কিস্তি-৩৭: ঘটনার পেছনের ঘটনা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসাবে আমার ওপেন হওয়ার কয়েকদিন পরে মধুর ক্যান্টিন, গোপাল দা'র দপ্তর এবং আশরাফ ভাইয়ের চেম্বারে যাতায়াত শুরু করলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টারদের প্রায় সবাই ছিলেন অচেনা। আমি আস্তে আস্তে চেনার কাজ শুরু করেছি। ডাকসুর সামনে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ফরিদ আহমেদ সাজু ভাই। সে সময় উনি কাজ করতেন ইউএনবি -তে। এখন বিসিসিতে আছেন।
আমার পছন্দের সাংবাদিকদের একজন। সাজু ভাই নামেই আমরা তাকে চিনি। সাজু ভাই যে কোনো ঘটনার পেছনের ঘটনা খুঁজে বের করতে অসাধারণ প্রতিভাধর। তার কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে। হালকা পাতলা মানুষ সাজু ভাই হালাকা বিড়ি বুড়ি খান। সাথে পানীয়ও। আমি ও তার সহযোগি ছিলাম।
ভালো লাগতো সাজু ভাইকে, তার সবচেয়ে বড় কারণ উনার একজন ভালো রিপোর্টার।
আমি তাকে সালাম দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে বললেন, রূপালীতে কাজ করেন। আমি তাই সত্য ধরে নিই। পরে অবশ্য অন্যদের সাথে আলাপে জানি উনি ইউএনবিতে কাজ করেন।
সাজু ভাই পরে খুব ফ্রেন্ডলি। আমার সাথে তার সম্পর্ক এখনো চমৎকার। আমাকে পছন্দ করেন বলেই জানি। এখনো যোগাযোগ আছে।
সাজু ভাইয়েরা সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টিংয়ের শেষ পর্যায়ে ছিলেন। এ রকম যে ক'জনই ছিলেন তাদের মধ্যে সাজু ভাই খুবই শার্প রিপোর্টার।
সাজু ভাই ছাড়াও অন্য আরো অনেকের সাথে অল্প সময়ে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। সে সুবাধে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে কানাচের খবরের উৎস গুলো দ্রুত রপ্ত করে নেয়র সুযোগ হয়েছিল আমার। এ কারণেই হয়ত সবার আগে অনেক খবর পেতে শুরু করলাম। অনেকে মনে মনে ঈর্ষা করতেন। তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। তার ওপর সাংবাদিক সমিতির রাজনীতি। আমি কোন দলে ভিড়ব, কোন দলের সাথে থাকবো তা নিয়ে সংশয় চলছিল। আমি খুঁজলাম কারা আমার সাথে চলতে পছন্দ করতেন তাদের, সিদ্ধান্ত ছিল যে গ্রুপেই থাকিনা কেন, সবার সাথে সমান সম্পর্ক। একই সাথে সবার সাথে সবার একটা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিরও ইচ্ছে ছিল। যেটি পরে আমার বিপরীত গ্রুপের বন্ধু শামীম কন্টিনিউ করেছিল।
পরের কিস্তি সাংবাদিক সমিতির তালা খোলা নিয়ে

১৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

কিস্তি -৩৬ :শত চাপ উপেক্ষা করেও তিনি অবিরাম লিখে যাচ্ছেন!

মতি ভাই, মানে মতিউর রহমান চৌধুরী। আপাদমস্তক একজন পেশাদার সাংবাদিক। বিএনপির প্রতি তার সফট কর্ণার আছে। কিন্তু রিপোর্ট যদি সত্য ও সঠিক হয়, তথ্য যদি ঠিক থাকে সে রিপোর্ট আটকায় না। অন্তত মানবজমিনে আমার তিন বছরের কর্মকালে আমি এমনটা দেখিনি। আমি নিজেও মতি ভাইয়ের মতাদর্শে বিশ্বাসী।

বাংলাদেশে যে ক'জন সাংবাদিককে শ্রদ্ধার সাথে বিবেচনায় আনি মতি ভাই নাম্বার ওয়ান। শত চাপ উপেক্ষা করেও তিনি অবিরাম লিখে যাচ্ছেন। তার লেখার একজন ভক্ত আমি। ছোট বেলা থেকে আমার স্বভাব- যে কারো লেখা হাতের কাছেই পেলে পড়ে ফেলা। এ ক্ষেত্রে আমি কোনো চয়েস রাখি না। কারণ হলো, একজন খারাপ লেখকও একটা ভালো লেখা উপহার দিতে পারেন।আর না পড়ে কারো বিষয়ে মন্তব্য করাটা আমার পছন্দ নয়। আমি যে ক'জন মানুষের লেখা অনুসরণ করি তাদের মধ্যে মতি ভাই অন্যতম। তার লেখা শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যাবে না।উনি নামে লিখুন, আরি বেনামে লিখুন পড়তে বসলে লেখার স্টাইল দেখে আমি বুঝতে পারি। তবে মতি ভাই ভালো লেখেন, আমি সে কথা তার কাগজে চাকুরি করার সময় কোনো দিনই বলিনি। কারণ কিছু নয়, আমার আসলে কাউকে সরাসরি প্রশংসা করতে ভালো লাগে না। অন্যের কাছে বলি, অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করি। তবে ইদানিং পাবলিক রিলেশনের কাজ করতে গিয়ে অনেকের অনেক প্রশংসা সামনে করতে হয়। কারণ এত অনেকে বেশ খুশীই হন। আবার অনেকে বেজার হওয়ার ভান করলেও খুশী যে হন সেটি আমার বুঝতে অসুবিধে হয় না। প্রশংষা পেলে কে না খুশী হয়, আমি নিজেও হই! হা হা হা। 
মতি ভাই মানবমজিনের প্রধান সম্পাদক ছাড়াও ভয়েস অব আমেরিকা রিপোর্টার। মানবজমিনে বিশ্ববিদ্যালয রিপোর্টার থাকার সুবাধে ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা কারার সুযোগ আমার হয়েছে। তিনি অত্যন্ত সহযোগি একজন মানুষ। আমার অনেক রিপোর্ট তিনি দেখে দিতেন। আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে তার মত একজন মানুষ এখনো আমার মত অতিশয় ছোট একজন রিপোর্টারকে মনে রেখেছেন। 
মতি ভাই সাহসী মানুষ। বয়স তাকে হার মানাতে পারেনি, পারার কথাও নয়, নিউজই তার নেশা। তাকে রাজনীতির সুতোয় বাঁধা যাবে না। দেশের স্বার্থে তাকে আমি সব সময় আপস হীন দেখেছি।মানব জমিনে মতি ভাই রিপোর্টারদের এক বসায় অন্তত ৫০ টা আইডিয়া দিতে পারতেন। এবং সে সব রিপোর্ট ছিল পড়ার মত। আমার সাংবাদিকতা জীবনে পরম সৌভাগ্য তার মত একজনের সাতে কাজ করতে পেরেছি। মতি ভাই এখনো বলেন, যে কোনো সময় তার কাগজে আমার জন্য পথ খোলা। সেটি উনি না বললেও আমি জানি। আমি একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম। এখনো আমার মন মানবজমিনে পড়ে থাকে। এর সব চেয়ে বড় কারণ আমাকে সাংবাদিক হিসাবে যারা চিনেন তার পুরো কৃতিত্বটাই মানবজমিনের। ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অনেক আলোচিত রিপোর্ট করার সুযোগ আমার হয়েছে। সব ধরণের রিপোর্ট করে রিপোর্টিং শেখার একটা অনন্য সুযোগ আমি এখানে পেয়েছি। তাই এখানকার কথা একটু বেশি করেই বলতে হবে, কারণ আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টে ছিল মানবজমিন। 
ব্রডশিট কাগজে আমি এর আগে কাজ করেছিলাম, সেটি প্রথম আলোতে। সেখানেও আমার আলোচিত রিপোর্ট ছিল। বিশেষ করে বেগম বাজার শাহী জামে মসজিদের জায়গা দখল করেছিলেন সে সময়কার লালবাগ এলাকার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম। সে জমি এখনো উদ্ধার হয়নি। সেখানকার দখলদারিত্ব নিয়ে আমি একটি প্রতিবেদন করার পর কোটি টাকার মানহানির হুমকি দিয়েছিলেন এমপি সাহেব। কিন্তু আমার কাছে সব ডকুমেন্ট থাকায় শেষ পর্যন্ত এমপি সাহেব হালে পানি পাননি। তবে প্রথম আলো তার একটা বক্তব্য পরে প্রতিবাদ আকারে ছাপিয়েছে। এতে আমার কোনো ক্ষোভ বিক্ষোভ নেই। তবে প্রথম আলোর ঢাকায় থাকি পাতাটা বন্ধ না হলে আমার মানবজমিনে আসা হতো না। মানব জমিনে আসার গল্পটা আপনাদের আগেই শুনিয়েছি।

সামনের কয়েক পর্বে ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির রাজনীতি নিয়ে কথা হবে , আশা করি।

১৬ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭

দুঃখিত!

সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে কান ধইরা খারায়া থাকনের কোনো মাহাত্ম আমি খুইজ্জা পাইলাম না। দুঃখিত। 
হয়ত রইদ, বৃষ্টিতে ভিজ্জা প্রতিবাদ-গুম কিম্বা লাঠিপেটা খাওনের হাত থেকে বাঁচনের সহজীয়া উপায় এইডা। 
এর মর্ম উপলব্ধি কইরতে ব্যর্থতার জন্য আবারো দুঃখিত।

রাজনীতির দাঁড়ি টেনে শিক্ষক অপমান সইবেন না! প্লিজ



একজন লেখকের নাম মনে পড়ছে, যার কাছে শুনেছিলাম হিন্দু ছাত্র ছিল বলে হোস্টেলে তারা গরু গোশত খেতেন না। তিনি 'জিবরাঈলের ডানা'র গল্পকার শাহেদ আলী।

আমরা মোছলমানরা অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল। খেয়াল করবেন, আমি কিন্তু মোছলমানের কথা বলেছি, আমি  অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীলদের কথা বলছি না, যারা  ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেন এবং আমি  মৌলবাদী রাজনীতিকদের কথাও বলছি না যারা মানুষের মাঝে ভাগ করেন।

ভাটি বাংলায় মানুষের বিভেদটা আমরা বহু আগেই করেছি।  শিক্ষকদের কটাক্ষ আমাদের নেতৃস্থানীয়রাই করছেন। আমরা সুযোগ বুঝে, পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করি। এ একটা জিনিস  মানতে পারি না। শিক্ষকদের হেলা, অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না।

আমি বলছি না, জগতের সব শিক্ষক মহান হবেন, সব দল মত  শিক্ষকদের  একই রকমের শ্রদ্ধা পাবেন , রাষ্ট্র একই ভাবে মূল্যায়ন করবে। এটা কেন বলছি, কারণ এখানে রাজনীতিই মুখ্য। ধর্ম নিয়ে ব্যবসার রাজনীতি, নোংরামি এখানে প্রচণ্ড রকমের। আসলে মনে যদি কেউ  পরধর্ম সহিষ্ণু না হন, লো্ক দেখানো ভাব নিয়ে বেশি দিন চলা ভারি মুশখিল। অভিনয় সব সময় করা যায়, তবে সব সময় একই রকম  মুখোশ লাগিয়ে থাকা যায় না।

সেলিম ওসমান  যে কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন, যে অজুহাতে তিনি এর দায় থেকে নিজেকে মুক্ত মনে করছেন---তাতে  আমরা সবাই অত্যন্ত  আহত বোধ করছি।  একজন রাজনীতিক, জনরোষকে সামলানোর জন্য একজন শিক্ষককে  কান ধরে ওঠবোস করানোই সমর্থন দেবেন এটা কোনো  বিচারেই  গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি জনরোষ সামলাতে তিনি অক্ষম হন, তাহলে তিনি রাজনীতিক নন, তিনি রাজনীতিক হতে পারেন না।

শিক্ষক পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তান হিসাবে  শ্যামল কান্তি ভক্তের অপমানের ব্যথা, কষ্ট এবং অসহনীয় যন্ত্রণা আমাকেও কুরে কুরে খাচ্ছে, প্রতি মুহুর্তে। চোখরে সামনে ভাসছে একজন নিরীহ অসহায় মানুষের মুখ, যার কানে হাত! কম বেশি সবার জানা রাজধানীসহ সারা দেশে ৯৯.৯৯ শতাংশ স্কুল কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকরা স্থানীয় রাজনীতিকদের কাছে জিম্মি।

বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের  নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিই তাদের হাতে । পছন্দ না হলে তাকে নিয়ে কু রাজনীতির চর্চা বহু আগে থেকেই আমার সরাসরি দেখা। তাই শিক্ষকদের রাজনৈতিক হয়রানি কবল থেকে রক্ষা উপযোগি  শিক্ষাও শিক্ষার্থীদের দেওয়া দরকার।  শিক্ষার্থীদের কেউ না কেউ বড় হয়ে নেতা, সন্ত্রাসী, ধনবান হচ্ছেন, যারা শিক্ষকদের জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য কান ধরে ওঠ বস করাচ্ছেন!

 ক'দিন আগে মওলানা আবদুল লতিফ নেজামী অভিযোগ করেছেন,  সিলেবাস থেকে কাজী কাদের নেওয়াজের 'শিক্ষাগুরুর মর্যাদা' মর্যাদা কবিতাটি তুলে দেওয়া হয়েছে। ড. কাজি দীন মুহম্মদের বিনয় নম্রতা উঠে গেছে আরো বহু বছর আগে। তাহলে সুশিক্ষা ! মিলবে কোথায়!

দেশে শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনা এটাই প্রথম, তা কিন্তু নয়। খেয়াল করবেন, আমরা গত কয়েক বছরে বহু শিক্ষক হামলার  শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহকে মারধর করে, জামা কাপড় ছিঁড়ে অর্ধনগ্ন করা হয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে।

আমরা এও দেখেছি প্রজন্ম লীগ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিটেয়েছে সঙ্ঘাত ঘটাতে পারে, এমন আশঙ্কায়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ দেখিনি, কেন দেখিনি, তা হলো এর বিরোধী মতের শিক্ষক।

আবার জাফর ইকবালের মতো  জনপ্রিয় শিক্ষককেও আমরা সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ে  অপমানিত হতে দেখিছি।  বয়োজ্যাষ্ঠ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীয় ড. এমাজ হুমকি পেয়েছেন, তার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও আমরা খবরে পড়েছি।

আমরা মূল কথার জায়গাটা--- আমরা হুজুগে মাতি আবার একটা ঘটনা ঘটে আমরা সেটাকে নিয়ে ব্যস্ত হই। অত্যন্ত বেদনার বিষয় হলো শিক্ষক নিপীড়নের, হুমকির  কোনো বিচার হয় না।

 ক'দিন আগেই তো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিমকে খুন করা হয়েছে।  এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসায় ঢুকে অধ্যাপক আফতাব আহমদকে খুন করা হয়েছে। ড. হুমায়ূন আজাদ স্যারকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই!

 আমরা এ সব খুন, অপমান সহজে মেনে নিচ্ছি। এ মেনে নিতে আর রাজনৈতিক বিভাজন টানতে টানতে আক্রান্ত হচ্ছি নিজেরাই!

শ্যামল স্যার কিম্বা  মাহবুব উল্লাহ স্যার, যে যখনই আক্রান্ত হন তাদের প্রতি দল মত নির্বিশেষে সহানুভূতি সবারই থাকা উচিৎ। রাষ্ট্র এ সব হামলা, অপমান আর অন্যায্য আচরণের বিচার করবে আমরা এটা আমরা আশা করি। যদিও বিচার হয় না! তবুও হবে এ আশাটাও কম কিসে!!

ধর্মকে ব্যবহার করে এর আগেও বহু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।  রামু কাণ্ড থেকে শ্যামল স্যার তার একটা উদাহরণ মাত্র। এ সব উদাহরণ সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে আমরা 'মানুষ' হয়ে উঠবো না, এটা নিশ্চিত!
   

কিস্তি-৩৫ ::পরের কন্যা বড় ভাইদের সম্প্রদান

অফিস থেকে মতি ভাই অ্যাসাইন করলেন, ইডেন কলেজ নিয়া রিপোর্ট করতে। মানবজমিনের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, সে কথাও জানিয়ে রাখলেন। সে হিসাবে বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন, ঢাকা ও জগন্নাথ কলেজ আমার কাজের পরিধির মধ্যে পড়ে। 
ইডেন নিয়া রিপোর্ট করতে গিয়া পুরা সমস্যায় পড়লাম, আমার চেনা জানা কেউ নেই। দ্বারস্থ হলাম আমিরুল ইসলাম কান আলিম ভাইয়ের। ছাত্রদলের এ নেতা পরে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। উনার এলাকার এক নেত্রী ছিলেন- নাম রুমা। কাতল মাছের মতো চেপ্টা বডি। প্রচণ্ড শক্তিমান নেত্রী। দলবলেও ভারি। তাকে ফোন দেয়ার পর সে হোস্টেলে থাকে এমন কিছু ছাত্রী নিয়ে মধুতে দেখা করতে এলেন। 
তাদের কাছে ইডেনের ছাত্রীদের বিভিন্ন সমসন্যা শুনে এবং পরে দুদিন ইডেন গিয়ে, শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে একটা রিপোর্ট করলাম। রিপোর্টটা চলনসই হয়েছে বলে জানালেন মতি ভাই। 
মতি বললেন, সেখানে অনেক চমকপ্রদ খবর হয়, সে দিকে নজর দেবার জন্য। পরে অবশ্য ঠিকই জেনেছিলাম সেখানকার অনেক চমকপ্রদ খবর, তবে সে সব লিখতে পারিনি। পারিনি বলে হয়ত বছর দুয়েক আগে সেখাকনার ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে ছাত্রনেতাদের কাছে সাধারণ ছাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য চালান করার খবর প্রকাশ হয়। 
তবে সে সময়ও এটা ছিল। ছাত্রদলের কিছু নেতা ছাড়াও সরকারের মন্ত্রীদের কারো কারো জন্য গণিমত যেত ইডেন থেকে। যারা এ সব সাপ্লাই করতেন তাদের প্রভাব ছিল সে রকম। মন্ত্রীরা তাদের কল পাওয়া মাত্রই রিসিভ করেন। না পারলে পরে ব্যাক করেন। সে সব নিজের চক্ষে দেখা। যেখানে ছাত্রদলের বা ছাত্রলীগের একজন কেন্দ্রীয় পুরুষ নেতা মন্ত্রীর দেখা পেতে কাঠখড় পোড়াতে হয়, সেখানে ছাত্রী নেত্রীদের জন্য সদর দরজা উন্মুক্ত। আহা কি শান্তি। সে সুবাধে ছাত্রী নেত্রীদের অনেকে ব্যাপক তদবির করে মাল কি ভালাই করছেন। এটা সব আমলেই ছিল, এখনো আছে। 
তবে ইডেনের নেত্রীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্রুপিং। এখানে চরম গ্রুপিংয়ের সাথে নোংরামিও চলে বেশ। চরিত্র হনন যাকে বললেন, খোলাসা করে বলা হবে। কে কার বাসায় যায়, কে কার বাসায় কাকে পাঠায় এমনকি সাংবাদিকদের জন্য কে কাকে সরবরাহ করা হয় সে খবরও পাচ্ছিলাম।
২০০২ থেকে ২০০৪ সালের দিকে ইডেনে ছাত্রদলের তিনটি প্রধান গ্রুপ ছাড়াও আরো দুটো উপ গ্রুপ ছিল।
তবে এ নেত্রীদের কাজকর্ম খুব একটা পছন্দনীয় নয়। তাতে কি তাদের তো আর বড় ভাইয়ের অভাব নেই। পরের কন্যা বড় ভাইদের সম্প্রদান করে ইডেন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেত্রীরা রাজনীতিতে ভালো অবস্থানেই আছেন। 
তবে ছাত্র নেত্রীদের প্রায় সবাইকে স্বার্থপর বলতে হবে, কারণ এরা প্রয়োজন ফুরালে কেটে পড়বে। এবং কেটে পড়েও। দু একজন ব্যাতিক্রম ছাড়া। তবে আমার সাথে সবার সমান খাতির ছিল। যদিও আমি অলমোস্ট সবার বিরুদ্ধে দুচারবার করে রিপোর্ট করেছিলাম। তারা ক্ষিপ্ত হযেছে কেউ। কেউ আমার জন্য কিছু সরবরাহ করতে চেয়েছেন, যাতে পরে আরো রিপোর্ট তার বিরুদ্ধে না হয়, বা না করি। যেহেতু সরবরাহ গ্রহণ করতে আমি অক্ষম তাই তারা পরে বিব্রত হয়েছেন। তবে এখনো আমার সাথে ভালো মোয়ামেলাত আছে নিশিতার সাথে। নিশিতা আপার অনেক বদনাম আছে, কিন্তু মানুষ হিসাবে উনি ভালো বলেই আমি জানি। এখনো তিনি খোঁজ খবর রাখেন। আমিও রাখি। ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেত্রীর দুরদর্শিতা আমাকে মুগ্ধ করে। তাই বোধ হয় ইডেনের অনেক নেত্রী সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেলেও নিশিতা টিকে আছেন।


কিস্তি-৩৪ ::রিসিভারটা কানে তুলতেই নারী কণ্ঠ

তারেক আপনার ফোন। একজন সহকর্মী ফোনটা এগিয়ে দিলেন। রিসিভারটা কানে তুলতেই নারী কণ্ঠ। আমাকে কোনো নারীর অফিসে ফোন করার কথা নয়। 
ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি, তারেক মোরতাজা? হ্যাঁ, বললাম। উত্তরে বললেন, আপনার সাথে আমি দেখা করতে চাই। বললাম, চলে আসেন। তার আগে আপনার পরিচয়টা জানা দরকার। বললেন, আমার নাম সীমা। ঠিক আছে, আসেন। বললেন, কোথায় আসবেন। জানালাম সারাদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়েই আসতে পারেন। বিকালে হলে অফিসে। 
যথারীতি এক সকালে সীমা আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি টিএসটিতে ছিলাম। সেখানেই ওর সাথে দেখা। জানালেন ইডেনে পড়ে সে। রোকনের সিডি সম্পর্কে জানতেই তার আসা। সেখানে রোকনের সহযোগি হিসাবে একজনের নাম মানবজমিনে ছাপা হয়। ওই ছেলের সাথে সীমার অ্যাফেয়ার জাতীয় কিছু একটা ছিল। আমি খুবই আহত হলাম, আমার রিপোর্টের কারণে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটলো বলে। 
তবে রোকনের যে সে সহযোগি এবং তারা প্রায় একসাথে চলাফেরা করতো, সেটি আমি নিশ্চিত হয়েই লিখেছি। ও এসেছিল মূলত এটি নিশ্চিত হতে। আমি আমার সোর্সকেও তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। এতে করে তার যে ভুল ধারণা ছিল, সেটা থেকে মুক্তি মিলল। 
বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওর বিচ্ছেদ হলো। 
আমার সাথে এখনো ওর যোগাযোগ আছে। সীমা অদ্ভূত মেয়ে। হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন বই পড়ে সে। সে সাথে বইয়ের বিভিন্ন চরিত্র ওর ওপর প্রভাব পেলে। একবার ও উপন্যাস লিখবে বলে ঠিক করল। চেষ্টাও করেছিল। সেটি দেখার জন্য আমাকে দিয়েছিল। হয়নি সেভাবে। সোজা জানিয়ে দিলাম। 
সীমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে মধ্যে আসত, আমার সাথে ওর একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। চিঠি লিখতেও পছন্দ করতো। আমিও লিখতাম। তবে সবখানে ওর একটা হতাশা ছিল। যদিও নিজেকে শক্ত মনোবলের অধিকারী বলে পরিচয় দিত। কিন্তু আসলে সে হতাশা তা চেপে রাখতে পারত না। 
তবে সীমার যে দিকটা আমাকে মুগ্ধ করতো, সেটি হলো- কেউ কি পছন্দ করে, সেটি সে নিজে থেকে করতো। হয়ত প্রথম দিকে এটা কারো চোখে পড়ছে না, পরে পড়তো। পড়তেই হবে। আমি সাধারণত ইডেন কলেজের মেয়েদের এড়িয়ে চলতাম। 
আমার সাথে যে সব তরুণীর পরিচয় আলাপ বা বন্ধুত্ব ছিল তার বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এর বাইরে বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল এবং সাহাবুদ্দিন মেডকেলের দু চারজনের সাথে আলাপ ছিল। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বলতে লাকী ছিল আমার একমাত্র ফ্রেন্ড। এখন একটি বিদেশি ব্যাংকে আছে। 
সীমা ইডেনে পড়াটা ছেড়ে দিয়েছিল। আমার ধারণা আমি ইডেন পছন্দ করছি না বলে এমনটা করেছে। এ ধারণা ভুলও্ হতে পারে। তবে এটাকে সত্য ধরে নিয়ে আমার মনে হয়েছিল, ও প্রেমে পড়েছে্। কিন্তু না, সে ধারণা ভুল ছিল। বরাবরই আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম। সব সময়। এখনো আছি। তবে এখন যোগাযোগটা কম হয়। 
তবুও সীমা আমার ভালো বন্ধুদের একজন।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:১২

কিস্তি-৩৩ ::লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে কুত্তাও ছোঁবে না

ক্যাম্পাসে হুল্লোড় পড়ে গেলা একটা সিডি নিয়ে। জগন্নাথ হলে এর সূচনা। তলে তলে এ খবর বঙ্গবন্ধু হলে চলে এলা। সবাই সিডি দেখছে, খুব মজা করে। কিন্তু এটা কোনো খবর না। আসল খবর হলো ২০০২ সালে বাংলাদেশী যুগলের এ রকম একটি সিডি । আরো জানা গেলো এ সিডির নায়ক ছাত্রলীগের বঙ্গবন্ধু হলের নেতা রোকন। 
প্রথম দুদিন খবরটা পাত্তা দিলাম না। তৃতীয় দিন ছাত্রলীগের এক নেতা আমাকে সিডির সন্ধান দিলেন । জানালেন ছাত্রলীগ নেতা রোকন তার প্রেমিকার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করে তার ভিডিও করেছেন। সেটি লিকেজ হয়েছে। 
আমি এ খবরটি মতি ভাইকে জানালাম। মতি ভাই বললেন, নিউজ করেন, সাথে একটা সিডি যোগাড় করেন। আমি নিউজটা দিয়ে সন্ধ্যায় বের হলাম সিডির জন্য। এত দিন শুনছি সবার কাছেই আছে। আমি চাইতেই সবাই চুপসে গেলো। 
অবশেষে নিউ মার্কেটের উল্টো দিকে রাফিন প্লাজার একটি দোকান থেকে সিডি সংগ্রহ করে রাতে মানবজমিন অফিসে গেলাম। সেখান থেকে একটি স্ক্রিণশর্ট বের করে ছাপানো হলো। খবরটি প্রথম পৃষ্ঠার নিচের দিকে গেলো। পরের দিন মতি ভাই বললেন, ভালো করে ফলোআপ করেন। আমি যথারীতি কাজে নেমে পড়লাম। রোকনের সব খবর সংগ্রহ করতে লাগলাম, আর সেটি প্রকাশ শুরু হলো। আমার জানা ছিল না সে সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বিএনপি সরকারের সময় একটি ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে। কাকতালীয়ভাবে সমাবেশের চার/ পাঁচ দিন আগে এ রিপোর্ট মানবজমিন ছাপা শুরু করলো। 
আমার সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল রোকন বঙ্গবন্ধু হলের স্টুডেন্ট ছিল। সে সুবাধে আমার তথ্য পেতে সমস্যা হলো না। রোকনের এক সময়কার সহযোগিরা আমাকে সবচেয়ে বেশি হেল্প করেছেন। আমি খবরের পর খবর করে যাচ্ছি। সর্বশেষে সিডির একটি পোস্টমর্টেমও করা হয়েছিল, সেটি আমি ও মাসুদুল আলম তুষার ভাই দুজনে মিলে করেছিলাম। এটি যেদিন লেখা হচ্ছিল সেদিন ছাত্রলীগের সভাপতি বাহাদুর বেপারী আমাকে ফোন করলেন। মতি ভাই, আমি, ফারাবী ভাই, সারোয়ার ভা্ই, জাহেদ ভাই সবাই এক টেবিলে বসে এ রিপোর্ট নিযে আলাপ করছিলাম। এ সময় ফোনটা করেন বাহাদুর ভাই। তিনি খুবই ক্ষিপ্ত হলেন। এবং সাধারণত তার এ রকম ব্যবহার হয় না, তিনি যে রকম ব্যবহার আমার সাথে করলেন। হুমকি দিলেন আমাকে। বললেন, লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে কুত্তাও ছোঁবে না। আমি এতে ভয় পাই না। কারণ সাংবাদিকতা করতে এসে ভয় পেলে চলবে না। আমি শুধু বললাম, ভাই মিথ্যা কিছু লিখছি কিনা বলেন। মতি ভাই সহ সবাই অবাক। বাহাদুর ভাইয়ের সুনাম সবার কাছে প্রায় করতাম। তাই তারা বললেন, এ কি হলো। মতি ভাই উঠে গেলেন। কিছুক্ষন পরে ফিরে এলেন। বললেন, নিউজ করেন। পরে মতি ভাই নিজেই নিউজটা লিখতে বললেন, তুষার ভাইকে। সে খবরটি প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপাও হলো। 
পরের দিন ওই খবর দেখে সম্রাট ভাই বললেন, তাকে কেন জানানো হলো না। এ খবর ঠিক না। উনি বাহাদুর ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে আরো কিছু কথা বললেন। যেখানে আমার সম্পাদক সাক্ষী। তার সামনে লাউড স্পিকারে এ হুমকি শোনা গেছে, এটাকে সম্রাট ভাই (বর্তমানে এটিএন নিউজে) বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। 
তবে এখানে জানিয়ে রাখি, হুমকি দেয়ার ঘন্টাখানেকের মাথায় বাহাদুর ভাই আমাকে আবার ফোন করলেন। বললেন, সরি। মাথা ঠিক নাই। ধর্ষণ বিরোধী একটা সমাবেশ ডাক দিছিলাম। তোমার রিপোর্টের কারণে এটা হইতেছে না। তাই মাথা ঠিক ছিল না। এ জন্য মাথার গরম ছিল, কি বলতে কি বলেছি, কিছু মনে করো না। 
বাহাদুর ভাই এভাবে বললে, আর রেগে থাকা যায় না। পরে জানলাম সে সময়কার ছাত্র বিষয়ক দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদের ভাইকে মতিভাই ফোন করেছিলেন। কাদের ভাই সম্ভবত বাহাদুর ভাইকে সরি বলতে বলেছিলেন। সে যাই হোক।
বাহাদুর ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক বরাবরই ভালো ছিল। ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আমার অব্যাহত রিপোর্টিং এর কারণে তারা সব সময় আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। ছাত্রলীগে আমার কাছের লোকজন আমাকে এ রিপোর্টের জন্য বাহবা দিয়েছেন। ছাত্রলীগ পরে অবশ্য রোকনের বিচার দাবি করে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়। তবে তার কোনো বিচার হয়নি। হবেও না। এটাই নিশ্চিত। 
টিকা:১: রোকনের রিপোর্ট করতে গিয়ে তার ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হলে সমস্যায় পড়ে ছিলাম। পরে আমার বন্ধু ও হলের স্টাফদের সহায়তায় তা উদ্ধার করি। সে সময় হলের প্রভোস্ট ছিলেন নীল দলের জার্নালিজমের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান। তার কাছে ছবিটি নেয়ার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি ছবিটি আমাকে যেন না দেয়া হয় তার সব ব্যবস্থা করলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ছবিটি উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, সেটি ছাপাও হয়েছিল।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২০

কিস্তি-৩২ ::এখনো চাই হলে হলে সহ অবস্থান এবং ছাত্রনেতাদের নিষ্পেষণ থেকে সাধারণ ছাত্রদের মুক্তি

হলের রাজনীতিতে গ্রুপিং থাকে, এখনো আছে। বঙ্গবন্ধু হল এর ব্যাতিক্রম ছিল না। আমাদের সময় এ গ্রুপিং খুব একটা চাঙ্গা না হলেও ভালাই ছিল। সোহেলের গ্রুপটা শক্তিশালী ছিল। এটা দু'টি কারণে প্রথমত ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলিম ভাইয়ের সাথে ছিল। দ্বিতীয়ত সোহেল মানুষ হিসাবে দিলখোলা। আমার বন্ধু বলে বলছি না, আসলে সত্যি ঘটনা।
আকরাম ভাইও মানুষ ভালো। নামজুল ভাইও। তবে নাজমুল ভাই কোন গ্রুপে আছেন সেটা খোলাসা ছিল না অনেকের কাছে। আমরা যারা তার কাছের তারা জানতাম।
আকরাম ভাই হলের প্রেসিডেন্ট। উনি মূলত মনির ভাইয়ের গ্রুপের। মনির ভাই রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর সফিউল বারি বাবু গ্রুপ করতেন। 
নোয়াখালীর লোকের গ্রুপ করলেও নোয়াখালীর ছাত্রদের প্রতি তার খুব একটা সহানুভূতি ছিল বলে আমার জানা নেই। আকরাম ভাই নিজেকে একটু প্রগতিশীল ধাঁচের বলে প্রমাণ করতে চাইতেন, তাই অনেকটা ধরি মাছ না ছুই পানি টাইপের ছিলেন । 
সব মিলিয়ে সাধারন ছাত্রদের মধ্যে সোহেলের জনপ্রিয়তা ছিল। বিশ্বাসের জায়গায় আকরাম ভাই, নাজমুল ভাই এবং সোহেল তিন জনই ছাত্রদলের। এটা বলছি কারণ হলো ছাত্রদলের তিনটা ধারা। এক ধারা ছাত্রলীগ পন্থী, আরেক ধারা শিবির প্রশ্রয়ী, আরেক ধারা ছাত্রদলের। এ তিন ধারা মিলে ছাত্রদল। তবে ছাত্রদলের চেয়ে ছাত্রলীগের কমিটিতে ব্যাপক ভিত্তিক ছাত্র শিবির অবস্থান করে, যদিও ছাত্রলীগ সব সময় শিবির বিরোধী। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সবচেয়ে বেশি প্রশ্রয় পায় ছাত্রলীগের কাছ থেকে। সে কথা থাক। 
হলেই ফিরি। আমাদের হলে ছাত্রলীগের সহ অবস্থানের কথা আসলে হল ছাত্রদল এটা মেনে নেয়। সে সুবাধে হল ছাত্রলীগ হল সেক্রেটারি ফজলু ভাই হলে উঠলেন। আরো অনেককে হলে থাকতে আমি সহায়তা করেছি্। এর মধ্যে বন্ধু মোশাররফ, ১১৭ নম্বর রুমে থাকতো আমার রুমমেট তারেক সিকদার, আমাদের আরেক বন্ধু জিল্লু। 
এ রকম ছাত্রলীগের অনেকেই হলে থাকতো। তারা যেনো কোনো সমস্যায় না পড়ে সেটি আমি সব সময় খেয়াল রাখতাম, এতে অনেকে মনে করতো আমি ছাত্রলীগ করি। আসলে ঘটনা, তা না। আমি গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি, আমি জানি গ্রামীন নিম্ন মধ্য বিত্ত পরিবারের এ সব ছেলেদের হলের বাইরে থেকে পড়াশোনা করা খুবই কঠিন। তাই তাদের হলে থাকার ব্যাপারে আমি সব সময় সোচ্চার ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রনেতা সবাইকে আমি এ ক্ষেত্রে সব সময় উৎসাহ যোগাতাম। 
আমার হলের নেতারা এ বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু এ আন্তরিক নেতারা মহাজোট সরকারের আমলে ক্যাম্পাসে মিছিল করতে পারেন না, হলে থাকতে পারেন না। এটা আমাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু ওরা খারাপ করছে বলে ফের বিএনপি ক্ষমতায় এলে এরা তা করুক আমি চাই না। ছাত্রলীগের অনেক নেতাই ভালো চান, কিন্তু পারেন না। কারণ গ্রুপিং। বরিশাল, শরিয়তপুর মাদারীপুর আর ভেতরে আরো কত রকমের গ্রুপিং ছিল তখণ, এখনো আছে। এ কারণে সব সময় চাইলেও অনেকে অনেক কিছু করতে পারেন না। আমি এখনো চাই হলে হলে সহ অবস্থান এবং ছাত্রনেতাদের নিষ্পেষণ থেকে সাধারণ ছাত্রদের মুক্তি। জানি এটা কেবলই স্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখতে বাধা নেই, কোনো একদিন এমন হবেই আমি এটা নিশ্চিত করে বিশ্বাস করি।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০০

কিস্তি-৩১ ::আমার অজ্ঞতা

হলের গল্পে ফিরি। সেকেন্ড ইয়ার শেষের দিকে আমাকে তিন তলায় উঠিয়ে দিলো ছাত্রদল নেতারা। তারেক ভাই ৩১৪ নম্বর রুমে আমার জন্য একটা সিট ফাঁকা করলেন। আমার লেপ তোষক নেয়া হলো। গিয়ে দেখি মাসুদ ভাইকে হটিয়ে আমার জন্য জায়গা করা হযেছে্ ।ওই রুমে ছাত্রদলের আরো ক'জন থাকতেন। কর্মী, নেতা না। তারা আমাকে ওঠানোর বিরোধীতা করেছিলেন, কিন্তু তা শোনা হয়নি। তাই তাদের মন খারাপ। এই মন খারাপের মধ্যে আমার একটু খারাপ লাগছিলো উঠতে। কিন্তু রুমের সব সদস্য আমাকে উঠতে বললেন, নইলে তাদের সমস্যা হবে। তাই আমি একান্ত নিরুপায় হয়ে উঠলাম। সকালে আমার বেডিং পত্র ১১৭ থেকে ৩১৪ নম্বর রুমে গেলেও আমি উঠেছি রাতে। 
সবার সাথে আলাপ হলো। 
আমি এ রুমে অসুবিধা নয়, সুবিধা হতে পারি সেটি বোঝানোর চেষ্টা করলাম। দরজার পাশের সিটটি আমার জন্য বরাদ্দ হলো। এতে আমার আপত্তি নেই।
এখানে বলে রাখি ২০০০ সালেই হলে আকমার সিট হয়ছিল। সে সময় ছাত্রলীগের আধিপত্য। আমার জন্য ৩১৬ নম্বর রুম বরাদ্দ করা হলো। সেটা করেছেন চামবাজ নীল দলের সদস্য বায়তুল্লাহ কাদেরী। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কোন রুমে উঠতে চাই। আমি যেহেতু নতুন এবং নিয়ম মাফিক হলে উঠার জন্য আবেদন করেছি তাই এ সব ঝামেলা সম্পর্কে জানতাম না। আমরা অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে বায়তুল্লাহ কাদেরী ওরফে চামবাজ কাদেরী বলল, ওকে ৩১৬ নম্বর রুমে এলট দেন। অন্য শিক্ষকরা তাই করলেন। পরে জানলাম ওই রুম আর্মস ক্যাডারদের দখলে। ওরা সেখানে রাতভর হল পাহারা দেয়। বাধ্য হয়ে আমার হলে নিয়ম মাফিক ওঠা হয়নি। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের মারফত হলে উঠে নেমে পড়ার গল্প আগেই বলেছি।
মিস্টার কাদেরী বাংলার টিচার। সব সরকারের আমলের সুবিধাভোগি।হাউস টিউটর হলেও ছাত্রদের কল্যাণে এ জ্ঞান পাপীকে পাওয়া যায় না। 
হলের ৩১৪ নম্বর রুমের একটি বেডে আমি সিঙ্গেল থাকছি। আমার ৩১৪ নম্বর রুমে ওঠাটাকে অনেকে অনেক ভাবে দেখেছেন। কিন্তু মাস খানেকের মধ্যে পুরো ব্লকের সবাইকে জয় করে নিয়েছিলাম। একই ব্লকে আমরা তিন সাংবাদিক- আমি ছাড়াও যাকারিয়া এবং সুজন মেহেদী (এখন ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে) থাকতাম। তাছাড়া আরো অনেকে ছিলেন। সুজনের রুমে থাকতে শরীফ ভাই। ডিবেটর। যাকারিয়ার রুমে গাঙ্গুলি জাহিদ (বর্তমানে জার্মান প্রবাসী) এদের সবার সাথেই আমার ভালো সম্পর্ক। ব্লক জুড়েই আমরা হৈ হুল্লোড় করি, আনন্দ করি। 
ভালেই কাটছিল হল লাইফ। তবে হলের খাবার নিয়ে সমস্যা হতো। ক্যান্টিনের খাবার খেতে খেতে অসহ্য হয়ে উঠছিলাম। সন্ত্রাসী ছাত্রদল নেতারা হল ত্যাগের পর মেধাবীদের একাংশ নতুন কমিটির অপেক্ষায়। কমিটি গঠনের পর আমি হলের ছাত্র হিসাবে সাধারণ ছাত্রদের সমস্যার দিকে কমিটির নজর দিতে বললাম।যদিও কাজটি আমার নয়। খাবারের মানোন্নয়নের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিছিলাম। সেটি নেপথ্যে থেকে। সামনে ছিল হল ছাত্রদলের সভাপতি আকরাম, সেক্রেটারি নাজমুল ও সাংগঠনিক সোহেল। সবাই মিলে বসে আমরা হলের ক্যান্টিনের খাবারের মানোন্নয়ন এবং মেসের খাবার আরো ভালো করার উদ্যোগ নিলাম। সে সময় হলের খাবারের সুনাম ছিল। মাঝে মধ্যে যে সমস্যা হতো না তা কিন্তু নয়। তবে তুলনামূলক বঙ্গবন্ধু হলের খাবার ভালো ছিল। ফাও খাওয়াটা বাকিতে রূপান্তর হলওে তা উল্লেখ করার মত না। বঙ্গবন্ধু হলের ভাগ্যটা ভালো বলতে হবে। এখানে ছাত্রলীগের আমলে আজিম ভাই থাকতেন। অত্যন্ত সৎ ও সজ্জন মানুষ। তার সময়ও হলের খাবারের মান ভালো রাখার চেষ্টা ছিল। হল মেসের জন্য সে সময় তিনি একটি ফ্রিজেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। আজিম ভাই সে সময়কার ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গড়পড়তা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে বেমানান আজিম ভাই রাজনীতিতে অনেক দিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এখনো ততটা সক্রিয় নন, লুটপাটে তিনি কোনো ধারে কাছে নেই। আমার দেখা সৎ রাজনীতিকদের একজন আজিম ভাই। আমি তাকে তাই সম্মান করি। একজন বড় ভাই হিসাবে তাকে আমার সব সময় ভালো লাগে, দেখা হলেই ছুটে যাই। উনিও আসেন। ভালো লাগে।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩

কিস্তি-৩০ ::বাকির টাকা শোধ না করেও অনেকে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এমপি হয়ে আছেন। তাতে তার কোনো আফসোস নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা রিপোর্ট করেন, তারা সবাই মাঠে থাকেন, এমনটা কম হয়। একটু সিনিয়র হলে বাইরে আড্ডায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন কেউ কেউ। আমি এ বৃত্তের বাইরে ছিলাম। 
প্রতিদদিন সকালে ক্যাম্পাসে বের হয়ে রাতেই হলে ফিরতাম। এর মধ্যে ক্লাশ, পরীক্ষা এবং রিপোর্ট সংগ্রহ সবই চলতো। আমার কাছে এখনো এ দিকটা উপভোগ্য মনে হয়। ঘটনা স্থলে হাজির থাকলে যে কোনো বিষয়ে ভালো রিপোর্ট হয়্। এটি আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে সব সময় মেনে চলি। এখনো অবশ্য সেভাবে হয় না। তবুও চেষ্টা থাকে। 
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারজন মানুষের সাথে আমার দিনে একবার হলেও দেখা হতো। কদাচিৎ তাদের দেখা না দিয়ে থাকতাম। তারা চারজনই আমার কাছে ভিন্ন ভিন্ন কারণে অসাধারন মানুষ। 
সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আশরাফ ভাই। তার দপ্তরে ঢুঁ না মারলেই নয়্। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশনের ডিরেক্টর তিনি। এত হাস্যোজ্জ্বল ও দু:শ্চিন্তামুক্ত ভালো মানুষ ক্যাম্পাসে দ্বিতীয়টি দেখিনি। আমার বিশ্ববিদ্যালয রিপোর্টিং জীবনে এত সৎ এবং সাহসী মানুষ দেখা হয়েছে কম। 
আশরাফ ভাই বয়সে আমার বাবার সমান বা তারো বেশি হবেন, কিন্তু তার অফিসে গেলে যেভাবে গ্রহণ করতেন, আমি সব সময় তার কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ। আমার মত একজন ছোট সাংবাদিকদক তিনি যেভাবে সঙ্গ দিতেন, সহযোগিতা করতেন তা ভোলার নয়। 
আমরা বন্ধুরা অনেকে তার অফিস থেকে ফোন করতাম। কখনো বিরক্ত হতেন না। কারণ রিপোর্টের প্রয়োজনে প্রতিদিনই আমাদের অনেক ফোন করতে হতো। সব ফোন মোবাইল থেকে করা সম্ভব হতো না, কারণ সে সময় মিনিট প্রতি মোবাইল বিলি ছিল ৬ টাকা ৯০ পয়সা। বলছি ২০০১, ২০০২, ২০০৩ সালের দিকের কথা।
আশরাফ ভাই কখনো ব্যাক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ে আবদার করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চান সব সময়, সব ভিসির সময়্য়। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালযের সুনাম আগলে রাখাটাই মুখ্য।তাই নেগেটিভ কোনো তথ্য তার কাছ থেকে কখনোই পাওয়া যায়নি।বিশ্বিবিদ্যালয়কে তিনি খুবই ভালোবাসেন। মানুষ হিসাবে এক কথায় অসাধারণ আশরাফ ভাই। 

দ্বিতীয় যে মানুষটিকে আমার ভালো লাগতো এবং আমি যার দপ্তরে প্রায়ই যেতোম তিনি আলমগীর ভাই। টিএসসির পরিচালক। আমার সব সময়কার কাজের সহযোগি ছিলেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে রিপোর্টার ছাড়া্ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি টুরিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলাম, যে কোনো সময় তার কাছে গেছি, হাসি দিয়ে আপন করে নিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছেন। সব সময় কাজের উৎসাহ দিযেয়েছন। টিএসরি দিলশাদ ম্যাডামও হেল্প করতেন। ভালো লাগতো তাকে। 
বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আসেন বা না আসেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানেন তারা মধুর ক্যান্টিনও চিনেন বা এ নাম শুনে থাকবেন। এটি এখন পরিচালনা করছে অরুণ দা। উনি কোন দলের সমর্থক সেটি আবিষ্কার করার রীতিমত গবেষণার বিষয়। তার কাছে সব দলের নেতারা আশ্রয় পান, বাকি খান। সে বাকির টাকা শোধ না করেও অনেকে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এমপি হয়ে আছেন। তাতে তার কোনো আফসোস নেই। অরুণ দা বাকির খাতাটা লুকিয়ে রাখেন। 
একবার আমাকে অ্যাসাইন করা হলো মধুর ক্যান্টিনের বাকির হিসাব নিয়ে একটা রিপোর্ট করতে। আমি ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়র রিপোর্টারের সাথে আলাপ করলাম। সবাই বললেন, এটা অসম্ভব। 
অসম্ভবকে সম্ভব করাটাই আমার কাজ। তাই চেষ্টা চালিযে যাচ্ছি। কিন্তু অরুণ দা ধরা দেন না। পরে বললাম একটা সিলিং বলেন। শেষ পর্য়ন্ত তাকে সিলিংয়ে রাজি করাতে পেরেছিলাম। এবং এ রিপোর্ট মানবজমিন লিড করেছিল্। ব্যাপক সাড়া পেযেছিলাম। 
এ রিপোর্ট প্রকাশের পরের বছর মধু দা'র মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এসে অনেক সাবেক ছাত্র নেতা এ প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। ভালো লেগেছে এত বড় বড় নেতাদের চোখে পড়েছে এই রিপোর্ট, সে জন্য। 
তবে বাকির টাকা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই অরুণ দা'র। আমি নিজেও বাকির একজন তালিকাভুক্ত। মধুর ক্যান্টিনের মিষ্টি ও বাটার ব্রেড খেতাম বেশি। অরুণ দা দেখা হলেই এগিয়ে আসতেন, দাদা কি খবর? দেখি না কেন? অথচ দুদিন আগেও তার সাথে দেখা হতো। প্রতিদিন একবার অন্তত মধুতে যাওয়া হত। সব সময় উনি থাকতেন না বলে দেখা হতো না। মানুষকে আপন করে নেসয়ার একটা অদ্ভূত ক্ষমতা আছে তার।

চতুর্থ জন গোপাল দা। ডাকসু সংগ্রহ শালার দায়িত্বে আছেন। ভালো মানুষ্। তবে আপনি কোন দল করেন, বা করতে পারেন, বা সাপোর্ট করতে পারেন সেটি বুঝে কথা বলেন। অনেকটা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত। আবার আপনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক, সে হিসাবে তার কথা বা আলোচনা চলবে। তবে আদতে ভালো মানুষ গোপাল দা। সব সময় স্মৃতি ধরে রাখবার জন্য ছবি তোলেন। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পুরনো ও ভালো স্মৃতি আছে তার কাছে। তার দপ্তরে প্রায় যেতাম। তবে মানবজমিনে থাকতে এক রকমের খাতির ছিল, পরে খাতিরের পরিমাণটা বদলে গেছে। তবুও দেখলে চিনেন, এগিয়ে এসে কথা বলেন, এটাইবা কম কিসে। ধন্যবাদ গোপাল দা।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

কিস্তি ২৯ ::জবরদস্তিমূলকভাবে অনেক শিক্ষক নারী সঙ্গ উপভোগ করতে চান

শিক্ষকরা পিতৃ তুল্য। এ কথা আমরা ছোটবেলায় শুনে এসেছি। তবে কিছু শিক্ষক তাদের সে সম্মান ধরে রাখতে পারেননি। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় এসে দেখলাম। নারীর শরীরের ভাগ সবাই চান, কেউ পান, কেউ পান না বলে আফসোসস করেন। কিন্তু জবরদস্তিমূলকভাবে অনেকে সে সঙ্গ উপভোগ করতে চান। আর সেখানে আমার আপত্তি। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সমাজ বিজ্ঞানের একজন সাবেক শিক্ষক, যিনি সুদর্শনও বটে, তার হাতে অনেক ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তদন্তও হয়েছে। তবে সব কথার শেষ কথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি লোভ করা , কিংবা তাকে নিষ্পেষণ করার একটা অলিখিত অধিকারের কথা আমরা মেনে নেই। সে জন্য এর বিচার হলেও তা সাময়িক। 
সমাজ বিজ্ঞানের ওই শিক্ষকের তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তি হয়নি। এ নিয়ে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে। বলছি ২০০০ সালের দিকের কথা।
২০০২ ও ২০০৩ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেক যৌনাচার সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। মেঘলা দিনের এক দুপুরে জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টের এক অধ্যাপক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছেন। আরো কিছু করার চেষ্টা করেছেন। মেয়েটি লিখিতভাবে সে সময় এটা ভিসি স্যারকে জানান। এ রিপোর্ট লিখতে বসলে ওই ছাত্রীর সহপাঠি আমার বন্ধু ও সে সময়কার তুখোড় সাংবাদিক ইশতিয়াক(বর্তমানে বাংলানিউজরে স্পেশাল করেসপনডেন্ট) ও মোশতাক (এখন প্রথম আলোতে ) বলেছিল, মেয়েটিরও সমস্যা আছে। পরে সাংবাদিক সমিতির সদস্য হওয়ো একজন সদস্যের সাথেও তার সম্পর্কের কথা জানা যায়। 
তাই প্রথম দিন আমি রিপোর্টটি দুপক্ষকে দায়ি করে করি। কারণ আমার বন্ধু সাংবাদিকরা বলেছির, নম্বরের জন্য এমনটা ঘটতে পারে। ঘটতে পারে মানে ঘটে। অনেক ছাত্রীদের না শুলে নম্বর বের হয়না স্যারের হাত থেকে। এমন অনেক স্যার সে সময় যেমন ছিলেন, এখনো আছেন। 
কিন্তু পরের দিন ওই অধ্যাপক নিজেই এর প্রতিবাদ করেন। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে একটা ষড়যন্ত্র হিসাবে উল্লেখ করেন। পরে আমি নিপীড়িত ছাত্রীটির পরিবারের সাথে কথা বলি এবং ভিসি স্যারের দপ্তরে জমা হওয়া অভিযোগের একখানা কপি হাতে পাই। সেটি দিয়ে রিপোর্ট করা শুরু করি। 
মানবজমিন থেকে আমাকে সাযযাদ কাদির ভাই বললেন, এ ঘটনার পেছনে লেগে থাকতে হবে। শেষ দেখা চাই। আমারো মনে হযেছে একটা ঘটনার দৃষ্টান্তশূলক শাস্তি হলে অন্য শিক্ষকরা এখান থেকে সরে আসবেন। সে সময় এ ঘটনার তদন্ত করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সৈয়দ রাশিদুল হাসান। 
দল মত নির্বিশেষে সবার কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ভালো। 
আমি নিবিড়ভাবে এ নিউজ ফলো করছি। শেষ পর্যন্ত জার্নালিজমের ওই অধ্যাপকের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু সেটি উল্লেখ করারর মত নয়। কারণ এখানেও পুরুষতান্ত্রকি দৃষ্টিভঙ্গি। যদিও জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে নারীবাদী অনেক শিক্ষক রয়েছেন, কাউকে এ নিয়ে তেমন কথা বলতে দেখলাম না। 
সে সময় যেটুকু সহযোগিতা করেছিলেন, তা আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী স্যার। 
জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে ১ জন বাদে সবাই আওয়ামী লীগ মনা টিচার। একজন যার কথা বলছি তিনি মান্নান স্যার, ধরে নেয়া হয় তিনি সাদা দল। মানে বিএনপি। আসলে উনি কি, তা নিজেই জানতেন না। 
তবে নীল দলের এ ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকরা আবার দুভাগে বিভক্ত। তাতে কিছু যায় আসে না। তবে এখানে যৌনাচারে লিপ্ত ছিলেন আরো দু একজন শিক্ষক। তাদের একজন ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বা নিয়ে কাজ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের একজন নেতা তার নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি নাকি তাদের নারীদের ভোগ করেন। একই অভিযোগ তিনি করেছেন একই বিষয়ে কাজ করা ইতিহাসের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। এস অদ্যাক্ষরের ওই ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার বৃহত নেতা আমাকে বলেছিলেন, 'এরা গবেষণার নামে ভণ্ডামি করে, কচি মাল খাওয়ার ধান্ধা।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ থেকে পাস করে যাওয়া ওই নেতা কতটা কষ্টে এ কথা বলেছেন, সেটি উপলব্ধি করতে আমাকে আরো সময় নিতে হয়েছে। 
ছাত্রীদের প্রতি আরো অনেক শিক্ষকের সমস্যা ছিল। তবে অনেকে এখন 'মরহুম'। তাই তাদের বিষয়ে বলাটা ঠিক হবে না। প্রাণী বিদ্যা ডিপার্টমেন্টর একজন অধ্যাপক তার এক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে ব্যাপক ঝামেলা পাকিয়েছিলেন। ওই ছাত্রী লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয কর্তৃপক্ষকে জানালে আমি খবর পাই। চিঠির একটি কপিও পেয়েছিলাম। তাতে যে বর্ণণা দেয়া তা শুনলে শিক্ষকদের প্রতি কারো আর আস্থা থাকবে না। 
ছাত্রীদের সাথে যৌনাচরণ বা নিপীড়নের তালিকাতে ফার্সি ডিপার্টমেন্টও ছিল। অতি অপরিচিত এ ডিপার্টমেন্টের এক অধ্যাপকের বৌ তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু এ সব ঘটনার সঠিক সুরাহা হয়নি। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষকরা এ ধরণের আচরণে জড়িয়ে পড়েছেন, এর প্রমাণ অনেকের কাছেই আছে।
বিশ্বববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জ্ঞানী মানুষ তাই প্রতিভার বিকৃতি হিসাবে এ সব ক্ষমা করে দেয়া হয়। কিন্তু এ সব ক্ষমা কিংবা বিচার ছাড়া দায় মুক্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা বাড়ছে বৈ কমছে না। বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাই না। এ পর্বটি লিখতাম না। কিন্তু অনেকেই বলেছেন, ছাত্রদের টা লিখলে, শিক্ষকরা বাদ যাবে কেন? তাইতো। বাদ যাবে কেন? তাই স্বল্প পরিসরে কিছু লিখলাম। পৃথিবী বড়ই বিচিত্র, অভিজ্ঞতা আরো বিচিত্র এবং নির্মম। 
সামনের পর্বে অন্য গল্প। আপাতত শরীর বিষয়ক গদ্য বাদ। 


১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

কিস্তি-২৮ ::নারীর লোভ!

যারা ছাত্র রাজনীতি করেন তাদের প্রভাব-বলয় যে কতটা ভয়ঙ্কর সেটি বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টাররা আঁচ করতে পারেন না। আসলেই পারেন না। কারণ এ সব প্রভাবশালী নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টারদের সমীহ করে চলেন, তাই আমাদের কাছে একটা মানবিক চরিত্র ফুটে ওঠে। 
কিন্তু নারীর কাছে, নারী জানে এরা কেমন। ছাত্র নেত্রীরা ভালো করেই জানেন কার চরিত্র কেমন। এ ক্ষেত্রে কোনো দল নেই। মত নেই। আদর্শ নেই। রমণী মোহন না রমনী পীড়নে এরা যে সিদ্ধ হস্ত সে কথা বলতে চাই। আমি এ দিকটা ভালো করে দেখার ও জানার সুযোগ পেয়েছি, কারণ ছিল আমি দেশের একমাত্র ট্যাবলয়েড পত্রিকার সাংবাদিক ছিলাম। তাই অনেক খবর না চাইলেও আমার কাছে আসতো। 
ছাত্রলীগের শীর্ষ কেন্দ্রীয় জনপ্রিয় নেতা, মেধাবী হিসাবে যার সুনাম ছিল। ২০০২ সালের দিকে তার কাছে গেছেন শামনসুন্নাহার হলের এক নেত্রী। নেত্রীরা বাইরে যাবার সময় অবৈধভাবে হলে তোলা ছাত্রীদের সাথৈ নিয়ে যান। এমনই একজন ছাত্রীকে নিয়ে গেছেন ওই নেতার বাসায়। নেতার তো সেই ছাত্রীকে দেখে পছন্দ। নেত্রীকে ডেকে বললেন, ওকে তার লাগবে। নেত্রী কয়েকবার না করলেন। 
বললেন, ভাই ও এমন না। আমি তো আপনার কাছে পাঠাই। একটা পাঠিয়ে দেবো। নেত্রীর দয়া হয়েছিল ওই কচি মুখের প্রতি। কিন্তু নেতার তো কচি মুখ চাই। শেষ পর্যন্ত নেত্রী হেরে গেলেন। নেতা তার পুরুষত্ব(!) দেখালেন বিশ্বদ্যিালয় আঙ্গিনায় আসা নতুন ছাত্রীকে। ওই ছাত্রী এ ঘটনা লজ্জায় কাউকে ভলতে পারেননি। কিন্তু নেত্রী তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে এটি শেয়ার করেছেন। বলেছেন, আমি শুই। আমার পদ দরকার। কিন্তু নিরীহ একটা মেয়েকে ভাই এভাবে। না আর বলতে চাই না। 
ছাত্র নেত্রীরা নেতাদের কাছে ছাত্রীদের পাঠানোকে অনেকটা মেনেই নিয়েছেন। এটা যে কেবল ছাত্রলীগের ঘটনা তা নয়। ছাত্রদলেও একই অবস্থা। ছাত্রদলের সে সময়কার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক শীর্ষ নেতা তার অনুজ নেতার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যে কীৃর্তি করলেন, তা অনেকেরই মনে আছে। অনুজ নেতাও কম যেতেন না,গার্লফ্রেন্ডকে দেখিয়ে সচিবালয়ে ভালো তদবির করেছেন। গার্ল ফ্রেন্ড বিনিময়ে পেয়েছে টাকা আর ছোট বোনোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ। 
ছাত্রদলের এক কিনম্যান নেতার দোষ বলতে এ টুকু- তার ঢাকার বাইরে যাবার সময় তার একজন কচি মেয়ে মানুষ লাগভে। সেটি যে ভাবেই হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোক, বা ইডেনের। ইডেন কলেজের সে সময়কার সবচেয়ে সুন্দরী নেত্রীকে নিয়ে তিনি অনেক কিছুই করেছেন। এটা প্রায় ওপেন সিক্রেট। 
দলে নিজের অবস্থান করতে হলে নেতাদের খাদ্য হতে হয়। এটা ছাত্রদল, ছাত্রলীগ বা বাম দল সব দলেই আছে। শামসুন্নাহার হলের এক ছাত্রলীগ নেত্রী কেবল পদ পাবার জন্য তিনজনের সাথে শোয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা হয়ে আছেন ভালোই। 
এ রকম কত শত গল্প আছে। সে সব গল্পের কোনো শেষ নেই। ছাত্রীদের কান্নার গল্পের শেষ নেই। আবার অনেকে এটাকে নিয়তি বলে মনে নিয়েছেন। অনেকে এ সব করতে করতে পেশা হিসাবে নিয়েছেন। কেউ করেছেন আবার আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হিসাবে নিয়েছেন। কেবল ছাত্র নেতারা নন। ক্যাডাররাও কম যান না। আমার হলের এক সহপাঠি, ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল। ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয় ও ইডেন মিলে ৭৪ জনের সাথে সেক্স করার অভিজ্ঞতা তার। ও নিজেই বলেছিল, টিউশনি দিয়ে, হলে তুলে নানাভাবে এ সুযোগ সে নিয়েছে। তবে চুয়াত্তর না হলে ২৪ হবে, এটা আমি নিশ্চিত। তবে দুর্ভাগ্য হলো ওর বউটা খুবই ভালো। 
এ ছাত্র নেতা ক্যাডাররা ছাড়াও অন্যরাও ছাত্রীদের উপভোগে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের গল্প শোনাবো সামনের কোনো পর্বে। একই সাথে শিক্ষক মহোদয়দের আলুর দোষ নিয়ে এক কিস্তি লিখবার ই”ে 

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:০৪

কিস্তি-২৭ ::ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের পান্ডা ক্যাডাররা অনেক ভালো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কতটা দলবাজ হতে পারেন, সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এদের সাথে চামবাজ শব্দটাও জুড়ে দেয়া জরুরী। নানাভাগে বিভক্ত শিক্ষক রাজনীতি। বামরা গোলাপী, আওয়ামী লীগ নীল, জামায়াত বিএনপি সমর্থকরা সাদা। 
আসলে রঙ্গের আড়ালে সবাই ধান্ধাবাজ। পদ পদবি ভাগানো আর শিক্ষক তকমা গায়ে মাখিয়ে কন্সালটেন্সি করাই এদের কাজ। কীভাবে আগেভাগে বাসা- প্রমোশন পাওয়া যাবে তার ধান্ধা ফিকির। 
যাকগে সে কথা। যারা জানে না তাদের জন্য এখানকার রাজনীতির একটা ধারণা লাগবে। এখানে দল মত নির্বিশেষে একটা আছে এমাজ গ্রুপ। এটা সাদা দলের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদের গ্রুপ। আরেকটা নোয়াখালী গ্রুপ। এখানে দল মত নির্বিশেষ আছে। এর বাইরে সাদা দলে জামায়াত পন্থীরা এক ভাগ। আর তাদের বিপরীতের আরেকভাগ। 
জামায়পন্থীদের নেতা ছিলেন আমিনুর রহমান মজুমদার। বিএনপি পন্থীদের নেতা ওয়াকিল আহমদ। 
নীলদলের নেতা মেসবাহউদ্দিন স্যার থাকলেও সামনের সারিতে অনেককে দেখা গেছে। গোলাপী দল নিরীহ টাইপ ভাব নিয়ে বসে থাকে। নীতি কথা বলে। সুবিধা পেলে আলাপ বাদ দিয়ে টিচার্স লাউঞ্জে পত্রিকা পড়ে। 
শামসুন্নাহার হলের ঘটনার পর সাদা দলের একাংশ নিজেদের ধোয়া তুলসি পাতা প্রমাণের চেষ্টা করছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি কারো। 
নীল দলে সবাই একাট্টা। শিক্ষক সমিতির একদিনের মিটিংয়ের কথা বলি। ক্লাবে মিটিং হচ্ছে। আমরা ক'জন এটি ফলো করছি। দেখলাম রাত ৮ টার দিকে মিটিং থেকে অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বেরিয়ে আসলেন। পাশের টেনিস কোর্টে একজনের সাথে মোবাইলফোনে কথা বলছেন। বার বার আপা আপা বলছেন। বুঝতে পারলাম আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে আলাপ হচ্ছে তার। কী কর্মসূচী নেয়া যায়, সমিতির তরফে তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তিনি। 
আমি খুবই অবাক হলাম, তার মত একজন প্রাজ্ঞ টিচার নেত্রীর কথার ওপর শিক্ষক সমিতির কর্মসূচী নির্ধারণের চেষ্টা করছেন দেখে। তবে নীল দলে অনেক নেতা ছিলেন , যারা অতটা দলবাজ ছিলেন না। তাদের মধ্যে অধ্যাপক শরিফ উল্লাহ ভূইয়া কিংবা নাসরিন ম্যাডামের কথা বলা যায়। নাসরিন ম্যাডাম বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় ফজিলাতুননেসা মুজিব হলের প্রথম প্রভোস্ট হয়েছিলেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি হয়েছেন। তাকে অতটা দলবাজি করতে দেখিনি। যতটা করেছেন অধ্যাপক একে আজাদ, আখতার হোসেন কিংবা সিরাজুল ইসলামরা।মুখোশের আড়ালে থাকতেন আরেফিন স্যার। এখন অবশ্য সে মুখোশ খুলে গেছে। 
শিক্ষক সমিতির মিটিংয় প্রায় কয়েকমাস নিবীড় ভাবে ফলো করার সুযোগ হযেছিল, সেখানে শিক্ষরা নিজের দলের পক্ষ নিয়ে আরেকজনের দিকে তেড়ে যেতেও দেখেছি। তবে এ ক্ষেত্রে বাম ঘরাণার শিক্ষকরা ব্যাতিক্রম। তারা সব সময় ধরি মাছ না ছুই পানি। 
নীল ও সাদার মধ্যে বরাবরই আগ্রাসী মনোভাব।। বরং এদের তুলনায় মধূর ক্যান্টিনে ছাত্র দল ও ছাত্রলীগের পান্ডা ক্যাডাররা অনেক ভালো। এ কথা আমি না কেবল, সবাই স্বীকার করবেন। 

ছাত্র নেতাদের নারী শিকার নিয়ে পরের পর্ব

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭

কিস্তি-২৬ ::সুরত মন্দ ছিল না

ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার পর বিপদে পড়েছিল সবাই। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে ছিল ক্যাম্পাস রিপোর্টাররা। কারণ তাদের ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও খবর সংগ্রহের জন্য ঢাকাতেই থাকতে হয়েছে। অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাসায় উঠেছিলেন। 
আবার কয়েকজন সাংবাদিক সমিতিতে মানবেতর দিনযাপন করেছিলেন। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ জুবেরী ভাই অন্যতম। জাকিও ছিল সে দলে। ছিল আরো ক'জন। সবার নাম মনে পড়ছে না এ মুহুর্তে। 
হল বন্ধ হওয়ার পর আমি ফুপাতো ভাইয়ের নাখালপাড়ায় আস্তানা গাঁড়লাম। সেখানে প্রায় মাসখানেক ছিলাম। কিন্তু এক বাসায় এতদিন থাকতে ভালো লাগছিলো না। তাই বাসা ত্যাগ করলাম। 
প্রতিদিন সকালে বের হয়ে রাত ১১ টায় ফিরি। এতে করে সময় কেটে যাচ্ছিলো। 
শামসুন্নাহার হলের আন্দোলনের সময় সম্রাট ভাই(এটিএননিউজের বড় কর্তা), নূরনবী ভাই (লন্ডন প্রবাসী)ও হৃদয় ভাই(নিউএজের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার)সহ কয়েকজন পুলিশের হাতে মার খেয়েছিলেন। এরপর তারা ছুটিতে। তাদের পত্রিকার পক্ষ থেকে সিনিয়রদের নিউজ করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হলো। 
সে সময় বড় পত্রিকা বলতে প্রথম আলো, যুগান্তর ও ইত্তেফাক। প্রথম আলো থেকে শহিদুজ্জামান ভাই(বর্তমানে নিউ এজের চিফ রিপোর্টার), যুগান্তরের শাহেদ চৌধুরী (এখন সমকালের চিফ রিপোর্টার) এবং ইত্তেফাকের হয়ে সালেহউদ্দিন ভাই (এখনো ইত্তেফাকেই আছেন) তদন্ত
কমিশণ কভার করতেন। 
মানবজিমন থেকে আমি ও কাজী হাফিজ ভাই (বর্তমানে কালের কণ্ঠের স্পেশাল করেসপনডেন্ট) কাজ করতাম। দুতিন পরে তাকে তুলে নিলে আমি একাই সামলেছি। 
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টারদের এমনতর দুর্দিনে অফিস থেকে কোনো ছাড় ছিলনা। নিউজ কভার করতে হবে। কবির ভাই, আমি , শামীম , সাজু ভাই ও ফয়জুল্লাহ মাহমুদ ভাই আড্ডা দিতাম। খবর সংগ্রহ করতাম। রাতে অফিস থেকে যে যার গন্তব্যে। যার জন্য আগের শেয়ারিংটা সেভাবে ছিল না। 
আমি মাসখানেক ভাইয়ের বাসায় থাকার পর শামীমের সাথে ওর বড় মোমিন ভাইয়ের বাসায় উঠলাম। রাতে ওখানে থাকতাম। সকালে উঠে সরাসরি তদন্ত কমিশনে। এভাবে রাত দিন পার হচ্ছিল। 
তদন্ত কমিশনের অফিস ছিল ঢাকা কলেজের পাশে নায়েমে। আমরা সেখানে থাকতাম সারাদিন। দুপুরের দিকে খেতে যেতোম ল্যাব এইড থেকে সেন্ট্রাল রোড যাওয়া দিকে গাছতলার এক রেস্টুরেন্টে। খুব মজা করে খেতাম। সালেহ উদ্দিন ভাই ও শহিদুজ্জামান ভাইও আমাদের সাতে প্রায় যেতেন। অন্য সব দিন আমরা খেলাম নীলক্ষেতে। বইয়ের বাজারের ভেতরের দিকে কয়েটা ভাতের দোকান ছিল। ১৮ টাকায় আস্ত একটুকরো ইলিশ মাছ, সাথে একটা পোড়া মরিচ দিয়ে ভালোই খাওয়া হতো। খাবারের এ জায়গা আবিষ্কার করেছিলেন ফয়জুল্লাহ মাহমুদ ভাই।
তদন্ত কমিশনের সামনে অলস সময়টা খারাপ কাটতো না। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের যে সব নেত্রী আসতেন তাদের প্রত্যেকের সুরত মন্দ ছিল না। তাদের সাথে আলাপ করে সময় ভালো কেটে যেতো। নীপা তাদের অন্যতম। শরীরের গড়নের জন্য সবার কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তনুশ্রী হোড়সহ আরো কয়েকজন ছিল যাদের কথা অনেকের এখনো মনে আছে। 
একদিন সকালে আমি ছাত্রলীগের নেত্রীরা সবাই একসাথে আমাকে জেরা শুরু করলেন। এর সূত্র হলো মানবজমিন এক রিপোর্টে বলেছে আন্দোলনের নেপথ্যে ছাত্রলীগ। সত্য কথা এটা। কিন্তু ছাত্রলীগের সে সব নেত্রীরা সব ক্ষেপে গেলেন। আমাকে সবাই ধরলেন কেন এ রিপোর্ট। আমি বললাম এটা তো আমি করিনি। আজহার ভাই করেছিলেন। ভুল থাকলে সংশোধনী দেবো। কিন্তু ওরা ভুল প্রমাণ করতে পারছে না। তাই আর কিছু করার ছিল না। 

শিক্ষকদের পার্টিজান ভূমিকা নিয়ে পরের কিস্তি। 

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩

কিস্তি-২৫ ::সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল

পিন্টু ভাইয়ের অনুসারীরা ক্যাম্পাস থেকে স্বেচ্ছায় বা চাপে চলে যাওয়ার পর সাধারন ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব ফিরে যায়। ছাত্রদলের কমিটি নেই। তাই হল নিয়ে মাথাব্যথা খুব একটা কারো নেই। সবাই কমিটির জন্য অপেক্ষা করছিল। এর ভেতর ঘটে ২৩ জুলাই শামসুন্নাহার হলে পুলিশ প্রবেশের ঘটনা। সে সময়কার হল প্রভোস্ট সুলতানা শফিকে সরিয়ে দেয়ার কথা উঠলে ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারণ ছাত্রীদের ক্ষেপিয়ে তোলে। এ নিয়ে তোলপাড়। ২০০২ সালে ২৩ জুলাই হলের গেট ভেঙ্গে পুলিশ ঢোকে। পর দিন ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ বিস্ফোরণ ঘটে। কারো না কারো গার্লফ্রেন্ড আছে শামসুন্নাহার হলে। তারা আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে হলে হলে ক্যাম্পেইন করেন সবাই প্রতিবাদে উৎসাহ দেন। সাংবাদিকরা যারা ছিলাম, সবাই এর বিপক্ষে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। 
রাতে পুলিশ কয়েকজনকে ধরে রমনা থানায় নিয়ে যায়।পরে সকালে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সে সময়কার রমনার ওসি ছিলেন লুৎফর ভাই। 
২৪ জুলাই সকালেই বিশাল মিছিল। ছাত্রলীগ হলে এটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতো, ছাত্রদল নেতারা নিয়ন্ত্রণের বদলে নিজেরাই মিছিলে শামিল। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা। ভিসি ছিলেন অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। মিস্টার চৌধুরী বলছেন, রাতে তাকে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রভোস্ট সুলতানা শফি বলেছিলেন, সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল। 
কি কন্ট্রোলে আছে সেটি পরের দিন বোঝা গেলো!
সে সময় হলে গেট ভেঙ্গে পুলিশ ঢুকেছিল কিনা তা নিয়ে প্রচুর তর্ক ছিল। পরে মানব জমিনই প্রথম প্রথম প্রমাণ করেছিল গেট ভেঙ্গে পুলিশ ঢোকে এবং সেটি ওসি লূৎফর রহমানের এক্সক্লুসিভ ইনটারভিউর ভিত্তিতে। মিস্টার লূৎফর আগস্ট মাসে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে এলে আমি তার সাথে কথা বলি এবং রিপোর্টটি তৈরি করি। সে সময় এটি একটি বহুল আলোচিত রিপোর্ট ছিল।
মিস্টার লুৎফর আমাকে খুব হেল্প করেছিলেন। সে জন্য তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা ছিল সীমাহীন। 
আমার ক্যাম্পাস রির্পোটিংয়ের জীবনে যে ক'জন পুলিশ অফিসারকে আস্থায় নিতে পেরেছিলাম তার মধ্যে লুৎফর ভাই অন্যতম। এছাড়া এডিসি রহিম ভাই, নাফিউল ভাই , সার্জন আনোয়ার ভাই ও মশিউর ভাই ছিলেন অন্যতম।
আনোয়ার ভাই ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করতেন। মশিউর ভাই ওতাই। তাদের সাথে একেবারেই বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সাধারণত পুলিশ সম্পর্কে আমার যে প্রথাগত ধারণা আছে এবং এটি সত্যও বটে; সেখান থেকে এরা একটু দূরে ছিলেন। আনোয়ার ভাই ও মশিউর ভাইয়ের সাথে প্রায় আড্ডা মারতাম। 
শামসুন্নাহার হলের ঘটনা নিয়ে একটা ধুম্রজাল ছিল। সরকারের দুজন প্রতিমন্ত্রী এর সাথে জড়িত ছিলেন। দুজন নারী নেত্রীর আবদার রক্ষা করতে গিয়ে এ বিপর্যয়। আর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর বিপর্যয় আওয়ামী লীগ নেত্রীকে বিশ্বাস করেছিলেন বলে। 
ঘটনার পর নীল ও গোলাপী দলের শিক্ষকরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠলেন। সবাই মিলে আন্দোলন শুরু হলো। রোকেয়া হলের সামনে মুক্তাঞ্চল বানিয়ে সাবেক গাঞ্জাখোর মাহমুদুজা্জামান বাবুর গান শোনাচ্ছে। বাম দল নেপথ্যে নানা রকমের ক্যারিকাচার করছে। আন্দোলন জমিয়ে তোলা হয়। সে আন্দোলন থেকে ছাত্রদলের নেতাদের প্রতি অপমান সূচক অনেক কাণ্ডই হয়েছে। তবে ছাত্রদলের কমিটি না থাকায় সে সময় তারা কোনো সমিন্বত প্রতিবাদ জানাতে পারেননি। 
শাহবাগে মনির ভাইয়ের মত নেতাকে জুতা দেখানো হযেছে। সেটিও হজম করেছে ছাত্রদল। 
পুলিশ আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগ করেছিল্ কিন্তু সফল হয়নি। আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। সুলতানা শফিকেও পদ ছাড়তে হয়েছে। কেউ থাকতে পারেনি। ছাত্রলীগ ও বামদল এটাকে পুজি করে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির করে তোলে। ৭৯ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। সে সময় ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের দুর্দিন ছিল। হল বন্ধ। থাকা খাওয়া নিয়ে দুর্ভোগ। 

পরের কিস্তি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের দুর্ভোগ নিয়ে

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

কিস্তি ২৪ ::বাইরে রাত কাটাচ্ছি। সে রকম অভিজ্ঞতা।

ছাত্রদলের অছাত্র নেতাদের দাপটে আসল ছাত্র নেতারা অসহায়। সবাই কাছে এসে বলে, বলে ভাই তুমি তো লিখছো। বাকিরা চুপ চাপ। আমি ভাবলাম, এ অসময়ে হেল্প করার দরকার। বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে লিখে যাচ্ছি। এর মধ্যে পিন্টু ভাইয়ের অনুসারীরা টেন্ডার নিয়ে বুয়েটে গন্ডগোল পাকিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আমি ক্রমাগত লিখছিলাম। কিছুক্ষণ পর খবর এলো সনি নামে কেমি কৌশল বিভাগের এক ছাত্রী গুলি খেয়ে মারা গেছে। ছুটলাম বুয়েটের দিকে। খবর সংগ্রহ করলাম। যথারীতি অফিসে পাঠানো হলো সে খবর। বন্ধুরা সবাই মিলে কাজ করছি। ভালো লাগছে। 
তবে আমাদের টার্গেট সন্ত্রাস করেন এমন ছাত্র নেতাদের হটানো। যদিও বিয়ষটা জটিল কিন্তু আমি হাল চাড়তে চাইনি। ছাত্রদলের মতানুসারী হয়েও আমি এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত লিখে যেতে থাকি। আমার টার্গেট ক্যাম্পাসে একটা ভালো পরিবেশ। 
ছাত্রদলের অনেক নেতা আমাকে উৎসাহ দিযেছেন্ এর মধ্যে মনির হোসেন ভাই, মোস্তাফিজুল ইসলাম মামুন ভাই, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ কিংবা সফিউল বারী বাবু ভাইয়ের নাম উল্লেখ করতে পারি। আবার অনেকে নিজের স্বার্থে উৎসাহিত করেছেন। তাদের নাম নিতে চাই না। সেটা গোপন থাকাই ভালো। 
লেখনির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তারে সব সময় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর উৎসাহ দিতাম। কারণ আমি বরাবরাই চাইছি এ ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্ররা যেন বড় ধরণের অসুবিধার সম্মুখিন না। 
তবে সাধারন ছাত্ররা যে সুযোগ পেলে মাথায় ওঠে নাচতে চায় সেটাও দেখার সুযোগ হলো। সনি হত্যাকতাণ্ডের পিন্টু গ্রুপের ক্যাডারা ক্যাম্পাস ছেড়ে পালালো। এরপর কিছু দিন সাধারণ ছাত্ররা নিজেদের মত করে চলতে থাকলো। তখণ তারা আর কাউকে মানুষের পর্যায়ে মনে করতো না। বিশেষ করে বিভিন্ন হলে সরজমিন ঘুরে এটা দেখলাম। পারলে নেতাদের গায়ে পড়ে, দুটো চড় থাপ্পর মেরে যায় অবস্থা। 
এটা দেখে আমার মনে হলো ছাত্রলীগের সময় যে গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা, মাথনত করে সালাম দিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল সেটিই ভালো ছিল। 
সে প্রসঙ্গ থাক। ফিরে আসি বুয়েট প্রসঙ্গে। সনি হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল বুয়েট। প্রধান আসামাকি মুকি। 
আগেই বলেছি বিএনপির পক্ষে মিডিয়া থাকে না। এ ঘটনা আওয়ামী লীগের সময় ঘটলে তেমন একটা পাত্তা পেত না। যেহেতু বিএনপি সরকারের সময় ঘটেছে তাই এটা নিয়ে তুমুল আন্দোলন। আমি সাংবাদিক হয়েও এ আন্দোলনে সমর্থন জানালাম। নিরলসভাবে রিপোর্ট করেছি। 
এ আন্দোলনের এক পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সহায়তায় বুয়েটের ছাত্রছাত্রীরা একটা অনশন কর্মসূচী পালন করছিল। সে অনশন কর্মসূচীতে লোক ছিল সাকুল্যে ৫০ জনের মত। আমি একটু বাড়িয়ে প্রায় শ' খানেক লিখেছিলাম। 
পরের দিন আমার অফিস থেকে বললো প্রথম আলো লিখেছেন শত শত ছাত্র অনশন করছে। আর তুমি লিখছ প্রায় শ খানেক। একই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল আমার বন্ধু ও সে সময়কার ইন্ডেপেনডেন্ট পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ইমামুল হক শামীম। 
আমার চিফ রিপোর্টার ছিলেন ছাত্রইউনিয়নের সাবেক নেতা সারোয়ার ভাই। আমি উনাকে বললাম, আমি যা লিখেছি তাই ঠিক। তবুও তিনি মানতে না রাজ। পরে আমি এর একটা তালিকা তাকে দিয়েছিলাম। ছাত্রফ্রন্টের মামুন ভাই ওই অনশণ কো অর্ডিনেট করছিলেন। তার কাছে অনশনকারীদের লিস্ট ছিল। সেটি আমি অফিসে হাজির করলে সারোয়ার ভাইয়ের বড় গলা আস্তে করে নেমে গেলো। 
একই তালিকা শামীমকেও দিয়েছিলাম। কিন্তু তা দেখাতে হয়নি ওর অফিসে। 
এই প্রথম আমি মিডিয়ার বাড়িয়ে লেখার, বাড়িয়ে দেখানোর এবং তিলকে যে তাল করে প্রচার করা হয় তার একটা উদাহরণ পেলাম। মানুষ যে সাংবাদিককে সাঙ্ঘাতিক বলে তাও জানলাম এ কারণে। তবে বুয়েটের আন্দোলনের সাথে ছিলাম। সমারা বছর বাসায় বন্দী মেয়েরা অনমণে আছে। তাদের একজনের কাছে জানতে চাইলাম কেমন লাগছে। ওর উত্তর এক্সাইটিং। আমিার খুবই ভালো লাগছে। এ প্রথম বাইরে রাত কাটাচ্ছি। সে রকম অভিজ্ঞতা। 
আমার সম্পাদক মতি ভাই ভয়েস অব আমেরিকা রিপোর্টার। তার জন্য ওই ভয়েস রেকর্ড করে এনেছিলাম। মতি ভাই, শুনলেন এবং হাসলেন।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:৫০

কিস্তি-২৩ ::অসাধারণ মামুন ভাই


টিএসসিতে দাঁড়িয়ে আছি। বন্ধু এহতেশাম আসলো। বললো, দোস্ত খবর কি। ..ভালো। তোর খবর কি? ও বলল আর বলিস না। ছাত্রদলকে ফাটায়া ফেলছে মানবজমিন। কে যে রিপোর্ট করছে ধরতেও পারছি না। বন্ধু হিসাবে ওকে বললাম, আামি সেই রিপোর্টার। ও যেন আকাশ থেকে পড়লো। 
পাশে একজন ছাত্রদল নেতা আমার পরিচয় জেনে গেলো। এহতেশাম চলে যাওয়ার পর ও আমার কাছে এসে বলল, তুমিই তারেক মোরতাজা। তোমারে খুঁজতাছি বলে এগিয়ে আসলো। ওআরো কয়েকজন মিলে আমাকে দাবড়াচ্ছে। আমি সোজা দৌ্ড়। 

দৌড়ে সোজা চলে এলাম মধুর ক্যান্টিনে। আমাকে যারা দৌড়াচ্ছে তারা মধু'র সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। ক্যান্টিনের ভেতরে গিয়ে মনির ভাই ও মামুন ভাই দুজনকেই পেলাম। জানলাম ঘটনা। ওনারা দুজনেই আমাকে পরিচয় জেনে একটু চুপ থেকে বললেন, রিপোর্ট তুমি করতেই পার। সে জন্য মারবে এমন সাহস কার। আমি বাইরে দাঁড়ানো ধাওয়াকারীদের দেখিয়ে দিলাম। 
মনির ভাই ও মামুন ভাই দুজন বাইরে এসে ওদের শাসালেন। বললেন, তারেক আমাদের ছোট ভাই, ওর কিছু হলে, দলে কারো জায়গা হবে না। এরপর আমাকে আর ঠেকায় কে। 
মনির ভাই ও মামুন ভাইয়ের সাথে আমার এক্সটা খাতির ছিল। দৌড়ানি খাওয়ার পর সে সময়কার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার সাজু ভাই(বর্তমানে বিবিসিতে), কবির ভাই(এখন একটি সরকারি ব্যাংকে আছেন), যাকারিয়া ভাই(চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার), সাবু ভাই (শাবিপ্রবি'র টিচার), শঙ্কর দার(সরকারি কলেজের চটচার ) সাথে পরিচয় হলো। সবাই আমাকে আপন করে নিলেন। 
ফয়জুল্লাহ মাহমুদ ভাই(এখন এনটিভিতে) ও সম্রাট ভাইকে(এটিএননিউজে আছেন) আগে থেকে চিনতাম। 
ছাত্রদলের তখন শৃঙ্খলা ছিল না। তবুও তারা আমার নিরাপত্তার বিষয়টি এনশিওর করেছিলেন। 
মামুন ভাইকে সবাই 'ভয়ঙ্কর' নেতা হিসাবে জানতেন। এ মানুষটা আসলেই দিলখোলা। তার মত একজন অসাধারণ নেতাকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। শুনেছি তাকে খুন করা হয়েছে। 
কিন্তু এই মামুন ভাই আওয়ামী লীগের সময় ক্যাম্পাসে একাই মিছিল আয়োজন করতেন। ছাত্রদলের অকুতোভয় সাহসী মামুন ভাইকে খুবই পছণ্দ করতাম। তবে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতাম না। একবার রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে টেন্ডার ড্রপ করতে বাধা দেন মামুন ভাই। সেদিন মামুন ভাই তার মোটর সাইকেলে করে আমাকে মানবজমিন অফিসে নামিয়ে দিয়ে যান। পরের দিন তার বিরুদ্ধে ওই রিপোর্ট ছাপা হলো। উনি কোনো উচ্চাবাচ্য করলেন না। শুধু বললেন, রিপোর্টটা ঠিক আছে। এরপর থেকে তার প্রতি আমার মুগ্ধতা বেড়ে যায়। আমি শুনেছিলাম এক সময় উনি খুব কড়া ছিলেন। বিরুদ্ধে রিপোর্ট গেলে রিপোর্টারকে হয়রানি করতেন, কিন্তু আমি তার কোনো প্রমাণ পেলাম না। 

১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৮