কিস্তি-১৮ ::আমপাবলিকের সিনেমা কেউ বানাইতে চায় না

মান্না ভাই, নয়াক মান্না। তাকে প্রথম সরাসরি দেখছি, একটা আনন্দ-উত্তেজনা কাজ করছে। আগেই বলেছি আমরা বন্ধুরা মিলে বাংলা সিনেমা দেখতাম, তাই মান্নার প্রতি একটা অনুরাগ ছিল। 
দুপুরের দিকে তার কাকরাইলে অফিসে উঠে এলাম। প্রথম রুমে ঢুকেই মান্না ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেনস করতেই একজন চোখ বড় বড় করে তাকালেন আমার দিকে। বললেন, কি বিষয়! উনি ধরে নিয়েছেন আমি নায়ক হওয়ার ধান্ধায় এসেছি। বললাম, সাংবাদিক। উনি বললেন, বসেন। ভাইজান ব্যস্ত আছেন। কিছুক্ষন পর আবার তাড়া দিলাম। উনি উঠে গিয়ে বললেন, মান্না ভাইয়ের ডাক পড়লো। ভেতরে যেতেই বললেন, তোমারে বসায়া রাখছে। আমি খুবই সরি। শুরুতেই আপন করে নেয়ার একটা ক্ষমতা তার আছে। আমি মুগ্ধ হলাম। মান্না ভাই বিশাল দেহি মানুষ। বসে আছেন বিশাল একটা চেয়ারে। সামনে বসে থাকা দুজন কে বিদায় করে দিযে বলল, 'ছোডু ভাই তুমি কই পড়।' জানালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কথায় কথায় অনেক কথা হলো। জানালেন কি সংগ্রাম করে তাকে জনপ্রিয় মান্না হতে হয়েছেন। বললেন, পরিচালকরা আমাকে নিতে চাইত না। এখন নেয়ার জন্য পেছনে পেছনে ঘোরে। জীবনে সবখানেই র তুমি প্রতিষ্ঠা পেতে বেগ পাইবা। কিন্তু প্রতিষ্ঠা পাইলে তর তর করে খালি উপরে উঠবা। কিন্তু আমাদের মত নায়কদের একটা সমস্যা আছে। সেটা হলো দর্শক না চাইলে আমি কিন্তু জিরো। 
ঢাকা কলেজে পড়তেন মান্না। সে সময়কার স্মৃতি চারণ নিয়েই আলাপ করতে গেছিলাম। বললেন,মরণচাঁদে মাগনা মিষ্টি খাইতাম। এখনো মনে হয় টাকা পয়সা পাইবো। তবে বিষয়টা খুব এনজয় করতাম। সিনেমা জগত সম্পর্কে অনেক কথা বললেন। তবে সিনেমা শিল্পটা যে একটা নিম্ন মানের দিকে ধাবিত হচ্ছে সেটি তিনি সেই ২০০১ সালেই বলেছিলেন। বললেন, এখানে সবাই টাকা কামাই করতে আসে। কেউ ভালো সিনেমা বানাইতে চায় না, ছোডু ভাই। আবার আর্ট ফিল্ম বানায় যারা ওরা সিনেমা বানায় পুরস্কারের সিনেমা। আমপাবলিকের সিনেমা কেউ বানাইতে চায় না। নিজের সিনেমা নিয়েও বললেন। বললেন, ভালো সিনেমা বানাইতে চাই, পাবলিকের সাপোর্টও আছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে মিডিয়া সেভাবে সাপোর্ট দেয় না। 
নিজের এলাকার বন্ধুদের নিয়ে গল্প শোনালেন। অনেকের নামও বলেছিলেন, এখন তাদের নাম মনে পড়ছে না। বললেন, গ্রামে গেলে বন্ধুরা তাকে আপনি করে বলে। এতেই তার আপত্তি। তাই ওদের ওপর রাগ করেন। তবুও গ্রামে যান। এলাকাতে একটা হসপিটাল করার ইচ্ছের কথা জানিযেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এটি করা হয়নি। তবে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন প্রচুর। এটাইবা কয়জনের ভাগ্যে জোটে।হঠাৎ করেই মান্না ভাই মারা গেছেন বছর কয়েক আগে। 
তার সাথে গল্প করে বের হওয়ার সময় বললেন, সময় পাইলে চইলা আইসো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে কেউ তো সিনেমা সাংবাদিক হয় না। তুমি কেন হইলা সেই গল্প শুনমু নে। সময় নিয়া ফোন দিয়া আইসো। আমি বের হলাম তার রুম থেকে। চা ও মিষ্টি খাইয়ে ছেড়ে দেয়ার আগে বার বার তার সাথে দুপুরে খেতে বলছিলেন। বিনয়ী মান্নাকে সিনেমার পর্দার মান্নার সাথে মেলানো ঢের কঠিন। বিদায়। মান্না ভাই, যেখানেই আছেন, ভালো থাকুন। 

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮

কিস্তি-১৭ ::নায়িকা হতে হলে প্রযোজকের সাথে রাত কাটানো জরুরী

রামপুরায় খালেদা আক্তার কল্পনার বাসায় বসে আছি। সন্ধ্যা ৭ টার মত বাজে। আমার সাথে বন্ধু বাবু। অনেক্ষন পর তিনি এলন। সিনেমার মান উন্নয়ন করার উপায় নিয়ে অনেক কথা হলো। সে সাতে জানা হলো, নতুন কাউকে নায়িকা হতে হলে প্রযোজকের সাথে রাত কাটানো জরুরী। 
হুমায়ূন আহমেদের প্যান্সিলে আঁকা পরী বইটি যারা পড়েছেন তারা এ বিষয়ে সম্মক জ্ঞান রাখেন। তাদের এ লেখা পড়ার দরকার নেই। কল্পনা আপা বললেন, প্রযোজককের কাছৈ টাকা চাইলে সে যদি বলে, আসো বেড়ে। টাকা নিয়ে যাও। তাহলে ভদ্র, মার্জিত ও রুচিশীর পরিবারের মেয়েরা কেন সিনেমা করতে আসবে। খালি প্রযোজকের উৎপাত হলে কথা ছিল, এখানে পরিচালক (সব পরিচালক নন) থেকে শুরু করে বিভিন্ন জন নায়িখার শরীরের প্রতি লালায়িত। তাই এখানে ভালো শিল্পী আসছেন না। সিনেমার মেয়ে ছেলেদের যে সবাই খারাপ জানে সেটা অমূয়লক নয় বলেও জানালেন তিনি। তার সম্পর্কে জানতে চাইছলাম। সে রবি চৌধুরীকে ঘিরে তার সাথে একটা গনিষ্ঠতার খবর বাইরে বয়ে যাচ্ছে। তার স্ট্রেইটকাট জবাব, একটা সুদর্শন যুবক আমার বাসায় থাকে, এ নিয়ে তো কথা হতেই পারে! তার সাথে সেদিন অনেক আলাপ হলো, যার সব কিছুই লেকা যাচ্ছে না। তবে সিনেমার নায়িকাদের শরীর উপভোগ করার ক্ষেত্রে অনেক গণমাধ্যমকর্মীও জড়িত বলে সে সময় জেনেছি। এতে গণমাধ্যমকর্মী হিসাবে খুব খারাপ লেগেছিল। কিন্তু কিছু করার ছিলনা। এভাবেই চলতে চলতে একদিন হয়তো ভালো সময় আসবে, এ ধারণা ছিল। এখনও অবশ্য সেই আগের জায়গাতেই পড়ে আছেন বিনোদন সাংবাদিকরা।


০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:১১

কিস্তি-১৬ ::কত জন যে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য কাইত হন!

বিনোদন রিপোর্টার হিসাবে আমার একটা বাড়তি দায়িত্ব ছিল, সেটি হলো প্রতি সপ্তাহে যে সব নতুন গানের ক্যাসেট বাজারে আসে তার একটা রিভিউ তৈয়ার করা। আমি সে সময় ব্শ্বিসাহিত্য কেন্দ্রের আয়েজনে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একটা অনুষ্ঠানে প্রায় যেতাম। এতে করে আমার মধ্যে একটা ভিমরুতি ধরেছিল, ক্ল্যাসিক্যাল ধাঁচের গান না হলে আমার ভালো লাগতো না। 
কিন্তু সে সময় কেবল বাজারে উঠতি শিল্পীদের আনা গোনা। পাটুয়াটুলীতে সাউন্ডটেক, সঙ্গীতাসহ বিভিন্ন ক্যাসেট কোম্পানির অফিসে যেতাম ক্যাসেট আনতে। একবার সঙ্গীতা থেকে বলা হলো-ভাই নতুন একজন শিল্পী আসছে তার একটা ভালো নিউজ করে দিতে হবে। যেহেতু তারা আমাকে অনেক শিল্পীর নম্বর দিয়ে হেল্প করেছে, তাই এ রিকোয়েস্ট রাখতে হবে। কিন্তু ক্যাসেটটা না শুনে আমি কথা দিতে পারলাম না।
সেখানে তারেক ভাই ছিলেন, আমাকে মিতা বলে ডাকতেন। তার কাছেই শিল্পীর কয়েক খানা রেডিমেট ছবিও ছিল। সেখান থেকে বাছাই করে কয়খান দিলেন। বললেন, ভাই কইরে দিয়েন। বললাম, ঠিক আছে, দেখবো। পরের কোনো এক সপ্তাহে শিল্পীকে ফোন করলাম। ইস্কাটনে বাসা। গানের গলা খারাপ না । কিন্তু এ একখান ক্যাসেট বের করতে তাকে অনেক জনের সাথে কাইত হতে হয়েছে, জেনে আমি খুবই মর্মাহত হলাম। হেসে হেসে কথা বলেন। আমাকে প্রায় অফিসে ফোন করে আলাপ করতেন। একটা নিউজও করে দিয়েছিলাম। বড় কোনো কভারেজের কথা চিন্তা করতে পারিনি, কাইত হওয়া লোকদের দলভূক্ত হওয়ার ভয়ে। এ রকম কত জন যে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য কাইত হতেন, সেটা আমি আরো পরে বেশি জেনেছিলাম। বিশেষ করে সিনেমা পাড়ায় যাওয়ার পরে।
সিনেমায় অভিনয় করতে হলে নাকি এসব লাগে। সেটা নিয়ে পরের একটা কিস্তি লিখবো। তবে গানের শিল্পীদের এ ধরণের সমস্যা আমাকে পীড়া দিয়েছিল।
আমার নির্বাহি সম্পাদক আজিজ ভাই গানের লোক, ছায়ানটে গান শিখতেন। একদিন বললেন, ক্ল্যাসিক্যাল ধারার শিল্পীদের নিয়া স্টোরি করেন। কিন্তু আমার তখন অল্প বষয়। ব্যান্ডের গান বেশি ভালো লাগে। বিশেষ করে জেমসের। তাই জেমসকে একদিন ফোন করে বললাম, ইনটারভিউ লাগবে। বললেন, প্রশ্ন পাঠিয়ে দাও। উত্তর লিখে দেবো। প্রশ্ন পছন্দ না হলে কিন্তু উত্তর পাবানা। এ শর্তে আমি রাজি। 
তার এলিফ্যান্ট রোড়ের স্টুডিওতে প্রশ্ন পৌছে দিলাম। দুদিন পরে জেমস ভাই ফোন দিয়া বললেন, উত্তর রেডি নিয়া যাও। আর দেখা কইরা যাইও। গিয়ে দেখলাম উনি খুব ব্যস্ত। এর মধ্যে হাত বাড়িয়ে করমর্দন করলেন। বললেন, তুমি আমার অনেক গান শুনেছো। প্রশ্ন পড়ে বুঝতে পারলাম। আমি চুপ করে থাকলাম। জেমস ভাই বললো, সঙ্গীতের দুর্দিন শুরু হইছে। ব্যাপার না। একটা সময় সব ঠিক হইয়া যাইবো। যাও, ভালো থাইকো। যোগাযোগ রাইখো। 

পরের কিস্তি সিনেমার গল্প

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০০

কিস্তি-১৫ ::যাকেই ফোন করি সবাই একটু বিজি বিজি ভাব ধরে

বিনোদন সাংবাদিকতা শুরুর পর আমার কাছে মনে হলো চারিদিকে অন্ধকার। আলো কোথায়? কারো কোনো নম্বর নেই। কীভাবে লিখবো, কী প্রশ্ন করবো এ সব নিয়ে কোনো রকমের সহযোগি দেখলাম। ঢাকায় আমার বন্ধুদের মধ্যেও এমন কেউ ছিল না। পত্রিকার নির্বাহি সম্পাদকের কাছেও সবার নম্বর নেই।দু একজনের নম্বর দিয়ে বললেন, যোগাড় করে নেন। তাই করলাম। অনেক কষ্টে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নম্বর যোগাড় করে রিপোর্টিং শুরু করলাম। 
যাকেই ফোন করি সবাই একটু বিজি বিজি ভাব ধরে। আসলে সে সময় এতটা বিজি হবার মত কোনো কারণ ছিল না। আমার ফোনে গলাটা ভারি শোনায়। বয়স্ক বয়স্ক মনে হয়। তাই অনেক সিনিয়র আর্টিস্ট আমাকে ফোনে কথা বলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলেও সামনাসামনি দেখে অনেকে আশাহত হন। 
২০০১ সালের ঘটনা। শেখ সাদি খানের বাসায় গেলাম তার ইন্টারভিউ করতে। দরজা খুলে দিয়ে তিনি বললেন, আপনি? বললাম আমি তারেক, প্রিয়মুখের চিফ রিপোর্টার। আমাকে বসতে বলে ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষন পর এসে বললেন, আপনার সাতেই কথা হযেছে্ বললাম জ্বি। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললেন, আপনি প্রশ্নগুলো লিখেন, আমি উত্তর দেবো।
আমি চুপচাপ বসে প্রশ্ন লিখলাম। তিনি ভেতর থেকে ঘুরে এলেন। প্রশ্নগুলো হাতে নিয়ে ফের ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে, বললেন, প্রশ্ন করো, আমি রেডি। শেস পর্যন্ত তিনি ইন্টারভিউ দিলেন এবং রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যেতে যেতে বললেন, কিছু মনে করো না। অনেকে বোঝে না, ইন্টারভিউ নিতে চলে আসে, তাই তোমাকে প্রথমে ভুল বুঝে ছিলাম। সে জন্য দু:খিত। তার এমন ব্যাবহারে আমার চোখে পানি চলে আসলো। একজন মহৎ শির্পী যে কত বড় কলিজাঅলা লোক সেদিন বুঝতে পারলাম। আমাকে উনি বললেন, পড়াশোনাটা জারি রেখো। ভালো করতে পারবে। 


০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১

কিস্তি-১৪ ::নায়িকার ফটো খিঁচতে তার চরম আনন্দ।

এলোচুলে এগিয়ে এলন তিনি। নাম ডাক চারিদেক তার। তাই একটু সমীহ করেই কথা বলতে হয়। তার অভিনয়ও আমার পছন্দ। ২০০০ সালের এক দুপুর তার সাথে মুখোমুখি হলাম, তাজমহল রোড়ে তাদের বাসার বসার ঘরে। 
আমি উল্টো দিকের সোফায় বসা, বার বার অনুরোধ করলেন তার পাশে বসার জন্য। আড়ষ্ট আমি। এতটা কাছাকাছি হতে চাই না। শেষ পর্য়ন্ত বাধ্য হলাম। তখন আমার বয়স কত হবে? ১৯ কি ২০। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ শেষের দিকে ঘটনা এটি। 
'টি ' অদ্যাক্ষরের এ নায়িকা এখন ভীষন নাম করা। তার পাশে বসে কথা বলছি, ফ্যানের বাতাসে তার এলা চুল আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। একটা অস্বস্তি আমার মধ্যে। তার ওপর তাকে যে সব প্রশ্ন করছি সে সব তার পছন্দ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি খেতে পছন্দ করেন, কি রং প্রিয় এ টাইপের প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু আমি তার জন্য রেডি করে নিয়েছি ভিন্ন প্রশ্ন, বাংলা নাটকের গল্প, মান ও অভিনয় নিয়ে এ সব প্রশ্ন শুনে উত্তর দিচ্ছিলেন। আর কথায় কথায় অবিয়াসলি বলছিলেন।
আমার ফটোজার্নালিস্ট সমানে ফটো খিঁচছেন। নায়িকার ফটো খিঁচতে তার চরম আনন্দ। 
অনেক ক্ষণ পরে আমরা তার বাসা থেকে বের হলাম, কবে এটি ছাপা হবে তাও জানতে চাইলেন। আমার বিনোদন সাংবাদিকতার জীবনের প্রথম দিকের ঘটনা এটি। এর আগে আরো অনেকের কাছে গেছি। তবে সবচেয়ে পরিশীলিত মনে হযেছে শিল্পী বশির আহমেদের পরিবারকে। পুরো পরিবারই গান করেন। বশির আহমেদের সাক্ষাৎকার নিতে গেছি। ফোনে আমার গলা শুনে বলেছিলেন, যেতে। যাওয়ার পর আমার চেহারা দেখে উনি তো টাসকি। এতো পুলাপাইন। এর কাছে কিসের সাক্ষাৎকার দিব। এটা ভদ্রভাবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু আলোচনার ভেতর দিয়ে অনেক খবরই জানলেন। সঙ্গীত সম্পর্কে আমি কিছু জানি কিনা সেটাও যাচাই করে নিলেন। এটা ছিল আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। 

সেদিন তার কন্যা হোমায়রা বশিরের সাক্ষাৎকার নিয়ে ফিরলাম। তার ছেলে রাজা বশির ও স্ত্রী মিনা বশিরের সাথে আলাপ হযেছে অনেক্ষণ। সঙ্গীতের প্রতি আমার টান দেখে মুগ্ধ বশির আহমেদ। আমি লজ্জা পাচ্ছি। তিনি বললেন, 'তুমি সময় পেলেই আমার বাসায় আসবে। তোমার সাথে আলাপ করে ভালো লাগলো। এই যামানার একটা ছেলে ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের খবর রাখে, এটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে।' তাদের সাথে আমার অনেক দিন যোগাযোগ ছিল। পরে বিনোদন সাংবাদিকতা ছেড়ে দেয়ার পর আর আলাপ ছিলনা, এ জন্য দুপক্ষই দায়ি।!!! 


পরের কিস্তিতে অন্য গল্প শোনাবো।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০১

কিস্তি -১৩ ::'ভাই, ভাবি কিন্তু এখনো ড্রেস চেঞ্জ করে নাই। আপনার অপেক্ষা।'

মিল্টন এসে আমার কানে কানে বললো, 'ভাই, ভাবি কিন্তু এখনো ড্রেস চেঞ্জ করে নাই। আপনার অপেক্ষা।'আমি হাসলাম। সুইটির মা ভাবির কথা হচ্ছে। তিনি আমাদের সাথে আছেন কয়েক মাস। 
সেজে গুজে তিনি বাইরে গেলে আমরা ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এসে গল্প করে যান। কেমন লাগছে জানতে চান! বাংলা সিনেমা দেখার সুবাদে সুইটির মা ভাবিকে খারাপ লাগে না। ওজনদার মহিলা। কিউট কিউট একটা ভাব আছে চেহারায়। আমরা বিষয়টা এনজয় করতাম। একজন আরেকজনকে খোঁচাতাম। ভাবির সাথে আমাদের ভাব ছিল-বেশ। সবচেয়ে বেশি ছিল মিজানের সাথে। তারপর মিল্টন । বড়দের তিনি খুব একটা পাত্তা দিতেন না। ভাবির একমাত্র কন্যা সুইটি সবার আদরের। তাই মেসের সবাইকে ভাবি ভালো জানতেন। 

এখন সুইটি এসএসসি করে ফেলেছে। ওর একটা ছোট ভাইও আছে। মেসে আসার পর ভাবির এই বাচ্চা ফয়দা হয়। সেটা নিয়ে আমাদের সবার মাঝে আনন্দ ছিল। ভাবিরা তিনবোন। তাদের মধ্যে তিনিই একমাত্র অবস্থা সম্পন্ন। মুন্সীগঞ্জে তাদের বাড়ি। বাসায় তিনি তারচেয়ে সুন্দরী কাউকে সহ্য করতেন না। বাড়িঅলার তন্বী দু কন্যা এখানে উকি ঝুঁকি মারলে তিনি ক্ষেপে যেতেন। আমাদের সর্বশেষ ঠিক করা বুয়া তারচেয়ে দেখতে ভালো এবং রান্নায় পারদর্শী তিনি এটা মানতে চাইলেন না। একদিন এসে বললেন, তারেক এই বুয়া বিদায় করো। আমি তোমাদের জন্য বুয়া ঠিক করে দিচ্ছি। যেহেতু তিনি ভাবি, তাই তার কথা শুনতে হলো। সবাই বললো, ভাবির সাথে ঝামেলার দরকার নেই। 

যথারীতি বুয়া পাওয়া গেলো না। ক'দিন উনি রান্না করে দিলেন। তারপর কয়েকদিন পর উনার ছোটবোন রান্না করে দিলো। এভাবেই ভালোই চলছিলো। তখন আমাদের ভাঙনের পালা। হলে ওঠার তোড়জোড়। 

ভাবি হিন্দিতে পারদর্শী। সিরিয়াল দেখে জিনিসপত্তর কিনে, সাজগোজ করেন। মিল্টন ও মিজান দুজন হিন্দি সিনেমা টিনেমা দেখে। ওদের সাথে ভাবি এ সব নিয়ে আলাপ করে, আমি নীরব দর্শক। কারণ আমি বাংলা সিনেমা ও নাটকের লোক। তাই এ নিয়ে আমার কোনো কথা বলার থাকে না। 

সুইটির আব্বা সাইফুল ভাই পুরনো ঢাকার মানুষ। কিন্তু বউ নিয়ে কেন যেন বাসায় সবার সাথে বনিবনা হয় না, তাই তিনি আমাদের মেসের একটা রুম নিয়া থাকেন। একদিন কথায় কথায় জানালেন নিজের বাড়ি থাকতেও বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার কথা। সব কথা একান্তই ব্যক্তিগত, তাই শেযার করা গেলো না। এর মধ্যে সরকার পাল্টে গেলো। আমি ফের হলে ওঠার জন্য তোজজোড় শুরু করলাম। শরণাপন্ন হলাম এক বড় ভাইয়ের । 

তবে তার আগে নায়ক নায়িকাদের নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতার গল্প শোনাব। পরের দু তিন পর্ব তাদের নিয়ে।


৩১ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫০

কিস্তি-১২ মেসের সন্ধানে

মহিলা গলা নিচু করে বললেন, সেও এখানে থাকে। আমি মাথা মুন্ডু কিছু বুঝলাম না। একটা রুম। এখানে একজন ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র থাকেন। আরেকজন লাগবে। তার রুমে। আবার একই রুমে কাজের মহিলা থাকে। 
আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস কলাম, মানে? মহিলা আমার বোকামি দেখে হেসে দিলেন। আজিমপুর কবর স্থানের গেটের উল্টো দিকের ওই একতলা বাড়িতে আমি আর দ্বিতীয়বার যাইনি। এতটা নিম্ন রুচি আমার নয় যে, কাজের মহিলা নিয়ে ডাক্তার বেটার মত আমিও থাকব! 
পরে খোঁজাখুঁজি করে একটা মেস পাওয়া গেলো- ললিত মোহন দাস লেনে। এক আইনজীবীর বাড়ির চারতলা। মেস করার জন্যই মনে হয় আলাদা আলাদা চারটা রুম নিয়ে চতুর্থ তলা। সেখানে গিয়ে পরিচয় ঘটে শফিক ভাইয়ের সাথে। সিএ করছেন রহমান রহমান হকে। ভালো ছাত্র। গোপালগঞ্জে বাড়ি। কেবল একটাই সমস্যা-রাগ বেশি। কিছু হলেই বটি নিয়া কোপাতে চান। আমি অবশ্য দেখিণি। কেবল শুনেছি। যেহেতু আমি বেশির ভাগ সময় মেসের বাইরে থাকি। তবে শফিক ভাই একদিন বললেন, ঢাকা কলেজের মান্নান নাকি বুয়াকে কুপ্রস্তাব দিযেছে। তাই তাকে খেদিয়ে দেয়া হলো। এত সঙ্কটের মধ্যে বুয়া নির্বাচনের দায়িত্বটা আমি নিলাম। ভালো একটা বুয়াটা পেয়েও গেলাম। পেশাদার নন, উনার স্বামী মারা যাওয়ার পর ঢাকায় আসেন। স্বামী যার বাড়িতে কাজ করতেন সেই বাড়িতে কাজ করেন। ভদ্র মহিলা ভালোই ছিলেন। কিন্তু আমাদের সাথে একটা ফ্যামিলি থাকতো, সেই ফ্যামিলির ভাবির আবার আমাদের বুয়াকে পছন্দ না। তা নিয়ে রাজ্যের ঝামেলা। তবুও এতে আমরা গা করি না। 
মেস লাইফ খারাপ না। বেড়িবাঁধ ও পোস্টঅফিসের পাশের বাজার থেকে কেনাকাটা করে আনি, উনি রেঁধে দেন। সকালে ঘিয়ে ভাজা পরোটা, মাছ মাংসের ছড়াছড়ির কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ- সবাইকে ফতুর করার বুগিদ্ধ করেছি। কেবল শফিক ভাই রিপন ভাই ও মিল্টন কিছু বলে না। 

এখানে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিই। আমার সম সাময়িক কেউ ছিল না। পরে অবশ্য শফিক ভাইয়ের কাজিন মিল্টন আসলো। ও ঢাবিতে পড়ে। তাই আমি আর ও এক রুমে উঠলাম। পরে ওর বন্ধু মিজান। মানিকগঞ্জের পোলা। আমরা খুব মজা করতাম। মিজান প্রায় একটা গান গাইতো... ‌‌'যমুনার জল ঘোলা কইরা... ও সখি বলি গো তোমায়.. কাঞ্চা বয়সে মোর আগুন জ্বলে গায়।'

হা হা হা । এভাবেই ভালোই চলছিল। আমাদের সাথে থাকতেন রিপন ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয থেকে পাস করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে জব করতেন। ভালোই। তার কাছ নব্বুইয়ের গণ অভু্যত্থানের গল্প শুনতাম। ভালোই লাগতো। এক সময় জাসদ কর্মী রিপন ভাই পরে চাকরী নিলেন ইসলামী ব্যাংকে। তার কাছে শোনা গল্প নায়িকা মৌসুমী নাকি আগে মল চত্বরে আড্ডা মারতেন। তার দিকে নাকি কেউ ফিরেও তাকাতেন না। হঠাৎ একদিন মৌসুমী নায়িকা। তাদের তো অবাক হবার পালা। 
মেসে আমাদের সাথে আরেকটা ফ্যামিলি থাকতেন, সামর্থ সে রকম ছিল না বলে হয়ত। তবে তারাও বেশ আন্তরিক ছিলেন। সবচেয়ে আন্তরিক মনে হয়েছে বাড়িঅলাকে। তাদের বাসায় শুক্কুরবারে পোলাও রোস্ট হতো। তার একটা ভাগ চারতলার ব্যাচেলদের জন্য চলে আসতো। এত আদর আপ্যায়নের মধ্যে একটচা কঠিন শর্ত ছিল- ছাদে ওঠা যাবেনা, জানালা খোলা যাবে না। আমরা তাই করতাম। কিন্তু বাড়িঅলা দুইকন্যা যে আমাদের উত্যক্ত করত, সেটা কাউকে বলা যেতে না। বলতামও না। বিশেষ করে মিল্টন ও আমি এ দুজনের অত্যাচারের শিকার ছিলাম। 
মেসে সবচেয়ে বেশি মজা হতো সুইটির মা ভাবিকে নিয়ে। তাকে নিয়ে এক পর্ব না লিখলেই নয় , আনন্দ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। 

পরের কিস্তি সুইটির মা ভাবিকে নিয়ে...

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৭

কিস্তি ১১- বিনোদন সাংবাদিকতা

নায়িকাদের টিভি পর্দায় দেখি, সোনালী পর্দায় দেখি। এবার সরাসরি দেখার পালা। প্রথম আলোর অনুমতি সাপেক্ষে প্রিয়মুখে কাজ নিলাম। রিপোর্টার। পূর্ণ মাত্রায় বিনোদন রিপোর্টার। এলিফ্যান্ট রোড়ে কামাল ভাইয়ের বাড়ির তিনতলায় অফিস। আজিজ ভাই নির্বাহি সম্পাদক। প্রতিদিন আসি। প্রথম সংখ্যায় কে হবেন প্রচ্ছদ? এ নিয়ে হুলুস্থুল। শেষশেষ তৌকির আহমেদকে প্রচ্ছদ করা হলো। 
এভাবে শুরু। তার পর চললো অনেক দিন। এখানে কাজ করতে এসে অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। একব পর্যায়ে প্রধান প্রতিবেদেকের দায়িত্ব পেলাশ। আমার পুরো সেটআপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাই মজাও ছিল। প্রিয়মুখে কাজ করতে করতে কত রাত যে আজিজ ভাইয়ের বাসায় কাটিয়িছি তার হিসাব নেই। 
এখানে কাজ করতে এসে নায়িকা রত্নার প্রচ্ছদ করতে গিয়ে মজা পেয়েছিলাম, জেমস, নায়িকা সুইটি, বন্যা মর্জিা, চাঁদনী, রিচি সহঅনেকের পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দিনে দিতনে সম্পর্কের পরিধি বাড়ছিল। সেই সাথে বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে নায়িকাদের অন্ধকার জীবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ছিলাম অনেক জ্ঞান অর্জন হযেছে। তাই এখান থেকে পালাবো ভাবছিলাম। শেষ পর্যন্ত পালিয়েছিল। তাও ২০০১ সালের দিকে। দুই বছর কাজ করেছিলাম প্রিয় মুখে। পাল ানোর কারণ অবশ্য ভিন্ন আজিজ ভাই আর পত্রিকাটি চালাতে পারছিলেন না। তাই বন্ধ করে দিয়েছেন। দিতেই হবে, কারণ আজিজ ভাইদের এত ইনভেস্টমেন্ট ছিল না। শখের বসে তাদের পাক্ষিক পত্রিকা করা। এখানে অনেকের সাথে বেশ ভাব জমেছিল। তাদের অনেকে এখন অনেক বড় স্টার। আমার কথা তাদের মনে থাকার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল ইয়াসমীন মুশতারী। নজরুলের গানের শিল্পী। অসাধারণ গান করেন। তার সাথে এখনো যোগাযোগ আছে। তবে এই বিনোদন সাংবাদিতকতা করার কারণে নিউজ স্টোরি ছোট বড় করার একটা ক্ষমতা এখান থেকে লাভ করেছিলাম। একই সাথে তারকাদের জীবনের বিভিন্ন দিক জানার যে দুর্লভ সুযোগ পেলাম, তা জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে। এত আলোকিত মুখের আড়ালে এত অন্ধকার প্রথম দিকে আমাকে বিস্মিত করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা মানতে আপত্তিক নিশ্চয় কারো থাকার কথা নয়, আমিও সে রকম। বাস্তবতা মেনেই চলেছি। এখনো চলছি। 

পরের কিস্তি... হল ছেড়ে আবার মেসে 

৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১

কিস্তি-১০, হলে ওঠা ও নেমে পড়া

হাজিরা ডাকার রেওয়াজ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল, এখনো আছে। কিন্তু হল গেটে হাজিরা ডাকার সিস্টেম আমার জানা ছিলনা। আমার বন্ধু ছাত্রলীগ নেতা মোশররফ অবশ্য প্রথম দফায় বাঁচিয়ে দিল। বলল, মধুতে আসিস। তাহলে হবে। মধু মানে মধুর ক্যান্টিন।অনার্স প্রথম বর্সে যারা হলে ওঠে তাদের বাধ্যতামূলক হাজিরা দিতে হয়। আমিও গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসি। 
যেদিন হলে ওঠার জন্য আসলাম সেদিন আমাদের ক্লাশ মেট মান্না বললো, মামা মাল চালাইতে পারবি। তাইলে হলে ওঠা নিশ্চিত। বললাম, মাল? ও নিচু গলায় বলল, মেশিন। এখন মেশিনের যুগ। রাজনীতি হলো মেশিনে চলে। মানে অস্ত্রপাতি। 
আমার হলে ওঠা ফরম বা ওয়াজিব ছিল না। শখে হলে ওঠা। বাড়ি থেকে বলা হযেছে হলে ওঠার দরকার নেই। খালি হাঙ্গামা। এ সবে যাওয়ার কোনো মানে নেই। 
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে মোশা, মান্না ও দোজা পলিটিকস করে। ছাত্রলীগের পলিটিকস। তাই ওদের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত হলে উঠলাম। আমাকে দেখতে একটু গুণ্ডা গুণ্ডা বলে মনে হয় বলে, হয়ত সহজেই নেতাদের নজরে পড়লাম। হলে খাবার আসতে থাকলো। এক বড় ভাই ডেকে বললো, তোমার ক্যান্টিনে যেতে হবে না। তুমি আমার সাথে মধুতে যাবা। সাথে থাকবা। মানে বডি গার্ড। আমি তো ভাবলাম এবার আমার দফারফা হবে। নেতার বডিগার্ড। 
আমার থাকার ব্যবস্থা হলো যমুনা ব্লকে নেতার রুমেই। রাতভর নেতা কুপরার্শ দেন তার ক্যাডারদের। এ সব শুনতে শুনতে রাত পার হয়ে যায়। ঘুমাই সকালে। এভাবে চলছিল। কিন্তু আমার আর সইছিলো না। কিন্তু হলে উঠে নেতার খেদমত না করে পালিয়ে আসা ভারি মুশকিল। 
একদিন মোশাকে বললাম, শালা আমি প্রথম আলোর কন্ট্রিবিউটর। আর আমারে দিয়া পলিটক্স! এ সব হবে না। আমি পালাবো। ও বললো পালিয়ে থাকতে পারবি না। জালে পড়ে গেছিস। কিন্তু আমি সেটি মানতে চাইলাম না। যথা নিয়মে একদিন ভোরে পালিয়ে গেলাম। আমার ট্রাঙ্ক, লেপ, তোষক, বিছানার চাদর সবই হলে রেখে এলাম হলে, নেতার রুমে।। এ সব আর কোনোদিন ফেরৎ পাইনি। পাবার চিন্তাও করিনি। বঙ্গবন্ধু হলে এটাই আমার প্রথম ওঠা ও নেমে পড়ার গল্প! 


পরের কিস্তি....বিনোদন সাংবাদিকতা নিয়ে


২৮ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২০

কিস্তি-৯ সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ

অনেকে লেখে। আমি কেবল পড়ি। এভাবে পড়তে পড়তে আমারো লিখতে ইচ্ছে করে। আমার এক বছরের সিনিয়র আরিফ লেখেন, আশরাফ ভাইও। তাদের লেখা পড়ি। একদিন আরিফ ভাই ও আশরাফ ভাইকে বললাম, পত্রিকায় আমিও লিখতে চাই। নবিশ হিসাবে আমাকে যথেষ্ট হেল্প করলেন তারা। তাদের পরামর্শে সিডিসিতে ভর্তি হলাম। সাংবাদিকতার বিভিন্ন বই-পাঠ চলছে। এর মধ্যে পরিচয় হলো বুয়েটের মোকাররম ভাইয়ের সাথে। খুবই সজ্জ্ন মানুষ। এত পছন্দ করতেন, ভালো লাগতো। তার কাছেই শুনলাম প্রথম আলো একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছে 'প্রদায়ক সংবাদদাতা' নিবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রথম আলোর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপনটা দেখলাম। একটা লেখা ও সিভি জমা দিতে বললো। পরের দুদিন খেটে খুটে একটা রিপোর্ট তৈরি করে প্রথম আলো অফিসে গেলাম, দেখি লম্বা লাইন। বাইরে একটা চটের বস্তায় লেখা ও সিভি জমা হচ্ছে। আমিও দিলাম। কিছু হবে বলে মনে হলো না। কিন্তু না, মাস দেড়েকর মাথায় ডাক পড়লো। হজির হলাম। রাজিব ভাই অনেক কথা শোনালেন। প্রথম আলোর দোতলার ছোট ক্যান্টিনের চিপায় দুজনে বসে গোল্ডলিপ সিগারেট আর চা পানে অনেক আলাপ হলো। পরিকল্পনার কথা জা্নালেন। বললেন, কাজে নেমে পড়। তাই শুরু করলাম।
শুরুতেই দেশের নাম্বার ওয়ান কাগজে লেখার সুযোগ। আমার মুগ্ধতার শেষ নেই। আমার এলাকা হিসাবে ঠিক করা হলো পুরনো ঢাকার লালবাগ ও হাজারীবাগ। এ সব এলাকার নাগরিক সমস্যা নিয়ে আমার প্রথম রিপোর্ট। হেঁটে রিপোর্ট বের খুঁজতে থাকলাম। কিন্তু 'আলোকিত রাজধাণী' পাতা আর আলোর মুখ দেখছে না। অবশেষে ২০০১ সালে পাতাটি প্রকাশিত হলো এবং এতে আমার প্রথম লেখা ছাপা হলো। বেশ সাড়া পেলাম । ক্লাশের বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানালো। 

এখনো মনে পড়ে রিপোর্টটা কীভাবে শুরু করবো তা নিয়ে একটা উত্তেজনা ছিল। পরে লিখেছিলাম। এবং আনকাট সেটি ছাপা হয়েছে দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। প্রথম আলোয় লিখলে আর বাইরে কোথাও লেখা যায় না। তাই প্রথম আলোতে সাপ্তাহিক দু থেকে তিনটা লেখা দিতে থাকলাম। ছাপাও হতে থাকলো।
রাজিব ভাইয়ের বদলে আমাদের দেখভালে দায়িত্ব পড়লো সুমন কায়সার ও টোকন ভাইয়ের ওপর। সুমন ভাই অসাধারণ একজন মানুষ। আমার দেখা এ রকম ভালো ও শান্ত মানুষ দ্বিতীয়টি সংবা্দ মাধ্যমে মনে করতে পারছি না। টোকনও ভাই সজ্জন। আমাকে পছন্দ করতেন। ভালো লাগতো। কাজ করতে করতে আমরা কয়েকজন বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে সবাই এখনো মিডিয়া জগতেই আছেন।

এর মধ্যে একদিন প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন দেখলাম প্রিয়মুখ নামে একটি পাক্ষিক বের করবেন কয়েকজন তরুণ। সেখানে রিপোর্টার লাগবে। সুমন ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে গেলাম। আলাপ আলোচনায় কাজের কথা চূড়ান্ত হয়ে গেলো। এটা নিয়ে এক কিস্তি লিখবো। তার আগে ঢাবি হলে ওঠা ও নেমে পড়ার কাহিনী জানাবো পরের কিস্তেতে।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯

কিস্তি-৮ ::কীভাবে লিখতে হবে সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই!

লেখার শখ আমার পুরনো। ছোট বেলায় ছড়া লেখার চেষ্টা করতাম। অনেক কবিতা লিখেছি। কিন্তু বড় হয়ে মনে হলো এ সব কেবলই ছাইভস্ম! আমার কবিতার চরিত্র ছিল একই, সেই ছোট বেলার আধো আলো আধো আঁধারে দেখা আমার প্রথম প্রেম! 
আমার লেখালেখির প্রেরণা আমার বাবা। তিনি অসাধারণ লেখেন। আমার দেখা দু'জন মানুষের লেখার আমি প্রচণ্ড ভক্ত, তার মধ্যে আমার বাবা একজন। অন্যজন হুমায়ূন আহমেদ। দুজন আবার দু রকম লিখতেন। আমার বাবা লিখতেন-পাঠ্যবই। হুমায়ূন আহমেদ কী লিখতেন তা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। 
আমি উচ্চ মাধ্যমিকে থাকার সময় 'নতুন চাঁদ' নামে একটা স্মরণিকা সম্পাদনা করি। এর সম্পাদকীয় লেখা নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। কীভাবে লিখতে হবে সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। পরে আমার বাবার সম্পাদিত একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদকীয় দেখে লিখলাম। সবাই খুব প্রশংসা করলো। সেই ১৯৯৮ সালে আমি প্রযুক্তি নিয়ে লিখেছিলাম। আমার আজো মনে পড়ে আমার লেখা সেই নিবন্ধ নিয়ে প্রচুর আলোচনা। ইন্টারনেট নিয়ে দুনিয়াজুড়ে যে হই চই হবে তা সে সময় বলেছিলাম। সে সময় ভোরের কাগজের নিয়মিত পাঠক ছিলাম। সেই সুবাধে প্রযুক্তি সম্পর্কে গ্রামে থেকেও জানার সুযোগ হয়েছিল। সেই সাথে আরো খোঁজখবর নিয়ে আমার সে লেকাটা তৈলি করি। ছাপা হয় আমার মামা ইমাইলের নামে। কীভাবে জানি সবাই জেনে গেলো লেকাটা তার না, আমার। 
অনেকে বলে ছিলেন আমি আজগুবি কথা লিখেছি। এখন এসে খুব মজা লাগে। সে সময়কার ভাইবোনদের সাথে দেখা হলে, সবাই হেসে বলে তুই তো ঠিকই বলেছিলি। 
ঢাকায় আসার পর ডিএ হোস্টেলে একদিন ভোরে দেখলাম আমাদের দু ব্যাচ সিনিয়র আনিস ভাই একজনের সাথে নিচু গলায় কথা বলছেন। পরে জানলাম, যার সাথে আলাপ করছিলেন- তিনি একজন প্রকাশক। আমি ঘুম থেকে ওঠার পর আনিস ভাই বললেন, আপনি তো বাংলা ভালো পারেন, তো আমাকে দু তিনটা গাইড বই লিখে দেন। আমি লিখতে শুরু করলাম। অল্প সময়ে শেষ করলাম, এর মধ্যে একদিন সেই প্রকাশক নেসার ভাইয়ের সাথে দেখা। বললেন, বাংলবাজার আসো। আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয থেকে পড়াশোনা করে এই লাইনে এসেছি। দু ভাই মিলে গল্প করবো। লেখার আইযডয়াও হবে। সেই শরু । এরপর আবদুল্লাহ অ্যান্ড সন্স, স্কলারস পাবলিকেশন্সের বই লিখেছিলাম। এ সব বই দেশের খ্যাতিমান অধ্যাপকদের নামে বাজারে গেছে। অথচ লিখেছি আমার মত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তবে খারাপ লিখি নাই বলে অপরাধ বোধ নেই। চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। 
এই লেখালেখির বাণিজ্যটা আমি দু বছর ধরে রেখেছি। পরে দেখি টাকা পয়সা ঠিকমত পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিলাম। স্কলাসের কাছে এখনো হাজার পঞ্চাশেক টাকা পাওয়া আছি। এখন গেলে শালা আমারে চিনবে বলে মনে লয় না। 
সে সময় পুরনো ঢাকার বাংলাবাজার যাওয়াটা আমি খুব এনজয় করতাম। ফুলবাড়িয়া থেকে ঘোড়ার গাড়িতে ৫ টাকায় বাংলা বাজার যেতাম খুব মজাই পেতাম। 

পরের কিস্তি সাংবাদিকতা শুরুর গল্প।

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:০৭



কিস্তি-৭ ::চেয়ারম্যানের সে কী প্রতিভা। তরুণীর কোমর জড়িয়ে মঞ্চে নাচছে। হা হা হা। সেই রকম নাচ।

চেয়ারম্যান নামেই আমরা ওকে চিনি। আসল নাম খুরশিদ। ফেণীতে ওদের বাড়ি। আমাদের আরেক বন্ধু জাফর। জাফর সাদিক। দুজনেই তুখোড় স্টুডেন্ট। রাজনীতিতেও সিদ্ধ হস্ত। তবে চেয়ারম্যানের নামের পেছনে একটা কারণ আছে। চেয়ারম্যান হেন কোনো কাজ নেই করে না। জাফরও এ ক্ষেত্রে কম যায় না। 

একদিন এসে চেয়ারম্যান বললো, দোস্ত চল পাবলিক লাইব্রেরী। কেন? জানতে চাইলে জাফর বললো, শালা গেলে বুঝবি। কথা মত হাজির হলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে। দেখি চেয়ারম্যানের সে কী প্রতিভা। তরুণীর কোমর জড়িয়ে মঞ্চে নাচছে। হা হা হা। সেই রকম নাচ। 
চেয়ারম্যান লোকটা ভীষণ ভালো। জাফর, চেয়ারম্যান ও হেলাল তিন জন এক সাথে থাকতো। একটু আধটু পলিটিক্স করতো। পল্টনের হোটেল মিডওয়ে ওদের আস্তানা। নারী জগতে সুখ্যাতি ছিল। ইডেন বদরুননেসা ছির ওদের কাছ নস্যি, যেখানে গেটের বাইরের নিরীহ তরুণেরা অপেক্ষা করতো, সেখানে ওদের জণ্য ছুটে আসত তরুণীরা। ভালোই তো। আমরা খুব মজা পেতাম। নারীমহলে যাদের কদর বেশি তাদের সাথে আছি!! বিষয়টা হালকা না কিন্তু। চেয়ারম্যানের সুবাধে আমাদের আরেক বন্ধু আজমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ে কিছুদিন মাস্টারি করেছিল। এখন আইনই পেশা ও নেশা। 

চেয়ারম্যানও একে হোস্টেলে থাকতো। থাকতো আমাদের একব্যাচ সিনিয়র নাজমুল। সে এখন কোথায় আছে জানি না। তবে তার সাথে আমার বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমরা দুজনে বাংলাবাজারে নোট বই লিখতাম। আমার সম্মানি তার চেয়ে কিঞ্চিত বেশি ছিল বলে আমাকে বেশ সমীহ করতেন। তাদের সিলেট অঞ্চলে এক স্মরণিকায় আমার একটা লেখাও ছাপিয়েছিলেন। যেটি এখনো আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। 

নাজমুল ভাই ছাড়া আমার আরেক বন্ধু ছিল ফয়সাল। এখন বড় মালদার পার্টি। ঢকায় গাড়ি আছে। প্লট ও ফ্ল্যাটের বাণিজ্যও। 

তবে আমার বন্ধু সামাদের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে একে হোস্টেলে জাকারিয়ার সাথেও আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল। বরিশালের ছেলে জাকারিয়া এখন একটা ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরী করে। ওর সাথে বছর তিনেক আগে একবার দেখা হয়েছিল। হোস্টেলে ওর বেশ দাপট ছিল সে সময়। আমাদের সাথে ভালোই আড্ডা জমাতো। সেখানে আমাদের আরেকজন গুরুস্থানীয ছিলেন। বর্তমানে কাবুল প্রবাসী। তিনি আশরাফুল আলম ভাই। আমার জীবনের অন্যতম পরামর্শক। এখনো আছেন। বহু দিন আমরা একসাথে আলাপে মগ্ন হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ থেকে পড়ে তিনি এখন বিশ্ব্যাংকের হয়ে কাবুলে কাজ করছেন। তার সাথে আমার আরো কিছু বিষয় আছে। সেটা লেখালেখি কেন্দ্রিক। সেটা নিয়ে পরের কিস্তি।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৮


কিস্তি-৬ ::চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই!

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি- আঁখ, মুড়ির আয়োজন। ব্যাপার খানা বোঝার চেষ্টার আগে খাওয়া শুরু করলাম। আমরা চারজন এক রুমে থাকছি। একে হোস্টেলের নীচতলার আমাদের তাকার রুমটা বড়ই। সেখানে তরিকের বাড়ি থেকে এ সব খাবার এসেছে। কৃষক পরিবারের ছেলে তরিকদের জমিতেই এ সব চাষবাস হয়। সেখান থেকে ঢাকা প্রবাসী ছেলের জন্য মা পরম যত্নে গুছিয়ে পিতার হাতে তুলে দেন। তিনি ঢাকায় ছেলেকে দেখতে আসার পথেই এ নিয়ে আসেন। যেহেতু আমরা সংখ্যায় চার। তাই এখানে সবার জন্যই আনা হয়। খাওয়া শেষে তরিকের আব্বার সাথে দেখা। বললেন, বাবা কেমন আছেন? কুশল বিনিময় হলো, গ্রামের সহজ সরল মানুষের মুখ। 

ফরিদপুরে পদ্মার পাড়ে ওদের বাড়ি। তরিকের বিয়ের সময় সেখানে যাওয়া হয়েছিল বছয় দুয়েক আগে। তার আগে যাওয়া হয়নি। তরিকের পর ওর পরিবারের অন্যরাও ঢাকায় প্রায় আসত। ওর বড় ভাই যাকে ওরা মিয়া ভাই বলে, ছোট ভাই আসতো। এ রকম সবার। কেবল আমার কেউ আসে না। বাবা ছাড়া। পরিবারের যেহেতু আমিই বড়, তাই এখানে কারো আসার সুযোগও নেই। আমাদের বকশিবাজারের জীবনে তরিককে খুবই মনে রাখতে হবে, কারণ ও খায় প্রচুর, পড়ে প্রচুর এবং ওর লম্বা দাড়ি। ওকে যে কেউ দেখেই মনে করবে বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। 
ওর একটা মজার ঘটনা বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টেকার পর লাফিয়ে উঠলো আনন্দে। পাশ থেকে একজন বললো, চাচা আপনার কে টিকেছে? ও হেসে বলল, ভাস্তে আমি নিজেই! প্রশ্ন কর্তার চক্ষু তো ছানাবড়া! বলে কি? 

তরিক ছাড়াও আমার রুমের বাসিন্দা ছিল জুয়েল। ইসলামী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা এখন। পড়তো জার্নালিজমে। ফরিদ এখন সম্ভবত প্রবাসী। এখানে থাকার সুবাধে অনেকের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এর মধ্যে জগা বাবুতে পড়তো বরিশালের জলিল। যাকে আমি জইল্যা বলেই ডাকতাম। ও বিষয়টা দারুণ এনজয় করতো। আর মাসুম। গোপালগঞ্জের পোলা। এখন সরকারি কোনো একটা ব্যাংকে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তর জন্য ওপর পড়া আমার এখনো চোখে ভাসে। কী যে পড়তো, সারা দিন, সবই মুখস্থ, তবুও ওর হলোনা। আমাদের খুবই মন খারাপ হতো। কিন্তু বাস্তবতা না মেনে তো উপায় নেই। 

এরপর উঠলাম ঢাবি হলে... তা নিয়ে পরের কিস্তি। 

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৪

কিস্তি-৫ ::স্যার বহিষ্কার করে দিন না!!

ঢাকায় ডি এ ছাত্রবাস নামের মেসে আমরা যারা জড়ো হয়েছি, তাদের প্রায় সবারই উদ্দেশ্য এক- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। সবার নিশ্চয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হবে না, হয়ও নি। তাই এবার আমাদের বিচ্ছিন্ন হবার পালা। ১৯৯৯ সালে অনার্স ভর্তির জন্য আমার প্রথম পরীক্ষা দিলাম জগা বাবুর পাঠশালায় (সে সময়কার জগন্নাথ কলেজ)। 

পরীক্ষাটা আমার কাছে একটা খেলা। বরাবরই আমি তা মনে করি। এ খেলায় ভালো করার সুযোগও আছে, আবার খারাপ। 

জগা বাবুর পাঠশালার ভর্তি পরীক্ষা সেবারই এমসিকিউ পদ্ধতির হয়েছে বলে আমার ধারণা প্রশ্ন এত সোজা যে আধ ঘণ্টায় আমার পরীক্ষা শেষ। নিজেকে যথেষ্ট মেধাবী প্রমান করার জন্য বলছিনা, সত্যই তাই। আমার পরীক্ষা শেষে আশ পাশের বন্ধুদের হেল্প করতে শুরু কলাম। আমি যেহেতু জগা বাবুর পাঠশালায় ভর্তি হবো না, তাই আমার ডর নেই। পরীক্ষক দুবার সতর্ক করে গেলেন। তৃতীয়বার আসলে বলি স্যার বহিষ্কার করে দিন না, শিক্ষক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এখানে ভর্তি হবানা, আমি, সোজা বললাম না। কারণ আমার বাবা বাড়ি থেকে ঢাকা আসার সময় বলেই দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হতে না পারলে আমাকে নোয়াখালী কলেজে পড়তে হবে। এর বাইরে আর কোথাও তার পড়ানোর ইচ্ছে নেই, সেটা রাকঢাক না করেই বলে দিয়েছেন।
জগন্নাথে পরীক্ষা দেয়ার একটাই কারণ আমার অপেক্ষাকৃত দূর্বল বন্ধুদের হেল্প করা।

আমার সহযোগিতা পেয়ে আমাদের আমিন দোস্ত ইকনমিক্সে চান্স পেলো্। খাদিজা ইংরেজিতে। আরো অনেকে পছন্দের সা্বজেক্ট পেলো।আমি চাইলে যে কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারি। কিন্তু হবো কিনা বুছঝতে পারলাম না। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আমার বাবার কাছে ওঠানোর সুযোগই পেলাম না। 

জগন্নাথের পর আমার বন্ধুরা সবাই ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের পরীক্ষা দিলাম। টিকলাম আমরা তিন জন-আলি আজম, কুদ্দুস আর আমি। মেসের বাইরের বন্ধুদের মধ্যে মুস্তাফিজ মামুন এবং আবদুল্লাহ আল ফারুক। 

আমার ঘনিষ্ঠতম বলে যাকে আপনাদের বলেছি সেই সামাদ টিকলো শাবিপ্রবিতে। হাবিব জগন্নাথে। আলিমুল হক পাড়ি জমালো মিশরে। আল আজহারে পড়ে এখন দেশে। এভাবেই আমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। এবার নতুন জায়গা। মেস চেঞ্জ করে আমরা বকশি বাজারে এসে উঠলাম। সেখানে আবার নতুন বন্ধু-পরিসর। 

তা নিয়ে পরের কিস্তি। 

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০


কিস্তি-৪ ::নায়িকা ঋতুপর্ণার বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে তার স্পর্শ। সেই রকম।

রিয়াল... রিয়াল... ডিসি...ডিসি.. টানা আওয়াজটা কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে। আমি আর বন্ধু বেলাল (বর্তমানে অস্ট্রিয়া প্রবাসী) দুজন এগিয়ে গেলাম। সিনেমা হল সম্পর্কে বেলালের অভিজ্ঞতা ভালো। ছোটকাল থেকে সিনেমা দেখে। নোয়াখালি জেলার সোনাইমুড়ি বাজারে ওদের ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি ও ভাড়ার দোকান ছিল। অনি ভিডিও নামে। সেখানে রাত করে ভিসিডিতে সিনেমা দেখা হতো। 
১৯৯৯ সালের শুরু দিকের কথা , বেলাল ঢাকা এসে পরের দিন আমার মেসে উঠলো। শুক্রবার দিন বললো চল সিনেমা দেখবো। রাঙা বউ। মোহাম্মদ হোসেনর সিনেমা। বাংলা সিনেমায় অশ্লীলতার সূচনা করা এ সিনেমার গল্পটা দারুন। হিন্দি কোনো একটা সিনেমা থেকে নকল করা। 
আমরা ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে, দুটো ডিসি ক্লাশের টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। 

হুমায়ূন ফরিদী কামকলাকে(!) একটা শিল্পে রূপ দিয়েছেন এই সিনেমায়। অনেক সাহসী ভূীমকা তার। নায়িকা ঋতুপর্ণার বাঁকানো শরীরের পরতে পরতে তার স্পর্শ। সেই রকম। দারুণ উপভোগ্য এক সন্ধ্যায় সিনেমাটি দেখা হয়ে গেলো। এটাই আমার দেখা প্রথম খোলামেলা সিনেমা। অনেক দিন মনে রাখার মত গল্প । সেখান থেকে ঢাকার সিনেমা হলে আমার সিনেমা দেখার শুরু। বেলাল ঢাকায় আসলেই আমরা সিনেমা দেখতে যেতাম ফার্মগেটে। আনন্দ অথবা ছন্দ হলে সিনেমা দেখা হতো। মাঝে মধ্যে পূর্ণিমাতে। তবে বেলালেল ফেভারেট ছিল আনন্দ সিনেমা। 
দ্বিতীয়বার ওর সাথে আমার দেখা সিনেমা 'কী'। ইংরেজি সিনেমা এটি। এডাল্ট রেটিংয়ের এ সিনেমার গল্পটাও ভালো ছিল। সিনেমাটিতে যত রকমের অবৈধ সম্পর্কই থাক না কেন, মানুষ যে একদিন মরে যাবে এবং তার সব কর্ম পেছনে রেখে তাকে পাড়ি দিতে হবে অন্য জগতে, সেটি তুলে ধরা হয়েছে। নায়কের শব যাত্রার দৃশ্যটা দেখে কিছুক্ষন আগে দেখা উত্তেজক দৃশ্যগুলো আমার চোখের সামনে থেকে সরে যেতে থাকে। বোধ করি অন্যদেরও। কোনো এডাল্ট সিনেমা দেখার পর এটা আমার প্রথম অনুভূতি। মনে হতে থাকে দুনিয়াটা মিথ্যে। এত মউজ মাস্তি ! তার পর সব শেষ। সব কিছু থেকে আমদের দূরে সরে যেতে হবে। দূরে সরে যাচ্ছি আমি ও আমরা। 

দূরে সরে যাওয়া নিয়ে পরের কিস্তি

২১ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮



কিস্তি-৩ ::১ টাকা খরচা করে রওয়ানা করলাম সায়েদাবাদ থেকে টিএসসির উদ্দেশে

১ টাকা খরচা করে রওয়ানা করলাম সায়েদাবাদ থেকে টিএসসির উদ্দেশে। বাসঅলা আমাকে নামিয়ে দিলো কদমফোয়ারার সামনে। প্রেসক্লাবের পাশে এই কদম ফোয়ারা। সেখানে নেমে টিএসসি পেলাম না। হাঁটা শুরু করলাম। কিছু দূর গিয়ে এক পুলিশের সহায়তায় চিনলাম টিএসসি। দেখি জটলা করে আড্ডা চলছে্ । এমন আড্ডা মাঠে ঘাটে আমরা দিতাম। এখানে একটু ভিন্নতা। 

অনেক দিনের শখ ছিল আবৃত্তি শিখবো। তাই একটা ফরম কিনে নিলাম পরের কোনো একদিন। স্বরশীলনে ভর্তি হলাম। তিন মাসের কোর্স। আমার করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং, সেটা বাদ দিয়ে আমি করছি আবৃত্তির কোর্স। আমার বন্ধুরা বললো, শালা গেছে। 

আমি দেখলাম যা পড়ায় কোচিংয়ে, তার বেশির ভাগই আমার পড়া আছে। তাই এটা নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে খুঁজে পেলাম না। তবে মাঝে মধ্যে কোচিংয়ে যেতাম। সেখানে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, মুহিত চাকমা।রাঙ্গামাটির ছেলে। নেশা টেশা করে। বাড়ি থেকেই আসে দোচুয়ানি। ভালোই তো। আমি অবশ্য তখনো সেটা চেখে দেখিনি। তবে ওর আমার আমার সাথে একটা অদ্ভূত মিল- দুজনেই কোক পছন্দ করি।গরম কাল ছিল খালি সারাদিন ঠাণ্ডা কোকে গলা ভেজানো। 

এভাবেই তো ভালোই চলছে। এর মধ্যে সিনেমা দেখা শুরু করলাম। গ্রামে অনেক কঠোর শাসনে ছিলাম। এলাকার লোক সিনেমা হলে যাই শুনলে আহত হতো। আমি তাই কাউকে আহত করতে চাইনি। সিনেমা নিয়ে পরের কিস্তি 


২০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩

কিস্তি -২ :জানলাম নোয়াখাইল্যা আর বরিশাইল্যারা চরম খারাপ

উচ্চ মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষায় মেধা তালিকায় আমার নাম ছিল, তাই 
মেসজুড়ে সবাই একটু ভিন্ন চোখে দেখতো।সদ্য মফস্বল থেকে আসা একটা ছেলে আমি, সেখানেও মানুষের খাতির পেয়ে বেড়ে উঠেছি। তাই এটা আমার কাছে বাড়তি আকর্ষন ছিল না। 
যেটা আমাকে আকর্ষন করেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেরা এখানে আছে। আমি নোয়াখালী থেকে। কেউ বরিশাল। কেউ চট্টগ্রাম। কারো বাড়ি টাঙ্গাইল।এখানে এসে জানলাম নোয়াখাইল্যা আর বরিশাইল্যারা চরম খারাপ। আমার বন্ধুর তালিকায় দু এলাকার লোকই ছিল। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আমার ঢাকায় আসা।ভর্থি হলাম একটা কোচিংয়ে। বন্ধুরা সবাই মিলে পড়াশোনা চলছে। তবে আমার পড়ার চেয়ে ঢাকা দেখাতে মন বেশি।

মাদারীপুরের বন্ধু আলী আজম, টাঙ্গাইলের হাবিব, চট্টগ্রামের পোয়া আলিমুল হক আর আমার ঘনিষ্ঠতম সামাদ। যাকে সবাই শহিদ নামে চিনে।আমরা সবাই এক সাথে আড্ডা দিতাম। মেসের ছাদে আড্ডা জমত। সে আড্ডায় অনেকে হাজির হতেন, যারা বয়সে ছোট বা বড়। 
এভাবেই শুরু। তবে আমি মেসের বাইরে বেশি সময় থাকতাম। বেশির ভাগ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। এটা নিয়ে পরের কিস্তি 


১৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩

কিস্তি-১ : ১৯৯৮ সালের এক বিকালে ঢাকায়

১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে এক বিকাল। ফকিরাপুল এসে বাস থেকে নামলাম। রিকশা চড়ে সোজা চলে গেলাম হোটেল ইসলামে। আপাতত এক রাত এখানে কাটানোর চিন্তা। সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধু সামাদকে ফোন ধিলাম। টিএন্ডটি ফোনে। ও বললো, চলে আয় আমার মেসে। পরে ও এসে নিয়ে গেল। যাত্রাবাড়ির শহীদ ফারুক রোড়ের উল্টো দিকের একটা নয়া বাড়িতে আমার থাকার ব্যবস্থা হলো। মেসের খাবার আর বন্ধুর সাথে ১৫ দিন থাকার পর নিজের সিট হলো। পুরো বাড়িই মেস। মালিক খুব মজা পান। আমরা মেসে খুব আড্ডা দিতাম। অনেক বন্ধু হয়ে গেলো। তাদের নিয়ে পরের কিস্তি।




১৯ মার্চ ২০১৩ 

রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য


বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মৎস্য বর্জ্য। সাহসী বিনিয়োগ, দক্ষ জনবল আর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নিশ্চিত করা গেলে বছরে আয় হতে পারে ৮ হাজার কোটি টাকা।

মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারে নতুন সুযোগ বের করার জন্য বাংলাদেশ  চিংড়ি ও মৎস্য  ফাউন্ডেশন (বিএসএফএফ) প্রশিক্ষক তৈরির কাজ শুরু করেছে। জাকিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় এতে সহায়তা করছে।

বিশ্বে সবচে সফলভাবে মৎস্য বর্জ্য ব্যবহারকরা দেশ  আইসল্যান্ড ।   দেশটি ২০০৪ সালে মৎস্য বর্জ্য নিয়ে কাজ শুরু করে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রডাক্টেও  এনেছে বৈচিত্র ।

মূল ইংরেজি খবরটি পড়তে ক্লিক করুণ---http://www.theindependentbd.com/post/43927

আইসল্যান্ড ফিস লিভার থেকে ওষুধ গ্রেড, ফুড গ্রেড এবং কসমেটিকস গ্রেডের  কাঁচামাল তৈরি করছে। মাছের চামড়া দিয়ে তারা বেল্ট, মানি ব্যাগের মত সৌখিন  পণ্যও তৈরি করছে। আফ্রিকায় মাছের মাথা রপ্তানি করছে। যেটি আফ্রিকা অঞ্চলের স্থানীয় সুপের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে আমরা এখনই তা করতে পারবো না। তাই আমাদের  নজর দিতে হবে শুরুর দিকে। যেখানে ফিশ মিল বা মাছের খাবার তৈরি দিয়েই শুরু করতে পারি।

তবে বাংলাদেশ আপাতত বাই প্রডাক্ট হিসাবে ফিস মিল তৈরি করতে চায়। পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে এটি করতে পারলে দেশটি লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিএসএফএফ'র চেয়ারম্যান  সৈয়দ মাহমুদুল হক।

 তার মতে, বাংলাদেশ এখন যে পরিমাণ মৎস্য বর্জ্য তৈরি হচ্ছে , তার এক তৃতীয়াংশও যদি সঠিক ভাবে  সংরক্ষণ করে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাহলেও কমপক্ষে ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আয় সম্ভব। বিদেশে একটন  মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি হচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার ডলারে। সে হিসাবে  এক মিলিয়ন বা দশলক্ষ মেট্রিক মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করা গেলে  ৮ হাজার  কোটি টাকা আয় সম্ভব। (১ ডলার সমান ৮০ টাকা হিসাবে)।  এ জন্য পরিকল্পনাটাই জরুরী।

সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে  বলছেন, আমরা নতুন সুযোগের তৈরি করতে চাই।   উদ্যোক্তা, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সাথে বৈশ্বিক  সংযোগ তৈরি  করতে চাই।

সরকারের মৎস্য অধিপ্তরের হিসাবে বর্তমানে দেশে ৩ দশমিক ৭  মিলিয়ন  মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। বিএসএফএফ এর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে  উৎপাদিত মাছের ৭১ শতাংশ দেশে ও দেশের বাইরে মানুষের খাবারে ব্যবহৃত হয়ে । ২৯ শতাংশ মৎস্য বর্জ্য হয়ে । যেটাকে বাই প্রডাক্ট হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে একবারই মৎস্য বর্জ্য রপ্তানি করেছে। সেটি ২০১৪ সালে। এর মূল্যমান ছিল মাত্র ৬৬ হাজার ইউরো। এ খাতকে ব্যাপক সম্ভাবনায় খাত হিসাবে উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মৎস বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর প্রিন্সিপাল  ইনভিস্টিগেটর   সৈয়দ ইশতিয়াক  দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, মাছের চামড়া, মাথা মাথার ফ্রেম, কাঁটা, লিভার, আঁশ প্রভৃতি বাই প্রডাক্ট করা সম্ভব।

তার মতে, বাংলাদেশে এখনো এ জন্য  কোনো  প্রসেসিং  সুবিধা, প্রযুক্তি নেই, যার মাধ্যমে ফিশ বল, ফিশ কাটলেট মত পণ্য তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া  মাছের খাদ্য, মাছের তেল, পশু খাদ্য  তৈরি প্রযুক্তিও এখন পর্যন্ত আমরা এডপ্ট করতে পারিনি।
   
জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মৎস্য প্রশিক্ষণ  কর্মসূচীর গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে  দেশে  বর্তমানে ৭৮ টি  মৎস প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট  পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪১ টি প্লান্ট রয়েছে খুলনায়। ৩২ টি চট্টগ্রাম অঞ্চলে। খুলনার  ফ্যাক্টরিতে  দৈনিক গড়ে দুই হাজার কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে।  এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই  মাছের টুকরো, ব্লক বা স্টিক। ২৫ শতাংশ ফ্রোজেন।    
চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানায়  দৈনিক ৩৫৬৬ কেজি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যার ৩০ শতাংশ  মাছের টুকরো, বা স্ট্রিক। ৭০ শতাংশ  আস্ত মাছ। এর মধ্যে থেকে খুলনায় ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ  এবং চট্টগ্রামে ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ  বাই প্রডাক্ট বা ব্যবহারযোগ্য মৎস্য বর্জ্য তৈরি হয়।  সে হিসাবে খুণলায় দিনে ৪১ মেট্রিক টন এবং চট্টগ্রামে ৩২ মেট্রিক টন মৎস্য বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

 সৈয়দ মাহমুদুল হক দি ইনডিপেনডেন্টকে বলছেন, তারা ক্ষেত্রটি উন্মোচন করতে চাইছেন। সে জন্য তারা চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে  একটা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীও শূরু করেছেন। যেখানে ২৪ জন অংশ নিচ্ছেন। যারা পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখাতের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলবেন।

 বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতটির জন্য নতুন করে  মানব সম্পদ তৈরি জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের কারিকুলামেও ফিস ওয়াস্টের বিষয়টি অন্তভূক্ত করার জন্য চেষ্টা করবেন।

 ২৪ জন প্রশিক্ষক তৈরির জন্য যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন  তএদর মধ্যে চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন।  এ সব প্রশিক্ষকের মাধ্যমে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরো দুটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। সে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।

বড় চ্যালেঞ্জ দক্ষ মানবসম্পদ, টেকনলজি এবং ইনভেস্টমেন্ট। তবে প্রশিক্ষতি মানব সম্পদ গড়ে তোলার পাশা্পাশি টেকনলজি করা গেলে খাতটি দাঁড়াবে বলেই মনে করেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিককৈর্মকর্তা নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস  দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ইনডিয়া এ খাতে ভালো ব্যবসা করছে। আমাদের সম্ভাবনা আছে। এটাকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ শুরু করেছি।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলছেন, আমাদের এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ফিস মার্কেটের একটা স্ট্রাকটচার করতে হবে। যাতে করে সেখানে  মৎস্য বর্জ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

তার মতে, নগরায়নের কারণে এখন কেউ আর মাছ কাটাকাটির ঝামেলায় যেতে চান না। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তারি ক্ষেত্রেও আমরা পুরো মাছ রপ্তানি করছি। এতে করে  আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না। আমরা যদি এটাকে ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত  করে রপ্তানি বা সেল করতে পারি  তাহলে এখাতে বেশ ভালো আয় করা সম্ভব।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি মাছ  যদি কেউ বিক্রি করেন ১০০ টাকা। তার যদি মাছটি কেটে দেয়ার জন্য ১০ টাকা নেন। আর মাছ থেকে পাওয়া মৎস্য বর্জ্য বিক্রি করতে পারেন ২০ টাকা। তাহলে  বিক্রেতার ৩০ শতাংশ লাভ বেশি হচ্ছে। তাকে সেটি বোঝাতে হবে।  একই সাথে কিচেন মার্কেট, ফিস প্রসেসিং জোন এবং ফিশারিঘাটগুলোতে স্টোরেজ সিস্টেম ডেভেলপ করলে কাঁচামাল সঙ্কট হবে না।

তবে এখানে শিল্প গড়তে হলে মেটেরিয়ালের কন্টিনজেন্সি রাখতে হবে।  এতে এ খাতে সঙ্কট হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন  ইশতিয়াক। তার গবেষণার ফলাফল অনুসারে বাংলাদেশে মৎস্য বর্জ্য কাঁচামালের মধ্যে  মাছেল চামড়া, আঁশ, লিভার, হাড় বা কাঁটা  রয়েছে ৫৭ শতাংশ। মাথা ২৮ শতাংশ এবং অন্য উপাদান ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে চিংড়িতে মাথার অংশ ৯০ শতাংশ এবং খোলস ও পা ১০ শতাংশ। এ সব থেকে বাই প্রডাক্ট  তৈরির অন্যতম উপাদান।

তবে এর বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সঠিক টেকনলজি ইউজ করা সম্ভব হলে  ফিশ মিলের খরচও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সৈয়দ মাহমুদুল হক।

অবৈধ ভিওআইপি মামলার আসামী এখন বাংলালিংকের সিইও!


টিআইবি'র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'এরিক অস যদি অবৈধ ভিওআইপির মত একটা মামলায় অভিযুক্ত হন এবং জরিমানা দিয়ে তার কর্মস্থল তাকে মুক্ত করে থাকে, তার মানে অপরাধ প্রমাণিত, সে ক্ষেত্রে সেই একই সেক্টরে (টেলিকম) তার মত একজন মানুষের নিয়োগ নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। একটা রেসপন্সিবল কর্পোরেট হাউসের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
তিনি বলেন, বিজনেস মানে শুধু প্রফিট মেকিং নয়, এখানে এথিকসেরও বিষয় আছে। আমি মনে করি এ নিয়োগ অনৈতিক। '



অবৈধ ভিওআইপি'র অভিযোগে দুইবার জরিমানা দিয়ে মুক্তি পাওয়া  নরওয়েজিয়ান নাগরিক এরিক অস এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবইলফোন অপারেটর বাংলালিংকের সিইও।

২০০৭ এবং ২০০৮ সালে দুই দফা অবৈধ ভিওআইপি'র অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এরিকের সে সময়কার কর্মস্থল গ্রামীণফোন জরিমান গুনে তাদের দায়মুক্তি নিশ্চিত করে।

২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারী এরিকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলা এখন চলছে না? এর কারণ ব্যাখ্যা করে মামলার বাদী জিয়ান শাহ কবির  বলেন, এডমেনেস্ট্রেটিভ ফাইন দিয়ে অপারেটর দায়মুক্তি পেয়েছে। তাই মামলা চলছে না।

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রামীণফোনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসাবে নিয়োগ পেয়ে বাংলাদেশে আসার পর এরিকের হাতেই বদলে যেতে থাকে অপারেটরটি। তার হাতেই অপারেটরটি দেশীয় লোগো বদলে টেলিনরের লোগো লাগানো হয়।  গত বছরের ১ ডিসেম্বর  এরিক বাংলালিংকের সিইও হিসাবে যোগ দেন।

বাংলালিংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশন্সের  প্রধান আসিফ আহমেদ দি ইনডিপেনডেন্টকে  বলেন, 'ভিওআইপি ২০০৬-০৭ সালে একটি ইন্ড্রাস্ট্রি ইসু ছিল।  এটা কোনো ব্যঅক্তি ভিত্তিক ইসু নয়। বাংলালিংক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না, যার সাথে অন্য অপারেটরও জড়িত।'

তবে বাংলাদেশের কোনো অপারেটরের সিইও হিসাবে থাকতে তার আইনি কোনো বাধা নেই বলে  জনিয়েছেন,  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব আলম। তার মতে,  নৈতিকতা যদি বলেন, সেটি যার চর্চা করার কথা তিনি ভালো বলতে পারবেন। তবে আইনে এতে কোনো বাধা নেই।

টিআইবি'র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ইফতেখারুজ্জামান ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, এরিক অস যদি অবৈধ ভিওআইপির মত একটা মামলায় অভিযুক্ত হন এবং জরিমানা দিয়ে তার কর্মস্থল তাকে মুক্ত করে থাকে, তার মানে অপরাধ প্রমাণিত, সে ক্ষেত্রে সেই একই সেক্টরে (টেলিকম) তার মত একজন মানুষের নিয়োগ নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। একটা রেসপন্সিবল কর্পোরেট হাউসের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।

তিনি বলেন, বিজনেস মানে শুধু প্রফিট মেকিং নয়, এখানে এথিকসেরও বিষয় আছে। আমি মনে করি এ নিয়োগ অনৈতিক। '

২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়  বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি বিরোধি অভিযোন শুরু করলে গ্রামীণফোন দুইবার, বাংলালিংক, একটেল ও সিটিসেল একবার করে  সরকারকে প্রশাসনিক জরিমানা দিয়ে অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিটিআরসির সে সময়কার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরুল আলম কললিস্ট পরীক্ষার উদ্যোগ নেন ২০০৭-০৮ সালে। সে সময় বিটিআরসি মোবাইলফোন অপারেটরদের অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।

২০০৭ সালের শেষ দিকে অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রামীণফোনকে প্রথম দফায় ১৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর ২০০৮ সালের শুরুর দিকে গ্রামীণফোনে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রপাতি উদ্ধারের পর  আবার ২৫০ কোটি টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি।

বিটিআরসির তত্কালীন চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম সে সময়  জানিয়েছিলেন, ‘ভিওআইপির  অবৈধ ব্যবসায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার দলের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা রয়েছে। এটা আমাদের অনুসন্ধানে বের হয়েছে।’

সে সময় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রামীণফোনও স্বীকার করে, তৃতীয়পক্ষকে অবৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল তারা। এজন্য জরিমানার ২৫০ কোটি টাকা দিতেও সম্মত  প্রতিষ্ঠানটি।

সে সময়কার গুলশান থানার  সাব ইন্সপেক্টর  মানজুর আলী খা্ন জানিযেছেন অবৈধ ভিওআইপর অভিযোগে দায়ের করা মামলার নম্বর ৪৬। এটি দায়ের করা হয় ১৬ জানুয়ারী।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সংস্থার একটি দল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় দেখা যায়, চারটি 'ই ওয়ান' সংযোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস টেল এর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। অভিযানকারী দলটি গ্রামীণফোনের কল রেকর্ড ও ই মেইল 'অনুসন্ধান' করেন। এরপর ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা আট দিন গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালায় দলটি।

অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ কার্যক্রমে গ্রামীণফোনের বৈদেশিক সহযোগী হিসেবে মালয়েশিয়ার ডিজি টেলিকমের সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ মিলেছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্রামীণফোনের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক নরওয়ের প্রতিষ্ঠান 'টেলিনর' বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় উৎসাহ দিয়েছে বলে অনুমেয়। গ্রামীণফোনের 'মেইল সার্ভার' এ সন্দেহভাজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেইল খতিয়ে দেখে কল টার্মিনেশনে সংস্থার সম্পৃক্ততাসহ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিজস্ব সংশ্লিষ্টতারও আলামত পাওয়া গেছে।

গ্রামীণফোনের ৬২ ভাগ শেয়ারের মালিক টেলিনর মালয়েশিয়াভিত্তিক ডিজি টেলিকমেরও অংশীদার। অভিযানের সময় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে বিটিআরসি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণফোনের হেড অফ রেভিনিউ অ্যাসুরেন্স এসপেন উইগ ০১৭১৩১৩০৪০০ নম্বরের কল রেকর্ড র‌্যাব সদস্যদের কাছে না দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দেন। পরে জানা যায় অ্যাকসেস টেল এর কল টার্মিনেশনের কাজে নম্বরটি ব্যবহৃত হতো।

মামলায় গ্রামীণফোন ছাড়াও এর সাবেক প্রধান নির্বাহী এরিক অস ও ওলা রি, সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর থর রান্ডহগ, সাবেক চিফ টেকনিক্যাল অফিসার যোগেশ সঞ্জিব মালিক, সাবেক সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর মেহবুব চৌধুরী, রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর খালিদ হাসান, চিফ টেকনিক্যাল অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর কাফিল এইচ এস মুঈদ, চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. আরিফ আল ইসলাম ও হেড অফ রেভিনিউ অ্যাসুরেন্স এসপেন উইগ ওয়ারেনডরফকে আসামি করা হয়েছিল।

অভিযুক্ত  কে কোথায়? 

অভিযুক্তদের মধ্যে এরিক অসকে চাকুরী দিয়ে দেশে এনেছে ভিম্পেলকম।   বাকিদের গ্রামীণফোন থেকে সরিয়ে টেলিনরে নেওয়া হয় এবং তাদের পদোন্নতি  দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত সাবেক সিইও  Ola Ree বর্তমানে Head of Group Supply Chain Sustainability, Telenor. জুন ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সালে নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে গ্রামীনফোনের এমডি ছিলেন। Yogesh Malik  এখন  VimpelCom এর  Chief Technology Officer এবং  Group Executive Board ও Group Management Board এর সদস্য।

Espen Wiig Warendorph এখন  BellTel  এর Advisor (Commercial) । গ্রামীণফোনে Technical Controller হিসাবে যোগ দেন ২০০৪ সালের এপ্রিল মানে। মাত্র এক বছরের মধ্যে ২০০৫ সালের মে মাসে তাতে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় Head of Revenue Assurance & Fraud Management.

Kafil HS Muyeed বর্তমানে Managing Director, Cel Telecom Limited, গ্রামীণফোন থাকান অবস্থায় মামলার অভিযুক্ত হলে তাকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরিয়ে দেয়া হয়। ওই বছরের এপ্রিল মাসে  তাকে Consultant,Telenor হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
Md. Arif Al Islam বর্তমানে  সামিট কমিউনিকেশন্সর  সিইও এভং ভ্যবসায়িক অংশীদার।  Mehboob Chowdhury সিটিসেলের সিইও হিসাবে বাংলাদেশেই কর্মরত রয়েছেন।