। বাংলাদেশেও দু চারবার এসেছেন নিউরোসার্জারি জ্ঞান বিতরণ করতে!

আইপিএল এ সনিতাকে বিষয়টা জানালাম। হেসে ও বলল, ফাও টাকা খরচ করবা কেন? বল্লাম, আব্বার সন্তুষ্টি!

পরে ভিপি সিংয়ের দরবারে গেলাম ৪র্থ দিন। তিনি আব্বার বসের পরিচিত। ভালো করে দেখে বললেন, সুধীর বাবু ভালো দেখেছেন। তিনি যা বলেছেন, তাই। আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে। এটাই চিকিৎসা!

সে চিকিৎসা নিয়ে আমরা ফিরতে চাইলাম।

সুধীর বাবুকে আব্বার প্রোস্টেট সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানালে, তিনি ডাক্তার অংশুমান আগারওয়ালকে দেখাতে বললেন। সুধীর বাবুর রেফারেন্স তাই খুব যত্ন করে দেখে জানালেন, ' আপনার আর টেস্ট করার কাজ নেই। ভালো আছেন। ৪ মাস পরে টেস্ট করে মেইল করে দিয়েন। আমি আবার দেখে দেব।'

আমরা তবুও বললাম বাংলাদেশে ইনফেকশনের একটা রিপোর্ট আছে। সুতরাং আরেকবার চেক করা দরকার। আমাদের অনুরোধেই পুরনো রিপোর্ট থেকে ৪ টি করতে দিলেন। বললেন, আমি জানি সব ঠিক আছে। আপনারা চাইছেন বলে টেস্ট দিলাম। এটার জন্য টেস্টের দরকার ছিল না!

তবুও আমরা টেস্ট করলাম। রেজাল্ট-- সব ঠিক আছে।

বাংলাদেশে ই্ওরোলজির ডাক্তার সালাম ,ডাক্তার জাহিদ ও ডাক্তার নিনান চাকোর পরামর্শই অংশুমান ঠিক রাখলেন। কোনো ওষুধ নয়। অবজারভেশন!

সুখ অসুখের গল্প -২ :: ভিসা তেলেসমাতি!





ভিসা পাওয়ার উপায় নিয়ে ভাবছিলাম। জীবনে এতবার ইনডিয়া গেছি, কখনো ভিসা নিয়ে ভাবিনি। এবারই ভাবনা।  কারণ একজন ভিসা এজেন্ট আমাদের জানালেন , ভিসাপ্রার্থীর দাঁড়ি আর সৌদি আরবের ভিসা থাকাটা মহাপাপ। গো হত্যার চেও বড় পাপ। বিষয়টা মাথায় ধরলো না।

মোডি কাকু ও মনমোহন দাদার মুখেও কিন্তু দাড়ি আছে।  মোডি কাকুর দাড়ি আবার বঙ্গীয় হুজুরদের স্টাইলে। তাহলে সমস্যা হবে কেন? প্রথমে বিষয়টাকে মনে হয়েছে ভিসা এজেন্টের চালাকি। কিন্তু বাস্তবে এর প্রমাণও মিলল।  শঙ্করে একজন ভিসা এজেন্টকে ফরম পূরণ করে সব কাগজপত্র সমেত প্রদা্ন করলাম।  সময় নিয়েছে ৫ দিন। টাকা নিবে দুটি ভিসার জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু মিস্টার বলদ তিন তিন ঘুরিয়ে বললেন, আপনাকেই জমা দিতে হবে, আপনি  পাসপোর্ট ও ফরম জমা দিয়ে আমাদের  ডেলিভারি স্লিপ দিলে আমরা ভিসা করিয়ে দেব।

আমার মনে হলো কাজটা যদি আমি নিজেই করি তাহলে এজেন্ট কেন?

 প্রথম দিন আমাদের অফিস সহকারি শাহ আলমকে বললাম, তোমার বাসা যেহেতু  বাড্ডা , সকাল সকাল এসে লাইনে খাড়াও। আমি এসে জয়েন দেবো।  শাহ  আলম একজন সিরিয়াল ভাড়াটের নাম্বার দিলো। ৫০০ টাকা দিয়ে সিরিয়াল দিয়ে প্রবেশ করলাম।  ভেতরে গিয়ে একজন বললেন, শুধু আমার পাসপোর্টে ডলার এনডোরস করলে হবে না। আব্বারটাও করতে হবে। ভেতরেই স্টেট ব্যাংক অব ইনডিয়ার একজন লোক বসেন।  তিনি বাংলাদেশে মোডি কাকুর প্রতিনিধি। তার সাথে দেখা করতে গেলে সবাইকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।

আমাকে এনডোরসমেন্টের কথা শুনে বসতে বললেন। এর মধ্যে ভিসা না হওয়া দু একজন আসছেন। একজন বয়ষ্ক লোক আসলেন। তাঁকেও ধেই ধেই করে তাড়ালেন। যেন কুকুর তাড়াচ্ছেন। তবুও...

জানালাম আমার পাসপোর্টে বহু ডলার এনডোরস করা আছে, ব্যাংক স্টেম্যান্টও আছে। তারপরেও আব্বার পাসপোর্টে এনডোরস করতে হবে? বললেন, হবে। একটা ফরম পূরণ করতে হবে। বললাম,  আব্বার সই তো আমি দিতে পারবো। তিনি আমাকে একটা সাদা কাগজ আর কলম দিলেন, প্রাকটিস করার জন্য।  অপরাগতা প্রকাশ করায় বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনার যতি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে সেটি নিজের জন্য, আর ব্যাংক স্ট্যাটম্যান্ট আব্বার পাসপোর্টের সাথে জমা দিতে ।  তাই দিতে গেলাম।

এবার ফরম চেক করা 'মহারাজ' ভুল বের করলেন। প্রিভিয়াস ন্যাশনালিটি লিখিনি। এটা কি করবেন? বললাম, কি করতে হবে বলুন। বললেন, প্রতি ফরমে ৩০০ টাকা করে জরিমানা দিয়ে জমা দিন। তা্ই করলাম। বেরিয়ে এসে ভাবছিলাম ভিসাটা হয়ে যাবে। ফি দিলাম আবার  জরিমানাও। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা পরে এম্বাসির দরজায় গিয়ে দেখলাম ভিসা হয়নি।


 কেন হয়নি? কারণ দেখাতে চান না।
 আবার সেই স্টেট ব্যাংক অব ইনডিয়ার  কর্মকর্তার কাছে গেলাম, কারণ জানতে। তিনি শুধালেন, ওহে বঙ্গীয় মফিজ, চারবার পর্যন্ত ফেরৎ যাইতে পারে! ব্যাপার না। আবার জমা দাও।


 দ্বিতীয়বার আবার জমা করলাম।  এবার আবাবার পাসপোর্টেও এনপে=ডারস করলাম ব্যাঙ্ক অব ষিলন থেকে।  সে কাগজ সমেত জমা দিলাম।
 আবারো ফেরৎ। এবার জানতে পারলাম আব্বার দাড়ি আর আমার সৌদি আরবের ভিসাই সমস্যা!  কস কি মমিন অবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যে শেখদের '...চুষে' চলা ইনডিয়ানদের কাছে সৌ্দির ভিসা সমস্যা!

 মেনে নিলাম। আব্বাকে বল্লাম সিঙ্গাপুর নয়, থাইল্যান্ড! কিন্তু ইনডিয়া না হলে আব্বা যাবেন না।

আব্বার শরীর খারাপ হতে শুরু করেছে।  তাই আবার ঢাকায় নিউরোলজীর ডাক্তার আজহারুল হক সরকারকে দেখানো হলাে। সাকুল্যে ১১ খান ওষুধ লিখেছেন জনাব।  সে ওষুধ আব্বা খাওয়াও শুরু করলেন। আব্বাকে ঢাকায় বসিয়ে রেখে  এক দালালের শরণাপন্ন হলাম। ১৩ হাজার ২০০ টাকা রফা। সেও ফেল। টাকা নিয়ে পালালো। এ সবের মধ্যে অগ্রজ সম্বাদিক মুজিব ভাই বললেন, জমা দিয়ে মাসুদ ভাইকে জানাতে। তিনি  সহযোগিতার হাত বাড়ালেন।

তৃতীয়বারের মত পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা হাতে পেলাম জুনের প্রথম সপ্তহে।  মাসুদ ভাইকে অসীম কৃতজ্ঞতা। আমরা মানবজমিনের বড় ভাই। বহু পুরনো কূটনৈতিক রিপোর্টার।

ভিসা পাওয়ার পর আব্বাকে জানালাম, বললেন ঈদের পরে যাবেন।  তবে আব্বার শরীর খারাপ হতে থাকলে রোজার মধ্যে আমরা উড়েছি।









সুখ অসুখের গল্প-১ :: বঙ্গীয় চিকিৎসকরা সবাই সুলতান সুলেমান!




' আব্বাকে চিকৎিসার জন্য ইনডিয়া নিতে চাই, কই নিমু?'
এমন প্রশ্ন বহুজনকে করেছি। ইন্টারনেটে গেঁটে অনেক তথ্য হাসিল করেছি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে  সহায়তা করেছে দিল্লি এপোলো। তাদের চিকিৎসকের ডেটাবেস এবং  সহযোগিতা আমাকে সেখানে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

এপোলোর উপরে আস্থাহীন ছিলাম আমি। তবে চেন্নাই এপোলোর একটা মেইল আমার ধারণা বদলে দিলো। তারা আব্বার এমআরআই রিপোর্ট দেখে জানালো, এ চিকিৎসার জন্য এ মুহুর্তে তাদের ডাক্তার নেই। সত্যি অভিভুত হলাম। এ রকম রিপ্লে আর কোথা থেকে পাইনি।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল মেডিকেল,  থাইল্যান্ডের মিশনারি হসপিটালেও মেইল করেছিলাম। রিপ্লে ভালো ছিল। চেন্নাই এপোলো গিয়েছিলেন সহকর্মী সৌরভ দা' তার কিছু পরামর্শও পেলাম।  আব্বা সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ড যেতে অনিচ্ছুক।  তাই বাধ্য হয়ে ইনডিয়া যাওয়ার আয়োজন।

 চিকিৎসার ব্যাপারে আব্বা একটু ভিন্ন। তার  সমস্যা, কেন তিনি এ সব ওষুধ খাবেন তা তাঁকে জানতে হবে। বাংলাদেশের ডাক্তাররা এতে প্রচণ্ড রকমের বিরক্ত হন। ল্যাব এইডের নিউরোলজির ডাক্তার সিরাজুল হক এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তার সিরিয়ার দেয়া  'মফিজ'রকে দেখিয়ে দিলেন।

আব্বা এতে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছেন।

মার্চ মাসে তাই সিদ্ধান্ত , আব্বা চিকিৎসার জন্য ভারত যাবেন। দু কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে। এক. তাঁর দুজন চিকিৎসক একই এমআরআই রিপোর্ট দেখে দু রকম পরামর্শ দিয়েছেন। দুই. চিকিৎসকরা সবাই সুলতান সুলেমান।  তাদের কাজকর্ম করতে হয় আর্দালিদের। এটা আব্বা পছন্দ করেননি।

তাই খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম। সবাই সিএমসি, ভ্যালোরের পরামর্শ দিলেন।  ইন্টারনেটে খোঁজ খবর, এসি নেইলসনের জরিপ  এসব দেখে আমরা সিমএসিকে পছন্দও করলাম। কিন্তু সিএমসি আমাদের রিপ্লে করলো কমপক্ষে  তিন সপ্তাহ সময় নিয়ে যেতে হবে। এত সময় আব্বার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। আমারো একই হাল।

 সুতরাং এপোলো বেস্ট অপশন।

প্রক্রিয়া শুরুর আগে সেখানে মেইল পাঠানো হলো। তারা  রিপোর্ট দেখে জানালেন, ৫ থেকে ৭ দিনের জন্য যেতে হবে। তবে আমরা হাতে আরো ২ দিন বেশি সময় নিয়ে ৯ দিনের জন্য উড়বো বলে প্রস্তুতি শুরু করলাম।

আব্বার পাসপোর্ট  করতে দাঁড়ালেন ফেব্রুয়ারিতে। হাতে পেলেন মার্চে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভিসার জন্য সব রেডি করেছি, দেখি আমার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের চেয়ে দিন দশেক কম আছে।  এবার নিজের পাসপোর্ট রিনিউ করতে দৌড়ালাম। ৬ হাজার  টাক সাথে ১৫ শতাংশ আবুল মাল দিয়ে  পাসপোর্ট রিনিউ করে আবেদন করতে যাবো, তখন বিভ্রান্তি শুরু।


ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট ও পোস্ট প্রাইভেসি নির্ধারণে সতর্ক থাকুন।


একটা অপহরণ চক্র সম্পর্কে আমার এক বন্ধু জানালো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এ সৈনিক অপহৃত হয়েছিল বছর খানেক আগে। যারা তাকে অপহরণ করেছে, তার কাছে পণ আদায় করেছে, তাকে হেনস্তা করেছে, তাদের কয়েকজনের লিঙ্ক আমাকে পাঠালো ইনবক্সে।

অপহরণকারী চক্রের কয়েকজনের প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম-- আমার বড়ভাই, বন্ধু ও অনুজদের অনেকেই তাদের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। এ সব মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের অনেকেই আমার ক্যাম্পাস রিপোর্টিংয়ের সময়কার বিরোধীদল, বর্তমানে সরকার দলের; আর সে সময়কার সরকারি দল বর্তমানের বিরোধী দলের সুহৃদ।

আঁতকে উঠলাম। আমি নিশ্চিত এঁরা তাদের চেনেন না। না চিনেই এরা তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছেন। কারণ এদের ওয়ালে অনেক অমৃত বচন-পোস্ট আছে।

প্রিয় সুহৃদ
দয়া করে অচেনা-অজানা কারো  ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবেন না। ছবি পোস্টে প্রাইভেসি ঠিক করে নিন। সতর্ক থাকুন।  রাস্তাঘাটে সময় বাঁচানোর জন্য প্রাইভেট বা মাইক্রোবাসে উঠে পড়বেন না।  পথ চলতে চলতে ফোন টিপাটিপির জন্য নিরিবিলি জায়গায় যাবেন না্। সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন। শুভ কাকমনা।

অন্তরে ঠাঁই নিয়েছ পপ গুরু





পপ গুরু আজম খান ছাড়া পপ জগতের ৫ বছর কেটে যাচ্ছে আজ ৫ জুন। আজো কানে বাজে তার--'ওরে সালেকা ওরে মালেকা ওরে ফুলবানু '। অদ্ভূত আবেগে, উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া একটা মধ্য দুপুর চেয়েছি, কনসার্টের সন্ধ্যা। তাঁর কণ্ঠের দরদে ভেসে যেতে চেয়েছি আরো কতগুলো বছর। তাঁর গানে গানে খুঁজতে চেয়েছি প্রিয় সন্তানকে...' আলাল কই, দুলাল কই'। এখন সব কিছুর উর্ধে পপ গুরু। ২০১১ সালের এ দিনেই আমরা তাঁকে হারিয়েছি।

২১ বছর বয়সে তার যুদ্ধে গেছেন আজম খান। ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতা। বাংলাদেশের পপ সঙ্গীতের ধারাকে করেছেন প্রাণবন্ত। এগিয়ে নিয়েছেন , ধীরে ধীরে। যেখানে মানুষ এ ধরণের গানের সাথে পরিচিত নন, তাদের এর সাথে পরিচিত করার যে চেষ্টা তিনি করেছেন, তার হাত ধরে এখন দেশে পপ ধারা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সঙ্গীত মাধ্যম। 

এখন যারা গাইছেন, আয় করছেন পপ গান করে, তারা আজম খানের কথা ভুলে আছেন, হয়ত তাঁকে মনে রাখার দরকারো মনে করছেন না। তবুও আজম খান বেঁচে থাকবেন, শ্রোতাদের অন্তরে। গুরু সালাম। তোমার গান বেঁচে থাকবে , তুমি তোমার গানের মতই শ্রোতাদের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছো।

Grameenphone ‘Go Broadband’ illegal

Grameenphone ‘Go Broadband’ illegal


Grameenphone (GP), the largest telecom operator of the country, has violated telecom rules by running ‘Go Broadband’ services, Bangladesh Telecom Regulatory Commission (BTRC) has observed. Grameenphone, in alliance with ADN Telecom and Agni Systems, offers ‘Go Broadband’ services that provide fibre-optic connections ‘by violating BTRC’s Wi-Max policy guidelines’, the telecoms watchdog said.
After a series of scrutiny over the GP explanations regarding the services, the Engineering and Operations Department of the BTRC came up with the observation last week.
In a note, a copy of which has been obtained by The Independent, the BTRC’s Engineering and Operations Department has also recommended that GP should be slapped with a monetary fine for this ‘severe violation’ of the articles 4.7 and 4.8 of the BTRC guidelines on telecom infrastructures.
“The operator cannot share or lease its infrastructure without permission from the regulator. Grameenphone, as a mobile phone operator, cannot provide wire-connectivity. The operator is also providing fibre connectivity, which can only be done by NTTN operators,” a BTRC senior official told The Independent while explaining the nature of the violations by mobile operator Grameenphone.
“It is providing wire technology connectivity to 551 branches of Sonali Bank without obtaining permission from the BTRC. It is also providing modem services what wi-max service providers Qubee and Banglalion do despite obtaining no Wi-Max licence,” he continued.
In the latest, GP has clinched a deal with Sonali Bank, the country’s largest state-owned commercial bank, to provide them with the Go Broadband services.
The BTRC, in its observation, said that by providing services to 551 branches without involving any NTTN operator and by concealing the information to the BTRC, GP has done a severe blunder of violation of rules.
It has been doing the ISP business without obtaining any license for doing this business, BTRC observes.
When asked, Brig Gen Iqbal Ahmed, BTRC director general, told The Independent that they sought the operator’s explanations regarding their findings. “Necessary steps will be taken after getting their reply,” Ahmed added.
After receiving a complaint, the BTRC, in a letter issued on March 30, pointed out six allegations of irregularities and asked Grameenphone, ADN Telecom and Agni Systems to present their explanations by April 13.
Earlier, on February 28, Internet Service Providers Association Bangladesh (ISPAB) submitted the complaint against Grameenphone and its two partners.
When contacted, Sayed Talat Kamal, head of External Communications of GP, said, “Agni Systems Ltd and ADN Telecom Ltd, in partnership with Grameenphone, have been offering Go Broadband services with specific approval from the regulator.”
Past records of GP
GP was fined on two occasions in 2007 and 2008 for offering illegal VoIP services, compelling the company to pay Tk 418 crore to the telecoms regulator. Following the VoIP scam, GP top management had to go through a major reshuffle to retain its licence to operate in Bangladesh.
More allegations pending against GP
(1) According to a 2010 audit report initiated by the BTRC, GP has also not paid Tk 3,034 crore in taxes, and concealed certain information, including the number of its subscribers, to evade tax. The report was contested by the telecoms operator that led to litigation with the High Court. As per observation of the final verdict of the case, the BTRC will now appoint a new audit firm to reassess tax evasion by GP.
(2) According to a report of the Comptroller and Auditor General (CAG) submitted in parliament on September 8 last year, the government has incurred a loss of Tk 19.20 crore over three fiscal years by realising licence fees at a lower rate, instead of the fixed rate, while leasing out Bangladesh Railway (BR) lands to GP. Under the Land Management Policy 2006, licence fees were fixed at Tk 335 and Tk 223 per sft of land respectively in divisional towns, and in district and other town areas. However, BR realised the licence fee from GP at Tk 16, Tk 8 and Tk 6 per sft of railway land in Pakshi area in the western region in the fiscal years 2007–08, 2008–09 and 2009–10. According to the audit report, this caused huge revenue losses — to the tune of Tk 19,20,46,139. Again the GP authorities have filed a writ petition with the High Court, challenging the new enhanced rates of licence fees. The issue is now pending. GP ownership structure GP is a joint venture between Telenor (55.8%), the largest telecommunications service provider in Norway having mobile phone operations in 12 other countries, and Grameen Telecom Corporation (34.2%), a non-profit organisation of Bangladesh. The other 10 per cent shares belong to retail and institutional investors.

সুখের আয়না লাগিয়েছি ফেসবুকে!

সুখের আয়না লাগিয়েছি ফেসবুকে!
অসুখের ব্যারাম সে তো সিগ্রেটের মত পুড়ে যায়
আওয়াজ তোলে না, হুুঁকোর মত... গর গর গর
শব্দ হয় না, কেবল ব্যারাম বাড়ে।

বাড়ে জীবিকার তাগিদ, হারানোর ভয়
টিকে থাকার লড়াইটা জিইয়ে থাকে কৈ মাছের মত !
দ্রোহ প্রেমহীন প্রতিটি দিন
কেবল স্ট্রেচ, স্ট্রেচ এবং স্ট্রেচের রাত বিরাত-
প্রেমহীন, প্রীতিহীন!
একেকটা দিন।

ক্ষমা করবেন, নূর জাহান বেগম!



বেগমের সাথে আমার পরিচয় অষ্টম শ্রেণি পড়ার সময়। বেগম পত্রিকার একটা ঈদ সংখ্যা খরিদ করেছিলাম, সোনাইমুড়ি বাজারের পশ্চিম মাথার পত্রিকার স্টল থেকে। সে সংখ্যায় ঝর্ণাদাশ পুরকায়রেস্থর একটা গল্প খুব ভালো লেগেছিল। সেই সাথে অসংখ্য নারী লেখককে এক মলাটে পেয়েছিলাম।। 

বেগম পত্রিকার প্রতি সেই প্রথম প্রেম। নূর জাহান বেগম দক্ষ সম্পাদকই নন, ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত পরিশীলিত এবং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ দ্বিতীয় জন এই বঙ্গে আমার নজরে পড়েনি।

নূর জাহান বেগমের সাথে সম্বাদিকতার খাতিরে একবার দেখা হয়েছিল। সম্ভবত ২০০০ সালে। বেগমের কোনো একটা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে। অত্যন্ত মার্জিত ও বিনয়ী নূর জাহান আপার আন্তরিক অভ্যর্থনা এবং সমাজ ভাবনায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। 

তাঁর প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধার জায়গা হলো, বাংলা সাহিত্যে নারীর বিশেষ অবস্থান তৈরিতে তিনি অনন্য, যিনি তাঁর পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত-সমৃদ্ধ করেছেন। 

নূরজাহান বেগমের জন্ম ১৯২৫ সালে এখনকার চাঁদপুর জেলায়। ১৯৪২ সালে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়াশুনা করে বি এ পাশ করেন নূরজাহান বেগম।

বেগমের সম্পদাক নূর জাহান বেগম গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হসপিটালে ইন্তেকাল করেন। পরে তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, নারী জাগরণ, নারীদের শিল্প-সাহিত্য-নন্দনতত্ত্ব চর্চার জগতে অনন্য বেগম বেঁচে থাকবেন সবার মনে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। 

সেই সাথে আমাদের দীনতার জন্য তার প্রতি ক্ষমা চাই। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা পদক তাঁর হাতে ওঠেনি। না বিম্পির আমলে না আম্লীগের আমলে। রাষ্ট্রের এ পদক কারা পান, কারা এর জন্য নির্বাচন করেন, এ প্রশ্নটা রাখলাম। আগে কখনো করিনি। আজ করলাম। 

তাঁর মৃত্যুর পর সবার মরাকান্না দেখছি, জীবিত থাকতে তাঁর মত মানুষকে স্বীকৃতি দিতে পারিনি। নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের জিজ্ঞাসা --- দলদাস না হলে কি বাপু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি-সম্মান মিলবে না!

কে নেবে পাহাড়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব?


ব্যক্তিভাবে আমি সব-মত-পথ-রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক-সম্প্রদায়গত নিপীড়নের বিপক্ষে। সেটি যে কোনো বাহিনীরই। কিন্তু দেশের সামরিক নীতি,  নিরাপত্তা আয়োজনকে প্রশ্ন করতে পারি না। কিছু বিষয় তো এমন যেটা সরলীকরণ করা যায় না। আবেগ দিয়ে বিচার করা যায় না।  সব যদি আবেগের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে বহু কিছু আমাদের হারিয়ে যেতে বাধ্য!

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব  প্রতিরক্ষা বাহিনীর।  সে জন্য কোথায় ঘাঁটি গাঁড়তে হবে, সেটি নির্ধারণ করার দায়িত্বটা  রাজনৈতিকের চেয়ে সামরক নীতির অংশ বলেই মানি। সে হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকবে কিনা--- সে সিদ্ধান্তটা আসলে সামরিক কৌশল ঠিক করা লোকদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।

কিন্তু যারা প্রতিনিয়মত পাহাড়ে সেনা নিয়ে উসখুশ করেন, তারা আসলে কী বোঝাতে চান--- সেটি পরিষ্কার নয়।

দুর্গম পাহাড়ি জনপদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে  সরকার যে কোনো ধরণের বাহিনীর  সহায়তা নিতে পারে এবং সেটিই যৌক্তিক। কিন্তু  পাহাড়ে সেনা উপস্থতি  কেন থাকবে না!  এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা কি?

সেনা সদস্যরা পাহাড়ে কী করেন--- তাদের না থাকার কারণ কি হতে পারে? এ সব প্রশ্ন  সেখানকার সাধারণ পাহাড়িদের নেই বললেই চলে।  তবে এটা নিয়ে বেশি সোচ্চার বেদিশেী ফান্ড প্রাপ্তরা। বিশেষত বেসরকারি সংস্থা ও নামকাওয়াস্তে গবেষক--- যাদের বেশির ভাগই একটা ইস্যু ধরে রেখে আলোচনায় থাকতে চান।

এক কল্পনা চাকমা অপহরণ অভিযোগ বাদে  উল্লেখ করার মত গুরুতর অভিযোগও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেই!  বরং সম্প্রীতি রক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর  অপরাধ দমনে তারা সেখানে  বহু বছর ধরেই কাজ করছেন;  এটা সবারই জানান।  অপহরিত বহুমানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী সফল হয়েছে।

পাহাড়ি নেতাদের কারো কারো অভিযোগ--- সেনা বাহিনী পাহাড়ে বাঙালিদের  সহায়তা করে! এ অভিযোগ যারা করেন, তাদের নিয়ে বাঙালিদের মনবেতর জীবন যাপন পরিদর্শন করলে-- এ অভিযোগ টিকবেনা ; আমি নিশ্চত করেই এটা বলছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।

পাহাড়ি জনপদ আর সমতলের মধ্যে তফাৎটা কারো অজানা নয়। মায়নমারের সাথে আমাদের কয়েক দফা সীমান্ত সঙ্ঘাত হয়ে গেছে। দিন দিন সে ঝুঁকি বাড়ছে। সেভেন সিস্টারের সাথে আমারে সীমান্ত আছে। খাগড়াছড়িতে অর্ধশতাধিক কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত।এ রকম প্রেক্ষাপটে পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি না থাকা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য প্রচণ্ড হুমকি।

তারপরেও চুক্তি মেনে ১৯৯৭ সালের পর থেকে নিয়মতই অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এটি রাষ্ট্র বেশ ঝুঁকি নিয়েই করছে; এতেও পাহাড়ি মানুষ নিয়ে ব্যবসা করা লোকরা অসন্তুষ্ট! এ অসন্তুষ্টি হয়তো তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা হচ্ছে; সেটি দেশর নিরাপত্তাকে হুমকি রেখে---

পাহাড়ি ও বাঙালি দু'টো জাতি সত্ত্বা আলাদা হলেও জাতীয়তা অভিন্ন। রাজনৈতিকভাবেই দু'টো জাতি সত্ত্বার সঙ্কট নিয়ে আলোচনা  অব্যাহত রেখে, আস্থার সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সমস্যার  সমাধান করতে হবে।  বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সেনা বিরোধীতা আর বাঙালি-পাহাড়ি বিরোধ জিইয়ে রেখে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়!

খবরের কাগজে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ জানলাম---পার্বত্য চুক্তির অংশ হিসাবে  ইতোমধ্যে ২৩২টি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প থেকে  ১১৯টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১০ ফেব্রুয়ারি সংসদকে জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তির আলোকে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীর সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ছয়টি গ্যারিসন--- দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, রুমা ও আলীকদমে প্রত্যাবর্তনের বিধান রয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, গ্যারিসনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নও চলমান।  রুমা গ্যারিসনের ৯৯৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গ্যারিসনসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন করে সময়োচিতভাবে অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীকে নির্দিষ্ট গ্যারিসনসমূহে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে।

আর ৮ মে বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবের পাশে দুই একর জমির ওপর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সেনা ক্যাম্পগুলো অধিকাংশই তুলে নেয়া হয়েছে জানিয়ে  প্রধানমন্ত্রী  বলেন, 'যা সামান্য কিছু আছে- চারটি জায়গায় কেবল ৪টি ব্রিগেড থাকবে। বাকিগুলো সব সরিয়ে নেয়া হবে। যে জন্য রামুতে আমরা একটা সেনানিবাস করেছি।'

পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন-২০০১ এর কতিপয় সংশোধনীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এ বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে সম্ভব সবকিছু করতেই সরকার প্রস্তুত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরাও বাংলাদেশের নাগরিক। সুতরাং সরকার ওই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎখাত এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।'

পাহাড়ে বাংলাভাষি নাগরিকরা এর প্রতিবাদ করছেন। হরতাল অবরোধ করবেন বলে হুমকির খবরও আমরা দেখছি। এটা কতটা দরকার সেটাও ভাববার দরকার। একই সাথে সেনা তুলে নেবার পর সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করাটাও জরুরী। সেনা উপস্থিতির মধ্যেই সেখানে অহরহ গোলাগুলি আর খুনের ঘটনা ঘটছে। সেনা তুলে নিলে সেখানকার নিরাপত্তা ঝুঁকি কাটাতে সরকার সেখানে অন্য কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়াবে? কে নেবে নিরাপত্তার দায়িত্ব?  এমন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!

কিস্তি ৪৩: রমণী জগতে

ক্যাম্পাসে নারী জগতে আমার সমধিক খ্যাতি ছিল। ইহা অস্বীকার করিবার মত ইচ্ছে আমার নেই। তবে ইহাও সঠিক যে আমি কাহারো কোনো অনিষ্ট করি নাই, করিবার ইচ্ছেও করিনি। এতেই হয়তবা এখনো আমার পুরনো নারী বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার সুযোগ থাকছে। আছেও বটে। ইহা শুনিয়া অনেকে আশ্বস্ত হইবেন। আশা করি। 

আমার বন্ধূ আসমাউল হুসনা লাকীর মতে ‌আমার মত ‌'বেক্কল' কে কেন নারীরা পছন্দ করতেন , তাহার কোনো কারণ অনুসন্ধান করিয়া আবিষ্কার করিতে পারি নাই। কাহারো জানা থাকিলে জানাইবেন। নিজের কীর্তি নিয়া আমি মহা বিরক্ত। 
ক্যাম্পাসে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে? এর উত্তরে অনেকের নাম বলতে হবে। তবে রিফাত, ফজিলাতুননেসা মুজিব হলে থাকতো। আমি ও শামীম (বর্তমানে রেডিও টুডেতে আছে) দুজনেই প্রায় আড্ডা দিতে তার হলে হাজির হইতাম। রিফাতও এসএম হল, সাংবাদিক সমিতি এবং বঙ্গবন্ধু হলে আসিত। আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। 

ক্লাশে আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু ছিল। এর মধ্যে তাপসী রাবেয়া, যাকে আমি অতসী বলে ডাকতাম। সানজিদা, যাকে আমি ডাকসু কাফেতে সেকেন্ড ইয়ারের সময় বলেছিলাম , আমাকে যেহেতু তোর এত পছণ্দ তাইলে চল কাঁটাবন কাজি অফিসে গিয়া বিয়া কইরা ফালাই। ও তো পুরাই বেক্কল হইয়া আমার দিকে তাকাইয়া থাকিল, বুঝিতে পারিল না- বেকুব কে? আমি না ও। 

আমার ক্লাশের মাহফুজা খানম রিফাত, শিউলীর সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আশার কথা ভোলা যাবে না। তবে ও আমাদের যে মেয়ে ক্লাশমেটের সাথে ঘুরতো, তাকে আমার পছন্দ ছিল না। পরে অবশ্য পারভেজের সাথে ওর সম্পর্ক হওয়ায়া অন্য সবার চেয়ে আমি একটু বেশি খুশি হয়েছিলাম, ও অন্তত নটি গার্লের পাল্লা থেকে রক্ষা পেলো। 
আমার ক্লাশের অন্য বন্ধুদের মধ্যে পিপি, সাথী, হ্যাপি আরো অনেকের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমাদের শিক্ষাজীবনে বিশেষ কোনো আনন্দ আয়োজন না থাকায় আমরা আরো ঘনিষ্ঠভাবে মিশিবার সুযোগ পাই নাই। তার ওপর আমার মত একজন সম্বাদিকের সাথে আড্ডা মারিবার জন্য যে সময় দেয়া প্রয়োজন, সেটি আমি দিতে পারি নাই বলিয়াও নানান সমস্যা ছিল। 
কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী আমাকে বেশ পছন্দ করিতেন বলিয়া জানি, কিন্তু তাহারা পদ ও পদবির জন্য তাহাদের দলের নেতাদের মনোরজ্ঞন করিয়াছেন, জানিবার পর তাহাদের সাথে আমি আর সহজ হইতে পারি নাই। 
শামসুন্নাহার হলের এক নেত্রী আমার প্রায় প্রেমেই পড়ে গেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ রক্ষা আমি বেঁচে গেছি। উনি এখন বিসিএস কর্মকর্তা। বড়ই ভাগ্যবান। আমি নগরের কেরানী। তবে খারাপ না ভালো আছি। 
আমার একজন সিনিয়র বন্ধুর না কথা না বললে এটি অপূর্ণ থেকে যাবে, সে হলো বনানী। বনানী মল্লিক। খুবই হাসিখুশী । তবে আমার রুমমেট মাসুদ ভাই বলতেন মাথায় হাল্কা ডিস্টার্ব। বনানী এই লেখা পড়লে আমার মাথা ফাটাবে। মাসুদ ভাই আরো জানিয়েছেন সাংবাদিক সমিতির সদস্য সাবু ভাই তাকে পছন্দ করতেন, তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাটে বলে হয়নি। যাক গে সে কথা। বনানী মানবজমিনে জয়েন করার পর গোপাল দা-র চেশ্বারে সাবু ভাই আমাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ওর সাথে আমার ক্যাম্পাসের অনেক আড্ডা, দুষ্টুমি, শেয়ারিং। ভালোই ছিল। ২০০২ সালের দিকে আমার ছোটবোন অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হলে ও দেখতে গেছিল। আমার মায়ের ধারণা ছিল আমি ওকে পছন্দ করি। মা খুব খুশী মনে তার খবর নিয়েছিলেন। পরে অবশ্য মা বুঝতে পারেন উচি যেটা অনুমান করেছেন সেটি ভুল ছিল। 
আমার আরেকজন বন্ধূর নাম বলিতে হইবে। সে হইলো তিতলি। ব্ল্যাকবেল্ট পাওয়া, আমার দেখা একমাত্র কন্যা। সেনা কর্মকর্তার কন্যাকে আমার বেশ ভালো লাগিত। আমার বন্ধূ বাবকু ও মাহমুদ বলিত, তুই যদি তিতলিকে বিয়ে করিতে চাস, তাইলে তারে প্লাস্টিক সার্জারি কারানোর ব্যবস্থা করা হইবে। মানে কন্যা বর্ণে কৃষ্ণ। ইহা নিয়া আমার কোনো আপত্তি না থাকিলেও আমার বন্ধুদের ছিল। আমি বলিলাম, বিয়া করিবাবার কোনো ইচ্ছা এখন নাই। যখনই হইবে তখন কণ্রা খু*ঃঁজিয়া বাইর করিলে চলিবে। ফরে অবশ্য আমি সে সুযোগ কাউকে দেই না। নিজের পাত্রী নিজেই বাহির করিয়া ছিলাম। 

নারী বিষয়ক ক্যাম্পাসে যে সব বিশেষজ্ঞের কাছে আমি হার মানি তাদের মধ্যে আমার গুরু আজাদ বস, মাসুদ ভাই ও সাইমুম ভাই। এসএম হল ও বঙ্গবন্ধু হলের আমাদের বহুত জোছনা ভরা রাত কেটেছে এ সব আড্ডায়। ফোনে অনেকের সাথে পরিচয় কথা বার্তা হতো, সে সব নিয়ে নিজেদের আড্ডাও জমত বেশ। একাই নারীর সাথে আজাদ বস, সাইমুম ভাই ফোনে আলাপ করতেন, ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আমি তাদের কাছ থেকে তা জেনেছি। নম্বর মিলিয়ে দেখেছ ঘটনা সত্য। আজাদ বস. সাইমুম ভাই , মাসুদ চৌধুরী এদের নিয়ে একটা আলাদা পর্ব না লিখলে অবিচার করা হবে। তাই সামনের কোনো এক পর্বে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখবো। 
যারা আমার নারী বিষয়ক গল্প শুনতে চেয়েছিলেন, তাদের জন্য এই পর্বখানা উৎসসর্গ করিলাম, বিশেষ করে তানভী। যে মনে করে আমি রয়ে সয়ে সব বলছি, তার জন্য। 

কিস্তি ৪২: মজা লন

সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্ব নিয়া নানা কিসিমের গণ্ডগোল ছিল। যেমন নোয়াখাইল্যা, বরিশাইল্যা বিভাজন। মজার ব্যাপার বরিশ্যাইল্যাদের নেতা আবার যশোর আর চাঁদপুরের। নোয়াখাইল্যাদের নেতা নোয়াখাল্যাই ছিল। এর ভেতর আবার অনেকে অন্য অনেক এলাকার ছিলেন। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিল। আমি যে গ্রুপে ছিলাম সে গ্রুপ লিডার প্রথম দিকে ছিলেন বরিশাইল্যা মামুন ভাই। পরের লিডার ময়মনসিংহের কবির ভাই। আমি ডেপুটি লিডার ছিলাম। নেয়াখাইল্যা। 

সাংবাদিক সমিতির রাজনীতিটা মোটা দাগে দুভাগে বিভক্ত। একথা আমি আগেও বলেছি। ছাত্রলীগ সমর্থক গ্রুপ এবং তাদের এন্টি গ্রুপ। মজার ব্যাপার হলো ছাত্রলীগ সমর্থক গ্রুপে লোক বেশি, ভোটার কম। ভোটার কম মানে ভোটে দাঁড়াইলে আমরা ভোট পাইতাম কম। দু চাইরটা ভোট নাই। সেকি অবস্থা। বলেন দেখি। 
এখান থেকে কবির ভাই কয়েকবার ইলেকশন করেও সভাপতি হইতে পারেন নাই। আমি নিজেও সেক্রেটারি খারায়া ডিপিট মারছি। হে হে হে। তবে ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়। আমি একবারই গেছি। দ্বিতীয়বার ইলেকশন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু গ্রুপের ভোটেও এগিয়ে ছিলমা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তুষার ভাই জিতবেন বলে নিশ্চিত করাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। উনি কথা রেখেছেন, উনি জিতেছেন। তবে কবির ভাই ডিপিট খাইছেন। 

এন্টি ছাত্রলীগ সমর্থকদের অনেকে শিবির ঘরাণার। এক দুজন ছাত্রদলের ছিলেন। আমি তাই ও পথে ছিলাম না। তবে অনেক প্রগতিশীল, এখন জামাত শিবিরের গুষ্টি উদ্ধার কইরা টিভি চ্যানেল আর পত্রিকায় মজা লন, এ রকম অনেকে তলে তলে , আবার অনেকে সরাসরি শিবির ঘারনার গ্রুপে ছিলেন। শিবিরের নুন খাইয়া নিজের নাম সাংবাদিক সমিতির প্রেসিডেন্ট সভাপতির লিস্টে তুলেছেন। কিন্তু উনাদের নাম নেয়া যাবে না। নিলে উনারা মাইন্ড করবেন। উনাদের একটা ইজ্জত আছে না। এ ক্ষেত্রে একজনের নাম তবুও লইতে হয়। উনি সম্রাট ভাই। শিবির সমর্থক গ্রুপ থেকে উনি সভাপতি হইছেন। 

এ রকম আরো অনেকে আছেন। শিবিরের দয়ায় সাংবাদিক সমিতির বোর্ডে নাম তুলছেন । তবে এ ক্ষেত্রে কবির ভাই ব্যাতিক্রম। তাকে তার অনেক বন্ধু অপছন্দ করে। আমি তাদের বিরোধীতা করি। কারণ কবির ভাই আর যাই হোক চূড়ান্তভাবে তার গ্রুপের বিরুদ্ধে গিয়ে সমিতির বোর্ডে নিজের নাম তুলিবার চেষ্টা করেন নাই। সবাইকে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হইতে হইবে এমন কোনো কথা নেই। আমি তাকে এ জন্য অভিনন্দন জানাই। 

যেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং মুক্তিযোদ্ধার সমর্থক হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে রাতের আঁধারে আঁতাত করে নিজের যোগ্যতা না থাকার পরেও শিবিরের দয়ায় সভাপতি ছিলেন। কিন্তু উনার মুখে বাইরে কেবল শিবির বিরোধি কথা বার্তা। 

সাংবাদিক সমিতির রাজনীতি করে আমার অভিজ্ঞতা হইলো যারা শিবিরের সবচেয়ে বেশি বিরোধী তারা সবাই শিবিরের কোনো না কোনো ভাবে সুবিধাভোগি। এবং খুব ভালো রকমের সুবিধা হাসিল করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলা যাবে না। অনেকটা ভাসুরের নাম নেয়া যাবে না টাইপের অবস্থা। 

এ লেখাটার জন্য অনেকে ক্ষেপবেন জেনেও নতুন প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টারদের দিকে তাকিয়ে এটি লিখলাম। যে কাউকে তার নিশ্চিত পরিচয় জেনে সমর্থন দেয়া উচিৎ বলেই আমি মনে করি। এখনো বিশ্বাস করি সাংবাদিক সমিতির মুখোশের আড়ালে লুকনোর রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।


৩০ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

কিস্তি-৪১: এত রাতে কে রে?

সাংবাদিক সমিতিটা ছিল অন্য রকম এক আনন্দ আড্ডার জায়গা। বিকাল বেলায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে যুগল আড্ডা দেখতে দেখতে আমরা সাংবাদিক সমিতির অফিসে ঢুকতাম। নিজেদের প্রিয়জন বেলা ডোবার আগেই হলে কিংবা বাসায়। তাতে কারো আফসোস ছিল না। কারণ রিপোর্টারদের জীবনটা এমনই। 

আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসাবে কোনো নারী ছিলেন না। পরে ছিলেন বিডি নিউজের তানভী, এখন ইনডেপেনডেন্ট টিভিতে ও নিউ এজের একজন। আগে ছিলেন ফারজানা রূপা। সে সময় মাতৃভূমিতে কাজ করতেন। 

তবে নারী মুক্ত এ সাংবাদিক সমিতিতে কম মজা হতো না। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মজার পাবলিক ছিলেন মঈনুল হক চৌধুরী সাহেব। উনি সে সময় অর্থনীতি পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ছিলেন। ছোট বড় সবাইকে আপনি করে বলেন। চাটগাঁর ছেলে মইনুল রসে ভরা। সে রকম রসালো সব কথা তার। আমার তাকে বেশি ভালো লাগতো। কারণ হলো মঈনুল ভাই সব সময় হাসি মুখে থাকতেন। এটা তার ভালো গুণ। সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারো ওপর রাগ না করা । এক কথায় এ ক্ষেত্রে অসাধারণ। আমাদের মধ্যে যারা এডাল্ট জোকস বলে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, মঈনুল ভাই তাদের একজন। অন্যজন আবুল কালাম আজাদ। চুটকি আজাদ নামে তার সমধিক খ্যাতি ছিল। সে সময় মুজাদ্দেদ পত্রিকায় কাজ করতো। মজার লোক আজাদ আমাদের ভালো বন্ধুও বটে। প্রেম ট্রেমের ধারে কাছে নেই, ক্লাশ পরীক্ষা আর অফিস নিয়ে মতোয়ারা। 

রাতে ফিরে সবাই সাংবাদিক সমিতির চ্যানেল বদল নিয়ে হাতাহাতি, ঝগড়া আবার যাবার বেলায় সব মিটমাট। সে সময় আমরা হিন্দি রিমিক্স গানগুলো বেশি দেখা হতো। সেই রকম সব রগ রগে দৃশ্য। যেহেতু কোনো তরুণী এখানটায় রাতের বেলা ঢু মারতেন না। তাই এখানে সেন্সর করে টিভি দেখার প্রয়োজন ছিল না। সে সময় সোনিয়া গানটা খুব জনপ্রিয় ছিল । আমরা সবাই মিলে উপভোগ করতাম। 

আমাদের মধ্যে আরেকজন ছিল মজা করতে পছণ্দ করতেন তিনি শঙ্কর দা। বাইরে থেকে দেখে বেশ রাশভারি মনে হলেও তার মনের ভেথর যে এত অফুরান আনন্দ আছে সেটি অনেকে টের না পলেও আমরা জানতাম। সব মিলিয়ে সাংবাদিক সমিতির বিকাল গুলো ভরে উঠতো আনন্দ আড্ডা আর নিউজ শেয়ারিংয়ে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলতে কৌতুক, হাসি ঠাট্টা। শেষের দিকে আমাদের এই নটি কৌতুক আসরে যুক্ত হয়েছিল শামীম। সে ডেইলি ইনডেপেনডেন্টে ছিল। বর্তমানে রেডিও টুডেতে। তবে সেলিম ও ইশতিয়াক ওরা দুজনেই এখন নিউজ রুম বস। ওরা এ ধরণের কৌতুকে আগ্রহ দেখাতো না। ইশতিয়াক এখন বাংলা নিউজের চিফ অব করসেপনডেন্ট এবং সেলিম হেড অব নিউজ, রেডিও টুডে। আমার দেখা দুজন অসম্ভভ ভালো ছেলে। ওদের নিয়ে পরে কোনো একটা আলাদা কিস্তি লিখতে হবে। 

অনেকে আমাকে কৌতুকের জণ্য চাপাচাপি করতেন। আমি একটাই এডাল্ট কৌতুক জানতাম। সেটি শোনানো যাচ্চেছ না। তবে সে সমসয় বন্ধুরা সবাই বলত‌ 'এত রাতে বুকের ওপর কে রে? মাসিমা আমি অমল ... ‌বাবা অমল... এ যে পাপ... এ যে অধর্ম'। এটা নিশ্চয় প্রথম আলোর মোশতাক, বাংলা নিউজের ইশতিয়াক, রেডিও টুডের শামীম, বিডি নিউজের মঈনুল ভাই , সরকারি চাকুরে আজাদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যাকারিয়া ভাই, ডেইলি স্টারের তুষারসহ অনেকে বুঝতে পারছেন। এ কৌতুকটা মাসিমার সাথে ভাগ্নের ফিজিক্যাল রিলেশন নিয়ে !
২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৩৭