কিস্তি:: ৯০:: 'মফিজ' মোরতাজা তখন টিএসসির গেটে

ইত্তেফাকের তারুণ্য পেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয ভর্তির কানুনটা কেটে রেখেছিলাম। সেটা সম্ভবত ১৯৯৫ সালের কথা। তার পর মনে ভেবে রেখেছি-এ ক্যাম্পাসে পড়তে আসবো।

১৯৯৮ সালের শীতকালের এক সকালে ঢাকা আসছি। ইন্টারের রেজাল্টের পর।  আব্ববা বলে দিলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হলে ফিরে যেতে হবে নোয়াখালী।

কিছুটা অনিশ্চয়তা নিয়েই ঢাকায় আসা।  বিশ্ববিদ্যালয়ে না টিকলে ঢাকায় আসার থাকা হবে বড় জোর মাস চারেক। তারপর ফের নোয়াখালী। যেখানে আমি ফিরতে চাই না। কেনো চাই না এর কোনো উত্তর নেই।

ঢাকায় এসে সায়েদাবাদ নামার পর মেসে।  ভর্তির লড়াই শুরু করতে সময় লাগলো সপ্তাহ দুই। কোচিং করছি। অনেক কিছুই বুঝতে পারছি না।শহরের ছেলে মেয়েরা ইংরেজিতে ভালো। প্রচুর পড়াশোনা করেছে তারা। তাদের সাথে পেরে ওঠা নিয়ে সংশয়। কিন্তু হাল ছাড়তে চাইনি। তাই জিতেছি।

পিতৃ নিষেধ অমান্য করে প্রথম পরীক্ষাটা দিয়েছিলাম জগন্নাথ কলেজে। সেই পরীক্ষার পরে আত্ম বিশ্বাসটা খুব বেড়ে গেছে! মনে হয়েছে, পারবো। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে না। মাড়াতে হবে না নোয়াখালী কলেজের  গেট।
   
১৯৯৮ সালের নভেম্বরে টিএসসি যাচ্ছিলাাম, বাসে।তখনো জানতাম না, এর অবস্থান। বাসঅলা আমাকে এখনকার কদম ফোয়ার কাছে নামিয়ে দিলো। সেখান থেকে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে শিশু একাডেমি। সেখান থেকে টিএসসি আসলাম।  

গ্রাম থেকে সদ্য নগরে আসা 'মফিজ' মোরতাজা তখন টিএসসির গেটে। কত রকমের কর্মশালার খবর। কত রকমের আলাপ আলোচনা-আড্ডা। ইত্তেফাক ও ভোরের কাগজের পাঠক হিসাবে সে সময় মঞ্চ নাটক ও আবৃত্তির খবর পড়া হয়েছে অনেক।

ভেবে রেখেছি আবৃত্তি শিখবো। সে জন্যই এসেছি। স্বরশীলনের একটা ফরম তুললাম। এর প্রধান মাসুদ সেজান ভাই। এখন নাট্যকার ও নির্মাতা।

আমার কোচিং সেন্টারে পাঠ নেবার কথা। সেটি পিছিয়ে ব্যাচের পর ব্যাচ বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি টিএসসির আড্ডা-আবৃত্তিতে মগ্ন। নগরে মাস দুয়েক বই নাড়াচাড়ার পর আমি অনেকটা আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি, আমার জায়গা এ ক্যাম্পাসে হবে।

ফরম তোলার পর জমা দিতে গেলাম কলা ভবনে।কলা অনুষদের অফিসের নীচতলায় লম্বা লাইন দিয়ে ফরম জমা দিয়ে শহীদ ফারুক রোড়ের মেসে ফিরে এলাম। পরীক্ষা হলো। টিকে গেলাম।

তারপর ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬। টানা ৮ টি বছর এ ক্যাম্পাসে ছিলাম। এখনো যাই। আড্ডা, আনন্দে এ ক্যাম্পাস আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছে।  গ্রামীন মধ্য বিত্ত পরিবারের কড়া শাসনে থাকা এই ঢাকায় ফেরার পর মুক্ত। সে মুক্তির স্বাদ আমি নির্মল আবহে নিয়েছি।

নিজের জন্য একটা নিশ্চিত ভবিষ্যত আমি চাইনি ঠিকই; তবে আনন্দে কাটাতে চেয়েছি প্রতিক্ষণ।

জীবনের প্রতিটি কাজ আমি উপভোগ করেছি। অপমান, অসম্মান আর অবহেলা আমাকে কষ্ট দেয়, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রাখলে সব ভুলে যাই।

এ ক্যাম্পাসের প্রতিটি বাঁকে জীবনের যে উৎসব আমাকে পূর্ণ করেছে, আমার জীবনের অভিজ্ঞতার আলোয় আলোকিত করেছে, সেটি আমি জীবনে দ্বিতীয়বার কোথাও থেকে পাইনি। পাওয়া সম্ভব নয়।

তার ওপর ক্যাম্পাসে ছাত্র হিসাবে থাকার সাথে সম্বাদিকতা আমাকে অধিকার নিয়ে, সম্মান নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত থাকতে সহায়তা করেছে।

আমি যখন যেখানে থাকি, সেখানে সব কিছু নিজের মত করে গড়ে নেয়ার চেষ্টা করি। অক্ষম হলে সে স্থান ত্যাগ করি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো কিম্বা খারাপ দিক।

আমি ভবিষ্যত দ্রষ্টা নই। সামনে কী হবে, তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। তবে চলমান সময়কে আমি আনন্দময় করতে জানি। অতীত আমাকে টানে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আমি অতীত মনে করি না। চলমান বলেই বিশ্বাস করি।

এ ক্যাম্পাসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন মানে আমার মানসিক মৃত্যু।  জীবনের প্রতি বাঁকের পরিপূর্ণতা দিয়ে এ ক্যাম্পাস। আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং আনন্দ অনুভূতির সর্বোচ্চ জায়গা এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।    

কিস্তি ::৮৯:: পর্যটন, বাঘ, টেনশন, নিরাপত্তা এবং আমার উদ্যোক্তা রহস্য


'পর্যটন শিল্পের বিকাশের আন্দোলন'র কর্মী হিসাবে কাজ করছি, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্যারের এস্কারশনে শিক্ষার্থীদের নিতে চান না। কারণ ব্যাখ্যা করে  রসায়নের অজয় স্যার আমাকে বললেন, কোথায় যাবো, নিরাপত্তার কি হাল, এ সব নিয়ে টেনশন।

২০০৪ সালের এক দুপুরে কার্জন হলে তার অফিসে এভাবেই তার সাথে কথা হচ্ছিলো। বল্লাম, স্যার টেনশনের কোনো কারণ নেই। দায়িত্বটা আমি নিচ্ছি। স্যার ভরসা পেলেন বলে মনে হলো না। তবুও বললেন, দেখি।

স্যারের সাথে আলাপের পর আমার মনে হলো পর্যটন স্পটের নিরাপত্তা, থাকার ব্যবস্থা, যাতায়াত ও  সাইট সিয়িং সম্পর্কে একটা সচেতনতা তৈরি করা দরকার।

সে জন্য ছাত্র উপদেষ্টাদের দপ্তরে গিয়ে এটা নিয়ে আলাপ শুরু করলাম। আমার সাথে এ আলাপে  ট্যুরিস্ট সোসাইটির সদস্যদের কাউকে কখনো হাতের কাছে পেলে নিয়ে যেতাম।

শেষ পর্যন্ত অজয় স্যার তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেলেন সেন্টমার্টিন। আমার খুব ভালো লেগেছিন, স্যার আমাকে আস্থায় এনেছিলেন বলে। পরের কয়েক বছর আমরা বেশ কয়েকটি ট্যুরের আয়োজন করে দিলাম।

আয়োজনটা করতে হয়েছিল ভিন্ন কারণে-আমাদের দেশের ট্যুর অপারেটরদের নম্বর দিয়ে আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাঠাতাম। তারা একটা ট্যুরের জন্য যে চার্জ করতেন, তা  খুবই 'অসঙ্গত' মনে হয়েছে আমার কাছে।  শিক্ষার্থীরা এসে বলত- 'ভাই এত টাকা দিয়ে কি ট্যুর হবে!'

ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন ছাত্র আমার কাছে এলেন, ২০০৫ সালে। তারা একটা স্টাডি ট্যুর করতে চান। সে জন্য আমাদের হেল্প দরকাল। সব আয়োজন করা হলো। শামসুল আলম স্যারের  সাথে আমি গিয়ে কথাও বলে আসলাম।

আমার অনুজ বাপ্পী ও সামিউল হক শামীমকে পাঠালাম তাদের সাথে। সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার, রাঙামাটি-বান্দরবান ঘুরে তারা সহিহ সালামতে ফিরে এলেন।

ঢাকায় এসে হিসাব করে দেখি  শামীম আর বাপ্পী দুহাজার টাকা লস করে এসেছে। পরে সে টাকা আমি  দিয়েছি। অবশ্য বাড়তি টাকা খরচ করায় বাপ্পী আর শামীমকে একটু বকাও দিয়েছিলাম।

একই বছরে আইন বিভাগের ছেলে মেয়েরা বলল- তারা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন  বেড়াতে যেতে চায়। এবার ইসলামিক স্টাডিজের বাজেটটা মাথায় রেখে, যাতে লস না হয় সেভাবে প্ল্যান দিলাম।  তারা আরো কয়েক জায়গায় ঘোরাঘুরি শেষে, আমাদের বল্ল- আমরাই যেনো সব এন্তেজাম করি। করা হলো।

আমার বন্ধু মিল্লাত ছিল সেই ব্যাচে। আরেকটা মেয়েকে নিয়ে এসেছিন, তার নামটা মনে  নেই। আমি সব ম্যানেজ করে দিলাম। যা খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে কম খরচে তারা ট্যুরটা করে আসলো। খুবই আনন্দময় ও সফল ট্যুর হয়েছে বলে তারা ঢাকায় ফেরার পর আমাকে জানিয়েছিল।

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুন্দরবনে একটা ট্যুরের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের একটা ব্যাচ যাবে। কয়েকটা ছেলে মেয়ে আসলো ডাটসের অফিসে।

বল্লাম- পরামর্শ চাইলো সুন্দরবন যাওয়ার জন্য ভালো  সুবিধা ও প্যাকেজ কারা দেয়। পর্যটন করপোরেশন সে সময় সুন্দরবন ট্যুর করাতো, তাদের ঠিকানা দিলাম। সাথে গাইড ও বেঙ্গল ট্যুরের ঠিকানা।

ওরা আরো কয়েক জায়গায় ঘুরে আসলো। পর্যটন করপোরেশন ৩ দিনের ট্যুরের জন্য কমপক্ষে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ফি  চেয়েছে। আমি আগেই বলেছিরাম, ট্যুরিস্ট সোসাইটি করালে ২৫০০ টাকায় ম্যানেজ করা সম্ভব। তবুও ওরা বাইরে চেক করে ফিরেছে।

ফেরার পরে  ওরা বল্ল আমরা ম্যানেজ করলে চলবে না।  আমাদেরো যেতে হবে।  তখন ফি বেড়ে ২৮০০ টাকায় ঠেকলো। কারণটা হলো ট্যুরটা ম্যানেজ করার জন্য আমাদের অন্তত ৬ জনকে যেতে হবে। তারা সংখ্যা ৩২ জন। তাহলে ৬ জনের খরচ এবং তাদের অন্তত একটা করে শার্ট কিনে দেবার  টাকা ধরে এই ফি। আগে ২৫০০ টাকা ফি ধরার সময় এ সব হিসাব টা ছিল না।

ওরা তাতেই রাজি।

ঠিক করা হলো এমভি পানকৌড়ি। দোতলা লঞ্চ। বাসে মংলা হয়ে সেখান থেকে সরাসরি লঞ্চে। বাগের হাটের স্থানীয় সাংবাদিক রবিউল ভাই ও মংলার মনিরুজ্জামান কবীর খুব হেল্প করেছিল। মংলা থেকে তিন দিনের রসদ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। যাওয়া মাত্র সবই তোলা হলো।

সকালের নাশতা খেতে খেতে লঞ্চ চলছে। সেই ট্যুরে আমার সাথে লিপি, সাদিয়া, মিটি, শামীম, মামুন এবং আমানত ছিল।  আমরা  হৈ হুল্লোড় করে বেশ কাটিয়েছি।

পশুর নদীর জলে, জোছনা রাত। লঞ্চ চলছে। হরিণ টানায় আমরা বিরতি দিলাম। ছোট ছোট চারটা ঘর। ফরেস্টের লোকজন থাকেন। রাতে আমরা নামলাম সেখানে।

বন বিভাগের লোকজনের সাথে আলাপ হচ্ছিলো- ক'দিন আগেও এখান থেকে 'বাঘে মানুষ নিয়ে গেছে' টাইপের গল্প শুরু করলেন তারা। কিছুক্ষন আড্ডার পর আমরা লঞ্চে ফিরে এলাম।

জোছনায় ভেসে যাচ্ছে পশুরের জল। বন গাছের পাতার ভেতর লুটুপুটি খাচ্ছে কুমারী জোছনা।  সে কী মহা আনন্দ উচ্ছ্বাস সবার। গানে-গল্পে অনেক রাত। খেয়ে দেয়ে সবাই ঘুম।

সকালে লঞ্চ ছুটলো কটকার দিকে। সেখানে নামা হলো। অনেক্ষণ কাটানোর পর আমরা  জামতলী বিচে ভিজতে গেলাম। ওয়াচ টাওয়ার হয়ে লঞ্চে ফিরছি। এর মধ্যে মাঝপথে ইঞ্জিন নৌকাটা নিয়ে একদল তরুন-তরুণী অন্যদিকে চলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলো ইঞ্জিন।  টেনশন- চরমে। ছেলে পুলো সবাই আমাকে ঘিরে আছে। ভাই এখন কী হবে। ট্রলার তো সাগরের দিকে চলে যাচ্ছে।

বল্লাম- তোমরা যও। একজন এক প্যাকেট এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট এগিয়ে দিলো, পাশ থেকে আরেকজন বল্ল, ভাই বেনসন খায় না। গোল্ডলিপ খায়। আরেকটা ছেলে দৌড়ে এক প্যাকেট গোল্ডলিপ নিয়ে আসলো। শামীম সিগারেট ধরিয়ে দিচ্ছে।

ভাবছি কী করবো-
পরে লঞ্চের মাস্টারকে বল্লাম লঞ্চ স্টার্ট দ্যান। মাস্টর আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে। লঞ্চ নৌকার কাছে গেছে নৌকা ডুবে যাবে। বল্লাম ডুবে গেলে  নদীর জল থেকে মানুষ তোলার অভিজ্ঞতা আমার আছে।  চলেন। স্টার্ট নিলো লঞ্চ। শামীম আর  মামুন লাইফ  বয়া নামিয়ে আনলো।

ধীরে ধীরে লঞ্চ গিয়ে নৌকার কাছে পৌঁছালো।  সবাইকে তুলে আনলাম। নৌকায় থাকা সবার ধারণা ছিল- খুব বকা দেবো। আমার মুড আর  আর একটার পর একটা সিগারেট  ফোঁকা দেখে সবাই ভয় পেয়েছিল।তাতেই যথেষ্ট। কিচ্ছু বল্লাম না।

দুপুরের খাবারের সময় সবাই ফের সতর্ক করলাম।  নির্দেশনার বাইরে কিছু করা যাবে না। স্বর্ণা নামের একটা মেয়ে বরাবরই নিয়ম ভাঙ্গার পক্ষে। ওর দিকে তাকিয়ে কথাটা আরেকবার বল্লাম।  মাথা নিচু করে বলল- ভাই ঠিক বলেছেন।

আবার ওরই বান্ধবীরা পেছনে এসে আমাকে বলে স্বর্ণা আমার ওপর খুবই বিরক্ত।

আমার খবরদারি সবচেয়ে বড় কারণ হলো- এ ট্যুরে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের কোনো শিক্ষকই আসেননি। শিক্ষকরা আমাকে বলেছেন, আমি যেনো তাদের দায়িত্ব পালন করে  শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ঘুরয়ে আণি। তাই আমার জন্য যে কোনো রকমের শাসন জায়েজ ছিল!

দুপুর তখন দুইটা কি আড়াইটা। সবার মুখ থেকে ভয়ের ছাপ কমে গেছে। কানের কাছে কেউ কেউ এসে বলছিলো, ভাই বাঘ কি দেখা যাবে। বল্লাম আশা ছেড়ে দাও। কিন্তুি  কী আশ্চর্য। আমরা মাত্র  কচিখালী টাইগার পয়েন্টে এসে নামলাম। কেউ কেউ পুকুরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে বল্লাম চলো শন খেত মাড়িয়ে আসি। কথাটা শুনে সবাই উচ্ছ্বসিত।

এর মধ্যে শন ক্ষেতের মাথায় বনের ভেতর থেকে বাঘ মামা উঁকি মারলেন।  সামনে কয়েক পা এগুলেন। এত্ত মানুষ একসাথে দেখে পালাবে, নাকি সামনে এগুবে এ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল (নিজের বাঘ বিশেষজ্ঞ মনে লইতাছে)। আমরা সবাই দ্বিধা দ্বন্দে- এইটা কী বাঘ! নাকি হরিণ। নাকি বড় বন কুত্তা।

সাথে থাকা বনরক্ষী এবং স্থানীয়  ফরেস্ট অফিসার এসে বললেন, আপনাদের ভাগ্য ভালো বাঘ দেখে গেলেন। আসলেই ভাগ্য ভালো।  জীবনে দুইবার সুন্দরবনে উন্মুক্ত বাঘ দেখেছি। সেবার ছিল দ্বিতীয় ঘটনা। সবাই এতটা আনন্দিত যে দুপুরে খাবারের কথায় যেনো ভুলে গেলো।
     
ঢাকায় ফেরার পর জানলাম স্বর্ণা রোকেয়া হলে তার  সব বান্ধবীদের জানিয়েছে সুন্দরবন ট্যুরটা অসাধারণ হয়েছে।

এই ট্যুরের পরই আমি নিশ্চিত হলাম, সফলভাবে ট্যুর অপারেট করা  সম্ভব। কাজটা আমি করতে পারি। সেটা লাভজনক ব্যবসা হতে হবে, তা কিন্তু নয়। এটা এক ধরণের সেবা হবে। ট্যুরিস্ট সোসাইটিতে আমার মেয়াদ পূর্ণ করার পর চূড়ান্তভাবে আমি এ কাজটা করে আসছি। এ থেকে যে আমার আয় হবে এবং তা দিয়ে সংসার চালাবো, এমন ভাবনা ছিল না। এখনো নেই।

লক্ষ্য একটাই সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রমণ নিশ্চিত করা। এই একটি জায়গায় আমি নিজেকে সফল হিসাবে মূল্যায়ন করতে পারি।  :P 

কিস্তি :: ৮৮:: ভার্জিন ড্রিংকস,পুরনো ঢাকা এবং তেহারি সমাচার



ঘোড়ার গাড়িতে করে পুরনো ঢাকার বাংলা বাজারে যেতাম। এখনো যাই। তবে কুবই কম।  আগে ভাড়া ছিল ৫ টাকা। এখন ২০ টাকা। তাতে কী। এই একটা ভ্রমণ আমার কাছে উপভোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আমার প্রথম রোজগার ছির বাংলা বাজার কেন্দ্রিক।

নোট বই , গাইড বই লিখতাম। ভালোই ইনকাম ছিল। ঘটনাটা এ রকম- আমি  ঘুমিয়ে আছি। পাঞ্জেরীর প্রকাশণীর নেসার ভাই  আনিস ভাইয়ের সাথে ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত সব ক্লাশের বইয়ের নোট তৈরির আলাপ করছিলেন। তার কথার উচ্চ স্বরে আমি মশারী ফাঁক করে  দেখলাম। 

আনিস ভাই পরের দিন আমাকে কিছু কাজ দিলেন। একটা বাংলা বইয়ের পুরো নোট ঘন্টা দেড়েকে বানিয়ে দিলাম।  আমার লেখা তার ও নেসার ভাইয়ের পছন্দ হলো।  তারপর আমি লিখতে শুরু করলাম। তবে প্রকাশনার কাজে জড়িয়ে যে সব বিষয় বেশি  সঙ্কটে পড়তাম তা হলো প্যামেন্ট। এখনো স্কলার্স পাবলিকেশন্সের কাছে আমার হাজার পঞ্চাশেক টাকা বাকি পড়ে আছে।
সেই ২০০১ সাল। আর এখন ২০১৪। টাকা দেবো, দিচ্ছি করে ঘুরিয়েছেন, পরে আর  যাইনি।

তবে লেখালেখির বিষয়ে আর্থিকভাবে সবচেয়ে সৎ  আবদুৃল্লাহ অ্যান্ড সন্স। আমি তাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো স্নাতক শ্রেণীর বই এডিট করে দিয়েছিলাম। এক হাতে কপি নিয়েছে, আরেক হাতে টাকা দিয়েছে।

টাকা নিযে গড়ি মসর কারণে পরে আর লেখা হয়নি। সে সসময়  যাত্রাবাড়ি ও পরে বকশিবাজার থেকে  পুরনো ঢাকার বাংলা বাজারে যেতাম ঘেড়ার গাড়ি করে। বাস চলতো- মুড়ির টিন। এক টাকায় যাওয়া যেতো গুলিস্তান থেকে সদরঘাট।  এতটা কঠিন যানজপট ছিল সেই ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, সে সময়টা বাসে  গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা, কখনো আরো বেশি সময় লাগতো। এখন কেমন অবস্থা জানি না। কালন আমি এখন যাই শুক্রবারে!

পরে অবশ্য বকশিবাজার থেকে  আরমানি টোলা হয়ে শটকাটে ২০ থেকে ২৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় চলে যেতাম। এভাবে অনেক দিন গেছি। সেখানে যাবার সুযোগে পুরনো ঢাকার সাথে আমার একটা আত্মিক  সম্পর্ক।

শাঁখারি বাজারে গেলাম ২০০০ সালরে দিকের এক বিকালে। আমাদের এলাকার এক বন্ধু পিংকুর সাথে। ওর বোন থাকতো সেখানে। ভাগ্নি নাচ  শিখছে, মামাদের নাচ দেখাবে, তাই যাওয়া। একটা সরু গলি ধরে আমরা ভিতরে ঢুকছি, আর মনে হচ্ছে আমি গুহার ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছি। আমি একটু মোটাসোটা ছিলাম, তাই  সরাসরি ঢুকতে পারিনি, একটু  পাথালি হয়ে ঢুকতে হলো। সেখানে আলো ছাড়া একটা মিনিটও কাটে না কারো।

অনেক্ষন ছিলম, মিষ্টি খেলাম। ভাগনির নাচ দেখলাম এবং তার সঙ্গীত প্রতিভার কিঞ্চিত দেখে ফিরে এলাম। এভাবে পুরনো ঢাকা-

সে সময় আমি  ওযারীর আল আমিন কোচিংয়ে ক্লাস নিতাম। গিযে দেখি সব মেয়ে। ওই কোচিংয়ে কোনো ছেলেকে পড়ানো হতো না।  আমার ক্লাস নেয়ার কথা বাংলা, ইতিহাস, অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞানে। সেটি ইন্টার থেকে ডিগ্রির মেয়েদের। কিন্তু অনেক টিচার আসতেন না। তাই আমাদক বদলি খাটতে হতো। নাইট টেনেও পড়িয়েছি।   

কোচিং চালাতে 'সায়াদাত' ভাই। তিন বললেন- আমি যাওয়ার কারণে তার শিক্ষার্থী বেড়েছে।  আমার বিশ্বাস হলো না। পরে আমি  যখন ছেড়ে আসি, উনি খুব মন খারাপ করেছিলেন।  সায়াদাত ভাইয়ের স্ত্রী তাকে ছেড়ে গেছেন বা তিনি  তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। যাকে ভদ্র সমাজে  ডিভোর্স বলে। উনার একটা সন্তান ছিল। মাঝে মাঝে তিনি  ক্লাসের ফাঁকে তার কাছে ছুটে যেতেন।

কোচিংয়ের সুবাদে আমার দুজন নারীর সাথে ভালো সম্পর্ক তেরি হয়েছিল। তাদের একজন নীলা। আরেকজন ঝুনু।  নীলা হালকা পাতলা। আর ঝুনু অনেক মোটা। তবে দুজনই ফর্শা- সুন্দরী।  তারা আমার ক্লাশের ছাত্রী না হয়েও আমার লেকটচার শোনার জন্য আসতেন! (নিজেদের কেমন  মফিজ মনে লইতাছে!)

নীলা মেয়েটা ইভটিজিংয়ের শিকার হতো, সেটি জানার পর একটা 'ব্যবস্থা' করেছিলাম। দক্ষিণ মুহসেন্দীতে ওদের বাসা। বার কয়েক  দাওয়া করেছিল, কিন্তু ভভঘুরে  কুদ্দুসের সময় কই! যাওয়া হয়নি।
ঋষিকেশ দাস লেনে ছিল ঝুনুদের বাসা। ওর মা বাবা বেশ কয়েকবার বলেছিল পুররো ঢাকার  অতিথি আপ্যায়ন কেমন? তা দেখার  সুযোগ নিতে। আমি পারিনি।

আল আমিন কোচিংয়ের চাকুরীটা ছাড়ার আগেই আমার প্রথম আলোর  প্রদায়ক সংবাদদাতার কাজটা জুটেছিল।  আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকি। নট কাম!  কাজ না থাকলে ভালো লাগে না।  প্রথম আলোর হয়ে কাজ করার সূচনার ফাঁকে রাজীব ভাই বললেন, আপাতত পেজ বেরুচ্ছে না।  তাহলে আমার কী করণীয়!

প্রথম আলোর ৫ নম্বর পাতায় একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো- প্রিয় মুখ নামে একটি পাক্ষিক ম্যাগাজিন বের হবে।  রাজীব ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে যোগ দিলাম। অনেক দিন সেখানে কাজ করেছি।

আমার কিছু অদ্ভূত ঘটনা আছে। তার দুটো প্রিয় মুখে থাকার সময়- আমি ভাবলাম দিনের ১০ টা থেকে রাত ১০  পর্যন্ত  পানি খাবো না। দেখি কাজটা করা যায় কিনা।  তাই হলো।  সে সময় ইয়ুথ গ্রপ একটা পানীয় বাজারে আনে- নাম  দেয় ভার্জিন। সম্ভবত আমি সেই ব্যাক্তি যে সবচেয়ে বেশি ভার্জিন ড্রিংকস খেয়েছি।

মাস চারেক ভার্জিন ড্রিংকস খাওয়ার পর কমিয়ে আনতে বাধ্য হলাম।  দিনে মাত্র দুই লিটার! কারণ আমার পানীয়ের খরচ  দিতো প্রিয়মুখ কর্তৃপক্ষ। আর খাবার আসতো এলিফ্যান্ট রোড়ের  টেস্টি খাবার ঘর থেকে। সেখানে তারা আমার নামটা বদলে দিয়েছিল। নতুন করে রেখেছিল- ' খাইন্না ভাই'।

আরেকটা ঘটনা- আমি সে সময় আজিমপুরের নিউ পল্টনে একটা মেসে উঠলাম। সেই মেসে আমার রুমমেট হিসাবে নিলাম কায়সার ভাইকে। দেয়ালে পোস্টার লিকে তাকে পাওয়া! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্সের একটা সাবজেক্ট থেকে পাস করে চাকুরীর খুঁজছেন। দুজন মিলে থাকি, ভালোই কাটছে। কিন্তু কায়সার ভাই বাইরে থাকেন, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করেন না। আমারো একই হাল।তাই বুয়া মুক্ত মেস! 

 যেহেতু বাইরেই খেতে হবে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একমাস টানা চলবে তেহারি এবং বিরিয়ানী । নীলক্ষেতের তেহারির সুনাম আছে।  চেষ্টা করলাম এবং সফল হলাম। ঠিক একমাসের শেষ দিন বাড়ি গেলাম।  বিকাল ৫ টার দিকে খেতে বসলাম- এক মাস পরে ভাত!  তাও আবার মায়ের হাতে! সে কী সুস্বাদু। চার প্লেট ভাত খাওয়ার পর মনে হলো- পেটে আর জায়গা হবে না। তৃপ্তিতে ডুবে আছি।

কিস্তি :: ৮৭:: প্রিয় ক্যাম্পাস, শিক্ষক ও শিক্ষক রাজনীতি



আমার জীবনের যত প্রাপ্তি, যত আনন্দ, যত সুখ, যত ভালোবাসা, যত অর্জন- সব কিছুর পেছনেই আমার  প্রিয় ক্যাম্পাস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

৭  বছরের ক্যাম্পাস জীবনে  মানুষজন আর তাদের  ভেতরকার মন সম্পর্কে জানার অফুরন্ত সুযোগ পেয়েছি! তার সবই ঠিক, এটা কোনোভাবেই আমি দাবি করবো না।

আমার এখনো মনে আছে, শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের সামনের পেপার বিক্রেতার হাতে ধরা জনকণ্ঠ পত্রিকার কথা, যার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় একটি খবর- জ্ঞান তাপস আবদুর রাজ্জাক আর নেই। লেখাটা আমার বুকের ভেতর বিঁধলো।  একটা বড় রকমের ধাক্কা খেলাম।

তখনো রাজ্জাক স্যার সম্পর্কে সেভাবে জানা হয়নি। ডিপার্টমেন্টে দু চারবার তার নাম শুনেছি। তার লেখা বই আছে কিনা সেটি জানার চেষ্টা করছিলাম, পাইনি। পরে জেনেছি তার কোনো বই বের হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বাংলাদেশের যে বিকাশ সেটির পেছনে যে মানুষটিকে কঠিনভাবে মানা হয় তিনি রাজ্জাক স্যার।  আমার সবচেয়ে আনন্দের জায়গা ছিল- এই ক্যাম্পাসের 'মাস্টোর' কারা ছিলেন, তা জানার চেষ্টা করা।

সরদার ফজলুল করিম স্যারের  সাথে আলাপে এবং রাজ্জাক স্যার সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা থেকে জানার চেষ্টা করলাম- তাতে রাজ্জাক স্যার চেয়েছেন পণ্ডিত ব্যাক্তিরাই এ ক্যাম্পাসের 'মাস্টোর' হিসাবে কাজ করুক। সে জন্য তিনি 'মস্টোর' সংগ্রহ করে বেড়াতেন।

তার সে চাওয়ার কারণেই হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের বাইরে ভালো মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। সত্যেন বোস, গোবিন্দ দেব, রাজ্জাক কিম্বা শহীদুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, দেওয়ান আজরফ স্যারের মত শিক্ষকরা এ ক্যাম্পাসে আলো ছড়িয়েছেন।

সেই ক্যাম্পাসে এখন যারা শিক্ষক তাদের নিয়ে অনেক তর্ক আছে। অনেক রকমের নেতিবাচক ভাবনা আছে। সেটি খোলাসা করে দেখার সুযোগ হয়েছে ক্যাম্পাস জীবনেই।

আমাদের শিক্ষকরা যতটা না গবেষণা, পড়াশোনার কাজে ব্যস্ত তার চেয়ে বেশি দলীয় কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন।  বঙ্গবন্ধু বড় না জিয়া বড় সে আলোচনাই এখানে মুখ্য। বাম রাজনীতির সাথে জড়িতরা  গোলাপী শিক্ষকরা এখনো  আছেন তাদের পুরনো থিওরিতে। মার্কস- অ্যাঙ্গেল-মাও-লেলিন নিয়েই তাদের রাজ্যের চিন্তা। চে কে নিয়ে তাদের ভানার অভাব। কারণ সম্ভবত চে পুরো মাত্রায় বিপ্লবী।

তবে এ সবের বাইরে একদল আছেন কেবল কামাগুনে পোড়ার মতলবে। এমন একটি ডিপার্টমেন্ট নেই যে ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষকও এ কাজটি করেননি। এটা খুবই হতাশার হলেও 'নেতিবাচক' বলে মন্তব্য করতে চাই না। এর কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার কয়েকটি তরিকার একটি সেক্সচুয়াল রিলেশন।

নারী পুরুষ দু রকমের শিক্ষকের মধ্যে এ প্রবণতা আছে। তবে পুরুষ শিক্ষকদের শিকার সম্পর্কে আমরা অনেক সময় জেনে থাকি। নারীদের সম্পর্কে জানা যায় না। কারণ বলা মুশকিল।

তবে এ সব জানাজানি হয়, সাধারণ 'সব দেওয়ার' পরে যদি কাঙ্খিত নম্বর না পাওয়া যায়। মানে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট না হওয়া যায়।  এ রকম কিছু ঘটনা  বিশ্লেষণ করেই আমার এ অনুসিদ্ধান্ত।

 আবার ক্যাম্পাসে অনেক মেয়ে শিক্ষকদের স্ত্রী হয়ে ক্যাম্পাসের অংশ হয়ে থাকতে চান। এ অভিযোগ পুরনো। তবে সেটি অনেকে মানতে চান না। মিথিলা তাদের একজন। এখন বুয়েটের শিক্ষকতা করে। তাকে আমি প্রসঙ্গটা তুলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে বলেছিল, নিজ যোগ্যতায় ক্যাম্পাসের অংশ হতে পারা উচিৎ। আমিও তার সাথে দ্বিমত করি না।

 তবে জ্ঞানের এ অভয়ারণ্যে অনেক শিক্ষক জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি স্ত্রী-নারী সঙ্গ উপভোগ বঞ্চিত হয়ে হাতের কাছে যা পান;  তা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করে থাকেন, এ নিয়ে  সঙ্কট চলে।

কেবল ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে অন্তত ১০ টি অভিযোগ লিখিতভাবে উত্থাপন করা হয়েছিল, এর সবই যৌন হয়রানির। এখানে উর্দু- ফারসি-বাংলা-ইতিহাসের শিক্ষক যেমন ছিলেন, তেমন সাংবাদিকতা, প্রাণীবিজ্ঞান কিম্বা রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষকও অভিযুক্ত হয়েছেন।

 অনেকে শাস্তি ভোগ করেছেন। আমার সাংবাদিকতার একজন গুরু স্থানীয় মিলান ফারাবী। তিনি সব সময় একটা কথা বলতেন- প্রত্যেক প্রতিভার কোনো না কোনো বিকৃতি থাকে। সম্ভবত এটা তারই অংশ।

তবে শিক্ষক রাজনীতি, ভোট বৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য  যে পরিমাণ শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছে আগে, এখনো পাচ্ছে সে জায়গা লজ্জার। অপমানের। কিন্তু আমরা সব সময় নিজেদের সুবিধা বিবেচনা করে বিরোধীতা-বর্জন বা গ্রহণের নীতি অনুসরণ করায় তার কোনো সমাধান হচ্ছে না।

একটা ঘটনা বলি- তাহলে রাজনীতির নোংরা রূপটা বোঝা সহজ হবে।  ২০০৩ সালের ঘটনা, সম্ভবত। আইন বিভাগের একজন শিক্ষককের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলো বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।  তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।  দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাস করে কেবল মাত্র সরকারি দলের হওয়ায় সে সময় নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে তার আচরণে নীল দলেরই অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন।  তাই তিনি অনেকটা বিদ্রোহ করে বসলেন।  

 বাস মালিক ওই শিক্ষককে পরে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। এক সময় ছাত্র রাজনীতি করতেন, তাই সহজেই ক্যাম্পাসে কিছু গুটি চালাতে শুরু করলেন। আমাকে ফোন করে  টিএসসি থেকে তুলে নিলেন। বললেন আলাপ আছে। গেলাম। দেখি গাড়ি কাকরাইল হয়ে শেরটানে ঢুকছে।

তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছি, কিন্তু নামটা তো পত্রিকায় এসেছে সে জন্য তিনি আমাকে খাওয়াতে চান। তার মতে আলোচনায় আছেন তিনি, এটাই বড় কথা।

রাতের খাবারের পর বললেন , 'আমি কাল ভিসি ফায়েজের কাছে যাবো, গিয়ে একটা লাত্থি মেরে তার চেয়ার সহ উল্টে দেবো। ' আমি হাসলাম। কারণ হলের ক্যাডারি ভাব এখনো তার যায়নি বলে মনে হয়েছে। তিনি বললেন হেসো না। সত্যি করবো।

তার পরে প্রায় ফোন করতেন, যা ঘটাতেন জানাতেন, আমরা রিপোর্ট করতাম। যেহেতু মানবজমিনে আমি তার পক্ষ নিয়ে কোনো রিপোর্ট করিনি, তাতে তিনি কিছু মন খারাপ করেছিলেন।

এরই মধ্যে একদিন রাতে আমরা সাংবাদিক সমিতির দোতলায় আরাম করে টিভি দেখছিলাম, হুট করে খবর এলো প্রফেসর আজাদ  চৌধুরী স্যারের ওপর গুলি হয়েছে। কমার্স ফ্যাকাল্টিতে এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা ছুটলাম । আজাদ স্যার এ জন্য সরকার দলীয়দের অভিযুক্ত করলেন। কিন্তু ক্রস চেক করে দেখা গেলো স্যারের অভিযোগ ঠিক নয়। তবুও অফিসে খবরটি দেয়া হলো- যেহেতু আজাদ চৌধুরী স্যার বিদায়ী সরকারের আমলের শেষ ভিসি ছিলেন, তা গুরত্ব সহকারে ছাপাও হলো।

ফলোআপ রিপোর্ট করতে গিয়ে জানতে পারলাম, সেই শিক্ষকই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিস্মিত হলাম এবং নিজের দিকে আরেকবার তাকালাম, এ কোথায় বসত করছি। আজাদ স্যারও সম্ভবত সেটি পরে জানতে পরেছিলেন, তাই এ নিয়ে নীল দলের আন্দোলন আর হয়নি।

এ রকম আরো উন্নত রুচির পরিচয় অনেক শিক্ষক দিয়ে থাকেন। এটা একটা উদাহরণ মাত্র।  আমরা এটাও দেখি  কোনো কোনো শিক্ষক  সরকারের আমল বুঝে মন্তব্য করেন।

 তবে বরাবরই আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়েছে, তাহলো যারা শিক্ষকতা করবেন, পান্ডিত্য অর্জন করে তা বিতরণ করবেন বলে জীবনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের ঘর সংসার করা উচিৎ নয়। কারণ বৈষয়কি বিষয় আর জ্ঞানের চর্চা দুটোর এক সাথে চালানো খুবই কঠিন।

যদিও এটা একটি অস্বাভাবিক প্রস্তাব।

তবে দ্বিতীয় প্রস্তাব শিক্ষকদের যথেষ্ট বেতন ও  সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।  নইলে রাজণীতি, দলবাজি আর ফাও আড্ডায় সবাই মগ্ন থাকবেন। নিশ্চিত ভাবেই এটা হবে।  


 

     

কিস্তি :: ৮৬:: যৌবনা ঝরণা, আনন্দময় পাহাড় সমুদ্র ভ্রমণ

আমারা সংখ্যায় ১৯ জন। ছুটলাম পাহাড় ও সমুদ্র দেখার জন্য। সালটা ২০০৬।  ট্যুরিস্ট সোসাইটি থেকে আমার মেয়াদের শেষ দিকে ঘটনা। বরষাকাল। টুই টম্বুর  কাপ্তাই লেক।

রাতে কমলাপুর থেকে বাসে চড়লাম-বাস চলছে। আমরা আড্ডায় মগ্ন। এমন আড্ডা যে, অন্যরা একটু বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন। সে দিকে  চোখ রাখার ফুরসত নাই। মধ্যরাতে দেখলাম-ঘুম, প্রচণ্ড ঘুমে ক্লান্ত সবাই।

রাঙ্গামাটির রাস্তায় ঢুকতেই বাসের ঘূর্ণিচক্র। চোখ কচলে সকাল দেখলো সবাই। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ জমে আছে। দূরে সূর্য উঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে।

বাটফুলের পাতা ছুঁয়ে পড়ছে, অল্প আগে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি। আমাদের এমন ট্যুরের জন্য জনপ্রতি ফি ছিল ১৯০০ টাকা। হোটেলে ছিলাম ৪ রাত। ঘুরেছি  ৫দিন। সেই ট্যুর এতটা আনন্দঘন ছিল, সেটি এখনো আপ্লুত করে।

রাঙ্গামাটি শহর হয়ে রিজার্ভ বাজারে সিনেমা হলের সামনে নামলাম আমরা। সামনে তাকালে গ্রিণ ক্যাসল। চন্দন দা বলে গেছেন,' তারকে ভাই আসবেন।' তাই হোটেলের অন্য সহকারি ম্যানেজার ফরহাদ চাবি নিয়ে বসে আছেন।

 রুম বুঝে পাওয়ার পর  দেখলাম মেঘলা আকাশ বৃষ্টি ঝরিয়ে গেলো। টিপু ভাইয়ের গ্রিণ রেস্টুরেন্টের কাঠের নিচতলায় আমরা পরোটা, ডিম আর চা খেতে খেতে ভাবছিলাম,  লেকে নৌকায় আজকে ঘোরা ঠিক হবে কিনা।

তবে ভাবনার আগেই কামাল হাজির, বলল- 'তারেক ভাই, কখন  আসলেন?' নৌকা আনতে গেলাম বলে বের হয়ে গেলো। আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর অপেক্ষা করলো না।

কালো ছাদ অলা একটা নৌকা নিয়ে মসজিদ ঘাটে আসলো কামাল। বলল- 'এইটা বড়ো নৌকা আছে; নিয়ে আসলাম। আপনি অনেক দিন পরে এসেছেন ,তাই।'

আমরা হোটেল ফেরার দরকার মনে করিনি, উঠে পড়লাম নৌকায়। কামাল নৌকা চালাচ্ছে। সেইবার ট্যুরে ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করেছি সবাই।

এর কারণ আমরা সবাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। দু'একজন অতিথিও ছিলো। তারাও আনন্দে কাটিয়েছেন পুরো সময়।

রাজার বাড়ি ও বৌদ্ধ বিহার হয়ে আমরা ছুটছি শুভলং। এরই মধ্যে বৃষ্টি। সবাই ভিজছি। আনন্দময় বৃষ্টিতে ভেজা কতটা উপভোগ্য সেটি সবাই জানলো আরো একবার!

সাদিয়ার অ্যাজমার সমস্যা! তাতে কি?  সবাই-বৃষ্টিতে ভিজছে, আর ও নৌকার ছাদের নীচে বসে থাকবে, এটা হতে পারে না।
সবাই নৌকার ছাদে বসে আছি। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে  পুরো পাহাড়, বড় বড় ফোঁটায় কাপ্তাই লেকের ওপর গড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি।

বরকল মোড়টা পার হতেই একটা বড় ঝরণা চোখে পড়লো- শীতের সময়  এটা থাকে না। এতজল, এত প্রাণ, এত প্রাচুর্য নিয়ে দুরন্ত একটা ঝরণা ছুটছে, সেখানে আমরা নামবো না, হতে পারে না।

 হই হই করে আমরা নেমে পড়লাম, কামাল বলল, এখানে সিকিওরিটি সমস্যা থাকতে পারে। আমলে নেয়ার মত সময় ছিল না। প্রায় এক ঘন্টা  বহমান ঝরণার জলে আমরা ডুবে থাকলাম। তার পর উঠতে উঠতে আরো ১৫ মিনিট।

শুভলং ঝরণাতে বর্ষায় যে পানি থাকে, ভাবনার বাইরে ছিল। সে ঝরণায় আরো দু'ঘন্টা কাটানোর পর আমাদের কারো কারো হাঁচির উপক্রম হলাে- তাহলে কী করা যায়, ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার উপায় কি? এ সব ভাবনার মধ্যে আমরা। ততক্ষণে কামাল নৌকা ভিড়ালো  সেনা ছাউনির কাছে।

নৌকা থেকে নেমে সেনা ছাউনির সামনের রাস্তা ধরে শুভলং বাজারে আমরা।  সৌদিয়া রেস্টুরেন্টের দরজায় আসার আগেই বুদরুজ ভাই এগিয়ে আসলেন। বললেন, আরে 'তারক' ভাই! আপনি আসবেন, আমাদের এটা 'খল' দিবেন না। করছেন কি, সবাই ভিজে আছেন, জ্বর আসবে।

 বুদরুজ ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলছি, ফাঁকে সৌদিয়া রেস্টুরেন্টের  নীচতলায় চুলার পারে সবাই। শরীরটা শুকিয়ে নিলাম । এর মধ্যে বুদরুজ ভাই লেকের কালিবাউশ মৎস, পাহাড়ি সবজি  আর  মশুর ডাল নিয়ে  খাবার রিডি করলেন।

খাওয়ার পর মিষ্টির ব্যবস্থাও করলেন বুদরুজ ভাই। লোকটাকে আমি খুঁজে বের করেছিলাম ২০০৪ সালে। সে সময় ছোট্ট একটা ঘর ছিল। লম্বা সিঁড়ি ভেঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর বুদরুজ ভাইয়ের দোকান। সেবার আমরা সেখানে  গুরুর গোশত দিয়ে একবেলা খাওয়ার সুযোগ নিয়েছিলাম।

সন্ধ্যার  দিকে শহরে ফিরলাম। ক্লান্ত সবাই । তারপরেও রাতে একবার গিরিশোভায় যাওয়া চাই। ভাসমান এ রেস্তোঁরা চালায় সীমান্ত রক্ষীরা।   নুডুলস, সফট ড্রিংকস দিয়েই ডিনার।

রাতের জার্ণি, সারা দিনের বৃষ্টি বিলাস মিলে ক্লান্তি ভর করেছে। ডুলুডুলু চোখ সবার।  হোটেল ফেরা। চন্দন দা বসে আছেন এককাপ চা খাবেন, বলে। নিরাশ করতে পারলাম না। তার আতিথেয়তা গ্রহণ করে রুমে ঢুকলাম।

পরের দিন আমরা যাবো বান্দরবান, সে জন্য আগেই লাইনের বাসের টিকিট কেটে আনলাম।
সকাল ৭ টার দিকে আমরা সবাই বাসে উঠলাম, ১৯ জন একসাথে হবার কারণে ফিশারি ঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস এসে আমাদের হোটেলের সামনে  থেকে পিক করলো।

বাস চলছে, লোকজন বাড়ছে।  এক সময় লোকারণ্য পুরো বাস। দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। কেউ কেউ ছাদেও উঠেছেন।
এর মধ্যে একটা ঠালু রাস্তায় আমরা উপরের দিকে উঠবো, বাস একবার উপরে ওঠার চেষ্টা করে আবার নিচে নেমে এলো। আমরা খুব মজা পেলাম। এখন হলে নিশ্চিত ভয়ে মুখটা শুকিয়ে যেতো!

দ্বিতীয় দফা চেষ্টা করে বাস উপরে উঠতে সক্ষম হলো। এর আগে অবশ্য বাঙ্গালহালিয়া বাজারে সকালের নাশতা করেছিলাম আমরা। বাটারে ভাজা চিনি মাখানো পরোটা দিয়ে  সেই নাশতাটা স্মরণীয়।

কিছু কলা ও আম কেনা হলো বাঙ্গালহালিয়া বাজার থেকে, যে গুলো খেতে খেতে আমরা দুপুর নাগাদ বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড। এবার বাস আমাদের হোটেলে নামাতে চাইলো না। বলল, ট্রাফিক আটকাবে!

চান্দের গাড়ি ভাড়া করে হোটেলে ফিরলাম। এসহাক ভাই রুম রেডি করে দুলালকে বলে রেখেছেন, আমাদের জন্য চা এনে রাখতে, সে চা জুড়িয়ে যাচ্ছে বলে দুলাল ফোনে জানালো।

হোটেল পূরবীতে রুম বুঝে পাওয়ার পর দুপুরের খাবার হলো বাজারেই। বিকালটা কাটাতে গেলাম ধাতুজাতি মন্দির। এটাকে স্বর্ণ মন্দির বা  গোল্ডেন টেম্পল নামেও ডাকা হয়। সেখানে ছবি তোলা, মন্দিরে ঘণ্টা বাজানো, দেবতার প্রাসাদ  দেখা, মিউজিয়াম ঘুরে  দেবতার পুকুরের জল ছুয়ে আসলাম আমরা। ঘণ্টাখানেক পরে গেলাম মেঘলাতে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে হোটেলে ফেরা।  
ফিরে ফ্রেশ হয়ে আমরা ছুটলাম সেনা কাফেতে। ক্যান্টমেন্টের সামনের এ রেস্তোরা বিত্তবান পাহাড়ি মানুষের সান্ধ্যকালীন ভোজন ও সময় কাটানোর একটা ভালো জায়গা।

সেখানে বসনিয়ান রুটি, জালি কাবাব আর স্পঞ্জের মিষ্টি দিয়ে ডিনার হলো। স্পঞ্জের মিষ্টি তারা দুর্দান্ত বানায়। রাত সাড়ে ৮ টা। উঠে দাঁড়ালাম সবাই। সাঙ্গু নদীর ওপর কাঁপতে থাকা সেতুর ওপর অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। নির্মল বাতাসে বুক ভরে যাচ্ছিলো। সাথে রাতের বান্দরবান আর সাঙ্গুর ঢেউয়ের শব্দে  মোহিত হচ্ছিলাম সবাই।

সকালে পলাশকে বলা ছিল, চান্দের গাড়ি নিয়া আসতে। গন্তব্য আমাদের  চিম্বুক। পলাশ সকাল ন'টার মধ্যেই হাজির। বৃষ্টি  হচ্ছে। নাশতা সেরে বের হতেই দেখলাম  বৃষ্টির আবহটা বাড়ছে। সেটি মানার মত মন ছিল না।  আমরা বের হলাম।

১৯ জনের মধ্যে প্রায় সবাই  চান্দের গাড়ির ছাদে। সারা রাস্তায় অনেক মজা হলো। অবশ্য পুলিশের চেকপোস্ট  ও আর্মি পয়েন্টে ছাদ থেকে নেমে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে।  ভেতরে গুটি সুটি মেরে বসতে হয়েছিল বার কয়েক।

চান্দের গাড়ির সরাসরি চিম্বুকে। আমরা মেঘের ভেতর। অন্যরকম এক সকাল। মেঘের ভেতরে নিজেদের দেখছি। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলছে। কুয়াশার মত বৃষ্টির পানি।  ঘাসফুলের ডগায় জমে আছে শিশির বিন্দুর মত। তারপর আমরা নেমে আসি। নীচের ছোট্ট একটা দোকানে চা পানের বিরতি। সেখান থেকে গেলাম পাশের পাহাড়ে।  দুপুরে খিঁচুড়ি খেয়ে ফিরছি।

ছাদে থাকা মিটির চোখে গাছের পাতার বাড়ি লাগলো। তবুও ওর নামার নাম নেই। অন্যরা আবারো উঠে এলো। ফেরার পথে আমরা নামলাম  শৈলপ্রপাত ঝরণায়। বিশ ফুট চওড়া হয়ে পানি নেমে যাচ্ছে নিচে। এত যৌবনা ঝরণাটা আমরা শীতকালে দেখি ক্ষীণকায়।

ফারুকপাড়ার এ ঝরণার নিচের ক্যানেলে পানি অনেক। সেখানে নামলাম সবাই। অনেক্ষণ ধরে হেঁটে আবার পাহাড়ের ওপর দিয়ে ফিরে এলাম।  মানিক দেওয়ানের ঘরে চা পান  হলো। সঙ্গে এনার্জি বিস্কুট। এশা দেওয়ানের দোকান থেকে শাল মাফলার ও বাঁশের তৈরি কিছু মগ কেনা হলো। তারপর পলাশের তাড়ায় ফিরতে শুরু।

মিলনছড়িতে কয়েক মিনিটের বিরতিতে এককাপ কফি পান শেষে আমরা ফের শহরে। রাতে কেনাকটার নাম করে বাজারে ছোটাছুটি করলাম কিছুক্ষণ।

রাতে ঘুম, সকালে পূরবী হোটেলের নিজস্ব বাসে আমরা ছুটলাম কক্সবাজার।  সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আমরা কক্সবাজারে আসলাম। এত চমৎকার একটা পরিবেশ, মানুষ জন কম। ভালো লাগছিলো বিকালটা। বিচে অনেক সময় কাটানোর পর  ফিরে এলাম রাতে।

জিয়া গেস্ট ইনের ওসমান খাবারটা  হোটেলের রুমের সামনে ডায়নিং টেবিলেই ব্যবস্থা করেছিল।শুটকি ভর্তা, চান্দা মাছ আরো কি সব আনলো।

পর দিন সকাল বেলায় আমরা গেলাম বিচে। ভেজাভিজি হলো, বালি খেলাও। মামুন বালি দিয়ে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করলো, বৃষ্টি সে সব মিশিয়ে দিলো। এভাবে দুপুর।

হোটেলে ফিরে বিকাল বেলায় আমরা চলে গেলাম ইনানী। ভেজার কোনো পরিকল্পনা ছিল না, তবুও ভেজা হলো। অনেক্ষণ। ডাব, কলা এবং বাঁশের সাঁকোয় পানি পারাপার নিয়ে  অনেকটা সময় কাটানোর পর ফিরে আসি হিমছড়ি। সেখানে সন্ধ্যা। পাহাড়ের চূড়ায় অনেক্ষণ আড্ডার পর বৃষ্টি ভেজা ট্যুরের সমাপ্তি।

সেই সাথে একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতার সঞ্চয়!        

বিদায় সরদার স্যার ! প্রিয় পিতৃ শিক্ষক!


খবরটা এমনভাবে আসবে, জানা ছিল না। সরদার স্যার চলে যাবেন, এটাও ভাবনার বাইরে। স্যারের শরীর খারাপ, এটা জেনেছিলাম। কিন্তু এভাবে আচমকা স্যার চলে যাবেন, মেনে নিতে পারছি না।

আমার জানা মতে, জ্ঞান তাপস রাজ্জাক স্যারের ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের মধ্যে শেষ নির্মোহ ব্যাক্তি ছিলেন সরদার ফজলুল করিম স্যার।
আমার সাথে তার দেখা হয়েছিল ২০০২ ও ২০০৩ সালে। তার পর আরো কয়েকবার।  তাঁর সাথে ঘণ্টাখানেক কথা বলার সুযোগ হয়েছিল একবারই।

তার বইয়ের সাথে পরিচয় ১৯৯৯ সালে। ক্লাসে ঢুকেই জানতে পারলাম, স্যারের প্লেটোর রিপাবলিক অনুবাদ করেছেন, যেটি আমাদের পাঠের জন্য কেনা দরকার।

তবে মানুষ হিসাবে সরদার স্যারকে আবিষ্কার করি আরো কিছুদিন পরে, ২০০২ সালে। রাজ্জাক স্যার '৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর মারা যাবার পর তাকে নিয়ে আলোচনায় যে দু'জন মানুষকে আমি চিনতে পেরেছি; তার একজন সরদার স্যার। আরেকজন আহমদ ছফা।

আহমদ ছফার সাথে আমার পরিচয় হয়নি। তবে সরদার স্যারের সাথে পরিচয় এবং আলাপ দু'টোই হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু  নির্বাচন এবং এর মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথাও বলেছিলেন, সে সময়।

২০০২ সালে ডাকসু ভবনের সামনে একজন হালকা পাতলা মানুষ রিকশা থেকে নামলেন। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। ডাকসু সংগ্রহ শালার গোপাল দা এগিয়ে আসলেন।  স্যারের মুখটা দেখেই মনে করতে পারলাম বইয়ের পাতায় দেখা ছবিটার সাথে মিলে যাচ্ছে।

পরিচিত হলাম স্যারের সাথে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ছি শুনে খুশী হলেন। ডিপার্টমেন্টের খোঁজ খবর নিলেন। গোপাল দা আমার সে সময়কার সম্বাদিক পরিচয়টাও স্যারের কানে  দিলেন।

বিম্পি সরকারের সময় ছিল সেটি, রাজনীতি নিয়ে স্যারের সাথে অল্প কয়টা কথা হয়েছে। তিনি রাজনীতির চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়লের পুরনো দিনের গল্প করলেন। বললেন, এখন সব কিছু কেমন হয়ে যাচ্ছে। লাইব্রেরির দিকে নজর দিতে হবে।

স্যার বললেন, তোমরা যেহেতু স্টুডেন্ট এবং জার্নালিস্ট। তোমাদের উচিৎ হবে  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যাতে নজর দেয় সে জন্য লেখালেখি করা। পড়ুয়াদের উৎসাহ দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা। সাধারণত যারা জ্ঞান চর্চা করে থাকেন, তারা প্রচার নিয়ে মাথা ঘামান না।তাই তাদের কাজের সুবিধা কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে!

স্যার বরিশালের উজিরপুর থেকে ঢাকায় আসার পর ঢাকার যে রূপ দেখেছেন, সেটিও জানালেন। বললেন, এই যে তোমরা যানজট দেখো, আবর্জনা দেখো। এটা কিন্তু আমাদের মনের ভেতরও আছে। আমরা যদি নৈতিকভাবে হতে না পারি; তাহলে কোনো কিছুই ভালোভাবে করতে পারবো না।

যত পড়বে, তত জানবে।  যে পেশাতেই থাকো, পড়বে।  রাজনীতি বিজ্ঞান নিয়ে যেহেতু পড়ছো, রাজনীতির শুদ্ধতার জন্য  কাজ করো। আমরা এখন আর কিছু করতে পারবো না। তোমরা করবে।

এভাবে অনেক কথা। প্রায় ঘন্টাখানেক। গোপাল দা স্যারের কয়েকটা ছবি তুলে রাখলেন। গোপাল দা'র সংগ্রহে স্যারের অনেক ছবি আগে থেকে আছে। গোপাল দা সেই বার স্যারকে বলেছিলেন, স্যার আপনি আমার বাসায় চলে আসেন। আমি আপনার খেদমত করার সুযোগ চাই।

স্যার স্মিত হাসলেন। বললেন, গোপাল তোমার কাজ ভালো চলছে।

এরপরও স্যারের সাথে দু'তিনবার দেখা হয়েছে। আজিজ মার্কেটেও স্যারকে দেখেছি।

ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পর এতগুলো বছর গেলো- কেবল স্যারের বই পড়ছি, কিন্তু স্যারের কাছে যাইনি। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে। আমাদের জ্ঞানের বাতিঘর নিভে গেছে।

স্যার  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি, অগ্রগতি, গবেষণা ও নতুন নতুন বইয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি কথা সব সময় বলতেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা থেকে অবসরের পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের চর্চা মজবুত করার জন্য স্যারের যে আকাঙ্খা দেখেছি, সেটি সমকালীন অন্য  শিক্ষকদের চোখে দেখিনি(অল্প কয়েকজন ব্যাতিক্রম আছেন। যেমন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম স্যার)।

মূলত দর্শনেই স্যারের পড়াশোনা। কিন্তু রাজনীতি বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে তিনি এসেছিলেন রাজ্জাক স্যারের অনুরোধে। রাজ্জাক স্যার দিল্লির ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ব্দ্যিালয়ের আড়াইশ টাকার মাইনের চাকরি নিয়ে এসছিলেন, এ বঙ্গদেশে একটি অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্নে। সেই স্বপ্নের সারথী সরদার স্যাররা।

আজ তার বিদায় দিবসে  শ্রদ্ধা জানাই। স্যার পরপারে ভালো থাকেন। স্যার যেদিন বিদায় নিলেন, সে দিনটি আন্তর্জাতিক বাবা দিবস। বিদায় প্রিয় পিতৃ শিক্ষক। বিদায়।       

হাস রঙা মেঘ, ঘাস রঙা সাপ


বৃষ্টি, আহা বৃষ্টি
কেবলই নিয়ে আসে পুরনো দিন-
স্মৃতি হয়ে থাকা সময়।।

কৈ মাছ উঠে আসে  উঠোনে
ধান ক্ষেতে নেমে যাচ্ছে হাঁস
উঠে আসছে ব্যাঙ
সাপের দ্রুত চলে যাওয়া দেখতে দেখতে

এখন

নগরে বৃষ্টি-
ছাদের কোন বেয়ে নেমে যাচ্ছে
ভিজিয়ে যাচ্ছে পথ শিশুর কপাল।।


হাস রঙা মেঘ, ঘাস রঙা সাপ
আর তোমার হাসি
টিনের চালে বৃষ্টির টুপ টাপ শব্দ
এভাবেই মোহিত
সকাল দুপুর সন্ধ্যা বিকাল।।


কাদা মাটি মেখে মেখে ছুটি
নগরে কাদা দেখলে নাক উঁচু করি
আহা একি রূপ মরি!!  

কামাগুনে পুড়ে যায় নগর

কামাগুনে পুড়ে যায় নগর

কত জাহাজ ভিড়েছে বন্দরে
জেগে থাকা কামনার আবরণে
সীমান্ত মাড়িয়ে এসেছে, কত পুরুষ!

শ্যামা সুন্দরীদের কদর  করেছে, বণিকরা
অথবা লুটেছে -।

দ্রাবিড় নারীর অঙ্গে কত রূপ
কত রকমের বাহনা তার
সবই চুষে নিয়ে বণিক-পুরুষ

নৃবিজ্ঞানীদের অনেক জ্ঞান- বিশ্লেষণ
অনেক কথা-
সব কথার শেষ কথা- কাম।

কামাগুনে পুড়ে যাওয়া এ শহর প্রান্তর
দুর্গম জঙ্গল থেকে সীমান্ত
আমরা আলগা করেছি বাঁধন

নিজের পরিচয় আছে
তবুও মানুষ মরে
কামাগুনে পুড়ে যায় নগর।

ফান্দে

বিষয়: অস্ত্র উদ্ধার -আটক!

 আমল:: চারদলীয় জোট সরকার।
এলিটমেন্টস :: ১০ ট্রাক অস্ত্র।
যাদের ঘিরে কাহিনীর বিস্তৃতি :: উলফা!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী:: উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।
অথর: আরএবি।

ফলাফাল: ফান্দে পড়িয়া বিম্পি জামায়াত কান্দে রে।

আমল:: বাম অ্যান্ড সেক্যুলার।
এলিমন্টেস: সাতছড়িতে অস্ত্রের খনি।
যাদের ঘিরে কাহিনীর বিস্তৃতি :: উলফা!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী :: দেখতাছি ঘটনাটা।
অথর: আরএবি

সম্ভাব্য ফলাফাল:: ফান্দে পড়িবার আশঙ্কা!

পাবলিক: এইডা কি অইলো!


উপসংহার:: উনারা ভালো গল্পকার, সক্ষম উদ্ধারকারী। রাজনীতিতে নতুন এলিমেন্টস যুক্ত করে জাতিকে ধন্য করেন। রাষ্ট্রের চিকিৎসা খাতে সরকারের খরচ কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাই উনাদের টিকিয়ে রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে!




 

জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা সবাইকে দয়া করো প্রভু

সব সময় একটা কথা বলতাম, এখনো বলি- সবাইকে বলি। বাঁচো, নতুন আশায়। তোমার সামনে অনাগত ভবিষ্যত। হতাশা আসে ক্যামনে। এগিয়ে যাও। দু'চোখ মেলে চাও উদার আকাশ। দেখো অনন্ত  জোছনায় ভিজে যাচ্ছে বঙ্গপোসাগার। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পাহাড়-নগর-নদী। ভাটি বাংলার রূপ মাধুর্য দেখেই একটা দীর্ঘ জীবন পার করে দেয়া যায়।

মাদক, বিচ্ছেদ, জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানো কিম্বা নিজেকে হত্যার  কোনো কিছুই এখানে আসতে পারে না। এমন দেশে যার জন্ম যেখানে জোছনায় ভিজে,গেুটগুটে অন্ধকারে ছুটে চলা রিকশার নিচের  বাতির মোহনীয় আলো কিম্বা কাদামাটি মেখে গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে হেঁটে এলে মনে হয়-  মানুষের জীবন এত ছোট কেনো? সে দেশে জন্মে কেনো আত্মহত্যা!

পর্যটন কর্মী হিসাবে গত ১৪ টি বছর এ একটি কথা বার বার বলছি। পর্যটন সংগঠন ডিইউটিএস'র কর্মীদের বলতাম, বন্ধুদের বলেছি, এখনো বলি, যেখানে যাই, যার সাথেই বসি এ কথাটি বলি। নিজেকে ভালোবাসো।

 ট্যুরিস্ট সোসাইটি আমার দ্বিতীয় প্রেম। সে প্রেমময় পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক আমার রক্তের নয়, কিন্তু তারচেয়েও বেশি। আমাকে যারা পছন্দ করতো, বা করতো না- আমি তাদের সবাইকে ভালোবাসি। তাদের সুখ-মঙ্গল এবং হাসিমাখা মুখটা মনে করে আমি জীবনের নতুন ব্যাঞ্জনা খুঁজে পাই।

বন্ধু স্বজন, যারাই হতাশ, তাদের সবাইকে বলছি- নিজেকে খুন করোনা। সে অধিখার তোমার নেই। উপভোগ করো, বাঁচো।
 তবুও কখনো কখনো খারাপ খবর আসে। কানটা ফেটে যায়। বুকটা ভেঙ্গে যায়।  জীবন কি এতই তুচ্ছ? স্রষ্টার দানটা কী এতই ক্ষুদ্র? কেনো উপভোগ করো না জীবন!

আশাহত মানুষ নই আমি। হতে চাইনি কোনো দিন। এত ঝড়, এত ঝঞ্ঝা, এত শঙ্কা তবুও আশায় বুক বাঁধি।

কিন্তু জীবনকে দুপায়ে ঠেলে যারা ব্যাক্তিগত ভাবে  নিজের জীবনকে হত্যা করে তাদের বিপক্ষে আমি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমার খুবই ঘনিষ্ঠ দুজন  মানুষ নিজেদের হত্যা করেছে।  একজন আমার হলের, পাশের রুমে থাকতো। ছোট ভাই। সব সময় এসে  আড্ডা দিত, আমার রুমে। হল ছেড়ে আসার পর শুনি ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে।

 মেনে নিতে পারিনি। তবুও মানতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হলে বেড়ে ওঠা ছেলেটার বুকে কিসের এত হতাশা ছিল, জানি না।  জীবনকে খুন করার মত এমন হতাশা কেনো জন্মায়। জানতে চাইনি কখনো, চাইবো না। কেবল মিনতি করি, নিজেকে হত্যা করো না।

 জীবনের উৎসবের জন্য। আনন্দের জন্য। কৃতজ্ঞতার জন্য। পর্যটন কর্র্মীর বর্ণিল জীবনে আসা মাহবুব কেনো আত্মহত্যা করবে? প্রশ্নটা মাথার ভেতর বারবার এলেও উত্তর পেলাম না।

ট্যুরিস্ট সোসাইটি থেকে ২০০৬ সালে দায়িত্ব ছাড়ার আগেই মাহবুব মেম্বার হিসাবে আসে। দায়িত্ব ছাড়ার পরও বেশ কয়েকবার আমার কাছে হলে-অফিসে এসেছিল। ক্যাম্পাসে দেখা হলে অন্য দশজনের মতই এগিয়ে আসতো- সালাম দিয়ে খবর নিতো।  আমিও নিতাম। ওর সাথে শেষ দেখাটা হাকিম চত্বরে হযেছিল, আমার নিজের ও তাদের ভাবি-সন্তানদের খবর নিচ্ছিলো। বলেছিলাম- বাসায় এসো!  আসবে বলেছিল।

কিন্তু বহমান সময়, চলমান ব্যস্ততার ভেতর হয়ত সবাইকে ফোন করে খবর নেয়া হতো না  আমার। আজ মঙ্গলবার জানলাম মাহবুব নাই।  ওর বন্ধুদের সাথে কথা বল্লাম। স্বজনদের কাছে  জানতে চাইলাম।  ফেসবুকে ওর লেখাগুলো পড়লাম।
ওর বন্ধুরা বললো হতাশা। ফেসবুক  থেকেও একই ম্যাসেজ।  আত্মহত্যা কি তার কোনো সমাধান হতে পারে! জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কি কোনো সমাধান!

দুঃখ কষ্ট ভয় আর সীমাহীন অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়েও বাঁচতে শেখা জাতি আমরা। সে জাতির সন্তানরা এভাবে জীবন দিবে, এটা মেনে নিতে পারি না।

তৃতীয় আরেকটি খবর আমি শুনতে চাই না। ক্ষমা করো প্রভু।  তোমার করুণা ধারায় ভরে দাও সবার অন্তর। জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা সবাইকে  দয়া করো। দয়া করো। দয়া করো প্রভু।
 

কিস্তি :: ৮৫ :: রোড টু কুয়াকাটা:: ট্যুর উইথ মুরগি


কুয়াকাটা যাবার ভূত চাপলো মাথায়। সে সময় ট্যুরের জন্য পোস্টার করতাম। কাঁকড়ার চর, ফাতরার বন, আর কুয়াকাটার লাবণ্য তুলে ধরে সে পোস্টারের ডাকে ডিইউটিএস'র মেম্বারের বাইরে আরো ক'জন এলেন। বছরের শেষ দিকে সে ট্যুর। সালটা সম্ভবত ২০০৪।

সব মিলিয়ে লোক হলো ১৩ কি চৌদ্দজন।  সেটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি থেকে প্রথম ট্যুর যে ট্যুরে বাবু ছিল না।  আমাদের সাথী হলো মৌ, মামুন, তুহিনসহ আরো অনেকে।

কুয়াকাটা যাবার রাস্তাটা কষ্টের। কোনো সন্দেহ নেই। সে সময় সরাসরি একটা বাসই যেতো, সেটি বিআরটিসির। বাসের ডান দিকে তিনটা সিট। বাম দিকে দুটো।

আমরা বাম দিকের সিটগুলো কাটলাম। বাসে উঠলাম গাবতলী থেকে।  ডান পাশের সিটে  মুরগী। খাঁচাবন্দী মুরগীগুলো মাজে মধ্যে ওড়াওড়ি করছে। কক করে ডাকছেও । আমরা ছুটে চলেছি।

পথে ফরিদপুরের এক রাস্তায় বাস দাঁড়ালো। লম্বা জ্যাম। আমরা সবাই নেমে এলাম। দেখলাম রাস্তার পাশে দুধ বিক্রি হচ্ছে। গরম দুধ আর বিস্কুট খেয়ে  আমরা আবার উঠে দাঁড়ালাম। বাসে উঠে বসে আছি। বাস চলছে। রাস্তার অবস্থা খারাপ।  হেলে দুলে বাসে বাসে আমাদের মধ্যরাত হলো  একটা কলেজের পাশে।

বর্ষ বিদায় জানানোর জন্য সবাই নেমে এলাম সেখানে।  বেশ খানিকটা সময় হৈ হুল্লোড় হলো। গান বাজনা  হলো।  মোমবাতি জেলেছিল কলেজের  শিক্ষার্থীরা।  ফের উঠে এলাম বাসে। তার আগের গল্পটা  আমরা প্রতারিত হলাম।

রাস্তার পাশে একটা  শনের বেড়া দেয়া রেস্টুরেন্টে খেতে বসলাম। যা মন চায় খাও। খেতে শুরু করলাম, ডিম, মাছ, বেশি করে তেলে ডোবানো সবজি। খাবার শেষ করার আগেই বাস ছেড়ে দিচ্ছে। পড়ি মরি করে ছুটতে গিয়ে  খাবারে বিল তিনগুণ শোধ করেছি।

সকাল ৮ টার দিকে আমরা নামলাম  কুয়াকাটায়।  থার্টিফাস্ট উপলক্ষে যে রকম ভিড় আশা করেছিলাম, সেটি নেই। আমরা একটা হোটেলের সন্ধানে বের হলাম। এর মধ্যে রাস্তার পাশে সকালের নাশতা। মাত্র বারো টাকা হারে সেরে নিয়ে চা খাচ্ছে কেউ কেউ।

হোটেল সাগরপারের তিনটা রুম আমরা দখল নিলাম। এটা নেবার জন্য হোটেল মালিকের বাড়ি যেতে হয়েছে। প্রথম বলল রুম নেই। আমরা বল্লাম তাহলে আপনার বাড়িতে থাকি। শেষ পর্যন্ত পটিয়ে আড়াইশ টাকা দরে রুম গুলো নেয়া হলো।

রুমে ওঠার পর ফ্রেশ হয়ে আমরা ছুটলাম সৈকতে। ভ্যানে চড়ে  যাওয়া  হলো। ভেজাভেজি হলো ভীষণ। তারপর দুপুর। 'ভাত ঘর' নামে একটা রেস্তোরা পাওয়া গেলো। এর মেইন শাখা ছিল ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোড়ে। দুপুরে পেট পুরে খাবার খেলাম-মাত্র ৩৮ টাকায়।

রাতে খাবারের বার বি কিউ করার জন্য একটা কোরাল মাছ অর্ডার করা হলো । সেটি দেড় কেজি ওজনের। দাম  দেড়শ টাকা। এটা একেবারে রেডি করে দেয়া পর্যন্ত  খরচ।

কুয়াকাটার বিকালটাও দারুণ কাটলো। বিচে ঘুরে বেড়ালাম আমরা। সন্ধ্যার  দিকে আমরা ভ্যানে করে লোকাল একটা বাজারে গেলাম। সেখানে  একটা নতুন সিনেমা হল। তাতে সিনেমা দেখার আয়োজন। সিনেমা দেখার পর ফিরে এলাম কুয়াকাটায়।

রাত সাড়ে ১২ টা। প্রচণ্ড কুয়াশায় ঢেকে আছে সব। মাছ আনা হলো। কিন্তু  পোড়ানোর আয়োজন  নেই। হোটেলের সামনে  খোলা মাঠে আগুন ধরছে না।  কেরোসিন আনা হলো।  কিন্তু আগুন জ্বলে না। পাশের সুপারি  গাছের পাতা পোড়ানো হলো, ভেজা কাঠ কিছুতেই মাছ পোড়ার যুতসই হচ্ছে না।  শেষ পর্যন্ত মামুন পাশের ওষুধ দোকানের ঝাঁপ ওঠানোর বাশের লাঠি নিয়ে আসলো।  সেটি দিয়ে পুরো মাছ পোড়ানোর আয়োজন।

রাত দুটায় মৎস্য ভক্ষণ পর্ব শেষে আমরা বিচে গেলাম। অন্ধকার বিচে  কেবল সমুদ্রের গর্জন ছাড়া কিছুই  কানে আসছে না। এ রকম দুর্দমনীয় আনন্দ-উপভোগ্য রাত, খুব কম সময় দেখা হয়েছে।

ভোরের দিকে আমরা ফের হোটেলে।   সকালে দেখলাম ওষুধের দোকানি এসে ঝাঁপ ওঠাতে না পেরে বকাবকি করছে। আমরা চুপ চাপ। কিছুই হয়নি, এমন ভান করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এর মধ্যে মামুন গিয়ে কয়েকটা প্যারাসিটামল নিয়ে এলো। দোকানির সাথে গল্পও করে এলো।

সকালের নাশতা সেরে ফের আমরা  বিচে। সেখান থেকে  বৌদ্ধবিহার হয়ে মহিলা মার্কেটে। মহিলা মার্কেট মানে মহিলা বিক্রি নয়! এটি চালাতেন মহিলারা। এ জন্য এর নাম মহিলা মার্কেট। সেখানে কেনাকাটার পর দুপুরের দিকে আমরা পটুয়াখালী ছুটলাম।

মুরগির সাথে আর ফেরা নয়। এবার লঞ্চে ফিরবো। নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় লঞ্চে ওঠবো- এমন সময়  সবাই এক সাতে চিক্কুর মারলো।  যাত্রীদের চোখ আমাদের দিকে। লঞ্চের দোতলায় উঠলে একজন এগিয়ে এসে বললো- কার্পেট  লাগলে দিতে পারি। বল্লাম-'ট্যাকা নাই। দিবা কিনা ভাইবা লও।'

কার্পেট এসে পড়লো।  আমরা বসে পড়লাম।  ঢাকা আসবো মাত্র ১০০ টাকায়।  সে রকম মজা। দেখলাম সবাই ঘুমানোর  আয়োজন করছে। আমরা সাপ লুডু খেলছি। লুডু খেলছি।  গান গাইতেছি। মওজ-মাস্তিতে ভরপুর পুরা রাত।  ঘুমের ডিস্টার্ব হলো অনেকের। এর মধ্যে একবার সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে গেলাম লঞ্চের  রেস্টুরেন্টে।  চল্লিশ টাকা প্রতি রাতের বাধ্য গ্রহণ পর্ব শেষে আবারো আড্ডা।

মধ্যরাতে  লঞ্চটা কাত হয়ে গেলো। দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হচ্ছে।  বের হয়ে দেখলাম যাত্রাবাড়ি- গাবতলী রুটের আট নম্বর বাসের মত কে কার আগে যাবে সে জন্য লঞ্চ  দুটো  কম্পিটিশন চলছে।  অন্য যাত্রীদের কোনো ভাবনা নেই।

আমরাও আর বাবলাম না। লঞ্চের ডেকে, ছাদে  আড্ডায় রাত কেটে গেলো। সকাল বেলা আমরা সদরঘাট। ফিরলাম-ক্যাম্পাসে!


   

কিস্তি ৮৪ :: বৃষ্টি দেখে মাথা নষ্ট!


ইংরেজি ২০০২ সালের বঙ্গ  জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।  ভেজা দরকার। বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে মল চত্বর। কৃষ্ণচুড়া ফুলগুলো নুয়ে যাচ্ছে।কলাভবন থেকে বেরিয়ে আসলাম,  আমরা কয়েকজন। তার মধ্যে মাথা নষ্ঠ কয়টা রিকশা ঠিক করলাম। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে নগর, আমরা রিকশার হুড নামিয়ে ভিজছি।

রিকশা পেতে সমস্যা হয় নি।  টাকা একটু বেশি গুনতে হয়েছে, এই আর কি! সে সময় এক রিকশা চালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম- মেয়েরা  হাত তুললেই খারায়া যাও। আর আমরা হাত তুলতে  মুখ ঘুরায় নাও! কারণটা কও তো দেখি।

তার ভাষ্যটা চরম। সে বল্ল- মেয়ে মানুষের নাকি ওজন নাই। রিকশা বাতাসের বেগে (গতিতে)  চলে।  সে দিন রিকশা করে আমরা ঘুরে এলাম মল চত্বর থেকে কার্জন হল। সেখান থেকে মৈত্রী হল।
সাধারণত বৃষ্টিতে ভিজলে নগরের ছেলে মেয়েদের জর জারি হয়। ঠাণ্ডা লাাগে। আমার সে রকম সমস্যা ছিল না। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস হয়ে ফিরে এলাম  নিজের হলে। দেখলাম বসও ফিরেছে ভিজে। মাসুদ ভাইও। বঙ্গবন্ধু হলের ৩১৪ নম্বর রুমের সবার মাথায় একই দিন  পাগলামি ভর করল ক্যান?  সে প্রশ্ন করলাম না।

কিন্তু রুমে সবার মনে হলে এমন বৃষ্টির দিনে হলে জাফরের  টিকটিক চুবিয়ে রান্না করা ডাল আর  তেলাপোকার  পাখনা ডুবানো তরকারি খাও্রয়া চলবে না। খিচুরি খেতে হবে। তবে সে সময় ক্যাম্পাসে ভালো খিচুরি পাওয়া যেতে, সেটি সপ্তাহে একদিন।

পরে রুমটেরা মিলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গেলাম  চানখার পুল। সে সময় তিরিশ টাকায় খিচুরি পাওয়া যেতো। সেখান থেকে খিচুরি খেয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে  হলে ফেরা।  আমাদের রুমের সবাই এবং আমার বন্ধুরা ছাতা বিরোধি ছিল।  আমার ছাতা বিরোধতিার কারন হলো আমি কিছু হাতে বহন করতে পারি না। এটা আমার কাছে খুবই কষ্টের ও বিরক্তির মনে হয়। আর রিকশার হুড তুলিনা, এতে নিজেকে ক্যামন অপরাধি মনে হয়! মুক্ত আকাশটা দেখতে দেখতে পথচলায় আনন্দ!!

তবে আমার বন্ধু বাবুর ভিন্ন মত। তার কথা হুড তুলে রাখলে বাংলা সিনেমার দৃশ্য মিস।  নায়িকার বৃষ্টি ভেজা দৃশ্য বাংলা সিনেমায় মাস্ট।আর সে দৃশ্য দেখার জন্য টাকা খরচ করতে হয়। বৃষ্টির দিনে সেটাই পুরাপই ফ্রি!!

আমাদের এমন সব পাগলামি সম্পর্কে অনেকেরই  জানা।  একবার বুড়িগঙ্গায় বৃষ্টির মধ্যে আমরা প্রায় তিরিশ জন।  পয়লা বৈশাখের দিন, ঘৃুরতে গিয়ে কাকভেজা হয়ে ফিরলাম। আরেকবার  বর্ষায় বান্দরবান। পুরা রাস্তায় বৃষ্টি। সে সময়  চান্দের গাড়ির ছাদ লাগানো থাকতো। আমরা সবাই ছাদের ওপরে উঠে বসলাম। আর্মি ও পুলিশ বারণ করবে ভেবে কেবল চেকপোস্টে আসলে নেমে পড়তাম। পুরো সফরে আমরা ১৯ জন।
চান্দের গাড়ির ঠাসাঠাসি করে বসলে ১৬ জন বসা যায়। কিন্তু আমরা সেটি মানলাম না। আমাদের বৃষ্টি স্পর্শে জ্বরাক্রান্ত কয়েকজন ভেতর বসেছিল। আমরা বাকি ১১ জন  ছাদে। সে রবকম আড্ডা। বৃষ্টির দিনে এমন সৌন্দর্য পাহাড়ের, যেটি এর আগে দেখা হয়নি।  অনন্ত যৌবনা পাহাড় দেখে ফেরা। এখনো বৃষ্টি দেখলে মাথা নষ্ট। কিন্তু শরীর আর কুলায় না।  

কিস্তি ::৮৩:: ক্যাম্পাস সুন্দরীরা

সুন্দরীদের কদর সবখানে। ক্যাম্পাস তার ব্যতিক্রম জায়গা নয়। আমাদের ক্যাম্পাসে সবচেয়ে সুন্দরী ম্যাডাম সম্ভবত দিল রওশন । তিনি কী পড়ান তা নিয়ে সংশয় আছে। তিনি নিজেও নিশ্চিত নন। তবে আমরা সবাই নিবিষ্ট মনে তার ক্লাস উপভোগ করতাম। কারণ তিনি যথেষ্ট সুন্দরী। ক্যাম্পাসে আরো দুজন সুন্দরী ম্যাডাম ছিলেন, সে সময়। তাদের  একজন সাদেকা ম্যাডাম আরেকজন সামিয়া ম্যাডাম।

ক্যাম্পাস রিপোর্টার থাকার কারণে এবং একই সাথে ট্যুরিস্ট সোসাইটির  কর্মী হওবার সুযোগে অনেক সুন্দরী শিক্ষার্থীর দেখা মিলেছে।

আমার চোখে রাজনৈতিক দলের সুন্দরীদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের জলি, ছাত্রফ্রন্টের কানিজ,  ছাত্রলীগের মম, ছাত্রদলের শান্তা এবং নিশিতা।  আরো দুজন ছিল একজন মৈত্রী হলের আরেকজন রোকেয়া হলের। তাদের নাম আমার মনে পড়ছে না। মৈত্রী হলের মেয়েটা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেটিই মনে হতো না, মনে হতো সদ্য স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে মেয়েটা।

ক্যাম্পাস সুন্দরীদের মধ্যে শারমিন আপার নামটা নিতে হবে।  প্রথম যেদিন তার সাথে পরিচয়, অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন শুনে অবাক ও বিস্মিতভাবে তাকিয়ে ছিলাম। ট্যুরিস্ট সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পড়তেন ভূগোলে।  আমি  ও বাবু প্রায় সময় ডিইউটিএস-এ  শারমিনকে আপাকে আড্ডায় পেতাম।  শারমীন আপা আমার দেখা সেরা ক্যাম্পাস সুন্দরীদের একজন।

দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সুন্দুরী নীলিমা। সে সময় ছোট করে ছাটা এলাচুলে কলাভবন চত্বর মাতিয়ে রাখতেন তিনি। ইয়ারের দিক থেকে আমাদের সিনিয়র ছিলেন। পড়তেন  ইংরেিজতে। থাকতেন শাসুন্নাহার হলে।  শা্মসুন্নাহার হলে পুলিশি ট্রাজেডির কারণে তার সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি  সুলতানা শফি ম্যাডামকে হল প্রভোস্ট হিসাবে রাখতে ইচ্ছুকদের অন্যতম।  তাদের আরেক সহযোগি ছিলেন  তনুশ্রী। তিনিও শাসুন্নাহার হলে থাকতেন। তার মায়ভরা চাহনি আমাদের মুগ্ধ করতো।

শাসুন্নাহার হলে তৃতীয় সুন্দরী ছিলেন নীপা।  কমার্স ফ্যাকাল্টিতে পড়তো। থাকতো মিরপুরে। শাসুন্নার হলের ঘটনার সময় হলেই ছিল। তার সাথে বহুদিন আমরা একসাথে আড্ডা মেরেছি নায়েমে, শামসুন্নাহার হলের ঘটনায় বিচারপতি তাফাজ্জল কমিশনের বারান্দায়।  নীপার সৌন্দর্যটা অন্য জায়গায়।

ক্যাম্পাস সুন্দরীদের মধ্যে নাট্যকলা একটা বড় আপু ছিল। পরিপাটি। বাড়ি দিনাজপুরে। আমাদের এক বড় ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিল। পরে সম্পর্ক টেকেনি । থাকতেন মৈত্রী হলে।  একই ডিপার্টমেন্ট আরেকজন সুন্দরী  পড়তো সে আমাদের ছোটবোন মিটি।  ন্যাচারাল লুকের জন্য সে  আমাদের সময়কার আর্ট বিল্ডিংয়ে বেশ জনপ্রিয় ছিল।

আমার এক ইয়ার সিনিয়র নৃবিজ্ঞানের প্রজ্ঞা, ইয়ারমেট  রিফাত, সমাজকল্যাণের রনি চাকমাও যথেস্ট সুন্দরী হিসাবে বিবেচিত ছিলো, ক্যাম্পাসে।   কমার্স ফ্যাকাল্টির  সামান্থা, আইবিএ-'র লুবনা এবং ফারসির ফাতেমাতুজ্জোহরা, ভূগোলের রিমি, ইতিহাসের সাদিয়ার  কথাও বলতে হবে। ইংরেজির মহুয়াকেও বাদ দেয়া  না। 

হুমায়ুন আহমেদ কন্যা শীলা ও বিপাশা, অভিনেত্রী থনিমা হামিদও আছেন একই কাতারে। তনিমাকে দেখার জন্য অনেকে তার ডিপার্টমেন্ট ইতিহাসের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতেন।  তনিমা আমাদের বন্ধু বেলালদের সার্কেলে থাকায় তার সাথে আড্ডাবাজি হতো। তাদের ইস্কাটনের বাসায় আমি সম্বাদিক হিসাবেও গিয়েছিলাম কয়েকবার!

আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বড় বিচিত্র, বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হয়। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে ৮৩তম কিস্তিটা লেখর কথা ছিল। তাই লিখলাম। জানি অনেক নেতিবাচক ধা্রণা এখান থেকে অনেকের মনে জন্মাবে। তবুও সত্য তো সত্যই। এ লেকাটা ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত  সময়ে ক্যাম্পাসে আমাদের দেখা সুন্দরীদের নিয়ে!

সাথে একটা ঘোষনা:: কিস্তি এখন থেকে  চলমান থাকবে। 

নজরুলকে নিয়ে বিশ্বজিৎ ও গোলামের কৌশলী বিকার

যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
 কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLkytC42.dpuf
যে কুতর্ক বিশ্বজিৎ খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।
গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজিৎ সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশেষ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজিৎ বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
বিশ্বজিৎ ও গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক ও প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা ও তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!
নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে এ নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।
এবার বিশ্ব যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম এ কথাটা সত্য। কিন্তু এ সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে উৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল এ সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের এ সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। এ রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/05/28/71503.html#sthash.YLky


যে কুতর্ক বিশ্বজি খুবই কৌশলে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সুশীল পাড়ার গবেষক হিসাবে পরিচিত গোলাম মুরশিদ গত বছর বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে নিয়ে কুকথা বলেছিলেন, তার সাথে এর এক যোগসূত্র আছে।

গোলামের বিচার হয়নি বলে বিশ্বজি সাহসটা করলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশে নজরুল জাতীয় কবির মর্যাদায় আসীন; সে দেশে এমন নোংরামি সরকার মেনে নিচ্ছে, সেটাও একটা জিজ্ঞাসা হয়ে থাকছে।
 
আমরা যে কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে জানবো, জানার অফুরন্ত আগ্রহ আমাদের আছে। কিন্তু বিশ কোনো এজেন্ডা এখানে হাজির দেখে আমরা ব্যথিত। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক, বিকৃত রুচির এবং নোংরা মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।

আমাদের বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আরেকজন কবি সম্পর্কে কমবেশি বিশ্বজি বা গোলামদের জানা। কিন্তু সে সম্পর্কে তারা লিখেননি বলে আমরা কৃতজ্ঞ্। কারণ কিছু মানুষ আছে তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যাক্তিজীবন নিয়ে ৎসাহ দেখানোটা কোনো কালেই আমার কাছে শোভন মনে হয়নি।
 
বিশ্বজি গোলামরা নজরুলকে ছোট করার যে চেষ্টা করছেন এটা বৃথা। সাহিত্য তার সৃজনশীল, নান্দনিক, সামাজিক প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে গৃহিত বা বর্জিত হয় বলে জেনে আসছি। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সে বিচারে টিকে গেছে।
 
নিজেদের নাম ইতিহাসে রাখার অনেক উপায় থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা তাদের সৃনজশীল কর্মের বিষবাষ্প ছড়ানোর যে সুক্ষ কৌশল মতলবাজ মিডিয়া নিয়েছে, সেজন্য আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।
 
এককালে মোল্লারা নজরুলকে বর্জন করেছিল। বলেছিল কাফির। এখন কথিত জ্ঞানীরা, যাদের পাপের চৌহদ্দির মাপতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা লাগবে। সে সব লোক নজরুলের মত লোককে নিয়ে কথা বলে!

নারগিসকে নিয়ে আলাপ হতেই পারে। সেটি নিয়ে আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু সাধারণের বাইরের প্রতিভাতের জন্ম বা মৃত্যু দিবস ঘিরে নিয়ে আলোচনাটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
 
গত বছর বাংলা একাডেমিতে গোলাম নারগিস এবং প্রমীলাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছে। এর কিছু অংশ প্রেস রিলিজ করে একাডেমি থেকে ছাড়াও হয়। কিন্তু সম্বাদিকরা নিজ দায়িত্বে ওই অংশটুকু ছাটাই করেন।

এবার বিশ যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন- নজরুল কথা দিযে কথা না রেখে আবার দরদীয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করেন নি।
ধরে নিলাম কথাটা সত্য। কিন্তু সত্যটা তার জন্মদিন ঘিরে ৎসব আয়োজনে কতটা প্রকাশ যোগ্য।
 
আমরা কী কখনো রবীন্দ্র প্রেমিকা আন্নাকে নিয়ে কোনো লেখা দেখেছি। কাজী আনোয়ার হোসেন , যিনি মাসুদ রানার জনক। তার সম্পাদিত ঐতিহাসিক প্রেমপত্র থেকে যেটি জানা সেটি হলো, আন্নার প্রেম কখনোই ভুলতেই পারেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পিতার বন্ধুর ঘর ত্যাগের পর রবীন্দ্রনাথ কী তার খবর নিয়েছেন? তবে কাজী আনোয়ারের বইয়ের সূত্র মতে, রবীন্রদ্রনাথ বলেছিলেন , তাকে নিয়ে কোনো জাদুঘর হলে সেখানে যেনো আন্নার চিঠিটা থাকে। কিন্তু তার সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেমন ছিল সব আলোচনা কতটা রুচিকর।
 
আমার মনে হয় রবীন্দ্র নজরুল বা জীবনানন্দ; শহীদুল্লাহ কিম্বা শামসুর রাহমানদের জীবনের সব দিক নিয়ে আলোচনাটা পাবলিকলি হওয়ার বিষয় নয়্ এটা একাডেমিক। এটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন হবে ততক্ষণ এটা নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে লেখা বা প্রচার সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমার কাছে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা আপত্তিকর এবং নোংরামি বলে বিবেচিত। এটা অন্যের কাছে মনে নাও হতে পারে। আমাদের কিছু আশ্রয় থাকা দরকার। যেমন সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল। রাজনীতিতে ভাসানী-বঙ্গবন্ধু। সিনেমায় রাজ্জাক-ববিতা। রকম আরো। তার মানে এটা নয় যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। তবে তাদের ব্যাক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয়ের চেয়ে তাদের কর্মটাই বড়। সেটিই আলোচনার মূল জায়গা।