কি বলেন মিয়া ভাইয়েরা!


ছোট বেলা থেকেই আমার অগ্নি ভীতি। ঢাক্কায় আওনের পর চিকিৎসা করন লাগছে। এখন কিছুটা ভালো। আজ সক্কাল বেলা- স্ত্রী জানাইলো কাওরান বাজারে আগুন লাগছে। বুক ধক কইরা উঠছে; জিগাইলাম কই। জানাইলো- এনটিভি-আরটিভি বিল্ডিং।
এ ভবনটা ঢাকার খোলামেলা মেলা ভবনগুলোর মইধ্যে একটা; বাইরে থেইকা তাই মনে লয়। মজবুত বিল্ডিংও বটে। কিন্তু এইখানে আগুল লাগে ক্যান; বুঝতাছি না। ফখর মইন সরকারের সময় একবার আগুন লেগেছিল; প্রাণহানিও ঘটেছে।
আজ (31 October 2014) আবারও! ঘটনাটা কেমুন ঘোলাটে।
সরকারের মালিকানার এ ভবনটার দিকে সবার নজর; 'শাহবাগে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি'- বাক্য দিয়ে 'স্পিসলেস হেড লাইন' করা ফত্রিকা আমার দেশের অফিস এখানে; কাগজের অপচয় থেকে সরকার তাদের মুক্তি দেয়ার পর যেইডা এখন কেবল ডিজিটাল ভার্সনে প্রকাশ পায়!
এর বাইরে বিম্পি নেতা ফালু'র টিভি নিউজ ও বিনোদন কারখানা এনটিভি এখানে; তেনার সুলভে বিক্রি করা আরটিভি অফিসও।
একটা জুতসই তদন্ত কমিটি কইরা ঘটনা খোলাসা করন দরকার; কি বলেন মিয়া ভাইয়েরা! নইলে শর্ট সার্কিট; জ্বলন্ত সিগ্রেটের লেঞ্জা থেকে আগুনের তত্ত্ব সন্দেহ তৈরি কইরাই যাইবো!

সে আসেনি; সে আসবে না!



যাকে বলেছিলাম; 
তুমি এলে আমি একটা বিকাল কাটিয়ে দেবো তিন্দুর জলে
যাকে বলেছিলাম 
তুমি এলে গাঁয়ের ধান ক্ষেতের ঘোলা জলের ওপর জোছনা দেখে কাটিয়ে দেবো একটা রাত
যাকে বলেছিলাম 
কাদামাখামখির বৃষ্টি মুখর সকালে আমরা দুজন ভিজবো; একান্তে

টিনের চালের ওপর গাছের পাতা পড়ার শব্দও কখনো হবে না
হওয়ার কথাও নয়; এমন রাত্তির আমরা পার করবো নীলাচলের চূড়ায়; টিনের ঘরে

হিম বাতাস বয়ে যাওয়া বিকাল;
সন্ধ্যাটা ঘনিয়ে আসলে শেয়াল এসে বাঙলোর দরজায় কড়া নাড়বে
শ্রীমঙ্গলে এমন গহীন শীতল -মুখর রাত কাটাবো আমরা

সে আসেনি; সে আসবে না। আমি ছিলাম; আছি- একা নিরালায়। 

এমনই অস্থির সময়; সেখানে এমন আনন্দ সময় আসতে পারে না। 

তবুও অপেক্ষা! অপেক্ষা! অপেক্ষা!! 

যাও বাবা মোডি কাকুর দেশে যাও

ইনডিয়ায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় হইছে। পুলাপাইন খালি এহানে ওহানে ঘোরে। ওইখানে গেলে কী অয়। বঙ্গ দেশের সবাইরে তারা তালিম দিতাছে। এডমিন; আর্মি; সীমান্তরক্ষী; রাজনীতিক- সবখানে। 

উঠতি তরুণদের তালিম দেওনেরও সুব্যবস্থা আছে। মোডি কাকুর লগে যোগাযোগ করো। ফিরা আইসা কইবা- শান্তি নিকেতনের মত শান্তি কোথাও নাইরে পাগল। তয় মুম্বাইতে শাইনিং লাইফ। পুনের জীবনটাই অইন্য রকম- বঙ্গ দেশ একটা গার্বেজ। 


তুমরা অফ যাও; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার চান্স নেওনের দরকার নাই একবার পইরা আসো ইনডিয়া থেকে। সাথে পাইবা চেতনা সার্টিফিকেট। দুনিয়া ফকফকা। তোমাগো লাইগা স্পেশাল কোটার ব্যবস্থা অইবো। ভাইবোনা- আম্লীগ যদি ক্ষমতা চাইরাও দেয় তোমগো অসুবিধা অইবো না। 

বরং বাড়তি সুবিধা পাইবা। জমাত-জাতীয় পার্টি আইলে পুরাই শীলা কী জওয়ানি! 


যাও বাবা মোডি কাকুর দেশে যাও। এই দেশে তুমার জন্য একবারের বেশি চান্স নাই। সেইখানে আছে। কিঞ্চিত বৃত্তি দিবানে ।

দেহনা বিনাশুল্কে এখন ভারতীয় মাল যাইতাছে বঙ্গদেশের বুড়িয়ে যাওয়া নদীতে। তুমরা পইড়া আইলে কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তারা যাই চাইবে তাই আরেকটু সহজ কইরা দেওন যাইবো। যারা চিল্লাইবো তাগোর জন্য বরাদ্দ শীতলক্ষ্যার জল। যদি তদ্দিন তা ব থাকে! 

গুডলাক ;বেস্ট অব লাক বঙ্গ তরুণরা।

পিয়াসের জন্য ড. ইউনূসের শোক এবং একটি ভুল তথ্য ভিত্তিক সমালোচনা!

বাধ্য না হলে মানুষকে আমি খারাপ বলিনা; কারণ আমি নিজেও যে যথেষ্ট ভালো মানুষ-সেটি প্রমাণ করার চেষ্টা করিনি। কিন্তু কিছু মানুষ আমার কাছে খুব নমস্য।
যাদের শ্রদ্ধা করি; দুঃখ পাই যখন তারা কেবলই নিজেদের 'জাতে' তোলার জন্য খ্যাতিমান ব্যাক্তিদের সমালোচনা করেন এবং কদর্যভােবেই করেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে করেন। সে কথাটি মনে রেখেই আমি লেখাটির অবতারণা করলাম।
আমি এটাও বলছিনা- সমালোচনার সত্য কারণ ও তথ্য থাকলে আপনি করবেন না। কিন্তু সেটার নিশ্চয় একটা মাত্রা রয়েছে।
দেশটা এমন যেখানে আমার নিজের দিকে তাকানোর ফুরসৎ নাই; অন্যের সমালোচনা করে নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে হয়। অথচ যার সমালোচনা করছি তার ধারে কাছে পৌছানোর জন্য কয়বার জন্মাতে হবে তার হিসাব করি না। এটা আমার ব্যাক্তিগত মত!
সবচেয়ে নোংরা মনোবৃত্তির যে বিস্তৃতি ফেসবুক; ব্লগের কল্যাণে প্রকাশ পাচ্ছে সেটি হলো- নিজের মত করে সব কিছুর প্রত্যাশা। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রও হিসাবে যেটা জেনেছি ব্যাক্তি স্বাধীনতা তা; যা আপনি অন্যের ক্ষতি ছাড়া উপভোগ করেন। অন্যের চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করে সেটি এক ধরণের নোংরা মনোবৃত্তির বিকাশ ছাড়া কিছু নয়।
আমি খুব সাদামাটাভাবেই বলি- আমি ড. ইউনূসের একজন দালাল। তাকে ফলো করি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ঘোষনার দিন থেকে। তার সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক ধারণা আমার ছিল; কিন্তু কাজ করতে গিয়ে সে সব ভুল ভেঙ্গেছে। আমি তাকে অনেক বিষয়ে প্রশ্ন করে সে সব জেনেছি এবং তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়ে কথাটা বল্লাম।
ঢালাও একটা লোককে হেও করে যে রকম বিকৃত আনন্দ কেউ উপভোগ করেন তাদের বিপক্ষে আমার অবস্থান; যদিও এ সমাজে আমি খড় কুটোরও নিচে; আমার অবস্থান ড. ইউনূসের মত একজন মহৎ প্রাণের কিচ্ছু যায় আসে না। তারপরেও নিজের এ গোপন কথাটা বলে রাখলাম।
তবুও লেখটা লিখছি; কারণ পিয়াস করিমের মৃত্যুতে ড. ইউনূস শোক প্রকাশ করায় অনেকে তাকে নিয়ে স্যাটায়ারধর্মী লেখা লিখেছেন; আমার একজন বড় ভাই তুল্য সম্বাদিকও সেই কাতারে আছেন। সাধারণত ব্লগ-ফেসবুকের আবেগি কারখানায় অনেক কথা অনেকে বলেন; সেটি তথ্য সূত্র হীন। সেই কাতারে একজন অগ্রজ সম্বাদিকের গা ভাসানোকে আমি খুবই দুঃখজনক বিবেচনা করছি।
আরো দুঃখজনক- ড. ইউনূস দেশে আসেন বলে রস করার জন্য। কারণ যে ভারত আমাদের কাছে নমস্য সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালামও শনিবার ঢাকায় বলেছেন, বিশ্ব ইউনূস; নজরুল; রবীন্দ্রনাথ ও জগদীসকে দিয়ে বাংলাদেশকে চিনে।
গা ভাসানো লোকেরা নিশ্চয় তাকেও শাহবাগের চেতনাপন্থি বলবেন না- কারণ তিনি দেশেরে স্থপতির নামটাই বলেননি; সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হলে তা নেমে যাবে। জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা করেননি; মনে লয় জমাত ইসলাম তারে ঘুষ দিছে! বিম্পি লবি করছে।
মুল কথায় আসি- আমি শুধু সত্য তথ্য হিসাবে গোটা তিনেক মেইল তুলে ধরলাম। ড. ইউনূস অনেকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তার দু'টি মেইল তুলে ধরলাম। আশা করি বড় ভাইয়েরা তাদের বুল বুঝতে পারবেন। আর ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য আমাকে 'চেতনা ' বিনাশী হিসাবে শনাক্ত করে আক্রমণ করবেন না; যে উনাদের মতাবলম্বী শাহবাগী দেশপ্রেমিকরা করে থাকেন।

মেইল-১::

Lamiya Morshed <.....com>
12/9/12
to bcc: me
Dear Editor,
Please find attached a message of condolence from Professor Muhammad Yunus on the passing
of Professor Khan Sarwar Murshid. Please print the message in your esteemed daily or online publication.
Regards.
Sincerely,
Lamiya Morshed
Executive Director
Yunus Centre
www.yunuscentre.org

মেইল:২

Robayt Khondoker
Jan 12
to bcc: me
Dear Editor:
Greetings!
Please be informed that Nobel Peace LaureateProfessor Muhammad Yunus has expressed deep shock at the passing away of Muhammad Habibur Rahman, a former chief justice and also chief adviser to the 1996 caretaker government. He also prayed for the eternal peace of the departed soul and conveyed deep sympathy to the bereaved family. Please find below a press release on the same.
We would highly appreciate if you print the messagein your highly circulated newspaper/e-paper/ web-portal/news blog.
Thank you in advance.
Md. Robayt Khondoker
Program Associate
Yunus Centre

মেইল:: ৩

Dear Editor,
Please find below message from Nobel Laureate Professor Muhammad Yunus on the passing of Professor Piash Karim earlier today:
"I am shocked to hear the news about Piash Karim's death. This fearless, principled intellectual who won the heart of all Bangladeshis by his dedication to speaking truth to power. His analytical mind and commitment to truth inspired the whole nation. His departure is a great loss. May Allah grant him eternal peace."
We hope you will publish the message in your esteemed publication/newspaper/online platform.
Thank you.
Sincerely,
Lamiya Morshed
Yunus Centre
আসেন এবার সমালোচকরা মেইলের শব্দ সংখ্যা; শব্দের ব্যবহার; বাক্য বিন্যাস নিয়ে আলাপ করে আরেক মতামত দিতে পারেন!

উচ্ছন্নে যাওয়া আমরা; একজন আব্দুল কালাম

যে ক'জন মানুষের বক্তব্য আমাকে মুগ্ধ করেছে তাদের মধ্যে ড. ইউনূস; ফরহাদ মজহার; সলিমুল্লাহ খান; সিরাজুল ইসলাম চৌধূরী এবং অমর্ত্য সেনকে বাদ দিলে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম নিশ্চিতভাবে ড. ইউনূসের পাশপাশি থাকবেন।
তার বক্তব্য, চিন্তার বিস্তৃতি, দর্শন এবং এগিয়ে থাকার চেতনা আমাকে কেবল মুগ্ধ করেননি; ভাবিয়ে তুলেছে - আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য কেমন একটা সমাজ রেখে যাচ্ছি।
শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানেআবদুল কালাম তার বক্তব্যটার শুরুতেই বলছেন, মানুষের বিকাশ তার পরিবার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার বক্তব্যের পরতে পরতে সৃজনশীলতার কথা। উদ্ভাবনের কথা এবং ব্যবস্থাপনার কথা। লক্ষ্য স্থির করার কথা।
বিস্ময় এবং কষ্ট দুটোই আমাকে আচ্ছন্ন করেছে। আরো বেশি আচ্ছন্ন করেছে ব্যর্থতা। কারণ আমরা আসলে পেছনে পড়ে আছি এবং নিয়তই পেছনে যাবার প্রতিযোগিতা করছি।
আবদুল কালাম বলছেন, বিশ্বের মানুষের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হবে গুণগন মা্নসম্পন্ন শিক্ষা ও মূল্যাবোধ। এ জন্য বিশ্বজুড়েই একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
আমাদের মত গরিব দেশ; বিশেষ করে ভারত দ্বারা শোষিত দেশ কীভাবে কোমর খাড়া করে দাঁড়াবে; সেটা নিয়ে তার স্পেশাল কোনো কথা তার বক্তব্যে না থাকলেও নিজেদের নিজের জন্য পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন।
ধরে নিন পাটের কথা। বিশ্বব্যাংক বলেছে আমদজী বন্ধ করো। আমরা বন্ধ করে দিলাম। আরো অনেক চট কল বন্ধ করে দিযেছি। সেখানেই আব্দুল কালাম আমাদের সম্ভবানার কথা বললেন।
তার কথটা খুব মনে ধরেছে; কেউ বললো আপনি এটা বন্ধ করেন; অমনি আপনি তা বন্ধ করে দিবেন। আপনারা পরিকল্পনা কি? প্রশ্নটা তিনিই করলেন। আসলে বঙ্গ দেশের কারো কোনো পরিকল্পনা নেই।
গানেই তো `যেমনে নাচাও তেমনি নাচাও পুতুলের কি দোষ।' আমরা আসলে পুতুলের মতই।
মূল্যবোধ ও গুণতমত মানসম্পন্ন যে শিক্ষার কথা বলেছেন, আবদুল কালাম; সেটি কী আমাদের আছে। আমাদের সন্তানদের সামনে আমরা নিয়ে হাজির হচ্ছি। সে কি হবে? নাকি তার কী হবে ইচ্ছা। আমরা কোনটিকে প্রধান্য দিচ্ছি।
কিন্তু এ ইচ্ছাটা কীভাবে জন্মায়। সে জন্য ক্ষেত্রে কেমন। দ্রাবিড় কিম্বা চণ্ডাল; আশরাফ কিম্বা আতরফ- যে গ্রোত্র ভুক্তই আমরা হই না কেনো; বৈশ্বিক সঙ্কট থেকে মুক্ত আমরা নই।
বাঙালি সমাজের ঐতিহ্য; মুসলামন কিম্বা হিন্দু; কিম্বা বৌদ্ধ কিম্বা খ্রিস্টানের একটা ধারা; আমরা যে ধর্ম বিশ্ববাসীরা বয়ে চলেছি- সে দিকে নজর দেবার সময় কী আমাদের আছে। চূড়ান্ত বিচারে নেই। আমরা ভারতীয় কিম্বা পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা সব সময় প্রভাবিত- নিশ্চতভাবেই এ প্রভাব থাকতে পারে; কিন্তু সেটি বাছ বিচারের জন্য যে দরকারি জিনিসটি দরকার; সেটি আমাদের নেই। তা হলো বিবেক দ্বারা তাড়িত হওয়া।
আমরা বিবেক নয়; ভোগ দ্বারা তাড়িত। যেখানে নীতি নৈতিকতার বালাই নেই; আমরা ধর্ম পালন করতে পারি না কিম্বা বাঙালি সংস্কৃতির লালন করতে পারি না- সে জন্য আমাদের লজ্জিত হবার বদলে অহঙ্কার হয়। আর কথা তো সত্যি অহঙ্কার পতুনের মূল। কেবল কেতাবে পড়েছি; বাস্তবে আমল করছি না।
মন খারাপ হচ্ছিলো কালামের বক্তব্যে- একটা উচ্ছন্নে যাওয়া; নানা রকমের বিভক্তির ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। যাদের দিয়ে আবদুল কালামের থিওরি মেনে বঙ্গদেশের উন্নয়ন হয় না।
তবুও আশায় বুক বাঁধি। আবদুল কালামের বক্তব্যের কিছুটা যদি উপলব্ধি করতে পারি ; তাহলে আমরা টিকে যাবো। নইলে বিশ কোটি কিম্বা তার কিছু কম বেমি লোকের বাজার ছাড়া আমরা কিছুই হতে পারবো না। এখানেই আফসোস।
আসনেনা মাও জে দং; লেলিন, সেক্যুলারিজম; জমায়াত ইসলাম; বাঙালি জাতীয়তাবাদ কিম্বা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের তকমা খুলে চোখটা কচলে দেখুন না; কোথায় দাঁড়িযে আছি। কোথায় যাবার কথা ছিল। পথ কোথায়? ভাবনু।
আবদুল কালামের কথায় বলি আপনার ভিমনটা কি তা ঠিক করুণ। আপনার পকিল্পনা আপনি করুন। আপনি যে ক্ষেত্রে থাকুন না কেনো; হতে পারেন আপনি চাকুরীজীবী; হতে পারেন ব্যবসায়ঢী; কৃষক কিম্বা পলিটিশিয়ান। আপনাকেই আপনার গন্তব্য ঠিক করতে হবে। কেউ তা ঠিক করবে না।

মনের আয়নায়


তোমার সাথে আমার দেখা হওয়াটা জরুরী  ছিল না
তবুও হয়েছে; এটা খুব যে ইচ্ছে করে তাও নয়! তবুও হয়েছে।

চিরচেনা এই কাঁশফুলের বাগান;
যেখানে কাশের ডগায় হাত কেটে যাবার ভয়; আবার নরম ছোঁয়া ফুলের!
যেনো আমার ছেলের গাল; এখনো যে সব কিছুতেই 'ত' উচ্চারণ করতে পছন্দ করে

আমি বিস্ময় ভরে মনের আয়নায় দেখি-
সেই সময়; বছর কুড়ি কিম্বা তারো আগে-
ইটের ভাঙাচোরা রাস্তায় যখন ভট ভট শব্দ তুলে ছুটতো  অটোরিক্সা
আর পেছনে ছুটটো গাঁয়ের ছেলে মেয়েরা

এ ছোটাছুটির কোনো মানে নেই; তবুও ছোটায় আনন্দ

ছুটোছুটির যে আনন্দ আমরা পেয়েছি ছোট বেলায়- সে আনন্দ এখন নেই

সব দিকে নষ্ট হবার ভয়! তাই মা হাত চেপে ধরে  নিয়ে যান তার সন্তানকে
হাত চেপে নিয়ে আসেন বাসায়।  পাড়াগাঁর ছেলে ছোকরাদের সাথে মিশলে গোল্লায় যাবে! সে কী ভয়।

নিজেরাই নিজের খাঁচা বন্ধি করছি।

খাবার দবার বলতে কেএফসি'র চিকেন; বিএফসির ফ্রাইড রাইস
সময় পেলে চলো ফ্যান্টাসি; নন্দন

শিক্ষক চোখ রাঙিয়ে বসে থাকেন; মাস শেষে বেতন আসবে ঠিকই; কিন্তু  শিক্ষার্থী হতে হবে ক্লাশে নাম্বার ওয়ান

সবারই একই চেষ্টা -
কিন্তু নাম্বার ওয়ান তো একজনই হয়!

জীবনে কেউ কি নাম্বার ওয়ান হতে চান: চান না।
বলেন জীবন এমনই! হতে পারে।

ভট ভট শব্দ তুলে ছুটে চলা অটোরিক্সার পর সবুজ রঙ্গের সিএনজি এসেছে সবখানে; পাকা হয়ে গেছে রাস্তা।

তবুও বাসের কালো ধোঁয়া; ইমারত নির্মাণের জন্য বালুর ছড়া ছড়ি আর উন্নয়ন কাজে মগ্ন নগরে কেবলই রোগ বালাই

শ্বাসকষ্ট; গিটে ব্যাথা; চোখ কচকচ করে; আরো কত্ত কী

তাতে কি? আমরা সভ্য হয়ে উঠছি দিনে দিনে-

সেই সাথে মরে যাচ্ছে আমাদের মনুষ্যত্ব-সেদিকে খেয়ালের দরকার কি

মোটা অংকের বেতন; এসি গাড়ি আর  মাস্তিই এখন জীবনের লক্ষ্য।

গাঁয়ের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো পথিক-
থালা হাতে গরিব মানুষটির দিকে এগিয়ে যাওয়া
হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া মানুষটির হাত ধরে থাকার মধ্যে এখন আর আনন্দ খুঁজি না আমরা।
 তবুও আছি
এই বেশ আছি; ভালো আছি। ভালোবাসি।

বাতিকগ্রন্থ কিছু লো্ক এবং ছাত্রদলের কমিটি!

ছাত্র রাজনীতিকে সাধারণত 'ঐতিহ্যবাহি' বলা হয়ে থাকে; এটা কেনো বলা হয়- সে সম্পর্কে
আমার ধারণা অস্পষ্ট। কারণ  ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের নিয়ে যতটা না ভাবে; তারচে বেশি ভাবে মাদার পলিটক্যাল পার্টির কর্মসূচী নিয়ে!

তবে ছাত্র নেতা হবার জণ্য যে কদর্য রূপ বিভিন্ন  গোষ্ঠীভূক্ত হয়ে ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরে চর্চা হয়; যে সব নোংরামি দেড় দশকেরো বেশি সময় ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে  দেখে আসছি- এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি-  নিজেদের জণ্য ছাড়া ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের জণ্য কিছু করতে পারে না বা করে না। তারপরেও তারা নিজেদের ভেতর ঘৃণা চর্চা করে এবং একে অন্যকে আক্রমনও করে থাকে।

দেশের বৃহত দুই ছাত্র সংগঠনের কমিটি গঠনের সময় এলে নোংরামিটা বেশি দৃশ্যমান হয়- ছাত্রদলের একটা কমিটি হবে; তা নিয়ে এ আলাপের সূত্রপাত। এখানে বিবাহিত; লিভটুগেদার; কন্যা সম্প্রদান সহ নানা বিষয় সাথে বয়স নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এটা হবেই; হতেই পারে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল প্যাড সর্বস্ব সংগঠন নয়। একদিনেই এর আমুল পরিবর্তনও সম্ভব নয়। ধীরে সুস্থে তা আনতে হবে; সেটি আনা হচ্ছেও। ছাত্রলীগের   লিয়াকত-বাবু কমিটির পরে যে কমিটি করা হয়েছিল; অনেকেই সেটাকে বাচ্চা পুলাপাইনের কমিটি বলেছিলেন; কিন্তু একথা স্বীকার করতে হবে ছাত্র রাজনীতি ধীরে ধীরে ছাত্রদের কাছে যাবার যে প্রক্রিয়া লিয়াকত-বাবু শুরু করেছিলেন সেটি অভিনন্দনযোগ্য।
ছাত্রদলও একই প্রক্রিয়া জারির চেষ্টা করছে। গেলো কমিটিতে তুলনামূলক কম বয়সীরা স্থান পেয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু কী হযেছে? হয়নি। কেনো হয় একপক্ষ পদ পেলে আরেক পক্ষ গোস্সা করে;  এমনকি বেগম জিয়ার রোড় ফর ডেমেক্রেসির দিনও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের  কাউকে  পল্টনেরর ধারে কাছে চোখে পড়েনি- আমি সেখানে নিজে হাজির থেকে এ কথা জানাচ্ছি।

এখন আবার কমিটি হবে- এ সুযোগে নানা কিসিমের লোক ডিজিটাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে নোংরা কথা বলছে। নানা জনের নামে কুৎসা রাটাচ্ছে। নারী শরীর ছাত্ররাজনীতিতে বহুকাল আগে থেকে জড়িয়ে আছে। এটা অনৈতিক; এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা এ সব নোংরা কথা লিখছেন নামে বে নামে আবার যারা এর প্রচার করছেন তারা কী এ থেকে মুক্ত!

আমি বরাবরই এর বিরোধি যে, কোনো ছাত্র নেতা বিয়ে করলে তাকে সংগঠনের শীর্ষ বা গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী দেয়া যাবে না; এটা কোনোভাবেই সঙ্গত হতে পারে না। জৈবিক চাহিদা বৈধভাবে উপভোগের সুযোগ না দিলে যে কেউ তা ভিন্নভাবে উপভোগ করবেন; এবং করছেনও। এখানে দলমত নির্বিশেষে সব ছাত্র সংঘঠনের নেতারা এক!

এগুলো আমরা জানি; আরো জানি ছাত্রনেতারা  চাঁদাবাজি করেন,. টেন্ডার ভাগান। কিন্তু সেটি তারা কেনো করেন? সে প্রশ্নের জবাব কেউ খুঁজেছেন। খোঁজেননি। নেতা হতে গেলে তার গাড়ি লাগে; দামি ফোন লাগে; ট্যাব লাগে; এক দঙ্গল পুলাপাইন পালতে হয়- এ সবের টাকা কোত্থেকে আসবে?

এ যে ভিলেন সুলভ ছাত্ররাজনীতির চর্চা যুগের পর যুগ ধরে হয়ে আসছে; সেটা একতদিনেই মুছে ফেলা যাবে না।

 তাই বলে আমি এটাকে সার্পোট করছি না; বলছি এ সব মুছবে-ধীরে ধীরে। কিছুটা সময় লাগবে। সে সময়টা অন্তত দিতে হবে।

ছাত্রদলে কে নেতা হবেন? কে হবেন না সেটি নির্ধারণ করার জন্য আমরা সব সময় গণতান্ত্রিক  প্রক্রিয়ার কথা বলে আসছি।  লাল্টু - হেলাল কমিটির সময কথাটি বেশি বলেছিলাম। এখন দেখছি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করলে রক্ত গঙ্গড়া বয়ে যাবে!  তাই রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও বলতে হচ্ছে- কখনো কখনো অটোক্রেটিক সিস্টেম ভালো!

যারা নিজ দলের পুরনো; বয়োজ্যাষ্ঠ নেতাকর্র্মীদের  নিয়ে সমালোচনা করছেন; তারা  গঠনমুলক কথা নিয়ে আসেন না কেনো। কেনো বলেন না অমুক এত সালে মেট্রিক পাস করেছে; এখন নতুন যুগের ছেলে মেয়েদের সাথে তার সংযোগ অসম্ভব। না; উনি কয়টা নারী সঙ্গ উপওেভাগ করেছেন; কাকে নিয়ে বসবাস করছেন; স্ত্রী নিয়ে রাতে ঘুমাচ্ছেন; সেটি লক্ষ্য! এ রকম বাতিকগ্রস্থ লোকজন কখনো দলের জণ্য ভালো হতে পারে না। 

খসে পড়া জড়তার আব্রু

সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে কালচারাল রিপোর্টারদের কম বেশি অভিজ্ঞতা আছে। খসে পড়া জড়তার আব্রু থেকে কীভাবে একেকটা মেয়ে জীবনকে 'খ্যাতি'র মোহের কাছে তুচ্ছ করে তা তারা জানেন। কিন্তু কর্পোরেট বাণিজ্যের কারণে সেটি কেউ বলতে বা লিখতে পারেন না। ইউনিলিভারের কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের লোভ সবারই আছে।

 মুখোশের আড়ারে লুকিয়ে থাকা পুরুষীয় দানবদের দিকে তাকালে এখন কেবল ঘেন্না হয়। যারা সাংস্কৃতিক কর্মীর পরিচয়ের আড়ালে ঘৃণা চর্চা করে দশকের পর  দশক  নৈতিকতার বুলি আওড়াচ্ছেন- আদর্শের ফেরি করছেন; তারা  সুন্দরী নির্বাচনের নামে সাদাসিধে মেযেদের নিয়ে কী রঙ তামাশা আর কামের আগুনের উপকরণ বানাচ্ছেন সেটি সংস্কৃতি কিম্বা বিনোদন বিটে যারা কাজ করছেন তাদের অজনা নয়।


 কিন্তু এ সব মানুষের ক্ষমতা, দাপট এবং অবস্থান এতটাই উঁচুতে; যেখানে আমাদের মত আমজনতার প্রবেশ নিষেধ। এদের আছে মিডিয়ায় দুর্দান্দ দাপুটে মূর্তি। আছে রাজনৈতিক ক্ষমতা- এরা  চুষে নেয় নৈতিকতার সবটুকু।

লাক্স সাবান সুন্দরী খোঁজার মিশন  চালিয়ে যাচ্ছে অনেক আগে থেকে। নারী অধিকার; জেন্ডার ইকুইটি নিয়ে যারা দিনের পর দিন বলে যাচ্ছেন; যে সব সংবাদ পত্র  জেন্ডার সচেতনতা তৈরির কাজ করছে; সেখানেই এ সব তারকাদের কীর্তি ছাপা হয়'; অন্যদের উৎসাহ জোগানো হয়।  মনে করিয়ে দেয়া হয়, এটা একটা স্বপ্নময় জগত। এ জগতে না আসলে তোমার রূপের কোনো মূল্যই নেই।

 জগতে আসলে অনেক কিছুরই মূল্য থাকতে নেই। নারীর সম্ভ্রম, আর রূপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্য তার ব্যাতিক্রম নয় সুন্দরী নির্বাচন যজ্ঞ্। গ্রুমিংয়ের নামে এ সব মেয়ের  লজ্জার আড়মোড় ভেঙ্গে; তারকাদের সামনে রেখে নতুন উদ্যোমে যে ভোগ উৎসব শুরু হয় তার ক্ষতি যার হয় কেবল সেই সম্ভবত  মোহ কেটে যাবার পর কিছুটা বুঝতে পারেন।


এক সময় সিনেমার নায়িকা  বানানোর কারিগর নির্মাতা 'দাদু' সম্পর্কে বলা হতো তার হাত দিয়ে সিনেমায় এসেছেন অথচ 'আনটাচড' ছিলেন এটা বলা যাবে না। 'শ' আদ্যাক্ষরের সব নায়িকা বাংলা সিনেমায়  তার হাত ধরেই আগত।

তেমনি লাক্সের নামে তারকা বানানোর  কারখানায় যারা কাজ করেন; তাদের সম্পর্কে আনেকই সম্বাদিকেরই ভালো জানা । তবুও বলা যায় না। বলতে গেলে তো সব ই যাবে।

লাস্যময়ী তরুণীর হাস্যময় চেহারা আড়ালের কষ্টটা  ভুলে থাকার চেষ্টাটা অনেকেরই নাই। তবুও এ কথা সত্যি এ জগত সম্পর্কে একটা মোহ তৈরি করে রেখে;ফাঁদ পেতে বৈধ উপায়ে উঠতি বয়সী তরুণীদের এক অন্য রকম জগতে আনা হয়; যেখানে না পারি ছাড়তে; না পারি থাকতে অবস্থা।

 অনেক দিন পর এ কথা কেনো লিখছি; লিখছি ফেসবুকে লাক্স তারকাদের  কিছু ছবি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য হচ্ছে। শাড়ি কী এভাবে পরে? এটা জানতে চাইছেন। একজন নগন্য সম্বাদিক হিসাবে লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার ইভেন্ট কভার করার যে দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা আমার  হযেছে; সে তুলনায় এটা খুব খারাপ বলা যাবে না।

সম্ভব ২০০৬ কি ০৭ এর দিকের একটা ইভেন্টে যৌনাবেদনময় পারফরমেন্সের বিরোধীতা করে অনেক কৌশলে আমাকে লিখতে হযেছে।  লিখেছিলাম। এটাই তৃপ্তি!

তবে এ কথা সত্য ; এ সব মেয়েদের গ্রুমিংয়ের নামে; নাটকে অভিনয় করানোর  সুযোগ দেবার কথা বলে- দুপক্ষে মিউচুয়াল যে অনৈতিক কাণ্ড হয় সেটার জন্য সত্যি খ্রাপ লাগে। তবুও কিছু বলতে পারি না। কারণ সেখানে আইন অচল, নৈতিকতা মঞ্চ নাটকেই আছে। বাস্তবে এর দেখা মিলে না।

গাজীপুর, মৌলভীবাজার; কক্সবাজার এ সব জায়গার রিসোর্ট আর এখন নিরাপদ মনে করেন না; বুড়ো যৌনখোর  লোকেরা। তারা এখন উড়াল দেয় থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর। উপভোগের চরম আনন্দময় জায়গা এ সব।


হুমমম। সমাধান কিছু হবে বলে মনে হয় না। তবুও প্রতিবাদ জারি রাখতে বাধা নেই।      

দ্রষ্টব্য:: সবাই মিউচুয়ালি সব করেন; এটাও কিন্তু ঠিক নয়। অনেকে পা দিয়েছেন ফিরতে পারেন না আবার অনেকের স্ট্যাটাস থাকে না।  আছে নানা ক্যাচাল। 

আহা প্রেম; আহা স্বপ্ন; আহা


বয়স- সে তো প্রতারক-
বাদশাহি শাসকের ছুরির মতই ধারালো; কাটে দ্রুত
চোখের পলকেই চলে যায়; আসে নতুন সময়

কেবল কিছু সময় থেকে যায় রাজনীতির পকেটে; নেড়ে চেড়ে
চেটেপুটে খায় ওরা-
আস্ত গরু-ছাগল;দুম্বা-উট খাসি-ভেড়া
রসনা বিলাসি ওরা; দিনভর পরের সমালোচনা; রাজনীতি
মধ্যরাতে জুয়ার টেবিলে একসাথে সবাই;সুরার টানে রঙিন হয়ে ওঠা রাত

বোকা আম জনতা কেবল হিসাব কষে; আর ক'টা দিন গেলেই নতুন ভোর- এভাবে কয়েকটা দশক গেলো

উঠোন আলো করে আসলে না তবু-
যৌবনা ভোর-
লাবণ্যময় একটা সকালও  পেলো না সে

তাতেও তার আফসোস নেই। যদি একটু শান্তি মিলতো-
নিরুদ্বিগ্ন রাত তাহলেও চলতো; সে সব কই এখন বলো-

সব কিছু ইতিহাস; ইতিহাস তো ক্ষমতাবানদের কথায় বলে;সব সময়

ঘরের কোনে রক্ষিতার উচ্চ কান্না দেয়াল পেরুনোর আগেই
গম গম করে ওঠে কথার  ছুরি-'খুন কইরা ফালামু'
খুনের ভয়; পেটের ক্ষুধা আর ক্ষমতাবানের হাতের তুড়ির নিচে চাপা পড়ে থাকে একজীবনের শখ-আহ্লাদ

মানবাধিকার তখন চিক্কুর মারে;
আহা দেশ; আহা জন্ম; আহা সময়; এভাবেই তুমি লুটিয়ে থাকো

এভাবেই; ক্ষমতাবানদের চাদরের তলে; আঁচলের ছায়ায়
জমে ওঠা পাপ; কষ্ট; তবুও ওদের কেনো শাস্তি হয়না ; আফসোস করে বলে মেয়েটা ; সমাজে যার পরিচয় সে রঙ্গ কন্যা বলে!

তার এখন হেসে খেলে বেড়ানোর কথা; কিন্তু মুক্ত বাণিজ্য; তাকে 'বেশ্যা'বানিয়েছে
খয়রাত করে ওরা এনেছে যৌনকর্মী; কিম্বা প্রোগ্রাম মডেলের উপমা!


ক্ষমতার নিচে চাপা পড়ে যায় স্বপ্নগুলো-
তরুণের চুষে নেয়া ঘাম-রক্ত; তরুণীর সুখ-লাবণ্য


সামাজিক সুরক্ষা; স্বাস্থ্য সুরক্ষা; খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে সেমিনার হয়
জ্ঞানীরা আলোচনা করেন;
আলোচনার টেবিল থেকে খয়রাতি টাকায় চলে ফূর্তি

ইতিহাস ক্ষমতাবানদের কথায় মনে রাখে-
আহা জীবন তুমি এমন কেনো; আহা সময়; আহা প্রেম; আহা স্বপ্ন; আহা।

বুড়ো শুয়রদের 'ক্ষুধা' মেটানো মানুষগুলোর জন্য সমবেদনা



যে কোনো বিচারে মানুষের ওপর নিপীড়ন, হয়রানি কিম্বা তাদের খাটো করে দেখার বিপক্ষে ছিলাম; এখনো আছি। সামনে থাকতে পারবো বলে বিশ্বাস। যদিও   ভার্সিটি কিছু অধ্যাপক- বিদেশি সংস্থা এবং কিছু গবেষক-এনজি ভোগির  হাতের তলে  'গণিমত' লুটিয় দিতে বাধ্য হন সেখানকার মানুষ। যার প্রচারের কাজে 'ব্যবহৃত ' হন সম্বাদিকতার চাকুরী করা কিছু লোক।  তবুও এ কথা সত্য মানুষ কখনো হারে না।

আজ সেই দিন ৯ সে্পেটম্বর। সতেরো বছর আগে ৩৫ কাঠুরিয়াকে খুন করেছিল পাহাড়ি কিছু লোক। যাদের 'খুনী' বললে কিছু উচ্ছিষ্টভোগির কষ্ট হবে। তবুও আমি তাই বলছি-।

আবার এ কথাও  অস্বীকার করছি না বাঙালিরা  'সুফি' সাব; খালি ধ্যান করে। তবে নিশ্চিত সত্য হলো- পাহাড়ে বাঙালি - পাহাড়ি দু পক্ষই নিপীড়িত এবং অধিকার বঞ্চিত।

আর সমতলে বসে  নর মাংসের স্বাদ পাওয়া গবেষক নামের পশু সম্রাট বাঘরা  হিসাব পাল্টে দিয়ে স্বার্থ হাসিলে মগ্ন।  এ সব লোক বিপজ্জনক। এরা দেশের স্বার্থ; মানুষের  জীবন এবং পাহাড়িদের অধিকারকে বিপন্ন করে তুলেছে।

আমি বরাবরই আম্লীগের রাজনৈতিক প্রপাগাণ্ডার বিরোধী। কিন্তু ব্যাক্তি শেখ হাসিনার কিছু কাজের প্রতি আমার অপিরসীম শ্রদ্ধা আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- পাহাড়ে শান্তি নিশ্চিত করা। যার যা অধিকার তা বুঝিয়ে দেবার জন্য তিনি চেষ্টা করছেন; এটা অস্বীকার যারা করে তারা রাজনীতির লোক। সাধারণের কথা তাদের মাথায় থাকে না।

যদিও 'বাঙালি ' জাতীয়তাবাদ 'চাপিয়ে' দেবার অভিযোগ তোলা হয় দলটির বিরুদ্ধে। তবুও এ কথা চরম সত্য একটি অনিশ্চিত সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা শেখ হাসিনা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। সে জন্য তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা।  

নিশ্চিতভাবে এ কথা বলতে পারি- শেখ হাসিনা নিস্বার্থভাবে পাহাড়ের মানুষের জন্য যতটুকু করেছেন; তা আর কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। বা করার মত মনোবল কারো ছিল না।

কিন্তু এই একটা নির্মোহ জায়গাতেই কথিত গবেষক-যাদের বেশির ভাগই উড়ে এসে জুড়ে বসে টাকা কামানোর ধান্ধায় এখন 'আদিবাসী' বিষয়ে গবেষণা বা  ফরেনারদের কাছে অসত্য তথ্য বিক্রির 'মিডলম্যানের' কাজ করছেন; তাদের চেহারার দিকে তাকালে ঘেণ্না হয়।

কামের আগুনে পুড়ে যাওয়া; ঘেন্নার থুতুতে ঢেকে যাওয়া কিম্বা অধিকার  আদায়ের স্বার্থে বুড়ো শুয়রদের 'ক্ষুধা' মেটানো মানুষগুলোর জন্য সমবেদনা।

 স্বপ্ন দেখি -পাহাড়ে বাঙালি-পাহাড়ি মিলে মিশে থাকবেন এবং যারা এদের বিভ্রান্ত করছেন তারা নিপাত যাবে। নিশ্চিত ভাবেই যাবে। রাঙামাটি জেলার লংগদুর পাকুয়াখালীতে নিহতদের রক্তের বিনিময় হোক বাঙালি -পাহাড়ির সম্প্রীতি।   

তুৃমি ছিলে বলে- প্রিয়তমা


তোমার আঁচলের তলে লুকিয়ে থাকা সকালটা ছিল-
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সকাল!

তোমার ডাকে ছুটে আসা বিকালটা ছিল অসম্ভব প্রিয়।

সন্ধ্যাটাও তেমন, এলার্ম ঘড়ি ছিলনা আমাদের;
তুমিই মনে করিয়ে দিতে এখন ভোর-'তোমার পড়তে বসার কথা'
 সকাল বেলায়  'তোমার প্রাইভেট!'

মনে আছে সেই কবে একবার
পুকুরের জলে ডুবে যাচ্ছিলাম আমি
সাঁতার কী জানতে? মনে হয়না;
তবুও হাত বাড়িয়ে ধরলে আমায়
সেই যাত্রায় মরে গেলে- আমার আর বিশ্বটা দেখা হতো না
হতো না হাওরের বুকে  বৃষ্টি দেখা
পাহাড়ের গা ছুঁয়ে নেমে যাওয়ার ঝরণা

কিম্বা
জোঁকের চুষে নেয়া রক্তের চেয়ে ভয়ঙ্কর রাজনীতি-সন্ত্রাস!
কঠিন বাস্তবতায় হারিয়ে যাওয়া সময়; আমার প্রিয়, প্রিয়তমা

তুমি ছিলে বলে; তুৃমি ছিলে বলে- প্রিয়তমা; প্রিয় দাদিমা!
আমার জীবনটা বদলে গেলো এক নিমিষে!
এখন তুমি- আমি যোজন যোজন দূর- এপার ওপার তফাৎ!
 তবুও তুমি আমি আছি কাছাকাছি; প্রিয়-প্রতক্ষণে

ঘোরলাগা- রিছং কিম্বা বৃষ্টিস্নাত পাহাড়!




ঠক ঠক করছে কাঁপছে নাজিব- আমি তখনো ঝরণার জলে। এমুন যৌবনা ঝরণা ছেড়ে আমরা কেউ ফিরতে চাইলাম না। আগের দিনে ২১ ঘন্টার জার্ণির ক্লান্তিটা মুহুর্তে মুছে গেলো- ঝরণার জলে সতেজ সবাই। খাগড়াছড়ির রিছংয়ের  এ ঝরণার পথে নামতে নামতে কিছুৃটা হাঁপিয়ে ওঠার পর আমরা সেখানে। বৃষ্টি আসছে, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি- এমন বৃষ্টি  পাহাড়ে ইন্দ্রজাল তৈরি করে; স্বপ্ন ছড়ায়, বয়সটা কমিয়ে দ্যায়!

১৪ আগস্ট বিষুদবার রাইতে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। সৌদিয়া পরিবহনের অবস্থা বেশি ভালো না। সার্ভিস  খুবই খ্রাপ এইটা জানতাম; তয় এত্ত খ্রাপ, সেটা জানা হলো এবার।

যাওয়ার দিন দুপুর বেলা সৌ্দিয়া অফিস থেকে ফোন-  'রামগড়ে পাহাড়ি ঢল। মানুষ পানি বন্দী। বানের জলে ভেসে গেছে  বেইলি ব্রিজ। বিকল্প রাস্তায় চট্টগ্রাম হয়ে গাড়ি যাবে। অন্য বাস গুলো যাত্রা বাতিল করেছে!'
সৌদিয়ার দিলে অনেক দয়া , তাই কিছু বাড়তি মাল খসালে তারা আমাদের নিতে প্রস্তুত। রাজি হলাম-

বিপত্তির শুরু হলো শুরুতেই।  রাত এগারটার গাড়ি, ছাড়লো ১১ টা ৪০ এ। দাউদকান্দির পরে-  চাক্কা পাংচার। ড্রাইভার কইলো নতুন চাক্কা রাইতেই লাগাইছে। বোঝেন রাস্তার কী অবস্থা!
নেমে এলাম, এই বৃষ্টি এই মেঘ। কিন্তু চাক্কা ঠিক করনের জোগাড় নাই। মালিক বক্করের লগে টক্কর হলো, কিন্তু চাক্কা ঠিক করতে ইশতিয়াককে নামতে হলো রাস্তায়। কভার্ড ভ্যানের ড্রাইভারকে রাজি করিয়ে চাক্কা বদলের আয়োজন হলো।

ঘণ্টা আড়াইয়ের মামলা শেষে বাস চলছে।  মাঝখানে বিরতিতে  সক্কালবেলার নাশতা।  সীতাকুণ্ডের আগে পাক্কা ৬ ঘণ্টার জ্যাম। এত্ত জ্যাম, সবাই বিরক্ত!  হাইওয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কম্মকর্তা জানালেন, পুলিশ সুপারকে কল করতে-পুলিশ সুপার জানালেন- রাস্তায় গাছ পড়েছে, তাই জ্যাম। আসলে হাইওয়ে পুলিশ যে, 'হাওয়ায়' পুলিশ তা বোঝা গেলো পরে; কারণ পুরো রাস্তায় একটা গাছের ডালও ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেলো না।

বিকাল সাড়ে তিনটায় অক্সিজেন মোড় হয়ে বাস চলছে, মনে হলো আর না! নেমে পড়ি! কিন্তু রিছং ডাকছে; তাই ছুটছি। রাত আটটায় মিলনপুরে  গাইরিং হোটেলে ঢুকে মনে হলাে - আহা স্বস্তি!
বার বার মনে হচ্ছিলো আমার হাঁটা বাবার কথা,  রাস্তাঘাটের যে অবস্থা, সেটার চেহারা যে ক্ষয়ে যাওয়া রাজনীতিরই আরেকটা  চিত্র; তবুও হাঁটাবাবার কথার খই ফোটে।বক্তৃায় মাইক গরম হয়। সেলুকাস, বিচিত্র এক চিড়িয়া! 

তবুও ভ্রমন-খাগড়াছড়ি।
রাতের খাবার গাইরিংয়েই হলো- দুপুর বেলার খাবার টাকা পুরাই সেভ! মুরগি, সবজি আর ডাল- অমৃত সমান। ত্রিপুরাদের রান্নার হাত খ্রাপ ছিলনা কোনোকালেই, এখন আরো ভালো হয়েছে।
 অনন্ত ও চয়ন দা' দ্বয়ের স্ত্রীদ্বয়ের যৌথ প্রযোজনার এ খবারের পর ঘুম ছাড়া বিকল্প রাখা সম্ভব ছিল না।

ফাঁকে মামুন আর আমি চলে গেলাম শাপলা চত্বরে, চান্দের গাড়ি রেড়ি করা হলো। সক্কাল বেলা ঢাকায় থাকলে ঘুম ভাঙতে ভাঙতে  ১১ টা। কিন্তু বেড়াতে গেলে ৭ টায় উঠে পড়ি- এবারো তাই হলো।  চান্দের  গাড়ি এসে পড়েছে, কল দিলো ড্রাইভার- দাদা নামেন! কইলাম খারাও ৯ টার আগে নামনের কোনো চিন্তা নাই।

নাশতার পর্ব সমাপ্ত করার পর ঝরঝরে সবাই। কেবল নাজিব ক্লান্ত। পানি যার সবচে প্রিয় সে তার সব ক্লান্তি মুছে দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে  ছুটছে রিছংয়ে। নাকিব পানি ভয় পায়। সে গুৃটিসুটি মেরে বসে থাকতে পারলেই বাঁচে; কিন্তু যখনই বাসায় আসবে- বলবে বেড়াতে যাবো!

রিছংয়ের আগে একটা টঙ দোকানের  সামনে চান্দের গাড়ি থামতে, একজন পাহাড়ি হাত তুলে বল্ল ২০ টাকা দ্যান। গাড়ি রাখার  টোল। কিন্তু কোনো স্লিপ নাই, তাতে কী। চল নিচে নামি।

ইশতিয়াক  যে এত রোমান্টিক এইটা আমার জানা ছিল না,  বউয়ের ছবি  ক্যামেরা বন্দি করতে করতে নামছে বেচারা। আমরা একটু এগিয়ে গেছি। রীতি তার স্বভাব সুলভ গল্প বলে যাচ্ছে, আমি মামুনের সাথে আড্ডা-মগ্ন। অনেক দিন পর মামুন আমাদের সাথে ট্যুরে। তাও হঠাৎ আমার ফেসবুকে দেখে। ভাগ্য ভালো নাজিবের জন্য একটা সিট রাখা ছিল, সেটা ওর চাচ্চুকে ছেড়ে দিয়েছে!

পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ-বৃষ্টির যে মোহনীয়  কামাতুর রূপ তৈরি করলো, তাতে সবাই বিমোহিত, কিন্তু এর বর্ণণাটা সবাই একটু কবিত্ব  দিয়ে করার চেষ্টা করছে।  আসলেই সুন্দর... এ শব্দটার মানে হলো এ সুন্দরের সাথে কোনো তুলনা চলে না।

 মাঝখানে একটু বিরতি দিয়ে রিছংয়ের নিচে আমরা,  স্রোতের তোড়ে  ভেসে যাচ্ছে জঞ্জাল, ছড়া ভর্তি পানি, আমরা পাহাড়ি রাস্তার ধরে উঠে এলাম উপ্রে।  রিছংয়ের জলে ছোয়া নিলাম অনেক্ষণ, কিন্তু পিচ্ছিল  পুরো এলাকা- দুর্ঘটনা মানে নিশ্চিত অঙ্গহানি!

তবুও মন মানে না। ইতোমধ্যে ঝরণার জলে নাজিবের কাঁপুনি ধরে গেছে।  তাকে নিচে নামিয়ে রেইন কোট পরিয়ে রাখা হলো। রীতি -শিপু  ব্যাগ আগলে রাখছে।

শেষতক সবাই  ঝরণার জলে। একটু ঘূর্ণি খেয়ে ঝরণার জলের তলে নিজেদের সঁপে দিলাম- নে বাবা জল থেরাপি উপভোগ কর।  এভাবে অনেক্ষণ, শিপুর হাত ঘড়ি তুলে বল্ল সাড়ে ১২ টা বাজে। ১ টার দিকে আমরা উপ্রে ওঠা শুরু করলাম। কিন্তু এ রকম একটা কলরব তুলে ছুটে যাওয়া পাহাড়ি যৌবনবতী ঝরণা ছেড়ে আসাটা  খুব কষ্টের- তবুও  আসতে হয়।

 চান্দের গাড়ি ছুটছে, গন্তব্য সিস্টাম। এটা মারমা রেস্টুরেন্ট, আগের রাতে মামুন আর আমি কইতরের মাংস, বাঁশ করুল আর থানকুনি পাতার সাথে শুটকির ঝোলের অর্ডার করে গেছিলাম। সেই মতে রান্না হবার কথা। সবার পেটে সেই রকম ক্ষুধা।  আচিং অভ্যর্থণা জানালো। বসালো, সাথে বললো বাঁশ করুলটা পাওন যায় নাই। মেজাজটা খ্রাপ হলো- কইলাম এই জন্য অগ্রিম অর্ডার; বেচারা খুব লজ্জা পেয়ে জানালো রাতে এ আয়োজন হবে সেই রকম।   

ক্ষুধার্তরা হামলে পড়ছে সিস্টামে; আমরা খাইতে থাকলাম, বাঁশ করুলের  বদলে লাউ চিংড়ি। কইতরের ঝোলাটা নাকি সেই রকম জানালো, রীতি, রিংকি এবং লিনা।

তৃপ্তি ভরে সবাই খেয়েছে; সে আওয়াজ পাওয়া গেলো পরে-
ফের যাত্রা। গন্তব্য আলুটিলা গুহা।  বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে আমরা নেমে এলাম। গুহা জয়, আমড়া ভক্ষণ এবং ছব্বি তোলার আয়োজন। ৫ টাকার টিকিট নিলেও নিরাপত্তার কোনো আয়োজন সেখানে নেই। তবুও আলুটিলা- মিস করার কোনো সুযোগ নেই।  গুহার অন্ধকারে ঢোকার পর মনে হলো বয়স হযেছে- চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে মনে লয়; একটু ভয়ও!

মধ্যপথ থেকে শিপু প্রস্থান করলো, ইশতিয়াক আগেই স্বশালী এবং স্বস্ত্রীক প্রস্থান করেছে। শিপু কইলো- ভাই, আপনি যখন কনফিডেন্স পাইতেছেন না, তাই  আর যামুনা। কারণ অইলো প্রথম আমি, মামুন আর শিপু ঢুকলাম- কিন্তু ভ্রিত্রে  যে জলের স্রোত তাতে সাহস হচ্ছিলো না।
তৃতীয় দফায়  পানিতে ভিজে  গুহার পারের  চেষ্টায় শিপু বিরত হলেও মামুন বললো- ভাই যামু, চলেন। আবার কবে আসি ঠিক নাই। আসলেই তো ঠিক ২০০৭ এর পরে ২০১৪ তে মামুন আর আমি এক সাথে।

শেষ পর্যন্ত গুহা অতিক্রম করা হলো-

ফেরার পথে মনে হলো বৌদ্ধ মন্দিরটা সুন্দর- দেখে যাই। সেখান থেকে ছব্বি তোলার পর আমরা জেলা পরিষদের নতুন করা ঝুলন্ত ব্রিজে গেলাম, ব্রিজটা সুন্দর হয়েছে। তবে বেশি সংখ্যক পর্যটকের চাপ সইবার ক্ষমতা তার নাই! তবুও ব্রিজ দেখা হলো; এর আগে  চান্দের গাড়িতে উঠতে গিয়ে পড়ে ব্যাথা পেয়েছে মৌ এবং রিংকি।  পা ফুলে গেছে। কিন্তু  না, মিস কেউ করতে চাইনি।

দিলিপ বললো- দাদা কই যামু। চলো কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট। সেইখানে একই ঝামেলা- গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে গেলে ঢোকা যায় না! আবার বউ পুলাপাইন লইয়া গেলে কয় সময় শ্যাষ। কিন্তু আমরা তো ঢুকতে গেছি। সন্ধ্যার একটু আগে। আমরা  ইন্সটিটিউটের  লেকে এবং তার ওপর ঝুলন্ত  সেতুতে গেলাম। সাধারণত এতটা পথ কেউ আসে না। সেখানে যাবার পথে রীতি- রীতিমত আছাড় খেয়ে ব্যাথা সমেত উপস্থিত। বেচারি; খ্রাপ লাগছিল। না আসলেও পারতাম -কিন্তু ওই যে মিস! না মানে বাদ দিযে চাইনি স্পটটা।
এবার গন্ত্য সেনা কাফে। সাধারণ ক্যান্টনম্যান্টগুলো সুন্দর কাফে থাকে, যেখানে  সাশ্রয়ী মূল্যে  ভালো খাবার পাওয়া যায়। দিলীপ আমাদের গিরি পিজায় নামিয়ে দিলো-  জানা গেলো এ রেস্তোরা প্রাইভেট-আর্মি পার্টনার শিপে চলে।
 খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাত ৮ টা।  শেষ পর্যন্ত স্যুপ আর রসমলাই খেয়ে প্রস্থান।

রাত ১০ টায় সিস্টেমে হাজির আমরা।  ব্যাম্বো চিকেন, বাঁশ করুল ভাজি, বাঁশকরুল  ও কলা গাছ সেদ্ধ , সাথে বাঁশকরুল দিয়ে ডাল- কবুতরের  রোস্ট; সেই রকম একটা খাওয়ার আয়োজন।
ব্যাম্বো চিকেন নিয়ে সবাই  উৎসাহিত, ভিত্রে যে পাতা পাওন গেছে সেটা কী লেবু পাতা না অন্য কিছু- সেটি উদ্ধারে ব্যস্ত। আচিংকে ডেকে সমাধান করা হলো সেটি নুরং পাতা। তার একটা তাজা পাতার ডাল আনা হলো- সবার দেখার জন্য। সেই রাতটা খাবার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, রেস্তোরার মালিক ও কর্মীরা সবাই এর জবাব দিচ্ছেন উৎসুকদের।  আমার দুই পুত্র নাজিব নাকিব সহ আমরা ১০ জনের গ্রুপ!

রাত সাড়ে ১১ টা। সবাই হোটেলে। সকালে ঘুম ভেঙ্গে শিপু আর আমি গেলাম  টিকিট আনতে। শান্তি পরিবহন; গন্তব্য চট্টগ্রাম। তার আগে স্থানীয় একটা মফিজ হোটেলে খাওয়া দরকার। তাই সকালের নাশতার আয়োজন করা হলো তুলনামূলক উন্নত মফিজ রেস্টুরেন্ট ভাত ঘরে।

শান্তি- শান্তি পরিবহন ছুটছে চট্টগ্রাম।  চার ঘণ্টা অক্সিজেন মোড়ে গাড়ি থামলো মকবুল  মাইক্রেবাসটা নিয়ে আসলো- চড়ে বসলাম সবাই। যাচ্ছি পতেঙ্গা। কইলাম খাওন অইবো না দুপ্রে।  রিংকি ইশতিায়াককে বলেছে- ক্ষুধা লেগেছে। অন্যরা বলছে না। তার মানে এই নয়, অন্যদের ক্ষুধা লাগেনি। 'দাবা'য় দাঁড়ালাম আমরা। হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানী প্যাক করে খেতে খেতে  পতেঙ্গা। রাস্তায় অস্বস্তিকর জ্যাম।

এর মাঝে ঢাকা ফেরার আয়োজন । ট্রেনের টিকিট পাওয়া গেলো না, বাসের টিকিটও না। শেষ পর্যন্ত মাসুদের সহায়তায়  হানিফ খাঁটি নন এসি মফিজ পরিবহনের টিকিটি কেটে আমরা ঢাকা ফেরার জন্য প্রস্তুত।

পতেঙ্গায় নাজিব বারবারই জলে নামতে চাচ্ছে।  পিতার মত পুত্রেরও সাগর-নদী প্রিয়। যদিও তার মায়ের আকাশ প্রিয়! তাকে সামলে নিতে নিতে, আর  স্ত্রীগণের কেনাকাটায় রাত সাড়ে ৯ টা। ফিরঠছ চট্টগ্রাম শহরে।

ফেরার পথে আমাদের সেই পুরনো গান- এক জোনাকী ,দুই জোনাকী, তিন জোনাকি গাইলাম মামুন আর আমি।  সেই গানের শানে নজুল বর্ণনা করলো লিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা যখন ট্যুরে যেতাম এ গানটা আমাদের সাথে বাজত-নিজেদের কণ্ঠে। শিপু সেটি আবার ইউটিউব থেকে আমদানি করে শোনালো।

রাতের খাবারটার আয়োজন হলো জামান হোটেলে- এ রেস্টুরেন্টের খাবার  ও  সেবার মান যে কোনো সময়ে তুলনায় কেবল খারাপই হয়নি, যাচ্ছেতাই ধরণের-  তা বোঝা গেলো। তার পরেও
মাটন কারি ডাইল সাথে আতপ চাইলের ভাত- খাওয়া শেষ এবার গাড়ির জন্য অপেক্ষা।

হানিফ বাস চলছে না রকেট চলছে টের পাচ্ছি না।  ভোর হবার আগেই কাঁচপুর। ৬:২১ এ আমরা ঢাক্কায়। পেছনে পড়ে থাকলো খাগড়াছড়ি-সিস্টাম আর পতেঙ্গার সন্ধ্যা। সেই সাথে প্রশ্ন: হাঁটাবাবা আর কয় টার্ম কমিউনিকেশন মিনিস্টার থাকলে এই রাস্তা ঘাট ঠিক অইবো!     

'পরিত্যাক্ত' সরকার

পিনাক- ৬ উদ্ধার অভিযান 'পরিত্যাক্ত' ঘোষনা করেছে সরকার। শব্দ চয়ন দ্যাখেন। মানুষ মরে গেছে। লঞ্চ ডুবে গেছে। মুন্ত্রী নাটক বানাইছে। আর আমলা বইসা বইসা তাচ্ছিল্য করছে। উদ্ধার অভিযান ‌'পরিত্যাক্ত'। এটা ময়লা আবর্জনার বাগাড় না যে, 'পরিত্যাক্ত' শব্দ ব্যবহার করা যায়। আমি বাষা বিশারদ নই; হতেও চাই না। কিন্তু 'পরিত্যাক্ত' শব্দে আমার ঘোর আপত্তি আছে। বনি আদমের কী সম্মান না দিচ্ছে সরকার

কিস্তি:: ৯০:: 'মফিজ' মোরতাজা তখন টিএসসির গেটে

ইত্তেফাকের তারুণ্য পেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয ভর্তির কানুনটা কেটে রেখেছিলাম। সেটা সম্ভবত ১৯৯৫ সালের কথা। তার পর মনে ভেবে রেখেছি-এ ক্যাম্পাসে পড়তে আসবো।

১৯৯৮ সালের শীতকালের এক সকালে ঢাকা আসছি। ইন্টারের রেজাল্টের পর।  আব্ববা বলে দিলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হলে ফিরে যেতে হবে নোয়াখালী।

কিছুটা অনিশ্চয়তা নিয়েই ঢাকায় আসা।  বিশ্ববিদ্যালয়ে না টিকলে ঢাকায় আসার থাকা হবে বড় জোর মাস চারেক। তারপর ফের নোয়াখালী। যেখানে আমি ফিরতে চাই না। কেনো চাই না এর কোনো উত্তর নেই।

ঢাকায় এসে সায়েদাবাদ নামার পর মেসে।  ভর্তির লড়াই শুরু করতে সময় লাগলো সপ্তাহ দুই। কোচিং করছি। অনেক কিছুই বুঝতে পারছি না।শহরের ছেলে মেয়েরা ইংরেজিতে ভালো। প্রচুর পড়াশোনা করেছে তারা। তাদের সাথে পেরে ওঠা নিয়ে সংশয়। কিন্তু হাল ছাড়তে চাইনি। তাই জিতেছি।

পিতৃ নিষেধ অমান্য করে প্রথম পরীক্ষাটা দিয়েছিলাম জগন্নাথ কলেজে। সেই পরীক্ষার পরে আত্ম বিশ্বাসটা খুব বেড়ে গেছে! মনে হয়েছে, পারবো। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে না। মাড়াতে হবে না নোয়াখালী কলেজের  গেট।
   
১৯৯৮ সালের নভেম্বরে টিএসসি যাচ্ছিলাাম, বাসে।তখনো জানতাম না, এর অবস্থান। বাসঅলা আমাকে এখনকার কদম ফোয়ার কাছে নামিয়ে দিলো। সেখান থেকে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে শিশু একাডেমি। সেখান থেকে টিএসসি আসলাম।  

গ্রাম থেকে সদ্য নগরে আসা 'মফিজ' মোরতাজা তখন টিএসসির গেটে। কত রকমের কর্মশালার খবর। কত রকমের আলাপ আলোচনা-আড্ডা। ইত্তেফাক ও ভোরের কাগজের পাঠক হিসাবে সে সময় মঞ্চ নাটক ও আবৃত্তির খবর পড়া হয়েছে অনেক।

ভেবে রেখেছি আবৃত্তি শিখবো। সে জন্যই এসেছি। স্বরশীলনের একটা ফরম তুললাম। এর প্রধান মাসুদ সেজান ভাই। এখন নাট্যকার ও নির্মাতা।

আমার কোচিং সেন্টারে পাঠ নেবার কথা। সেটি পিছিয়ে ব্যাচের পর ব্যাচ বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি টিএসসির আড্ডা-আবৃত্তিতে মগ্ন। নগরে মাস দুয়েক বই নাড়াচাড়ার পর আমি অনেকটা আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি, আমার জায়গা এ ক্যাম্পাসে হবে।

ফরম তোলার পর জমা দিতে গেলাম কলা ভবনে।কলা অনুষদের অফিসের নীচতলায় লম্বা লাইন দিয়ে ফরম জমা দিয়ে শহীদ ফারুক রোড়ের মেসে ফিরে এলাম। পরীক্ষা হলো। টিকে গেলাম।

তারপর ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬। টানা ৮ টি বছর এ ক্যাম্পাসে ছিলাম। এখনো যাই। আড্ডা, আনন্দে এ ক্যাম্পাস আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছে।  গ্রামীন মধ্য বিত্ত পরিবারের কড়া শাসনে থাকা এই ঢাকায় ফেরার পর মুক্ত। সে মুক্তির স্বাদ আমি নির্মল আবহে নিয়েছি।

নিজের জন্য একটা নিশ্চিত ভবিষ্যত আমি চাইনি ঠিকই; তবে আনন্দে কাটাতে চেয়েছি প্রতিক্ষণ।

জীবনের প্রতিটি কাজ আমি উপভোগ করেছি। অপমান, অসম্মান আর অবহেলা আমাকে কষ্ট দেয়, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রাখলে সব ভুলে যাই।

এ ক্যাম্পাসের প্রতিটি বাঁকে জীবনের যে উৎসব আমাকে পূর্ণ করেছে, আমার জীবনের অভিজ্ঞতার আলোয় আলোকিত করেছে, সেটি আমি জীবনে দ্বিতীয়বার কোথাও থেকে পাইনি। পাওয়া সম্ভব নয়।

তার ওপর ক্যাম্পাসে ছাত্র হিসাবে থাকার সাথে সম্বাদিকতা আমাকে অধিকার নিয়ে, সম্মান নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত থাকতে সহায়তা করেছে।

আমি যখন যেখানে থাকি, সেখানে সব কিছু নিজের মত করে গড়ে নেয়ার চেষ্টা করি। অক্ষম হলে সে স্থান ত্যাগ করি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো কিম্বা খারাপ দিক।

আমি ভবিষ্যত দ্রষ্টা নই। সামনে কী হবে, তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। তবে চলমান সময়কে আমি আনন্দময় করতে জানি। অতীত আমাকে টানে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আমি অতীত মনে করি না। চলমান বলেই বিশ্বাস করি।

এ ক্যাম্পাসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন মানে আমার মানসিক মৃত্যু।  জীবনের প্রতি বাঁকের পরিপূর্ণতা দিয়ে এ ক্যাম্পাস। আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং আনন্দ অনুভূতির সর্বোচ্চ জায়গা এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।    

কিস্তি ::৮৯:: পর্যটন, বাঘ, টেনশন, নিরাপত্তা এবং আমার উদ্যোক্তা রহস্য


'পর্যটন শিল্পের বিকাশের আন্দোলন'র কর্মী হিসাবে কাজ করছি, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্যারের এস্কারশনে শিক্ষার্থীদের নিতে চান না। কারণ ব্যাখ্যা করে  রসায়নের অজয় স্যার আমাকে বললেন, কোথায় যাবো, নিরাপত্তার কি হাল, এ সব নিয়ে টেনশন।

২০০৪ সালের এক দুপুরে কার্জন হলে তার অফিসে এভাবেই তার সাথে কথা হচ্ছিলো। বল্লাম, স্যার টেনশনের কোনো কারণ নেই। দায়িত্বটা আমি নিচ্ছি। স্যার ভরসা পেলেন বলে মনে হলো না। তবুও বললেন, দেখি।

স্যারের সাথে আলাপের পর আমার মনে হলো পর্যটন স্পটের নিরাপত্তা, থাকার ব্যবস্থা, যাতায়াত ও  সাইট সিয়িং সম্পর্কে একটা সচেতনতা তৈরি করা দরকার।

সে জন্য ছাত্র উপদেষ্টাদের দপ্তরে গিয়ে এটা নিয়ে আলাপ শুরু করলাম। আমার সাথে এ আলাপে  ট্যুরিস্ট সোসাইটির সদস্যদের কাউকে কখনো হাতের কাছে পেলে নিয়ে যেতাম।

শেষ পর্যন্ত অজয় স্যার তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেলেন সেন্টমার্টিন। আমার খুব ভালো লেগেছিন, স্যার আমাকে আস্থায় এনেছিলেন বলে। পরের কয়েক বছর আমরা বেশ কয়েকটি ট্যুরের আয়োজন করে দিলাম।

আয়োজনটা করতে হয়েছিল ভিন্ন কারণে-আমাদের দেশের ট্যুর অপারেটরদের নম্বর দিয়ে আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাঠাতাম। তারা একটা ট্যুরের জন্য যে চার্জ করতেন, তা  খুবই 'অসঙ্গত' মনে হয়েছে আমার কাছে।  শিক্ষার্থীরা এসে বলত- 'ভাই এত টাকা দিয়ে কি ট্যুর হবে!'

ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন ছাত্র আমার কাছে এলেন, ২০০৫ সালে। তারা একটা স্টাডি ট্যুর করতে চান। সে জন্য আমাদের হেল্প দরকাল। সব আয়োজন করা হলো। শামসুল আলম স্যারের  সাথে আমি গিয়ে কথাও বলে আসলাম।

আমার অনুজ বাপ্পী ও সামিউল হক শামীমকে পাঠালাম তাদের সাথে। সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার, রাঙামাটি-বান্দরবান ঘুরে তারা সহিহ সালামতে ফিরে এলেন।

ঢাকায় এসে হিসাব করে দেখি  শামীম আর বাপ্পী দুহাজার টাকা লস করে এসেছে। পরে সে টাকা আমি  দিয়েছি। অবশ্য বাড়তি টাকা খরচ করায় বাপ্পী আর শামীমকে একটু বকাও দিয়েছিলাম।

একই বছরে আইন বিভাগের ছেলে মেয়েরা বলল- তারা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন  বেড়াতে যেতে চায়। এবার ইসলামিক স্টাডিজের বাজেটটা মাথায় রেখে, যাতে লস না হয় সেভাবে প্ল্যান দিলাম।  তারা আরো কয়েক জায়গায় ঘোরাঘুরি শেষে, আমাদের বল্ল- আমরাই যেনো সব এন্তেজাম করি। করা হলো।

আমার বন্ধু মিল্লাত ছিল সেই ব্যাচে। আরেকটা মেয়েকে নিয়ে এসেছিন, তার নামটা মনে  নেই। আমি সব ম্যানেজ করে দিলাম। যা খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে কম খরচে তারা ট্যুরটা করে আসলো। খুবই আনন্দময় ও সফল ট্যুর হয়েছে বলে তারা ঢাকায় ফেরার পর আমাকে জানিয়েছিল।

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুন্দরবনে একটা ট্যুরের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের একটা ব্যাচ যাবে। কয়েকটা ছেলে মেয়ে আসলো ডাটসের অফিসে।

বল্লাম- পরামর্শ চাইলো সুন্দরবন যাওয়ার জন্য ভালো  সুবিধা ও প্যাকেজ কারা দেয়। পর্যটন করপোরেশন সে সময় সুন্দরবন ট্যুর করাতো, তাদের ঠিকানা দিলাম। সাথে গাইড ও বেঙ্গল ট্যুরের ঠিকানা।

ওরা আরো কয়েক জায়গায় ঘুরে আসলো। পর্যটন করপোরেশন ৩ দিনের ট্যুরের জন্য কমপক্ষে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ফি  চেয়েছে। আমি আগেই বলেছিরাম, ট্যুরিস্ট সোসাইটি করালে ২৫০০ টাকায় ম্যানেজ করা সম্ভব। তবুও ওরা বাইরে চেক করে ফিরেছে।

ফেরার পরে  ওরা বল্ল আমরা ম্যানেজ করলে চলবে না।  আমাদেরো যেতে হবে।  তখন ফি বেড়ে ২৮০০ টাকায় ঠেকলো। কারণটা হলো ট্যুরটা ম্যানেজ করার জন্য আমাদের অন্তত ৬ জনকে যেতে হবে। তারা সংখ্যা ৩২ জন। তাহলে ৬ জনের খরচ এবং তাদের অন্তত একটা করে শার্ট কিনে দেবার  টাকা ধরে এই ফি। আগে ২৫০০ টাকা ফি ধরার সময় এ সব হিসাব টা ছিল না।

ওরা তাতেই রাজি।

ঠিক করা হলো এমভি পানকৌড়ি। দোতলা লঞ্চ। বাসে মংলা হয়ে সেখান থেকে সরাসরি লঞ্চে। বাগের হাটের স্থানীয় সাংবাদিক রবিউল ভাই ও মংলার মনিরুজ্জামান কবীর খুব হেল্প করেছিল। মংলা থেকে তিন দিনের রসদ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। যাওয়া মাত্র সবই তোলা হলো।

সকালের নাশতা খেতে খেতে লঞ্চ চলছে। সেই ট্যুরে আমার সাথে লিপি, সাদিয়া, মিটি, শামীম, মামুন এবং আমানত ছিল।  আমরা  হৈ হুল্লোড় করে বেশ কাটিয়েছি।

পশুর নদীর জলে, জোছনা রাত। লঞ্চ চলছে। হরিণ টানায় আমরা বিরতি দিলাম। ছোট ছোট চারটা ঘর। ফরেস্টের লোকজন থাকেন। রাতে আমরা নামলাম সেখানে।

বন বিভাগের লোকজনের সাথে আলাপ হচ্ছিলো- ক'দিন আগেও এখান থেকে 'বাঘে মানুষ নিয়ে গেছে' টাইপের গল্প শুরু করলেন তারা। কিছুক্ষন আড্ডার পর আমরা লঞ্চে ফিরে এলাম।

জোছনায় ভেসে যাচ্ছে পশুরের জল। বন গাছের পাতার ভেতর লুটুপুটি খাচ্ছে কুমারী জোছনা।  সে কী মহা আনন্দ উচ্ছ্বাস সবার। গানে-গল্পে অনেক রাত। খেয়ে দেয়ে সবাই ঘুম।

সকালে লঞ্চ ছুটলো কটকার দিকে। সেখানে নামা হলো। অনেক্ষণ কাটানোর পর আমরা  জামতলী বিচে ভিজতে গেলাম। ওয়াচ টাওয়ার হয়ে লঞ্চে ফিরছি। এর মধ্যে মাঝপথে ইঞ্জিন নৌকাটা নিয়ে একদল তরুন-তরুণী অন্যদিকে চলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলো ইঞ্জিন।  টেনশন- চরমে। ছেলে পুলো সবাই আমাকে ঘিরে আছে। ভাই এখন কী হবে। ট্রলার তো সাগরের দিকে চলে যাচ্ছে।

বল্লাম- তোমরা যও। একজন এক প্যাকেট এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট এগিয়ে দিলো, পাশ থেকে আরেকজন বল্ল, ভাই বেনসন খায় না। গোল্ডলিপ খায়। আরেকটা ছেলে দৌড়ে এক প্যাকেট গোল্ডলিপ নিয়ে আসলো। শামীম সিগারেট ধরিয়ে দিচ্ছে।

ভাবছি কী করবো-
পরে লঞ্চের মাস্টারকে বল্লাম লঞ্চ স্টার্ট দ্যান। মাস্টর আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে। লঞ্চ নৌকার কাছে গেছে নৌকা ডুবে যাবে। বল্লাম ডুবে গেলে  নদীর জল থেকে মানুষ তোলার অভিজ্ঞতা আমার আছে।  চলেন। স্টার্ট নিলো লঞ্চ। শামীম আর  মামুন লাইফ  বয়া নামিয়ে আনলো।

ধীরে ধীরে লঞ্চ গিয়ে নৌকার কাছে পৌঁছালো।  সবাইকে তুলে আনলাম। নৌকায় থাকা সবার ধারণা ছিল- খুব বকা দেবো। আমার মুড আর  আর একটার পর একটা সিগারেট  ফোঁকা দেখে সবাই ভয় পেয়েছিল।তাতেই যথেষ্ট। কিচ্ছু বল্লাম না।

দুপুরের খাবারের সময় সবাই ফের সতর্ক করলাম।  নির্দেশনার বাইরে কিছু করা যাবে না। স্বর্ণা নামের একটা মেয়ে বরাবরই নিয়ম ভাঙ্গার পক্ষে। ওর দিকে তাকিয়ে কথাটা আরেকবার বল্লাম।  মাথা নিচু করে বলল- ভাই ঠিক বলেছেন।

আবার ওরই বান্ধবীরা পেছনে এসে আমাকে বলে স্বর্ণা আমার ওপর খুবই বিরক্ত।

আমার খবরদারি সবচেয়ে বড় কারণ হলো- এ ট্যুরে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের কোনো শিক্ষকই আসেননি। শিক্ষকরা আমাকে বলেছেন, আমি যেনো তাদের দায়িত্ব পালন করে  শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ঘুরয়ে আণি। তাই আমার জন্য যে কোনো রকমের শাসন জায়েজ ছিল!

দুপুর তখন দুইটা কি আড়াইটা। সবার মুখ থেকে ভয়ের ছাপ কমে গেছে। কানের কাছে কেউ কেউ এসে বলছিলো, ভাই বাঘ কি দেখা যাবে। বল্লাম আশা ছেড়ে দাও। কিন্তুি  কী আশ্চর্য। আমরা মাত্র  কচিখালী টাইগার পয়েন্টে এসে নামলাম। কেউ কেউ পুকুরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে বল্লাম চলো শন খেত মাড়িয়ে আসি। কথাটা শুনে সবাই উচ্ছ্বসিত।

এর মধ্যে শন ক্ষেতের মাথায় বনের ভেতর থেকে বাঘ মামা উঁকি মারলেন।  সামনে কয়েক পা এগুলেন। এত্ত মানুষ একসাথে দেখে পালাবে, নাকি সামনে এগুবে এ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল (নিজের বাঘ বিশেষজ্ঞ মনে লইতাছে)। আমরা সবাই দ্বিধা দ্বন্দে- এইটা কী বাঘ! নাকি হরিণ। নাকি বড় বন কুত্তা।

সাথে থাকা বনরক্ষী এবং স্থানীয়  ফরেস্ট অফিসার এসে বললেন, আপনাদের ভাগ্য ভালো বাঘ দেখে গেলেন। আসলেই ভাগ্য ভালো।  জীবনে দুইবার সুন্দরবনে উন্মুক্ত বাঘ দেখেছি। সেবার ছিল দ্বিতীয় ঘটনা। সবাই এতটা আনন্দিত যে দুপুরে খাবারের কথায় যেনো ভুলে গেলো।
     
ঢাকায় ফেরার পর জানলাম স্বর্ণা রোকেয়া হলে তার  সব বান্ধবীদের জানিয়েছে সুন্দরবন ট্যুরটা অসাধারণ হয়েছে।

এই ট্যুরের পরই আমি নিশ্চিত হলাম, সফলভাবে ট্যুর অপারেট করা  সম্ভব। কাজটা আমি করতে পারি। সেটা লাভজনক ব্যবসা হতে হবে, তা কিন্তু নয়। এটা এক ধরণের সেবা হবে। ট্যুরিস্ট সোসাইটিতে আমার মেয়াদ পূর্ণ করার পর চূড়ান্তভাবে আমি এ কাজটা করে আসছি। এ থেকে যে আমার আয় হবে এবং তা দিয়ে সংসার চালাবো, এমন ভাবনা ছিল না। এখনো নেই।

লক্ষ্য একটাই সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রমণ নিশ্চিত করা। এই একটি জায়গায় আমি নিজেকে সফল হিসাবে মূল্যায়ন করতে পারি।  :P 

কিস্তি :: ৮৮:: ভার্জিন ড্রিংকস,পুরনো ঢাকা এবং তেহারি সমাচার



ঘোড়ার গাড়িতে করে পুরনো ঢাকার বাংলা বাজারে যেতাম। এখনো যাই। তবে কুবই কম।  আগে ভাড়া ছিল ৫ টাকা। এখন ২০ টাকা। তাতে কী। এই একটা ভ্রমণ আমার কাছে উপভোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আমার প্রথম রোজগার ছির বাংলা বাজার কেন্দ্রিক।

নোট বই , গাইড বই লিখতাম। ভালোই ইনকাম ছিল। ঘটনাটা এ রকম- আমি  ঘুমিয়ে আছি। পাঞ্জেরীর প্রকাশণীর নেসার ভাই  আনিস ভাইয়ের সাথে ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত সব ক্লাশের বইয়ের নোট তৈরির আলাপ করছিলেন। তার কথার উচ্চ স্বরে আমি মশারী ফাঁক করে  দেখলাম। 

আনিস ভাই পরের দিন আমাকে কিছু কাজ দিলেন। একটা বাংলা বইয়ের পুরো নোট ঘন্টা দেড়েকে বানিয়ে দিলাম।  আমার লেখা তার ও নেসার ভাইয়ের পছন্দ হলো।  তারপর আমি লিখতে শুরু করলাম। তবে প্রকাশনার কাজে জড়িয়ে যে সব বিষয় বেশি  সঙ্কটে পড়তাম তা হলো প্যামেন্ট। এখনো স্কলার্স পাবলিকেশন্সের কাছে আমার হাজার পঞ্চাশেক টাকা বাকি পড়ে আছে।
সেই ২০০১ সাল। আর এখন ২০১৪। টাকা দেবো, দিচ্ছি করে ঘুরিয়েছেন, পরে আর  যাইনি।

তবে লেখালেখির বিষয়ে আর্থিকভাবে সবচেয়ে সৎ  আবদুৃল্লাহ অ্যান্ড সন্স। আমি তাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো স্নাতক শ্রেণীর বই এডিট করে দিয়েছিলাম। এক হাতে কপি নিয়েছে, আরেক হাতে টাকা দিয়েছে।

টাকা নিযে গড়ি মসর কারণে পরে আর লেখা হয়নি। সে সসময়  যাত্রাবাড়ি ও পরে বকশিবাজার থেকে  পুরনো ঢাকার বাংলা বাজারে যেতাম ঘেড়ার গাড়ি করে। বাস চলতো- মুড়ির টিন। এক টাকায় যাওয়া যেতো গুলিস্তান থেকে সদরঘাট।  এতটা কঠিন যানজপট ছিল সেই ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, সে সময়টা বাসে  গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা, কখনো আরো বেশি সময় লাগতো। এখন কেমন অবস্থা জানি না। কালন আমি এখন যাই শুক্রবারে!

পরে অবশ্য বকশিবাজার থেকে  আরমানি টোলা হয়ে শটকাটে ২০ থেকে ২৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় চলে যেতাম। এভাবে অনেক দিন গেছি। সেখানে যাবার সুযোগে পুরনো ঢাকার সাথে আমার একটা আত্মিক  সম্পর্ক।

শাঁখারি বাজারে গেলাম ২০০০ সালরে দিকের এক বিকালে। আমাদের এলাকার এক বন্ধু পিংকুর সাথে। ওর বোন থাকতো সেখানে। ভাগ্নি নাচ  শিখছে, মামাদের নাচ দেখাবে, তাই যাওয়া। একটা সরু গলি ধরে আমরা ভিতরে ঢুকছি, আর মনে হচ্ছে আমি গুহার ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছি। আমি একটু মোটাসোটা ছিলাম, তাই  সরাসরি ঢুকতে পারিনি, একটু  পাথালি হয়ে ঢুকতে হলো। সেখানে আলো ছাড়া একটা মিনিটও কাটে না কারো।

অনেক্ষন ছিলম, মিষ্টি খেলাম। ভাগনির নাচ দেখলাম এবং তার সঙ্গীত প্রতিভার কিঞ্চিত দেখে ফিরে এলাম। এভাবে পুরনো ঢাকা-

সে সময় আমি  ওযারীর আল আমিন কোচিংয়ে ক্লাস নিতাম। গিযে দেখি সব মেয়ে। ওই কোচিংয়ে কোনো ছেলেকে পড়ানো হতো না।  আমার ক্লাস নেয়ার কথা বাংলা, ইতিহাস, অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞানে। সেটি ইন্টার থেকে ডিগ্রির মেয়েদের। কিন্তু অনেক টিচার আসতেন না। তাই আমাদক বদলি খাটতে হতো। নাইট টেনেও পড়িয়েছি।   

কোচিং চালাতে 'সায়াদাত' ভাই। তিন বললেন- আমি যাওয়ার কারণে তার শিক্ষার্থী বেড়েছে।  আমার বিশ্বাস হলো না। পরে আমি  যখন ছেড়ে আসি, উনি খুব মন খারাপ করেছিলেন।  সায়াদাত ভাইয়ের স্ত্রী তাকে ছেড়ে গেছেন বা তিনি  তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। যাকে ভদ্র সমাজে  ডিভোর্স বলে। উনার একটা সন্তান ছিল। মাঝে মাঝে তিনি  ক্লাসের ফাঁকে তার কাছে ছুটে যেতেন।

কোচিংয়ের সুবাদে আমার দুজন নারীর সাথে ভালো সম্পর্ক তেরি হয়েছিল। তাদের একজন নীলা। আরেকজন ঝুনু।  নীলা হালকা পাতলা। আর ঝুনু অনেক মোটা। তবে দুজনই ফর্শা- সুন্দরী।  তারা আমার ক্লাশের ছাত্রী না হয়েও আমার লেকটচার শোনার জন্য আসতেন! (নিজেদের কেমন  মফিজ মনে লইতাছে!)

নীলা মেয়েটা ইভটিজিংয়ের শিকার হতো, সেটি জানার পর একটা 'ব্যবস্থা' করেছিলাম। দক্ষিণ মুহসেন্দীতে ওদের বাসা। বার কয়েক  দাওয়া করেছিল, কিন্তু ভভঘুরে  কুদ্দুসের সময় কই! যাওয়া হয়নি।
ঋষিকেশ দাস লেনে ছিল ঝুনুদের বাসা। ওর মা বাবা বেশ কয়েকবার বলেছিল পুররো ঢাকার  অতিথি আপ্যায়ন কেমন? তা দেখার  সুযোগ নিতে। আমি পারিনি।

আল আমিন কোচিংয়ের চাকুরীটা ছাড়ার আগেই আমার প্রথম আলোর  প্রদায়ক সংবাদদাতার কাজটা জুটেছিল।  আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকি। নট কাম!  কাজ না থাকলে ভালো লাগে না।  প্রথম আলোর হয়ে কাজ করার সূচনার ফাঁকে রাজীব ভাই বললেন, আপাতত পেজ বেরুচ্ছে না।  তাহলে আমার কী করণীয়!

প্রথম আলোর ৫ নম্বর পাতায় একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো- প্রিয় মুখ নামে একটি পাক্ষিক ম্যাগাজিন বের হবে।  রাজীব ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে যোগ দিলাম। অনেক দিন সেখানে কাজ করেছি।

আমার কিছু অদ্ভূত ঘটনা আছে। তার দুটো প্রিয় মুখে থাকার সময়- আমি ভাবলাম দিনের ১০ টা থেকে রাত ১০  পর্যন্ত  পানি খাবো না। দেখি কাজটা করা যায় কিনা।  তাই হলো।  সে সময় ইয়ুথ গ্রপ একটা পানীয় বাজারে আনে- নাম  দেয় ভার্জিন। সম্ভবত আমি সেই ব্যাক্তি যে সবচেয়ে বেশি ভার্জিন ড্রিংকস খেয়েছি।

মাস চারেক ভার্জিন ড্রিংকস খাওয়ার পর কমিয়ে আনতে বাধ্য হলাম।  দিনে মাত্র দুই লিটার! কারণ আমার পানীয়ের খরচ  দিতো প্রিয়মুখ কর্তৃপক্ষ। আর খাবার আসতো এলিফ্যান্ট রোড়ের  টেস্টি খাবার ঘর থেকে। সেখানে তারা আমার নামটা বদলে দিয়েছিল। নতুন করে রেখেছিল- ' খাইন্না ভাই'।

আরেকটা ঘটনা- আমি সে সময় আজিমপুরের নিউ পল্টনে একটা মেসে উঠলাম। সেই মেসে আমার রুমমেট হিসাবে নিলাম কায়সার ভাইকে। দেয়ালে পোস্টার লিকে তাকে পাওয়া! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্সের একটা সাবজেক্ট থেকে পাস করে চাকুরীর খুঁজছেন। দুজন মিলে থাকি, ভালোই কাটছে। কিন্তু কায়সার ভাই বাইরে থাকেন, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করেন না। আমারো একই হাল।তাই বুয়া মুক্ত মেস! 

 যেহেতু বাইরেই খেতে হবে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একমাস টানা চলবে তেহারি এবং বিরিয়ানী । নীলক্ষেতের তেহারির সুনাম আছে।  চেষ্টা করলাম এবং সফল হলাম। ঠিক একমাসের শেষ দিন বাড়ি গেলাম।  বিকাল ৫ টার দিকে খেতে বসলাম- এক মাস পরে ভাত!  তাও আবার মায়ের হাতে! সে কী সুস্বাদু। চার প্লেট ভাত খাওয়ার পর মনে হলো- পেটে আর জায়গা হবে না। তৃপ্তিতে ডুবে আছি।

কিস্তি :: ৮৭:: প্রিয় ক্যাম্পাস, শিক্ষক ও শিক্ষক রাজনীতি



আমার জীবনের যত প্রাপ্তি, যত আনন্দ, যত সুখ, যত ভালোবাসা, যত অর্জন- সব কিছুর পেছনেই আমার  প্রিয় ক্যাম্পাস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

৭  বছরের ক্যাম্পাস জীবনে  মানুষজন আর তাদের  ভেতরকার মন সম্পর্কে জানার অফুরন্ত সুযোগ পেয়েছি! তার সবই ঠিক, এটা কোনোভাবেই আমি দাবি করবো না।

আমার এখনো মনে আছে, শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের সামনের পেপার বিক্রেতার হাতে ধরা জনকণ্ঠ পত্রিকার কথা, যার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় একটি খবর- জ্ঞান তাপস আবদুর রাজ্জাক আর নেই। লেখাটা আমার বুকের ভেতর বিঁধলো।  একটা বড় রকমের ধাক্কা খেলাম।

তখনো রাজ্জাক স্যার সম্পর্কে সেভাবে জানা হয়নি। ডিপার্টমেন্টে দু চারবার তার নাম শুনেছি। তার লেখা বই আছে কিনা সেটি জানার চেষ্টা করছিলাম, পাইনি। পরে জেনেছি তার কোনো বই বের হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বাংলাদেশের যে বিকাশ সেটির পেছনে যে মানুষটিকে কঠিনভাবে মানা হয় তিনি রাজ্জাক স্যার।  আমার সবচেয়ে আনন্দের জায়গা ছিল- এই ক্যাম্পাসের 'মাস্টোর' কারা ছিলেন, তা জানার চেষ্টা করা।

সরদার ফজলুল করিম স্যারের  সাথে আলাপে এবং রাজ্জাক স্যার সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা থেকে জানার চেষ্টা করলাম- তাতে রাজ্জাক স্যার চেয়েছেন পণ্ডিত ব্যাক্তিরাই এ ক্যাম্পাসের 'মাস্টোর' হিসাবে কাজ করুক। সে জন্য তিনি 'মস্টোর' সংগ্রহ করে বেড়াতেন।

তার সে চাওয়ার কারণেই হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের বাইরে ভালো মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। সত্যেন বোস, গোবিন্দ দেব, রাজ্জাক কিম্বা শহীদুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, দেওয়ান আজরফ স্যারের মত শিক্ষকরা এ ক্যাম্পাসে আলো ছড়িয়েছেন।

সেই ক্যাম্পাসে এখন যারা শিক্ষক তাদের নিয়ে অনেক তর্ক আছে। অনেক রকমের নেতিবাচক ভাবনা আছে। সেটি খোলাসা করে দেখার সুযোগ হয়েছে ক্যাম্পাস জীবনেই।

আমাদের শিক্ষকরা যতটা না গবেষণা, পড়াশোনার কাজে ব্যস্ত তার চেয়ে বেশি দলীয় কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন।  বঙ্গবন্ধু বড় না জিয়া বড় সে আলোচনাই এখানে মুখ্য। বাম রাজনীতির সাথে জড়িতরা  গোলাপী শিক্ষকরা এখনো  আছেন তাদের পুরনো থিওরিতে। মার্কস- অ্যাঙ্গেল-মাও-লেলিন নিয়েই তাদের রাজ্যের চিন্তা। চে কে নিয়ে তাদের ভানার অভাব। কারণ সম্ভবত চে পুরো মাত্রায় বিপ্লবী।

তবে এ সবের বাইরে একদল আছেন কেবল কামাগুনে পোড়ার মতলবে। এমন একটি ডিপার্টমেন্ট নেই যে ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষকও এ কাজটি করেননি। এটা খুবই হতাশার হলেও 'নেতিবাচক' বলে মন্তব্য করতে চাই না। এর কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার কয়েকটি তরিকার একটি সেক্সচুয়াল রিলেশন।

নারী পুরুষ দু রকমের শিক্ষকের মধ্যে এ প্রবণতা আছে। তবে পুরুষ শিক্ষকদের শিকার সম্পর্কে আমরা অনেক সময় জেনে থাকি। নারীদের সম্পর্কে জানা যায় না। কারণ বলা মুশকিল।

তবে এ সব জানাজানি হয়, সাধারণ 'সব দেওয়ার' পরে যদি কাঙ্খিত নম্বর না পাওয়া যায়। মানে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট না হওয়া যায়।  এ রকম কিছু ঘটনা  বিশ্লেষণ করেই আমার এ অনুসিদ্ধান্ত।

 আবার ক্যাম্পাসে অনেক মেয়ে শিক্ষকদের স্ত্রী হয়ে ক্যাম্পাসের অংশ হয়ে থাকতে চান। এ অভিযোগ পুরনো। তবে সেটি অনেকে মানতে চান না। মিথিলা তাদের একজন। এখন বুয়েটের শিক্ষকতা করে। তাকে আমি প্রসঙ্গটা তুলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে বলেছিল, নিজ যোগ্যতায় ক্যাম্পাসের অংশ হতে পারা উচিৎ। আমিও তার সাথে দ্বিমত করি না।

 তবে জ্ঞানের এ অভয়ারণ্যে অনেক শিক্ষক জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি স্ত্রী-নারী সঙ্গ উপভোগ বঞ্চিত হয়ে হাতের কাছে যা পান;  তা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করে থাকেন, এ নিয়ে  সঙ্কট চলে।

কেবল ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে অন্তত ১০ টি অভিযোগ লিখিতভাবে উত্থাপন করা হয়েছিল, এর সবই যৌন হয়রানির। এখানে উর্দু- ফারসি-বাংলা-ইতিহাসের শিক্ষক যেমন ছিলেন, তেমন সাংবাদিকতা, প্রাণীবিজ্ঞান কিম্বা রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষকও অভিযুক্ত হয়েছেন।

 অনেকে শাস্তি ভোগ করেছেন। আমার সাংবাদিকতার একজন গুরু স্থানীয় মিলান ফারাবী। তিনি সব সময় একটা কথা বলতেন- প্রত্যেক প্রতিভার কোনো না কোনো বিকৃতি থাকে। সম্ভবত এটা তারই অংশ।

তবে শিক্ষক রাজনীতি, ভোট বৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য  যে পরিমাণ শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছে আগে, এখনো পাচ্ছে সে জায়গা লজ্জার। অপমানের। কিন্তু আমরা সব সময় নিজেদের সুবিধা বিবেচনা করে বিরোধীতা-বর্জন বা গ্রহণের নীতি অনুসরণ করায় তার কোনো সমাধান হচ্ছে না।

একটা ঘটনা বলি- তাহলে রাজনীতির নোংরা রূপটা বোঝা সহজ হবে।  ২০০৩ সালের ঘটনা, সম্ভবত। আইন বিভাগের একজন শিক্ষককের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলো বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।  তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।  দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাস করে কেবল মাত্র সরকারি দলের হওয়ায় সে সময় নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে তার আচরণে নীল দলেরই অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন।  তাই তিনি অনেকটা বিদ্রোহ করে বসলেন।  

 বাস মালিক ওই শিক্ষককে পরে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। এক সময় ছাত্র রাজনীতি করতেন, তাই সহজেই ক্যাম্পাসে কিছু গুটি চালাতে শুরু করলেন। আমাকে ফোন করে  টিএসসি থেকে তুলে নিলেন। বললেন আলাপ আছে। গেলাম। দেখি গাড়ি কাকরাইল হয়ে শেরটানে ঢুকছে।

তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছি, কিন্তু নামটা তো পত্রিকায় এসেছে সে জন্য তিনি আমাকে খাওয়াতে চান। তার মতে আলোচনায় আছেন তিনি, এটাই বড় কথা।

রাতের খাবারের পর বললেন , 'আমি কাল ভিসি ফায়েজের কাছে যাবো, গিয়ে একটা লাত্থি মেরে তার চেয়ার সহ উল্টে দেবো। ' আমি হাসলাম। কারণ হলের ক্যাডারি ভাব এখনো তার যায়নি বলে মনে হয়েছে। তিনি বললেন হেসো না। সত্যি করবো।

তার পরে প্রায় ফোন করতেন, যা ঘটাতেন জানাতেন, আমরা রিপোর্ট করতাম। যেহেতু মানবজমিনে আমি তার পক্ষ নিয়ে কোনো রিপোর্ট করিনি, তাতে তিনি কিছু মন খারাপ করেছিলেন।

এরই মধ্যে একদিন রাতে আমরা সাংবাদিক সমিতির দোতলায় আরাম করে টিভি দেখছিলাম, হুট করে খবর এলো প্রফেসর আজাদ  চৌধুরী স্যারের ওপর গুলি হয়েছে। কমার্স ফ্যাকাল্টিতে এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা ছুটলাম । আজাদ স্যার এ জন্য সরকার দলীয়দের অভিযুক্ত করলেন। কিন্তু ক্রস চেক করে দেখা গেলো স্যারের অভিযোগ ঠিক নয়। তবুও অফিসে খবরটি দেয়া হলো- যেহেতু আজাদ চৌধুরী স্যার বিদায়ী সরকারের আমলের শেষ ভিসি ছিলেন, তা গুরত্ব সহকারে ছাপাও হলো।

ফলোআপ রিপোর্ট করতে গিয়ে জানতে পারলাম, সেই শিক্ষকই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিস্মিত হলাম এবং নিজের দিকে আরেকবার তাকালাম, এ কোথায় বসত করছি। আজাদ স্যারও সম্ভবত সেটি পরে জানতে পরেছিলেন, তাই এ নিয়ে নীল দলের আন্দোলন আর হয়নি।

এ রকম আরো উন্নত রুচির পরিচয় অনেক শিক্ষক দিয়ে থাকেন। এটা একটা উদাহরণ মাত্র।  আমরা এটাও দেখি  কোনো কোনো শিক্ষক  সরকারের আমল বুঝে মন্তব্য করেন।

 তবে বরাবরই আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়েছে, তাহলো যারা শিক্ষকতা করবেন, পান্ডিত্য অর্জন করে তা বিতরণ করবেন বলে জীবনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের ঘর সংসার করা উচিৎ নয়। কারণ বৈষয়কি বিষয় আর জ্ঞানের চর্চা দুটোর এক সাথে চালানো খুবই কঠিন।

যদিও এটা একটি অস্বাভাবিক প্রস্তাব।

তবে দ্বিতীয় প্রস্তাব শিক্ষকদের যথেষ্ট বেতন ও  সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।  নইলে রাজণীতি, দলবাজি আর ফাও আড্ডায় সবাই মগ্ন থাকবেন। নিশ্চিত ভাবেই এটা হবে।  


 

     

কিস্তি :: ৮৬:: যৌবনা ঝরণা, আনন্দময় পাহাড় সমুদ্র ভ্রমণ

আমারা সংখ্যায় ১৯ জন। ছুটলাম পাহাড় ও সমুদ্র দেখার জন্য। সালটা ২০০৬।  ট্যুরিস্ট সোসাইটি থেকে আমার মেয়াদের শেষ দিকে ঘটনা। বরষাকাল। টুই টম্বুর  কাপ্তাই লেক।

রাতে কমলাপুর থেকে বাসে চড়লাম-বাস চলছে। আমরা আড্ডায় মগ্ন। এমন আড্ডা যে, অন্যরা একটু বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন। সে দিকে  চোখ রাখার ফুরসত নাই। মধ্যরাতে দেখলাম-ঘুম, প্রচণ্ড ঘুমে ক্লান্ত সবাই।

রাঙ্গামাটির রাস্তায় ঢুকতেই বাসের ঘূর্ণিচক্র। চোখ কচলে সকাল দেখলো সবাই। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ জমে আছে। দূরে সূর্য উঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে।

বাটফুলের পাতা ছুঁয়ে পড়ছে, অল্প আগে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি। আমাদের এমন ট্যুরের জন্য জনপ্রতি ফি ছিল ১৯০০ টাকা। হোটেলে ছিলাম ৪ রাত। ঘুরেছি  ৫দিন। সেই ট্যুর এতটা আনন্দঘন ছিল, সেটি এখনো আপ্লুত করে।

রাঙ্গামাটি শহর হয়ে রিজার্ভ বাজারে সিনেমা হলের সামনে নামলাম আমরা। সামনে তাকালে গ্রিণ ক্যাসল। চন্দন দা বলে গেছেন,' তারকে ভাই আসবেন।' তাই হোটেলের অন্য সহকারি ম্যানেজার ফরহাদ চাবি নিয়ে বসে আছেন।

 রুম বুঝে পাওয়ার পর  দেখলাম মেঘলা আকাশ বৃষ্টি ঝরিয়ে গেলো। টিপু ভাইয়ের গ্রিণ রেস্টুরেন্টের কাঠের নিচতলায় আমরা পরোটা, ডিম আর চা খেতে খেতে ভাবছিলাম,  লেকে নৌকায় আজকে ঘোরা ঠিক হবে কিনা।

তবে ভাবনার আগেই কামাল হাজির, বলল- 'তারেক ভাই, কখন  আসলেন?' নৌকা আনতে গেলাম বলে বের হয়ে গেলো। আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর অপেক্ষা করলো না।

কালো ছাদ অলা একটা নৌকা নিয়ে মসজিদ ঘাটে আসলো কামাল। বলল- 'এইটা বড়ো নৌকা আছে; নিয়ে আসলাম। আপনি অনেক দিন পরে এসেছেন ,তাই।'

আমরা হোটেল ফেরার দরকার মনে করিনি, উঠে পড়লাম নৌকায়। কামাল নৌকা চালাচ্ছে। সেইবার ট্যুরে ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করেছি সবাই।

এর কারণ আমরা সবাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। দু'একজন অতিথিও ছিলো। তারাও আনন্দে কাটিয়েছেন পুরো সময়।

রাজার বাড়ি ও বৌদ্ধ বিহার হয়ে আমরা ছুটছি শুভলং। এরই মধ্যে বৃষ্টি। সবাই ভিজছি। আনন্দময় বৃষ্টিতে ভেজা কতটা উপভোগ্য সেটি সবাই জানলো আরো একবার!

সাদিয়ার অ্যাজমার সমস্যা! তাতে কি?  সবাই-বৃষ্টিতে ভিজছে, আর ও নৌকার ছাদের নীচে বসে থাকবে, এটা হতে পারে না।
সবাই নৌকার ছাদে বসে আছি। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে  পুরো পাহাড়, বড় বড় ফোঁটায় কাপ্তাই লেকের ওপর গড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি।

বরকল মোড়টা পার হতেই একটা বড় ঝরণা চোখে পড়লো- শীতের সময়  এটা থাকে না। এতজল, এত প্রাণ, এত প্রাচুর্য নিয়ে দুরন্ত একটা ঝরণা ছুটছে, সেখানে আমরা নামবো না, হতে পারে না।

 হই হই করে আমরা নেমে পড়লাম, কামাল বলল, এখানে সিকিওরিটি সমস্যা থাকতে পারে। আমলে নেয়ার মত সময় ছিল না। প্রায় এক ঘন্টা  বহমান ঝরণার জলে আমরা ডুবে থাকলাম। তার পর উঠতে উঠতে আরো ১৫ মিনিট।

শুভলং ঝরণাতে বর্ষায় যে পানি থাকে, ভাবনার বাইরে ছিল। সে ঝরণায় আরো দু'ঘন্টা কাটানোর পর আমাদের কারো কারো হাঁচির উপক্রম হলাে- তাহলে কী করা যায়, ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার উপায় কি? এ সব ভাবনার মধ্যে আমরা। ততক্ষণে কামাল নৌকা ভিড়ালো  সেনা ছাউনির কাছে।

নৌকা থেকে নেমে সেনা ছাউনির সামনের রাস্তা ধরে শুভলং বাজারে আমরা।  সৌদিয়া রেস্টুরেন্টের দরজায় আসার আগেই বুদরুজ ভাই এগিয়ে আসলেন। বললেন, আরে 'তারক' ভাই! আপনি আসবেন, আমাদের এটা 'খল' দিবেন না। করছেন কি, সবাই ভিজে আছেন, জ্বর আসবে।

 বুদরুজ ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলছি, ফাঁকে সৌদিয়া রেস্টুরেন্টের  নীচতলায় চুলার পারে সবাই। শরীরটা শুকিয়ে নিলাম । এর মধ্যে বুদরুজ ভাই লেকের কালিবাউশ মৎস, পাহাড়ি সবজি  আর  মশুর ডাল নিয়ে  খাবার রিডি করলেন।

খাওয়ার পর মিষ্টির ব্যবস্থাও করলেন বুদরুজ ভাই। লোকটাকে আমি খুঁজে বের করেছিলাম ২০০৪ সালে। সে সময় ছোট্ট একটা ঘর ছিল। লম্বা সিঁড়ি ভেঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর বুদরুজ ভাইয়ের দোকান। সেবার আমরা সেখানে  গুরুর গোশত দিয়ে একবেলা খাওয়ার সুযোগ নিয়েছিলাম।

সন্ধ্যার  দিকে শহরে ফিরলাম। ক্লান্ত সবাই । তারপরেও রাতে একবার গিরিশোভায় যাওয়া চাই। ভাসমান এ রেস্তোঁরা চালায় সীমান্ত রক্ষীরা।   নুডুলস, সফট ড্রিংকস দিয়েই ডিনার।

রাতের জার্ণি, সারা দিনের বৃষ্টি বিলাস মিলে ক্লান্তি ভর করেছে। ডুলুডুলু চোখ সবার।  হোটেল ফেরা। চন্দন দা বসে আছেন এককাপ চা খাবেন, বলে। নিরাশ করতে পারলাম না। তার আতিথেয়তা গ্রহণ করে রুমে ঢুকলাম।

পরের দিন আমরা যাবো বান্দরবান, সে জন্য আগেই লাইনের বাসের টিকিট কেটে আনলাম।
সকাল ৭ টার দিকে আমরা সবাই বাসে উঠলাম, ১৯ জন একসাথে হবার কারণে ফিশারি ঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস এসে আমাদের হোটেলের সামনে  থেকে পিক করলো।

বাস চলছে, লোকজন বাড়ছে।  এক সময় লোকারণ্য পুরো বাস। দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। কেউ কেউ ছাদেও উঠেছেন।
এর মধ্যে একটা ঠালু রাস্তায় আমরা উপরের দিকে উঠবো, বাস একবার উপরে ওঠার চেষ্টা করে আবার নিচে নেমে এলো। আমরা খুব মজা পেলাম। এখন হলে নিশ্চিত ভয়ে মুখটা শুকিয়ে যেতো!

দ্বিতীয় দফা চেষ্টা করে বাস উপরে উঠতে সক্ষম হলো। এর আগে অবশ্য বাঙ্গালহালিয়া বাজারে সকালের নাশতা করেছিলাম আমরা। বাটারে ভাজা চিনি মাখানো পরোটা দিয়ে  সেই নাশতাটা স্মরণীয়।

কিছু কলা ও আম কেনা হলো বাঙ্গালহালিয়া বাজার থেকে, যে গুলো খেতে খেতে আমরা দুপুর নাগাদ বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড। এবার বাস আমাদের হোটেলে নামাতে চাইলো না। বলল, ট্রাফিক আটকাবে!

চান্দের গাড়ি ভাড়া করে হোটেলে ফিরলাম। এসহাক ভাই রুম রেডি করে দুলালকে বলে রেখেছেন, আমাদের জন্য চা এনে রাখতে, সে চা জুড়িয়ে যাচ্ছে বলে দুলাল ফোনে জানালো।

হোটেল পূরবীতে রুম বুঝে পাওয়ার পর দুপুরের খাবার হলো বাজারেই। বিকালটা কাটাতে গেলাম ধাতুজাতি মন্দির। এটাকে স্বর্ণ মন্দির বা  গোল্ডেন টেম্পল নামেও ডাকা হয়। সেখানে ছবি তোলা, মন্দিরে ঘণ্টা বাজানো, দেবতার প্রাসাদ  দেখা, মিউজিয়াম ঘুরে  দেবতার পুকুরের জল ছুয়ে আসলাম আমরা। ঘণ্টাখানেক পরে গেলাম মেঘলাতে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে হোটেলে ফেরা।  
ফিরে ফ্রেশ হয়ে আমরা ছুটলাম সেনা কাফেতে। ক্যান্টমেন্টের সামনের এ রেস্তোরা বিত্তবান পাহাড়ি মানুষের সান্ধ্যকালীন ভোজন ও সময় কাটানোর একটা ভালো জায়গা।

সেখানে বসনিয়ান রুটি, জালি কাবাব আর স্পঞ্জের মিষ্টি দিয়ে ডিনার হলো। স্পঞ্জের মিষ্টি তারা দুর্দান্ত বানায়। রাত সাড়ে ৮ টা। উঠে দাঁড়ালাম সবাই। সাঙ্গু নদীর ওপর কাঁপতে থাকা সেতুর ওপর অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। নির্মল বাতাসে বুক ভরে যাচ্ছিলো। সাথে রাতের বান্দরবান আর সাঙ্গুর ঢেউয়ের শব্দে  মোহিত হচ্ছিলাম সবাই।

সকালে পলাশকে বলা ছিল, চান্দের গাড়ি নিয়া আসতে। গন্তব্য আমাদের  চিম্বুক। পলাশ সকাল ন'টার মধ্যেই হাজির। বৃষ্টি  হচ্ছে। নাশতা সেরে বের হতেই দেখলাম  বৃষ্টির আবহটা বাড়ছে। সেটি মানার মত মন ছিল না।  আমরা বের হলাম।

১৯ জনের মধ্যে প্রায় সবাই  চান্দের গাড়ির ছাদে। সারা রাস্তায় অনেক মজা হলো। অবশ্য পুলিশের চেকপোস্ট  ও আর্মি পয়েন্টে ছাদ থেকে নেমে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে।  ভেতরে গুটি সুটি মেরে বসতে হয়েছিল বার কয়েক।

চান্দের গাড়ির সরাসরি চিম্বুকে। আমরা মেঘের ভেতর। অন্যরকম এক সকাল। মেঘের ভেতরে নিজেদের দেখছি। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলছে। কুয়াশার মত বৃষ্টির পানি।  ঘাসফুলের ডগায় জমে আছে শিশির বিন্দুর মত। তারপর আমরা নেমে আসি। নীচের ছোট্ট একটা দোকানে চা পানের বিরতি। সেখান থেকে গেলাম পাশের পাহাড়ে।  দুপুরে খিঁচুড়ি খেয়ে ফিরছি।

ছাদে থাকা মিটির চোখে গাছের পাতার বাড়ি লাগলো। তবুও ওর নামার নাম নেই। অন্যরা আবারো উঠে এলো। ফেরার পথে আমরা নামলাম  শৈলপ্রপাত ঝরণায়। বিশ ফুট চওড়া হয়ে পানি নেমে যাচ্ছে নিচে। এত যৌবনা ঝরণাটা আমরা শীতকালে দেখি ক্ষীণকায়।

ফারুকপাড়ার এ ঝরণার নিচের ক্যানেলে পানি অনেক। সেখানে নামলাম সবাই। অনেক্ষণ ধরে হেঁটে আবার পাহাড়ের ওপর দিয়ে ফিরে এলাম।  মানিক দেওয়ানের ঘরে চা পান  হলো। সঙ্গে এনার্জি বিস্কুট। এশা দেওয়ানের দোকান থেকে শাল মাফলার ও বাঁশের তৈরি কিছু মগ কেনা হলো। তারপর পলাশের তাড়ায় ফিরতে শুরু।

মিলনছড়িতে কয়েক মিনিটের বিরতিতে এককাপ কফি পান শেষে আমরা ফের শহরে। রাতে কেনাকটার নাম করে বাজারে ছোটাছুটি করলাম কিছুক্ষণ।

রাতে ঘুম, সকালে পূরবী হোটেলের নিজস্ব বাসে আমরা ছুটলাম কক্সবাজার।  সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আমরা কক্সবাজারে আসলাম। এত চমৎকার একটা পরিবেশ, মানুষ জন কম। ভালো লাগছিলো বিকালটা। বিচে অনেক সময় কাটানোর পর  ফিরে এলাম রাতে।

জিয়া গেস্ট ইনের ওসমান খাবারটা  হোটেলের রুমের সামনে ডায়নিং টেবিলেই ব্যবস্থা করেছিল।শুটকি ভর্তা, চান্দা মাছ আরো কি সব আনলো।

পর দিন সকাল বেলায় আমরা গেলাম বিচে। ভেজাভিজি হলো, বালি খেলাও। মামুন বালি দিয়ে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করলো, বৃষ্টি সে সব মিশিয়ে দিলো। এভাবে দুপুর।

হোটেলে ফিরে বিকাল বেলায় আমরা চলে গেলাম ইনানী। ভেজার কোনো পরিকল্পনা ছিল না, তবুও ভেজা হলো। অনেক্ষণ। ডাব, কলা এবং বাঁশের সাঁকোয় পানি পারাপার নিয়ে  অনেকটা সময় কাটানোর পর ফিরে আসি হিমছড়ি। সেখানে সন্ধ্যা। পাহাড়ের চূড়ায় অনেক্ষণ আড্ডার পর বৃষ্টি ভেজা ট্যুরের সমাপ্তি।

সেই সাথে একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতার সঞ্চয়!        

বিদায় সরদার স্যার ! প্রিয় পিতৃ শিক্ষক!


খবরটা এমনভাবে আসবে, জানা ছিল না। সরদার স্যার চলে যাবেন, এটাও ভাবনার বাইরে। স্যারের শরীর খারাপ, এটা জেনেছিলাম। কিন্তু এভাবে আচমকা স্যার চলে যাবেন, মেনে নিতে পারছি না।

আমার জানা মতে, জ্ঞান তাপস রাজ্জাক স্যারের ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের মধ্যে শেষ নির্মোহ ব্যাক্তি ছিলেন সরদার ফজলুল করিম স্যার।
আমার সাথে তার দেখা হয়েছিল ২০০২ ও ২০০৩ সালে। তার পর আরো কয়েকবার।  তাঁর সাথে ঘণ্টাখানেক কথা বলার সুযোগ হয়েছিল একবারই।

তার বইয়ের সাথে পরিচয় ১৯৯৯ সালে। ক্লাসে ঢুকেই জানতে পারলাম, স্যারের প্লেটোর রিপাবলিক অনুবাদ করেছেন, যেটি আমাদের পাঠের জন্য কেনা দরকার।

তবে মানুষ হিসাবে সরদার স্যারকে আবিষ্কার করি আরো কিছুদিন পরে, ২০০২ সালে। রাজ্জাক স্যার '৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর মারা যাবার পর তাকে নিয়ে আলোচনায় যে দু'জন মানুষকে আমি চিনতে পেরেছি; তার একজন সরদার স্যার। আরেকজন আহমদ ছফা।

আহমদ ছফার সাথে আমার পরিচয় হয়নি। তবে সরদার স্যারের সাথে পরিচয় এবং আলাপ দু'টোই হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু  নির্বাচন এবং এর মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথাও বলেছিলেন, সে সময়।

২০০২ সালে ডাকসু ভবনের সামনে একজন হালকা পাতলা মানুষ রিকশা থেকে নামলেন। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। ডাকসু সংগ্রহ শালার গোপাল দা এগিয়ে আসলেন।  স্যারের মুখটা দেখেই মনে করতে পারলাম বইয়ের পাতায় দেখা ছবিটার সাথে মিলে যাচ্ছে।

পরিচিত হলাম স্যারের সাথে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ছি শুনে খুশী হলেন। ডিপার্টমেন্টের খোঁজ খবর নিলেন। গোপাল দা আমার সে সময়কার সম্বাদিক পরিচয়টাও স্যারের কানে  দিলেন।

বিম্পি সরকারের সময় ছিল সেটি, রাজনীতি নিয়ে স্যারের সাথে অল্প কয়টা কথা হয়েছে। তিনি রাজনীতির চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়লের পুরনো দিনের গল্প করলেন। বললেন, এখন সব কিছু কেমন হয়ে যাচ্ছে। লাইব্রেরির দিকে নজর দিতে হবে।

স্যার বললেন, তোমরা যেহেতু স্টুডেন্ট এবং জার্নালিস্ট। তোমাদের উচিৎ হবে  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যাতে নজর দেয় সে জন্য লেখালেখি করা। পড়ুয়াদের উৎসাহ দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা। সাধারণত যারা জ্ঞান চর্চা করে থাকেন, তারা প্রচার নিয়ে মাথা ঘামান না।তাই তাদের কাজের সুবিধা কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে!

স্যার বরিশালের উজিরপুর থেকে ঢাকায় আসার পর ঢাকার যে রূপ দেখেছেন, সেটিও জানালেন। বললেন, এই যে তোমরা যানজট দেখো, আবর্জনা দেখো। এটা কিন্তু আমাদের মনের ভেতরও আছে। আমরা যদি নৈতিকভাবে হতে না পারি; তাহলে কোনো কিছুই ভালোভাবে করতে পারবো না।

যত পড়বে, তত জানবে।  যে পেশাতেই থাকো, পড়বে।  রাজনীতি বিজ্ঞান নিয়ে যেহেতু পড়ছো, রাজনীতির শুদ্ধতার জন্য  কাজ করো। আমরা এখন আর কিছু করতে পারবো না। তোমরা করবে।

এভাবে অনেক কথা। প্রায় ঘন্টাখানেক। গোপাল দা স্যারের কয়েকটা ছবি তুলে রাখলেন। গোপাল দা'র সংগ্রহে স্যারের অনেক ছবি আগে থেকে আছে। গোপাল দা সেই বার স্যারকে বলেছিলেন, স্যার আপনি আমার বাসায় চলে আসেন। আমি আপনার খেদমত করার সুযোগ চাই।

স্যার স্মিত হাসলেন। বললেন, গোপাল তোমার কাজ ভালো চলছে।

এরপরও স্যারের সাথে দু'তিনবার দেখা হয়েছে। আজিজ মার্কেটেও স্যারকে দেখেছি।

ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পর এতগুলো বছর গেলো- কেবল স্যারের বই পড়ছি, কিন্তু স্যারের কাছে যাইনি। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে। আমাদের জ্ঞানের বাতিঘর নিভে গেছে।

স্যার  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি, অগ্রগতি, গবেষণা ও নতুন নতুন বইয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি কথা সব সময় বলতেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা থেকে অবসরের পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের চর্চা মজবুত করার জন্য স্যারের যে আকাঙ্খা দেখেছি, সেটি সমকালীন অন্য  শিক্ষকদের চোখে দেখিনি(অল্প কয়েকজন ব্যাতিক্রম আছেন। যেমন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম স্যার)।

মূলত দর্শনেই স্যারের পড়াশোনা। কিন্তু রাজনীতি বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে তিনি এসেছিলেন রাজ্জাক স্যারের অনুরোধে। রাজ্জাক স্যার দিল্লির ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ব্দ্যিালয়ের আড়াইশ টাকার মাইনের চাকরি নিয়ে এসছিলেন, এ বঙ্গদেশে একটি অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্নে। সেই স্বপ্নের সারথী সরদার স্যাররা।

আজ তার বিদায় দিবসে  শ্রদ্ধা জানাই। স্যার পরপারে ভালো থাকেন। স্যার যেদিন বিদায় নিলেন, সে দিনটি আন্তর্জাতিক বাবা দিবস। বিদায় প্রিয় পিতৃ শিক্ষক। বিদায়।       

হাস রঙা মেঘ, ঘাস রঙা সাপ


বৃষ্টি, আহা বৃষ্টি
কেবলই নিয়ে আসে পুরনো দিন-
স্মৃতি হয়ে থাকা সময়।।

কৈ মাছ উঠে আসে  উঠোনে
ধান ক্ষেতে নেমে যাচ্ছে হাঁস
উঠে আসছে ব্যাঙ
সাপের দ্রুত চলে যাওয়া দেখতে দেখতে

এখন

নগরে বৃষ্টি-
ছাদের কোন বেয়ে নেমে যাচ্ছে
ভিজিয়ে যাচ্ছে পথ শিশুর কপাল।।


হাস রঙা মেঘ, ঘাস রঙা সাপ
আর তোমার হাসি
টিনের চালে বৃষ্টির টুপ টাপ শব্দ
এভাবেই মোহিত
সকাল দুপুর সন্ধ্যা বিকাল।।


কাদা মাটি মেখে মেখে ছুটি
নগরে কাদা দেখলে নাক উঁচু করি
আহা একি রূপ মরি!!