হেফাজত, শাপলা এবং ৫ মে

শাপলায়  হেফাজতের অবস্থানের রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাপক হলেও এর ফলাফল একেবারেই শূণ্য এবং প্রচার-সন্ত্রাস দ্বারা আক্রান্ত । 

 বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমনকি ভারতবর্ষের কর্পোরেট গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের শক্তি বিবেচনায় এনেও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উপর একক মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরীর ক্ষেত্রে আল্লামা শফি অত্যন্ত সফল । 

যদিও হুজুরদের ঈমান বেসরকারি চাকুরেদের মত দূর্বল। কারণ জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর হাতে - এ বিশ্বাস থাকার পরেও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, কাওমী হুজুরদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পেশিবানদের উপর নির্ভর করতে হয় । 

রাজনৈতিক কারণে হেফাজতের ঢাকা অভিযান না হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় আনতে হবে । কারণ এ হেফাজতকে সামনে রেখেই দাবার যত গুঁটিই ঘুরপাক খেয়েছে, তার সবই রাজনৈতিক । 

হেফাজতের সহযোগি হিসাবে যাদের কথা বলা হচ্ছিল, মোটা দাগে সে দলটি হলো বিএনপি । সাথে জমাত । তবে দল দু'টি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে হেফাজতের রাস্তায় রেখে সালতানাতের দু:স্বপ্ন দেখেছিল। 

আমার পর্যবেক্ষণে- মাদরাসার নিরীহ শিক্ষার্থীরা রাজপথে এসেছিল, ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে । তাদের সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি । এমনি কি হেফাজতের শীর্ষ কয়েকজন ছাড়া বাকিরাও  বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিলেন।

যেখানে গণজাগরণ মন্চ অত্যন্ত সফলভাবে সময় মত একটা তথ্য তার কর্মীদের দিতে পেরেছে । গণজাগরণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হয়েছে অত্যন্ত কৌশলে । সফলতাও লাভ করেছে । কাজ শেষে গণজাগরণ বিভক্ত এবং নিষ্ক্রিয় করে দিতেও সফল হয়েছে, এর পরিকল্পনাকারীরা । 

কিন্তু পুরোই দিকভ্রান্ত ছিল, হেফাজত । কারণ হেফাজতের ক্ষেত্রে এর উত্থান বিবেচনা করা হয়েছে কেবল, এর বিস্তৃতি এবং পরিচালন ও সমাপন পরিকল্পনা ছিল না । 

যার জন্য এত বড় একটা বিপর্যয়ের পরেও হেফাজত আপস করতে বাধ্য হয়েছে, তাদের সাথে;  যারা তাদের আলো নিভিয়ে রাতের আঁধারে হামলা করেছিল। 

এমন কি , এ বিপর্যয়ে হেফাজত কর্মীদের  ক্ষতিও স্বীকার করা হয়নি , উল্টো উপহাস ছিল। এখনো আছে । 

তবে  হেফাজতের রাজনৈতিক গুরুত্ব এখনো কমে যায়নি, এর প্রমাণ সরকার প্রধান আল্লামা শফি'র সাথে সাক্ষাত করেছেন। আল্লামা শফি সাব আওয়ামী সালতানাতের জন্য প্রার্থনা করেছেন ।

তবে এতে একটা গোষ্ঠী অসন্তুষ্ট হয়েছেন, তাদের একাংশ আওয়ামী লীগ সমর্থক, আরেকটা গোষ্ঠী বিম্পি ও জমাত । 

হতাশ গোষ্ঠীর জন্য ম্যাকেয়াভ্যালির প্রিন্স গ্রন্থ পাঠের পরামর্শ রলো। 

আশাবাদীদের বলি- ৫ মে , ইতিহাসে টিকে থাকবে, কারণ এর রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রবল । এবং সামনেও হেফাজত একটা শক্তি হিসাবে টিকে থাকবে । এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা । সে টিকে থাকা ইতিবাচক হবে নাকি নেতিবাচক- সময়ই তা নির্ধারণ করবে । 


-- 

কাসেমে আটকে যাওয়া সাহিত্যের রুচি অরুচি!



কাসেম বিন আবু বাকার, ছবি- এএফপি, সংগ্রহ সূত্র: ডেইলি মেইল 



প্রত্যেক লেখক তার এবং তার আশ-পাশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা করেন। সে ব্যাখ্যা ভুল হইতে পারে। সে  ব্যাখ্যা আমি নাও নিতে পারি । কিন্তু জান্তে কোন অসুবিধা নাই। কাসেম বি আবু বাকারের লেখা বঙ্কিম , রবীন্দ্র-নজরুল- শরতের নিক্তিতে মাইপা পাঠ করনে আমি বিশ্বাসী না। আমার হাতে  সময় আছে, আমি পড়ি। যা পাই পড়ি। ছাইপাশ যা পাই তাই!

আমাদের কৈশোরে একটা বই পড়তে সময় নিতাম ১ থেকে দেড় দিন, তাইলে কী পরিমাণ বই দরকার!  চিন্তা করেন! সেই বই কি সুশীল রুচিকর  পাঁচক লেখকেরা লেইখা আমগো সামনে আন্তে পারছিলেন! এবং প্রকাশকরা!  

হুমায়ূন পইড়া হলুদ রঙ ভালো লাইগতো।  জুতা ছাড়া রাস্তায় হাঁটতাম, জোছনা খাইতাম, কুত্তার লগে কতা কইতাম!  ভাল্লাগতো।  যুক্তি মানতাম না। এটা  ভালো কি খারাপ সেইটা তর্কের ব্যাপার। কিন্তু পাঠক হিসাবে আমি ত এটা নিছি। আপনি আমার নেয়াকে  আপনার নিক্তিতে মাইপা রুচিকর অরুচিকর নির্ধারণ ক্যামনে। 

সাহিত্য  লইয়া কত রকমের কতা। বাজাইরা সাহিত্য কইয়া হুমায়ূনরে তো  ব্যাপক সমালোচনা কইরছিল  আহমদ ছফা। কিন্তু  ছফার চিন্তা আপনার মইধ্যে সংক্রমিত অইতে পারে। তার সাহিত্য  সে অর্থে কাউরে সংক্রমণ কইরছে, এ রকম চোখে পড়নের মত ঘটনা কোথাও পড়ি নাই।  

এ দেশের  যারা সাহিত্য কইরে খান, যারা সংস্কৃতির ব্যবসা করেন, তারা নিজের বাইরের লোকের সব কাজকে খাটো কইরা দেখেন।  যারা তাগো উৎসাহিত কইরে থাকে, তাগো ব্যাপক সমালোচনা কইরা থাকেন। 


হালের সমালোচনার  টার্গেট এক  কাসেম বিন আবু বাকার।  তার বই আমি নিজেও পড়েছি।  শব্দ-বাক্য গাঁথুনি ভাল্লাগবে না, আমার কিম্বা আপনার।  আবার অনেকের কাছে ওইটাই অমৃত সমান! যার যার টা তারে নিতে দ্যান! 

তার বই গল্প-উপন্যাস। ধর্মগ্রন্থ না।  তার বই তো বাংলা একাডেমির পুরস্কারের জন্য এপ্লাই করে নাই। আপনাদের কম্পিটিটর তো তিনি নন। তার মত করে তিনি  লিখেছে,  একটা বড় পাঠক শ্রেণি ধরেছে। এইটা আপনারে চুলকায় ক্যান।  

আফনে নিজের দিকে তাকান না কেন? একটা বই বাইর কইরা কত রকমের প্রচারণা চালায়া ত ৫০০ কপি সারা বছরে সেল কইরতে পারেন না।  সেইখানে কাসেমের বই হাজার হাজার বই  বেচা কেনা অয়। ক্যামনে কি! আপনের রুচি বিবেচনায় আইনলে তো সব পাঠকই অরুচিশীল! 

কাসেম বিন আবু বাকারের বই কিম্বা  আবদুল সালাম মিতুলের বইয়ের পাঠককে আপনি অবহেলার চোখে দেইখতে পারেন না। তারা তো আফনের উপ্রে চাইপা বসেন নাই। আফনের ভালোলাগে না, আফনে তারে ইগনোর করেন, হুদাই ত্যানা প্যাঁচাইয়া নিজের 'অক্ষমতা' ঢাকন যাইবো? জনাব-জনাবা! 

মানুষ ! লাশ এবং রানা প্লাজা !


ছবি: সংগ্রহ


বছর চারেক আগের এ রকম একটা দুপুর, শত শত মানুষ রাস্তায়। অটোরিক্সাটা ছুটছে। মানুষের ভিড় ঠেলে রানা প্লাজার কাছে পৌঁছালাম। আশ পাশে উৎসুক মানুষ। পাশেই দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেটের গন্ধ। কিছু লোক ভেতরে যাচ্ছে আসছে। পাশের ভবনে গেলাম, দেখলাম আমাদের সাহসী ফায়ার বিগ্রেডরের লোকজন, কাজ করছেন। নিজের স্বজন উদ্ধারের মতই প্রণান্ত চেষ্টা তাঁদের। ধ্বসে পড়া ভবনের ভেতরে কিছু স্বেচ্ছাসেবি, মানব-শরীরের পঁচে যাওয়া মাংসের গন্ধ।

বাইরে- লাশ গুনছেন অনেকে। ঘটনার তিন দিন পর (২৭ এপ্রিল ২০১৩ )। দেখতে গিয়েছিলাম রানা প্লাজা ট্রাজেডি। লেখাটাও উদ্দেশ্য ছিল। বাইরে এসে রোড ডিভাইডারের ওপর দাঁড়ালাম। একজন নারী এগিয়ে এলেন আমার দিকে। নাম লাইজু। বললেন, তার বোন সীমার সাথে কথা হয়েছে, টয়লেটে আটকা। কিছু করা যায় কিনা? চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি।

বোন সীমাকে জীবিত দেখতে মন কাঁদছে লাইজুর। বললেন, সীমা তিনতলায় কাজ করতেন। এক ছেলের মা সীমা ২৪ এপ্রিল সকালে ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে কাজে এসেছিলেন। তারপর নিখোঁজ। চার্জ নেই মোবাইল ফোনে। তবুও বোনের মন মানে না। রিচার্জ করে কিছু টাকা পাঠালেন, বোনের ফোনে। কিছুক্ষণ পরপর বোনের মোবাইলে চেষ্টা করছিলেন। যদি কথা বলা যায়। যদি জানা যায় বোনটি কেমন আছে! শেষ পর্যন্ত তার আর কিছু জানা গেলো না।

একই রকম অবস্থা ছিল মাসুদ রানার। বগুড়ার সোনাতলা থেকে এসেছিলেন তিনি। বোন শাহিনূর ও ভাইয়ের মেয়ে নাজমার কোনো খবর জোগাড় করতে পারেননি। ছুটেছেন অধরচন্দ্র স্কুল, এনাম মেডিক্যাল, সিএমএইচ থেকে রানা প্লাজা।

তিন ছেলে ও একমাত্র কন্যার বাবা আবুল কাসেম ভূঁইয়া নিখোঁজ হয়েছিলেন । তার লাশের খোঁজে বড় ভাই মোহাম্মদ ইবরাহীম অধরচন্দ্র স্কুলে অপেক্ষা করেছেন। ছেলে শাফায়েত রানা প্লাজার সামনে ছিলেন। স্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যদি প্রিয় স্বামীর দেখা মিলে। না সে সব আশা মিথ্যে। দেখা মেলেনি স্বজনের ।

কিছুক্ষণ পর পর লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে, সে লাশের গাড়ি যাচ্ছে অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে। যে সব মানুষের জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছিল তাদের নেয়া হচ্ছিলো এনাম মেডিকেল ও সিএমএইচএ!

আমার জীবনের এ রকম করুণদৃশ্য এর আগে দেখিছিলাম সিডর আক্রান্ত শরণখোলায়। সেখানে মানুষের লাশ ঝুলে ছিল গাছে, ধান ক্ষেতে ভেসে ছিল মানুষের ফুলে ওঠা লাশ। সে এক হৃদয় বিদারক, নির্মম ও নৃশংস দৃশ্য! 

এটি দ্বিতীয় কঠিন এবং রূঢ় একটা কষ্টময় স্মৃতি হয়ে গেঁথে গেলো।

অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে এক নারী চিৎকার করে শুয়ে পড়ছিলেন। তার কাছে পৌছানোর আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। স্বামী সন্ধানী নারী। নিখোঁজের তালিকায় স্বামীর নাম লেখাতে এসেছিলেন।

ছোটবেলায় আমরা দেখতাম দুর্যোগের পর রিলিফ আনতে কিম্বা ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ সহায়তা পেতে লম্বা লাইন। জীবনে আমি প্রথম এবং একবারই লক্ষ্য করলাম, লাশ খুঁজতে লম্বা লাইন। এক নির্মম অভিজ্ঞতা আর করুণ আর্তির কোনো বর্ণনা করার মত ভাষা আমার জানা নেই।

সাভারের অধর চন্দ্র স্কুলের মাঠজুড়েই হাহাকার। লাশের সংখ্যা নিয়েও ছিল ধুম্র জাল। নিখোঁজ মানুষের পরিসংখ্যানও সঠিকভাবে মিলেনি।

ইতিহাসের এ ভয়াবহতম ঘটনায় দু'হাজারের বেশি মানুষ মরে বেঁচে গেছে! যারা আহত হয়ে বেঁচে গেছেন, তাদের জীবন চলছে দুর্বিসহ অবস্থায়।

এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েনি। রসিকতা হয়েছে। নিপীড়ত মানুষের পক্ষে আমরা কাউকে দাঁড়াতে দেখিনি। সবার শরীরে এখন চিকনাই জমেছে। চোয়ালে জমেছে লাস্যতা। কেউ রোদে পুড়ে আন্দোলন করে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চান না! 'দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করা' লোকেরা তো এখন সরকারের চাকা ঘোরাচ্ছে! সুতরাং মরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য দিন উল্লেখ করেই শোকই একমাত্র প্রাপ্য! তাও এর দু এক বছর তাও থাকবে বলে মনে হয় না।

শ্রমজীবি মানুষের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না।

বাঙালি মোছলমানের মন


সেই টুইট, যেটি  সনুকে  আলোচনায় তুলেছে!

সনু  যে আযান নিয়া তার মতামত দিছে, এটা একান্তই তার কমুনাল দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। তার কাছে আযানের ধ্বনি ভালো নাও লাগতে পারে।  কারণ সে হিন্দু, সে গায়ক- কারণ তার গায়কি-দূষণ রোধের বদলে  মোছলমানরা লাখ লাখ টাকা খরচা কইরা তারে বিভিন্ন দেশে আমদানি কইরা থাকে।

তবে ভুল টা তার ব্যবসায়িক। সে  মননে কমুনাল। চেতনায়ও। তবে সে কেবল ধর্ম পালনকারী লোক হলে ঠিক ছিল। কিন্তু সে যে একজন ব্যবসায়ী। গানের ব্যবসা তার। গলায় গান তুলে সেটি রেকর্ডবন্দী করে  তার পক্ষে লোকেরা তা ফেরি করে। তার সে গান-পণ্যের বড় অংশের ভোক্তারা হইলো মোছলামান।

যারা তার এ আচরণে দুঃখ পাইছেন, তারা  কমুনাল সনুকে চিনতে ভুল কইরছেন।  কারণ তারা তার  গানের ভক্ত, তাকে মনে মনে  পূজা করে যান, তাই মোছলমানদের  আযান লইয়া তার এ বাতচিত অপছন্দ করেছেন।

কিন্তু আপনারা যারা এ লইয়া চেঁচাইতেছেন, তারা কী আযান শোননে, ধর্ম পালন করে থাকেন! মানে আযান, আযানের পর নমাজ এ সব করে থাকেন। যদি করে থাকেন, তাহলে আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম। না করে থাকলে, হুদা আবেগে কাইন্দালাইয়েন না।  সময়ের এ খরস্রোত কেটে গেলে, আপনিই আবার সনুর কোন কনসার্ট কই হইতাছে,  নতুন গান কি আইতেছে, খুঁইজা খুঁইজা শুনবেন।

বাঙালি মোছলমানের মন বোঝা খুবই মুশকিল।

 তবে ধর্ম পালন- না পালন সে সব লইয়া কথা বলার পরিবর্তে আমাকে-আপনাকে যেটা বলি, সনুর কু-কথা লইয়া আপনি -আপনারা  আবার আপনার প্রতিবেশী সনাতন ধর্মীদের উপহাস কইরেন না। আপনি যিাদ মোছলমান হন, তাহলে আপনার ধর্ম আপনার জন্য এটাকে হারাম করেছে।

শুভ দিন। 

জল-পাহাড়ের গোধূলী !


তিন্দু জল পাহাড়ে রূপবতী সূর্য!

তিন্দুর পথে পথে পাহাড়, সূর্য আর সমতলের লুকুচুরি দেখা, পাহাড়ি পাথুরে নদী জলে পাহাড়িদের দেখতে দেখতে ঘণ্টা দুই পর আমরা তিন্দু পৌছালাম। শিগরঙ ত্রিপুরার সাথে আগেই আলাপ ছিল। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে ইলেকশন করে বিপদে আছেন বেচারা।

সাঙ্গুর জলের কাছে একটা ছোট দোকানে বসে আড্ডা হলো কিছুক্ষণ। তারপর তিন্দুর পাড়ায় উঠে এলাম। সুনসান নীরবতা। প্রেনথাংয়ের সাথে কথা হলো, প্রেনথাং এখানকার হেডম্যান। পাহাড়িদের মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুমি সম্প্রদায়ের লোক। অনেক আড্ডার ফাঁকে খাবারেরও আয়োজন করলেন, থাওবো বউদি। থাওবো প্রেনথাংয়ের স্ত্রী।

দুপুরের পাহাড়ি খাবার আর শান্ত-সৌম্য-রম্য পাহাড়ে রাজনীতির বিষবাষ্পের গল্পও শোনা হলো, ঘন্টা দেড়েকের আড্ডার পর আমরা ফিরছি।

বিকালের দিকে নৌকায় চড়ে বসলাম। ফেরার পথে সময় কম লাগে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য। পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য এ ঘটনা দেখে খুবই ভালো লাগবে, যে কারো। সূর্য সবখানেই ডোবে। সে নিঝুম দ্বীপ, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন্স কিম্বা কক্সবাজার। নায়াগ্রা কিম্বা জুরিখে। সবখানেই ডোবে।


গোধূলীবেলায়!

তবে একেক জায়গায় সূর্য ডোবার দৃশ্য একেক রকম। সেটি কারো কারো জীবনকে রাঙিয়ে যায়। সূর্য ওঠা এবং ডোবার দৃশ্য আমার বহু জায়গা থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের ভাঁজে , সবুজের ফাঁক গলিয়ে সে সূর্যের আলো পাথুরে নদীতে এসে পড়ার মোহনীয় দৃশ্য আমি প্রথম উপভোগ করলাম। অসাধারণ সেই দৃশ্য।

সন্ধ্যা নামতে নামতে আমরা থানছি চলে এলাম। আরেক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। তাই হলো। বিজিবি পোস্টের সামনের দোকানে আমরা চা খেলাম।

মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।

নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো

দুর্গম পাহাড়ের নির্জন রাত-!


মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।

নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল। নীলাদ্রি পাহাড়ে আসার পর আবার চেকপোস্টের অনুমতি নিয়ে আমরা ছুটলাম। চেক পোস্ট থেকে জানালো, রাত ৮ টার পরে এ রাস্তায় চলাচল নিষেধ। এর কারণ ব্যাখা করে বললেন, আপনারা যদি কোন বিপদে পড়েন, সেটি মানব সৃষ্ট না হােক, প্রাকৃতিক; তখনো তো আপনাদের কিছু করার থাকবে না।
কথা ঠিকই। কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। তাই নিজেদের বিবেচনার উপর আমাদের ছেড়ে দিলেন তারা।

পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা নিভৃতে সখাসখির আড্ডার কথা বলছিলেন- জজ চাকমা। বললেন, দাদা এই ছেলেরা তাদের সখীদের কাছে যাচ্ছে। প্রেমিকার কাছে। মন খুলে কথা বলবে। গল্প করবে। আড্ডা দেবে। এটা আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ। আমি বললাম, নিভৃত মিলনে , যদি কেউ শারিরীক সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে ?

জজ এবং নু দু'জনেই স্মিত হাসলেন, বললেন, তাতে খারাপ কিছু হবে না। এমনকি বাচ্চা পেটে আসলেও। বরং তখন দু'পরিবারে আনন্দ। সন্তান সম্ভাবা তরুণীকে ওই তরুণ বিয়ে করে। তার লয়ালিটি আরো বেশি প্রমাণিত হয়।

মাহিন্দ্রা এগিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন পাড়ার আশপাশে দাওনা হাতেও কয়েক তরুণকে দেখা গেল। প্রথম কেউ দেখলে ভয়ে ভড়কে যাবেন। আক্রমণ করতে পারে, সেটা আশঙ্কা মনে নিশ্চিতভাবে উঁকি দিবে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ের কাজ সেরে বাসায় ফিরছেন।

আবার 'পাঙকো' ছেলেপুলেও আছে। মোটর বাইক নিয়ে এ দিক ও দিক রাইড দিচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এমনটা ঘটে না । বা ঘটেছে বলে শোনা যায় নি। এমনকি মাহিন্দ্রার ভেতরেও কেউ টর্চের আলো ফেলেনি। সমতলেও রাতের বেলা কোন কোন এলাকায় নির্জন রাস্তায় কোন বাহন গেলে দুষ্টু ছেলেরা টর্চের আলো ফেলে। এখানে সে রকম অভিজ্ঞতা নেই।

দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে শহরে এসে নু মঙ দা'র বাসায় রাতের খাবার খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল। বৌদি শুনলেন, আমাদের চেকপোস্টের গল্প। অস্পুটে তিনি সেই কথাটিই বললেন, যেটি আমি এর আগে বহুবার শুনেছি-- 'আমরা নিজভূমে পরবাসী'।

এ ভাবনাটা আমাদের বদলে দিতে হবে। এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। একসাথে আমরা এগিয়ে যাবো। পাহাড়ি-বাঙালি মিলে আমরা বাংলাদেশী। আনন্দ -দুঃখ ভাগাভাগি করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়বো, আমরা। শুভ পর্যটন।

তিন্দুর রূপবতী জলপথে

উত্তরে বাতাস স্পর্শ করলে তপ্ত গরমের আঁচটা কমে আসে। সাধারণত দখিনা বাতাস- শীতল! কিন্তু পাহাড়ের তপ্ত গরমে- বাতাস, সে যে দিক থেকেই আসুক, সে বাতাস শীতল-মধুর।

সকাল আটটায় যখন মাহিন্দ্রায় নু মঙ দা'র সাথে পথ চলছিলাম, অনেক কথা-আলাপ হচ্ছিল। ক্যাম্পাসের সে সব দিন! সোনালী সময়। আমাদের প্রিয় তীর্থ, আমাদের হৃদ-স্পন্দন- ক্যাম্পাস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরেই জমেছিল পুরোটা সময়।

ক্যাম্পাসে বহু নিপীড়নের গল্প আছে- বহু কষ্টেরও।  তবুও সব ছাপিয়ে ক্যাম্পাস যেন - প্রথম প্রেম। প্রথম আবিষ্কারের আনন্দ।

বান্দরবান আমার সেকেন্ড হোম। যদিও সেখানে আমার কোন বসতি নেই। তবে আত্মার বসতিই তো উত্তম বসতি। সেই ২০০০ সাল থেকে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে যাওয়া হতো, যেখানে! সেটা তো সবচে কাছের আবাস, আমার।

মাহিন্দ্রা মিলনছড়িতে থামল। আমরা মিলছড়ি রিসর্টের রেস্টুরেন্টের বারান্দায় এসে বসলাম। উত্তরে বাতাসের ঝাপটা এসে পড়লো, মুখে। বারান্দায় চেয়ার টেনে বসতে বসতে নু মঙ দা ও আমাদের আরেকজন পাহাড়ি সহযাত্রী পাহাড়ের গল্প বলছিলেন। এ সবই আমার বহুবার শোনা, তবুও আবারো শুনছি! খারাপ লাগছে না।



সকালের নাশতা আমি বাদে সবাই খেয়েছেন। নু মঙ দা পান্তা ভাত খেয়ে আমার সফরসঙ্গী হয়েছেন। আরেকজন চাকমা ভদ্রলোক যাচ্ছেন, তার আশ্রমে থাকা পুত্রকে দেখতে; তিনিও একই নাশতা সেরে যাত্রা করেছেন। আনন্দময় যাত্রায় আমাদের চালক জজ চাকমা, যার সিগ্রেটের অসহ্য ধোঁয়া আমাকে ৬ ঘণ্টা সহ্য করতে হয়েছে, সে পরোটা খেয়ে এসেছে।

তাই আপতত, আমি একাই নাশতা খাবো। বাকিরা ধোঁয়া ওঠা কফি। নাশতার অর্ডার একজনের জন্য হবে না- রিসর্টের বেয়ারা এমনটা জানিয়ে নিজের মনে ঘুরছে। জানতে চাইলাম, কয়টা পরোটা হলে তুমি নাশতা দেবে। বলল, কমপক্ষে তিনটা। একেকটা পরোটা নাকি একজনে খায়। বল্লাম, নিয়ে আসো!

'খাদক' হিসাবে আমার সু বা কু খ্যাতি অনেক পুরনো। আমার ছোট ভাই- বড় ভাই এবং বন্ধু-বন্ধু স্থানীয়দের কাছে এটা বহুল আলোচিত বিষয়ও বটে। মিনিট কুড়ি বাদে যে পরোটা আসল, তা দেখে আসলেই ভয় পেলাম। একটা একজন খাইলেও সেটা বাজারের সাধারণ পরোটার তিনটার সমান।
সে যা-ই হোক আমি, প্রমাণ সাইজের এ পরোটা ২ টা খেয়ে তৃতীয়টায় হাত দেয়ার সাহস পেলাম না।

রিসর্টের বারান্দায় পরোটা খেতে খেতে সাঙ্গু দেখছিলাম। পাহাড়ের ভাঁজে, রমণীয় উষ্ণতার সকালে সাঙ্গু-দু'চোখ জুড়িয়ে গেলো। এ খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, এ নদীর জল এবং পাহাড়ের প্রকৃতি- এ সব সৃষ্টিকর্তা তার মনের মত করে সাজিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। অনন্য, অসাধারণ।



রিসর্টের রেস্টুরেন্টের বারান্দায় আগে বেশ পাখি ছিল। এখন সে রকম নেই। তবে কাছাকাছি পাখিদের ডাক শুনছিলাম। মধুর ডাক। মধুর সকাল।

নাশতা সেরে মাহিন্দ্রা আবার ছুটছে। চারজনের মধ্যে আমি একমাত্র বাঙালি। পাহাড়িদের টুকিটাকি গল্প শুনছিলাম। ফারুক পাড়া পেরিয়ে আমরা যাচ্ছি। গন্তব্য থানছি।

পথ যেতে যেতে পাহাড়ে ব্যবসা, জীবিকা এবং অভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে আলাপ হলো। চিম্বুক বেল্টে পাহাড়ের ভাঁজে দাঁড়িয়ে ছবিও তুললাম বেশ কয়েকটা। তারপর আবার যাত্রা।

পথে সেনা বাহিনীর চেকপেস্টে রিপোর্ট করার জন্য নীলাদ্রিতে দাঁড়ালাম। আমি অবশ্য নেমে এক মিনিটের একটা ভিডিও ক্লিপ রেডি করলাম। রবি'র থ্রিজি ছিল, সাথে সাথে আপলোড করে দিলাম।

https://www.facebook.com/1277411423/videos/10212543671288249


ভ্রমণ আমার কেবল নেশা নয়, জীবনী শক্তি। তবে এবারে ভ্রমণটা ছিল ভিন্ন কারণে। ইচ্ছা ছিল এমন রমণীয় ভ্রমণে বড় ছেলেকে সাথে নেবার। কিন্তু পুত্র মাতা সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি বলে, ছেলেটা এমন স্বর্গ পিতার সাথে ভ্রমণ করতে পারেনি!

বলা যায়, এটা আমার একক ভ্রমণ। সঙ্গী ছিল- নু মঙ দা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। ঢাকা থেকে আর কয়েকজন যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। তাদের আমি সঙ্গী করতে পারিনি।

নীলগিরি যখন ক্রস করছি, দেখলাম পুরোই হাটবার। ভেতরে বাইরে লোকে লোকারণ্য। তেতে ওঠা রোদে সবাই ঘামছে, আর মাথায় বাবুয়ানা ক্যাপ দিয়ে ঘুরছে। খারাপ লাগেনি, তবুও মানুষ ঘুরছে। এ ঘোরাঘুরি বাতিকটা যেন স্থায়ী হয়, সে জন্য আমরা ছোট্ট একটা গ্রুপ সেই ১৯৯৯ সাল থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছি। যদিও সেটি অনেক বৃহত আকারে নয়, তবুও এর কিছুটা প্রভাব এখানে থাকবে- সেটা নিশ্চিত জেনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।



 নীলগিরি পর রাস্তার পুরোটাই নীরব। নু মঙ দা'র সাথে বান্দরবান, পাহাড়ি ছাত্র রাজনীতি, জাতি গোষ্ঠীর রাজনীতি, আঞ্চলিক রাজনীতি, বিম্পি আম্লীগের রাজনীতি নিয়ে আলাপ করতে করতে বলিপাড়া এসে পড়েছি। বিজিবি'র একটা চেক পোস্ট আছে, সেখানে। রিপোর্ট করে আসলেন নু মঙ দা। আমি নামলাম না।

আমাকে এখনো অনেকে জিগেশ করেন, ভাই অমুক জায়গায় দেখার কি আছে? আসলে স্পট সম্পর্কে জানতে চান। আমি যদি বলি ভাই আপনি তো সিমলা গেছেন? সেখানে দেখার কি আছে। উত্তর কি হবে? সেটা ভেবে নিন না।

বলিপাড়া পার হলে আম গাছের অনেক সারি দেখা মিলবে, এখানে আমাদের চাষ হচ্ছে বেশ কয়েকবছর ধরে। পাহাড়ে এখন প্রচুর ফল হয়। মানে ফলের চাষ বেড়েছে। যেখান থেকে পাহাড়িরা বেশ ভালো আয় করছেন। জেনে ভালো লাগলো।

এক সময় পাহাড়ে সেগুন কাঠের চাষ বেশ জনপ্রিয় ছিল। এখন সেটি কমছে। এর কারণ জানতে চাইলে, নু মঙ দা বলছিলেন, এটা অনেক পানি চুষে নেয়। এতে করে পানি সঙ্কটে থাকা পাহাড়ে আরো পানির সঙ্কট বাড়ায়। তাই এ দিকটা অনেকে বুঝতে পেরে, চেষ্টা করছেন বিকল্প কিছু করতে।

কথা-গল্পে আমরা থানছি বাজারে পৌছালাম। এক কাপ চা হলে মন্দ হতো। তপ্ত রোদ মাথার উপরে। মুখের উপর লু হাওয়ার ঝাপটা। জজ মিয়া চায়ের সাথে বিস্কুট চুবাইতে চুবাইতে বললেন, ঘাটে চলেন, তাড়াতাড়ি। নইলে নৌকা পাইবেন না। তারই তখনো চা বিস্কুট শেষ হয়নি। তবুও আমরা উঠলাম।

থানাছি বাজার থেকে বিজিবি পোস্ট হয়ে নৌকা ঘাটে পৌঁছালাম। লাইনের নৌকার দেখা নেই। পরে অন্যের একটা রিজার্ভ করা নৌকায় সওয়ার হলাম, আমরা দু'জন। তপ্ত রোদের হল্কায় চামড়া পুড়ে যায় যায় অবস্থা। সাঙ্গুর জল মেখে নিলাম মুখে হাতে। মার্চের শেষ সপ্তাহে শুনেছিলা, সাঙ্গুতে ব্যাপক কারেন্ট। তার কিছুই এখন দেখা মিলল না।

তবুও এ যাত্রা আনন্দের। কারেন্ট থাকলে, এক রকমের আনন্দ। না থাকলে আরেক রকমের আনন্দ। নৌকা ছুটছে। আনেকটা ভিডিও করার খায়েশ হলো। করলাম । এবং তাও রবি'র থ্রিজির কল্যাণে সাথে সাথে আপলোড মারলাম। বিস্মিত হলাম, ঢাকার চেয়ে থানছিতে থ্রিজির স্পিড অনেক বেশি। এর ব্যাখ্যা হয়ত, সেখানে থ্রিজি ইউজার কম!

সে যাই হোক, কিছুটা পথ পেরোনোর পর বাম পাশে একটা চরের মত চোখে পড়ে। এটা অনেকটা ইউরোপীয় স্টাইলে কেয়ারি করা। দেখে ভালো লাগল। ইউরোপে এ রকম দৃশ্য চোখে পড়ে। যারা ইউরোপে থাকেন, অথবা বেড়াতে যান, তাদের পিকচার দেখে এটা বুঝতে পারলাম!



সাঙ্গুর তিন্দু রেমাক্রি অংশের জল স্বচ্ছ। এর ধারা একেবারেই ভিন্ন। নিচে মাছ দৌড়াচ্ছে, সবুজের প্রতিবিম্ব বা মুদ্রণ জলের উপর চোখ রাখলেই দেখা যাবে। আমার দেখা সাঙ্গু নদী আর তিন্দু-রেমাক্রির জলপথের মত এত বৈচিত্রময় রূপবতী আর দ্বিতীয় পথ দেখা হয় নাই।

অবশ্য সাঙ্গুর এ অংশটার সাথে কিছুটা মিল আছে সুন্দরবনের কচিখালী টাইগার পয়েন্টের ভেতরে একটা জল পথের। সেটি আমি ও আমার বন্ধু বাবু একবার পাড়ি দিয়েছিলাম, সম্ভবত ২০০১ সালে। এটা যে কতটা ভংয়ঙ্কর ঘটনা, সেটি অবশ্য পরে বুঝতে পেরেছি। সেখান থেকে আমাদের ফেরার কোন সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু এডভেঞ্চারের নেশা আমাদের এতটা উন্মাদ করেছিল, আমরা ঢুকে গিয়েছিলাম জঙ্গলের ভেতরে। একা একা।




সে যা-ই হোক তিন্দুর পথে পথে পাহাড়, সূর্য আর সমতলের লুকুচুরি দেখা, পাহাড়ি পাথুরে নদী জলে পাহাড়িদের দেখতে দেখতে ঘণ্টা দুই পর আমরা তিন্দু পৌছালাম। শিগরঙ ত্রিপুরার সাথে আগেই আলাপ ছিল। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে ইলেকশন করে বিপদে আছেন বেচারা।



সাঙ্গুর জলের কাছে একটা ছোট দোকানে বসে আড্ডা হলো কিছুক্ষণ। তারপর তিন্দুর পাড়ায় উঠে এলাম। সুনসান নীরবতা। প্রেনথাংয়ের সাথে কথা হলো, প্রেনথাং এখানকার হেডম্যান। পাহাড়িদের মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুমি সম্প্রদায়ের লোক। অনেক আড্ডার ফাঁকে খাবারেরও আয়োজন করলেন, থাওবো বউদি। থাওবো প্রেনথাংয়ের স্ত্রী।



দুপুরের পাহাড়ি খাবার আর শান্ত-সৌম্য-রম্য পাহাড়ে রাজনীতির বিষবাষ্পের গল্পও শোনা হলো, ঘন্টা দেড়েকের আড্ডার পর আমরা ফিরছি। প্রেনথং আমাদের সাথে বের হলেন। আস্ত এক গেলাস দো চুয়ানি খাওয়ার পরেও স্বাভাবাবিকই আছেন। বললেন, দাদা মাছ মারবো। আমাকে পথে নামিয়ে দেবেন।

বিকালের দিকে নৌকায় চড়ে বসলাম। ফেরার পথে সময় কম লাগে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য। পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য এ ঘটনা দেখে খুবই ভালো লাগবে, যে কারো। সূর্য সবখানেই ডোবে। সে নিঝুম দ্বীপ, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন্স কিম্বা কক্সবাজার। নায়াগ্রা কিম্বা জুরিখে। সবখানেই ডোবে।





তবে একেক জায়গায় সূর্য ডোবার দৃশ্য একেক রকম। সেটি কারো কারো জীবনকে রাঙিয়ে যায়। সূর্য ওঠা এবং ডোবার দৃশ্য আমার বহু জায়গা থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের ভাঁজে , সবুজের ফাঁক গলিয়ে সে সূর্যের আলো পাথুরে নদীতে এসে পড়ার মোহনীয় দৃশ্য আমি প্রথম উপভোগ করলাম। অসাধারণ সেই দৃশ্য।



সন্ধ্যা নামতে নামতে আমরা থানছি চলে এলাম। আরেক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। তাই হলো। বিজিবি পোস্টের সামনের দোকানে আমরা চা খেলাম।

মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।

নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল। নীলাদ্রি পাহাড়ে আসার পর আবার চেকপোস্টের অনুমতি নিয়ে আমরা ছুটলাম। চেক পোস্ট থেকে জানালো, রাত ৮ টার পরে এ রাস্তায় চলাচল নিষেধ। এর কারণ ব্যাখা করে বললেন, আপনারা যদি কোন বিপদে পড়েন, সেটি মানব সৃষ্ট না হােক, প্রাকৃতিক ; তখনো তো আপনাদের কিছু করার থাকবে না।

কথা ঠিকই। কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। তাই নিজেদের বিবেচনার উপর আমাদের ছেড়ে দিলেন তারা।

পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা নিভৃতে সখাসখির আড্ডার কথা বলছিলেন- জজ চাকমা। বললেন, দাদা এই ছেলেরা তাদের সখীদের কাছে যাচ্ছে। প্রেমিকার কাছে। মন খুলে কথা বলবে। গল্প করবে। আড্ডা দেবে। এটা আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ। আমি বললাম, নিভৃত মিলনে , যদি কেউ শারিরীক সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে ?

জজ এবং নু দু'জনেই স্মিত হাসলেন, বললেন, তাতে খারাপ কিছু হবে না। এমনকি বাচ্চা পেটে আসলেও। বরং তখন দু'পরিবারে আনন্দ। সন্তান সম্ভাবা তরুণীকে ওই তরুণ বিয়ে করে। তার লয়ালিটি আরো বেশি প্রমাণিত হয়।

মাহিন্দ্রা এগিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন পাড়ার আশপাশে দাওনা হাতেও কয়েক তরুণকে দেখা গেল। প্রথম কেউ দেখলে ভয়ে ভড়কে যাবেন। আক্রমণ করতে পারে, সেটা আশঙ্কা মনে নিশ্চিতভাবে উঁকি দিবে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ের কাজ সেরে বাসায় ফিরছেন।

আবার 'পাঙকো' ছেলেপুলেও আছে। মোটর বাইক নিয়ে এ দিক ও দিক রাইড দিচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এমনটা ঘটে না । বা ঘটেছে বলে শোনা যায় নি। এমনকি মাহিন্দ্রার ভেতরেও কেউ টর্চের আলো ফেলেনি। সমতলেও রাতের বেলা কোন কোন এলাকায় নির্জন রাস্তায় কোন বাহন গেলে দুষ্টু ছেলেরা টর্চের আলো ফেলে। এখানে সে রকম অভিজ্ঞতা নেই।

দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে শহরে এসে নু মঙ দা'র বাসায় রাতের খাবার খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল। বৌদি শুনলেন, আমাদের চেকপোস্টের গল্প। অস্পুটে তিনি সেই কথাটিই বললেন, যেটি আমি এর আগে বহুবার শুনেছি-- 'আমরা নিজভূমে পরবাসী'। এ ভাবনাটা আমাদের বদলে দিতে হবে। এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। একসাথে আমরা এগিয়ে যাবো। পাহাড়ি-বাঙালি মিলে আমরা বাংলাদেশী। আনন্দ -দুঃখ ভাগাভাগি করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়বো, আমরা।
শুভ পর্যটন।


     

হুদাই বিভাগ লইয়া এত মাতনের কিতা আছে!

ক্যামনে কিতা রে বাই!  কুমিল্লা বিভাগ অইলে কি ন অইলে কি। এ সব বিভাগের নামে মানুষের কি কোন সুবিধা  বাড়ে?  মনে তো হয়না।
বক্ষব্যধি, হৃদরোগ, আর হাইপারটেনশন বাড়ানো ছাড়া এ সব ঘোষণার কোন তাৎপর্য নাই!

নোয়াখালীর একটা উপজেলার নাম সুবর্ণ চর। অথচ সুবর্ণচর নামে কোন গ্রামের নাম পর্যন্ত  চরজব্বার থানায় বিদ্যমান নাই। অথচ চরজব্বার থানার নামেই উপজেলায় রূপান্তর না ঘটিয়ে ওটাকে  থানা হিসাবে রাইখা উপজেলার নাম রাখা অইছে  সুবর্ণ চর।  তাতে কি। নামে কিবা আসে যায়, খালি ফরম পূরণের ঘরে একটা লাইন বেশি লেখন লাগে, এই  আর কি!

একটা তবে ময়নামতি নাম বিদ্যমান আছিলো। এখনো আছে।

তবে বিভাগের নাম ময়নামতি করার কোন কারণ নাই। নোয়াখাইল্লা ও কুমিল্লা দু'পক্ষকেই খুশি করণের জন্য ময়নামতি  নামটা  বাইছা লওনের যে কতা হুনাতাছি, এইডা একটা বেক্কইল্লা কতা। পুরাই রাজনীতির মইধ্যে পলিটিক্স।

কুমিল্লা থাকলেই হইতো। আর নোয়াখাইল্লারা বিরোধীতা করতাছে ক্যারে--- কুমিল্লা বোর্ডের আন্ডারে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট তো  নোয়াখালী , ফেণি ও লক্ষীপুরের সব স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরই। এটা নিয়ে তো কোন আপত্তি শুনি নাই। হুদাই বিভাগ লইয়া এত মাতনের কিতা আছে।

যেইটা জীবন মানের উন্নতির বদলে অবনতি ঘটায়, পরিবারের খরচা বাড়ায় এ রকম উন্নয়ন ঘোষণায় আমার কাছে বিরক্তি কর। তা ময়ানামিত নামে হোক, আর কুমিল্লা কিম্বা নোয়াখালী।

সরকারের যা মন চায় করুক গে, হুদা এ সব লইয়া বিলাপ বাদ দিয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের দিকে নজর দেন।  এটা ঠেকান।  আগামীর প্রজন্মের মেরু এবং দণ্ড দুইটাই  বেহাল হয়ে গেছে। দয়া করে ওইদিকটায় নজরে রাখেন। তাইলে জাতির কিছু উপকার হবে। ধন্যবাদ।

মহান সিইসি'র এ নিয়োগে বিস্মিত হবার কিছু কি আছে!


জনতার মঞ্চের অভিজ্ঞতা সিইসি হওয়ার ক্ষেত্রে আমার মতে, সবচে বড় যোগ্যতা বলে বিবেচিত! এটাই ত স্বাভাবিক। নাকি বলেন!
বিবি বাচ্চার কথা না ভেবে; দলের প্রতি অনুগত থেকে রাষ্ট্রীয় চাকুরে হিসাবে সই করে রাষ্ট্রের সরকার বদলের আন্দোলন সংগঠন করা মুরগির কলিজা দিয়া অসম্ভব। পুরাই একটা ষাঁড়ের কলিজা লাগবো।
উনাকে হুদাই গালি দিয়েন না। উনি সেই সাহস রাখেন। এবং উনি টিকে গেছেন।
সরকার বাহাদুর-দলীয়রা জনতার মঞ্চের চাকুরেদের সেই মহান অবদান স্বীকার নিয়েছেন, এটা এক মহতপ্রাণ কাজ। এ রকম কাজে বাহবা না দিয়ে, আপনার ফেসবুক কাঁপাইতেছেন। এইটা ঠিক নহে।
আর মহান সিইসি'র এ নিয়োগে বিস্মিত হবার কিছু কি আছে! বরং সরকারের বাইরে থাকা পলিটিক্যাল পার্টির লোকদের শেখার আছে।
শিক্ষা নাও; জীবনে কামে লাগবো।

বিচার চেয়ে কারো প্রমোশন কিম্বা রাজনৈতিক পদোন্নতি নিশ্চিত করার কাজে আমি অংশ নেই না!

২৬ জানুয়ারীর হরতালের সমর্থনে আমি গেছিলাম। ২৮ জানুয়ারীর সম্বাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধনে যাই নি। সচেতনভাবেই আমি যাইনি।
আজকের এ বঙ্গ, পুলিশ সঙ্গ আম জনতাকে নিপীড়নের পরে পুলিশ-সরকারি রঙ্গের দায়িত্ব কি মিডিয়া এড়াতো পারে! দলান্ধ সম্বাদিক নেতারা? পারেন না।
আমি একবার (২০০২ সালে) খুনের হুমকি পাইছিলাম, বিষয়টা চেপে থাকতে চাইছিলাম। যেহেতু ঘটনাটা আমার সম্পাদক মতি ভাইয়ের (মানবজমিন) সামনে ঘটেছিল, তাই এটি নিউজ হলো।
পর দিন আমার অগ্রজ দলকানা সিনিয়র সম্বাদিক বললেন, আমি যেহেতু তাঁকে ঘটনা জানাইনি, সেহেতু খুনের হুমকি সঠিক হতে পারে না!
এই যখন মানসিকতা, সেখান বিচার সে তো হিলারির বিজয় স্বপ্ন!
এর পর থেকে  আমি কখনো -বিচার চেয়ে কারো প্রমোশন কিম্বা রাজনৈতিক পদোন্নতি নিশ্চিত করার কাজে আমি অংশ নেই না। কারণ আমি এ রকম বহু ঘটনা দেখেছি, সম্বাদিককে মারার কারণে প্রমোশন। দেখে শুনে, আমি এ রকম একটা কাজে অংশ নিতে পারিনি। 

খালি সম্বাদিক মা্ইর খায় নাই!


আজকের হরতালে খালি সম্বাদিক মা্ইর খায় নাই। সাধারণ শিক্ষার্থী ও বয়স্ক ব্যক্তিও মাইর খাইছে। ফেসবুকে খালি সম্বাদিক মাইর খাওন লইয়া আলোচনা হইতেছে।
সবার উপর জুলুমের বিচার হইতে হবে, সেই টাই তো আওয়াজ হওনের কতা। নাকি!
আর সম্বাদিক মারছে, এটা হুনলে তো সবাই খুশী! বিচারের নামে সে রকম নাটক ফাটক হবে, তারপর ইস্তফা! এ সুযোগে বাকি সব অপরাধও হাওয়া! 
 এটা কেমনে কি ! বুঝতাছি না। বুঝবারও চাই না। খালি কই, বিচার তুমি কি, কেবলই ছবি!

'খেলারাম খেলে যা!'

মেনন ভাইয়ের টিভির নামটা সিরাম অইছে 'খেলা টিভি'। সম্বাদিকতা যে একটা খেলা এবং সম্বাদ শিল্প যে খেলনা; এটা এ নামের মধ্য দিয়ে চমেৎকার রূপের প্রস্ফুটিত অইছে। অভিনন্দন। মনে পড়ছে, সৈয়দ হককে। জনাব, ফরমাইছিলেন-'খেলারাম খেলে যা!'

আরো ৫ খান টিভির বাক্স আইতাচে হুইনা পুরানা মালিকরা ভড়কায়া গ্যাছে! প্রথম আলোর খব্বর কইতাছে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী মহোদয় ফরমাইছেন , ‘সরকার এগুলোর অনুমোদন দেওয়া যৌক্তিক মনে করেছে।’সেম্বাদিক সাব বা তাঁহার পত্রিকা পর্যালোচনা করে দেখেছে, 'ওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মোট ৩৩টি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হলো। এর আগে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ১০টি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দেয়। সবক্ষেত্রেই দলীয় বিবেচনা গুরুত্ব পেয়েছে। আবার সরকারি দলের পরিচয় ও প্রভাবে টিভি চ্যানেল নিয়ে শেয়ার কেনাবেচারও বিস্তর অভিযোগ আছে।'

প্রথম আলোর বয়ান অনুসারে- নতুন চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে চাইলে একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোজাম্মেল বাবু বলেন, এমনিতেই যে ২৬টি চ্যানেল চালু আছে, সেগুলোর মধ্যে ৫টি লাভে আছে, বাকিগুলো জোড়াতালি দিয়ে চলছে। এর মধ্যে আরও চ্যানেল দেওয়া হলে নিজে মরা ও অন্যকে মারার মতো অবস্থা তৈরি হবে। তা ছাড়া চ্যানেলে এখন কেউ আর বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে চান না।

আরও নতুন টিভি চ্যানেল দেওয়া প্রসঙ্গে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বিজ্ঞাপন ও দর্শকের বাজার সীমিত। এটা শিগগিরই বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া আছে বাইরের আগ্রাসন। এমতাবস্থায় দেশি চ্যানেলগুলো দুর্বল হবে, হুমকি ও চাপের মুখে থাকবে। 


খবরের বয়ানে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের মধ্যে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুমোদন পেয়েছে নোয়াখালী-৩ আসনের সাংসদ মো. মামুনুর রশীদ কিরণের গ্লোবাল টিভি, প্রয়াত লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হকের আমার টিভি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের খেলা টিভি। বাকি দুটি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এই দুটির মালিকই দুজন সাংবাদিক।


মারহাবা! ইয়া হাবিবী!! 

লাভ ইউ টেরাম্প!








পিকচার  : usmagazine.com

লাভ ইউ টেরাম্প! কোন রকমের ভনিতা না করে তুমি যা, তাই করে দেখাচ্ছ। আমি এটাই ভালোবাসি। তুমি  সহজেই হিলারিকে মৈথুনের কথা বলতে পারো। বাইবেলে হাত রেখে গডের নামে আম্রিকাকে উৎসর্গ করতে পারো। তুমি তোমার স্ত্রীর নগ্ন ফটোশুটে আন্দোলিত হও! ভনিতা ছাড়াই তুমি বলে দাও... ওরে... টাইম নাই। শিষ্টাচার, সভ্যতা, কর্পোরেট ভালোবাসা আর  শঠতার রাজনীতি তো সেই দিন এলো।  এই যে উপ্রে ছবিটা দিলাম, দেখেন না। বেচারা একেবারে নির্দোষ। তার স্ত্রীর কোমর ধইরা নাড়াইতেছেন। বুশ তো ইনডিয়া গিয়া ঐশ্বরিয়ার কোমর ধইরা নাড়াইছিলো। তাইলে কন, কে বেশি চরিত্রবান।  রাজনীতি বিজ্ঞানে তুমি নতুন উপাদান। অভিনন্দন  টেরাম্প ব্রাদার। 

মহানায়িকার জন্য শ্রদ্ধা


ছবি: অন্তর্জাল থেকে নেওয়া নেওয়া। 



রূপালী পর্দায় মানুষের সাদা কালো জীবনের রঙ্গিন স্বপ্নগুলোকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলার মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ২০১৪ সালে ১৭ জানুয়ারী সকাল সাড়ে আটটায় মারা গিয়েছিলেন। জানি, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবুও কিছু মৃত্যু বেশি কষ্টের। সুচিত্রাহীন বাঙালির তিন বছর পার করছে আজ !
সাধারণত নায়িকারা চলচ্চিত্রে আসেন, তারপর ক্যারিয়ার গড়েন এবং বিয়ে করে সংসারী হয়ে ঘরে ফিরে যান।
বাংলাদেশে জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং সংসার শুরু করে পরে কলকাতায় থিতু হওয়া সুচিত্রা এখানে একেবারেই ভিন্ন। তিনি পড়াশোনা করেছেন, বিয়ে করে সংসার শুরু করে স্বামীর উৎসাহেই সিনেমায় এসেছেন, এবং বাংলা সিনেমার দর্শকদের মতন জয় করেছেন বছরের পর বছর ধরে।
তার সিনেমার নায়ক উত্তমের জীবনাবসানের পর তিনি একাকী জীবন বেছে নেন। সিনেমা থেকে সরে যান দূরে। একেবারেই একা-রহস্যময় তার সে জীবন তার। সেখানে কারোই প্রবেশ ছিলনা।
সর্বশেষ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুচিত্রা ২৬ দিন লড়েছেন, শুনছিলাম প্রার্থনা সঙ্গীত শুনছেন, এর ভেতর তিনি চলে গেলেন, না ফেরার দেশে।
মহানায়িকার জন্য শ্রদ্ধা। বাংলা সিনেমা তার রূপালি দিনের সোনালী অতীত ফিরে পাক। জয় হোক বাংলা সিনেমার।

এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি!

বাংলাদেশের ইতিহাসে মিস্টার নাহিদের  চেয়ে আর দ্বিতীয় ব্যর্থ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন বা সামনে হবেন এটা আমার মনে হচ্ছে না। এ মানুষটা এক সময় প্রথম আলোয় শিক্ষা বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান প্রদান করতেন। যেখানে দেশের শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা  এবং শিক্ষা বাণিজ্য নিয়ে বিস্তর কথা থাকত। সম্ভবত ওই সব কলাম সেল করে উনি  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে  বুঝিয়েছেন, তিনি অনেক বড় শিক্ষাবিদ!  সুতরাং এ দেশে উনি ছাড়া শিক্ষা তরির বৈঠা বইবার মত দ্বিতীয় কোন মহাজন আর নেই! 

হতে পারে! তবে শিক্ষা বিষয়ে ভালো বোঝেন এ রকম বহু মহাজন আওয়ামী লীগে আছেন।  আমরা অনেকেই তাঁদের চিনি। কিন্তু আনুকল্য বলতে যা বোঝায়, তা পুরোটাই দাদু পেয়েছেন, সম্ভবত  আরেক দাদু মুহিতের কারণে। তাছাড়া বাম ঘরাণার রাজনীতিকদের একটা অংশ তো এখন কাল মার্কস-লেলিনের আদর্শ ক্ষমতার রসগোল্লায় আবিষ্কার করেছেন, তারাও তাদের পুরনো ভাই বেরাদারদেরকে টেনে তুলছেন। সেই হিসাবে মিস্টার নাহিদ এগিয়ে থাকবেন। 

বঙ্গীয় শিক্ষা ব্যবস্থার হাকিকত এতটা খারাপ আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালে পরিচালিত সরকারের সময়ও ছিল না। একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থার দাবি বহু পুরনো। ভোটের হিসাব কিম্বা উন্নয়নের মহাসড়কে বড় গাড়ি চালাতে হলে, কিছু ছোট গাড়ি রাখতে হয়, সে হিসাবে তিন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরেশোরে চালু আছে। এবং এটা থাকবে। নইলে ভবিষ্যতে ভয়ের রাজনীতি, মানুষকে একক হিসাবে প্রতিষ্ঠার রাজনীতি টিকবে না। সুতরাং যে কোন ছুঁতোয় এ তিন বা তারো বেশি ধারার শিক্ষা এখানে অত্যন্ত কঠোরভাবে টিকে থাকবে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার ১৪ ডিসেম্বর তার এক বক্তৃতায় বলেছেন, ''আমরা অভিন্ন শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছি... যদি তিনধারার শিক্ষা ব্যবস্থা থাকে, তাহলে আমরা পাকিস্তান ত্যাগ করেছিলাম কেন? ত্যাগ করেছিলাম একধারার অভিন্ন শিক্ষার জন্য। শ্রেণীহীন সমাজের জন্য। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা ভাঙ্গার জন্য। তা কিন্তু হয়নি...তিন ধারার মধ্যে ... বিত্তবানরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে, মধ্যবিত্তরা যেনতেন পড়বে... গরিবরা মাদরাসায় পড়বে... এর মাধ্যমে সমাজে বিভাজন বিদ্যমান। তিন ধারার শিক্ষার মাধ্যমে মেনে নেয়া হচ্ছে... এ দেশ শ্রেণী দ্বারা বিভক্ত। 

তিন ধারার শিক্ষার মাধ্যমে মেনে নেয়া হচ্ছে, এ দেশ শ্রেণী দ্বারা বিভক্ত। এ শ্রেণী বিভাজন কোন দিন দূর হবে না। দূর হবে না বলে আমাদের মানতে হবে যে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না... এখন যে পুঁজিবাদের বিকাশ হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে... বস্তিতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, তাদের জায়গাগুলো দখল নিয়ে নেওয়া হবে, হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে... বৌদ্ধদের মন্দিরে ...কাউকে বলা হচ্ছে তুমি শিয়া.. কাউকে আহমদিয়া ...প্রবল দূর্বলকে গিলে ফেলবে... এ হচ্ছে বাংলদেশের বাস্তবতা।'' 
এ রকম নির্মম বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়ে আমরা কীভাবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বো সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ একটা সমৃদ্ধ দেশের জন্য  উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার দরকার। সেটি তো হয়ই নি! উল্টো যে টুকু আগে ছিল, সেটিও এখন ভেঙ্গে পড়েছে। পরীক্ষার নামে নৈরিাজ্য, কোচিংয়ের নামে  বাণিজ্য আর  ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বাড়ছেই। সে সাথে পাঠ্যপুস্তক এ ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য দিনে দিনে এতটা বেড়েছে যে, আমরা অত্যন্ত বেদনাহত হয়ে, ফেসবুকে চেঁচাই! কিন্তু বাস্তবে আমরা হাতে হাত রেখে একবার চকচকে টাকের উপর  প্রতিবাদের তাপ ফেলতে পারি না। এর চেয়ে কষ্টের কী হতে পারে।

কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, সমৃদ্ধ দেশের কথা বলি, অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে  রাষ্ট্রের চেহারা বদলে দেওয়ার গল্প করি--- কিন্তু দিনে দুপুরে আমার  শিক্ষা, সম্ভ্রম,নৈতিকতা, সম্মান, অর্থ, বিত্ত, সম্পদ আর জীবন লুট হয়, গুম হয়; তারপরেও যেনো --- কারো কিছু বলার নেই! সবাই কেবল তাকিয়ে দেখি, আর বলি, আমি বেঁচে আছি! এই বেশ। 

সামর্থবানরা তাদের সন্তানদের বিদেশ পাঠান। দার্জিলিং কচি কচি শিশুরা বোডিং স্কুলে যাচ্ছে। বেঙ্গলোরে,  পুনেতে, দিল্লি এমনকি কোলকাতা শহরেও আমাদের ছেলে মেয়েরা যাচ্ছে, পড়তে।  ভারতের  পেঁয়াজের সাথে যুব্ধ করে চালের বাজারের সাথে লড়াই করে যে কৃষক, যে বাবা  টাকা আয় করছেন, সন্তানের শিক্ষার জন্য সেটিও রেমিটেন্স আকারে তুলে দিচ্ছে ভারত-ইউরোপ কিম্বা বঙ্গীয় বেনিয়াদের হাতে। যারা টাকা নেয় কিন্তু দিনের শেষে পিতার স্বপ্নগুলো ফানুসের মত উড়ে, রঙিন ফানুস কিন্তু সে রঙ বেশিক্ষণ থাকে না। জনাব, ভেবে দেখুন...  সামনের দিনগুলো... দল হিসাবে নয় দেশ হিসাবে দেশের মানুষকে মানব সম্পদ হিসাবে গড়তে এখনই পদক্ষেপ নিন। নইলে দক্ষ জনবল এখন যে রকম লাখ দশেক আমদানি করে রেখেছেন, সামনের দিনে  সেটি কোটিতে পৌছাতে পারে! সে শঙ্কা মিথ্যা হোক, তেলের উপরে ভাসমান জনাবেরা এবার একটু শিক্ষার দিকে নজর দিন!!   

রোহিংগা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের জরুরী হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে প্রফেসর ইউনূস ও আরো ২২ জনের খোলা চিঠি

রোহিংগা সংকট সমাধানে জাতি সংঘের জরুরী হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে প্রফেসর ইউনূস ও আরো ২২ জনের খোলা চিঠি
প্রিয় নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যবৃন্দ,
আপনারা অবগত আছেন যে, জাতিগত নিধন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধতূল্য একটি মানবীয় বিপর্যয় মিয়ানমারে বিস্তৃতি লাভ করছে।
গত দুই মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রাখাইন প্রদেশে যে সামরিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে তাতে শত শত রোহিংগা নাগরিক হত্যার শিকার হচ্ছে। ত্রিশ হাজারেরও বেশী মানুষ এর ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষদের নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আরো ভয়ের ব্যাপার, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে সেখানে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে, যার ফলে আগে থেকেই চরম দরিদ্র এই এলাকাটিতে মানবীয় সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার মানুষ নিকটবর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোন কোন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাটিকে গণহত্যাতুল্য বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিকট অতীতে রুয়ান্ডা, দারফুর, বসনিয়া ও কসোভোয় সংগঠিত গণহত্যাগুলোর সকল বৈশিষ্ট্য এখানে দৃশ্যমান।
জাতি সংঘ রিফিউজি হাইকমিশনের বাংলাদেশ কার্যালয় প্রধান জন ম্যাককিসিক মিয়ানমার সরকারকে জাতিগত নিধন পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। মিয়ানমারে জাতি সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লী রাখাইন রাজ্যে প্রেেবশের উপর বিধিনিষেধ আরোপকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিযোগ করেছেন।

রোহিংগারা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর একটি যারা দশকের পর দশক পরিকল্পিত প্রান্তিকীকরণ ও অমানবিক আচরণের শিকার। ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয় ও তাদের রাষ্ট্রহীন করে ফেলা হয়, যদিও তারা বংশপরম্পরায় মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে। তাদের চলাচল, বিবাহ, শিক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। মিয়ানমারের সরকার, সামরিক বাহিনী ও মিয়ানমার সমাজের অনেকেই এই দাবী করেন বটে, কিন্তু বাংলাদেশ তাদেরকে তার দেশের নাগরিক বলে কোনদিন স্বীকার করেনি।
তাদের দুর্দশা নাটকীয়ভাবে ঘনীভূত হয় ২০১২ সালে যখন দু’টি ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এবং পাশাপাশি অবস্থিত মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের বর্ণবৈষম্যের ভিত্তিতে আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর থেকে তারা চরম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনাদিপাত করে আসছে।
সর্বশেষ সংকটটির সৃষ্টি হয় ৯ অক্টোবর মিয়ানমার বর্ডার পুলিশের উপর আক্রমণের একটি ঘটনায়, যাতে মিয়ানমার বর্ডার পুলিশের ৯ জন সদস্য নিহত হন। এই আক্রমণ কারা, কিভাবে ও কেন করলো সে সত্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি, তবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিংগাদের একটি গ্রুপকে এজন্য দায়ী করছে। এই অভিযোগ যদি সত্য হয়েও থাকে, এতে সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য সন্দেহভাজনদের আটক, জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচারের মুখোমুখি করা এক জিনিষ, আর হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকের উপর হেলিকপ্টার গানশিপ দিয়ে গুলিবর্ষণ করা, নারীদের ধর্ষণ করা এবং শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ করা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিষ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে একজন রোহিংগা বলেন, পলায়নরত মানুষদের উপর তারা গুলিবর্ষণ করে। তারা গ্রামটি ঘিরে ফেলে এবং ঘরে ঘরে তল্লাশী চালাতে শুরু করে। তারা গালিগালাজ করছিল এবং নারীদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছিল।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী নারী জানান কিভাবে তাঁর দুই ছেলেকে কোন কারণ ছাড়াই আটক করা হয়: “তখন সবেমাত্র ভোর হয়েছে। সামরিক লোকজন আমাদের বাড়ী ঘিরে ফেলে। কয়েকজন ঘরে ঢোকে এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে বের করে আনে। তারা আমার দুই ছেলেকে বেঁধে ফেলে। তাদের পিঠমোড়া করে বাঁধা হয়, এরপর বেধড়ক পেটানো হয়। মিলিটারীরা তাদের বুকে লাথি মারে। আমার সামনেই এটা ঘটে, আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। আমি কাঁদতে থাকলে তারা (মিলিটারী) আমার দিকে বন্দুক তাক করে। আমার অন্য সন্তানরা মিলিটারীদের কাছে হাতজোড় করে তাদেরকে না পেটাতে অনুরোধ করে। তাদের নিয়ে যাবার আগে প্রায় ৩০ মিনিট এভাবে মারধোর করা হয়।” তিনি তাঁর ছেলেদের এরপর আর দেখেননি।
দও অং সান সু’কি’র কাছে বারবার আবেদনের পরও তিনি রোহিংগাদের পূর্ণ ও সম-নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। দও সু’কি মিয়ানমারের নেত্রী এবং দেশটিকে সাহস, মানবিকতা ও সমবেদনার সাথে পরিচালনা করার দায়িত্ব তাঁরই।
মিয়ানমার সরকারকে মানবিক সহায়তার উপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করার জন্য সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ নিতে আমরা জাতি সংঘের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে মানুষ জরুরী সহায়তা পেতে পারে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদেরও সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্যে একটি নিরপক্ষে, আন্তর্জাতিক তদন্ত পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।

একই সাথে জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরী এজেন্ডা হিসেবে সংকটটিকে উপস্থাপনের জন্য আমরা নিরাপত্তা পরিষদকে বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি এবং জাতি সংঘ মহাসচিবকে জরুরী ভিত্তিতে সামনের সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমার পরিদর্শণ করতে অনুরোধ করছি। বর্তমান মহাসচিবের পক্ষে এটা সম্ভব হলে আমরা তাঁকেই সেখানে যেতে অনুরোধ করবো; অন্যথায় নতুন মহাসচিবকে জানুয়ারীতে দায়িত্ব নেবার পরই এ বিষয়টিকে তাঁর কর্ম-তালিকায় অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে অনুরোধ জানাবো।
আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকেও এখন এ বিষয়ে সমি¥লিতভাবে আরো বেশী সোচ্চার হতে হবে। রুয়ান্ডার পর বিশ্ব নেতারা বলেছিলেন, “আর কখনো নয়।” আমরা এখনই ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে মানুষ গুলি খেয়ে না মরলেও অনাহারে মারা যাবে এবং আমরা মানবতা বিরোধী এসব অপরাধের নিরব দর্শক হয়ে আরো একবার “আর কখনো নয়” বলার জন্য বিলম্বে হাত কচলাতে থাকবো।
স্বাক্ষরকারীদের নাম:

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ জয়ী
হোসে রামোস-হরতা
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৯৬ জয়ী
আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৪ জয়ী
মেইরিড মাগুইর
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬ জয়ী
বেটি উইলিয়াম্স
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬ জয়ী
অসকার অ্যারিয়াস
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৭ জয়ী
জোডি উইলিয়াম্স
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৯৭ জয়ী
শিরিন এবাদী
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৩ জয়ী
তাওয়াক্কল কারমান
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১ জয়ী
লেইমাহ বোয়ি
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১ জয়ী
মালালা ইউসাফজাই
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১৪ জয়ী
স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস
চিকিৎসা শাস্ত্রে ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ী
এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন
চিকিৎসা শাস্ত্রে ২০০৯ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ী
এমা বোনিনো
ইতালির প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রিচার্ড কার্টিস
এসডিজি সমর্থক, চলচ্চিত্র কাহিনীকার, প্রযোজক ও পরিচালক
আলা মুরাবিত
এসডিজি সমর্থক, লিবীয় নারী অধিকার প্রবক্তা
পল পোলম্যান
ব্যবসায়ী নেতা
মো ইব্রাহীম
উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী
জোকেন জাইট্জ
ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী
কেরী কেনেডী
মানবাধিকার কর্মী
রোমানো প্রদি
ইতালির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

যৌন হয়রানি যদি সত্য হয়, তাহলে চাকরী খাওয়া ফরজে আইন

ঢাকা ভার্সিটির এমরান একটা বোক চোদ টাইপের মাস্টর আছিলো, আমগো ডিপার্টমেন্টের। মানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাস্টর । ও  যে কোন মেয়েকে হয়রানি, তাও আবার যৌন হয়রানি করতে পারে, এটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারছি না।
আমার মনে হয়, বলদাটা পলিটিক্সের প্যাচে পড়েছে। নীলদলের প্রধান সেনাপতির  রাজনীতি বোঝা মুশকিল। স্যার নিজের দলের মাস্টরদের এখানে ওখানে চালান করেন, সেখানে ও তো নস্যি, সাদা দলের পোলা।

স্যারের ডিপার্টমেন্টের সালাম স্যারের বিরুদ্ধে  যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর চাকরী যায়নি।  সরকার পাল্টানোর পর স্যার তাকে ব্যাপক সুবিধা দিছে। এরকম আরো অনেকে আছে। মেসবাহ স্যারের বিরুদ্ধে একটা মেয়েকে হয়রানির রিপোর্ট রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অফিসে থাকার কথা, যদি না নষ্ট না করা হয়। কারণ হয়রানির শিকার মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে গিয়ে তার পেটে চালান করা ঘুমের বডি পরিষ্কার করেছিল হল কর্তৃপক্ষ। সে সময় খবরের কাগজের রিপোর্টও হইছে। সেই মেসবাহ স্যার এখন অনেক বড় ইতিহাসবিদ। ব্যাপক জ্ঞান বিতরণ করে যাচ্ছেন।

 সে যাক যৌন হয়রানি যদি সত্য হয়, তাহলে তাকে  অবশ্যই চাকরী খাওয়া জায়েজ। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে এই একটা আকামের জন্য চাকুরী খাওয়া  ফরজে আইন।  সুতরাং এইটা ঠিক আছে।  তবে অন্যদের কি খবর?  আইনের শাসন সবার জন্য সমান হওন দরকার। কি বলেন!!  

খবরের লিঙ্ক http://www.bbc.com/bengali/news-38448322

মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি বিলাস পণ্য

শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসানরা ভাবছিল, এটা বিম্পি সরকার। আন্দোলন করে দৌড়ের উপ্রে রাখা সম্ভব হপে।  সরকার যে বদল হয়, নতুনি আঙ্গিকে চালু হইছে, সেটাও তারা মনেও রাখে না।

গত ৮ বছরে নগরে কোন প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আয়োজন নাই, অপকর্মকের দলিলের প্রকাশনা নাই,  পথ নাটক নাই, সাংস্কৃতিক জোটের সাংস্কৃতিক উৎসব এখন তেলের উপ্রে ভাসে--- সেখানে  দুই একটা চিক্কুর মাইরা তারা ভাবতাছিলো--- অধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতাতো ভালোই চলতাছে।  তাদের গায়ের উপ্রে তো পড়ে নাই। এখন যখন পড়লো--- তখনো হুক্কাহুয়া-- বাক স্বাধীনতা নাই। মানুষ বাঁচতাছে না, গুম হইয়া আছে বছরের পর বছর---উনারা আইছে বিলাস পণ্য - বাক স্বাধীনতা ফেরি করতে। 

একটা কথা শুনতে খ্রাপ লাগলেও বলি---খালি সরকার বদল হয় নাই;  সরকারের মগজ ব্যবায়িক হয় নাই।  পুস্তক বেপারীরা, নিজেরাও বদল হইছে।  বই দোকান থেকে কাপড়ের দোকান খোলে,  কাপড়ের দোকানের বিস্তারে বইয়ের মূল আকর্ষণ প্রচ্ছদ শব্দও ব্যবহার করে। এ এগুলান বইয়ের বিকাশে ছোটখাটো আগ্রাসন।  আজিজ মার্কেট বইয়ের দোকান থেকে কাপড়ের দোকানে রূপানস্তর হইছে, কই বাক স্বাধীনতার রক্ষকরা  কি করলেন! 

তা যাই হোক , যে কোন বিচারেই শ্রাবণের স্টল নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। এটা কোন মতেই সমর্থণযোগ্য না। 

একাডেমি যদিও বলছে,  সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সভায়  সংস্কৃতিমন্ত্রী  নিজেও ছিলেন। মন্ত্রী নিজে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।   আশা করি শ্রাবণ প্রকাশনীকে তাদের স্টল ফেরৎ দেওনের ক্ষেত্রে  সরকার উদার হবে। 

তবে ও বুঝতে হবে সরকারে কখন কে থাকে, কীভাবে কার সাথে কথা বলতে হয়।  সবাইরে ফাঁপর দেওন যায় না। এটা স্বাধীনতা, অধীনতা যে নামেই হোক, বাপু। 


খবরের লিঙ্কটা দিলাম---http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1263020.bdnews

হুররাম সুলতান আশেকান পরিষদ




এখনো হুররাম সুলতান আশেকান পরিষদ হয় নাই ;) আহারে.. বেচারি... দীপ্ত টিভির খবর খুঁজতাছে। নিশ্চিত মামুন ভাই ব্রান্ড প্রমোটর। দীপ্ত খবরের লিঙ্ক (https://youtu.be/awaBh1BHpD0) ।
দীপ্ত টিভির টিআরপি আর পরিচিত বাড়াতে মামুনুর রশীদ কাজ করছেন। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, নইলে বেচারা বাংলা নাটকের মানোন্নয়নে মন না দিয়ে সেই   রাস্তায় মিছিল করতেছেন।
প্রতিবাদের অনন্য সংস্কৃতি মঞ্চ--- পথ নাটক... মঞ্চ নাটক ... পালা নাটক... সব থুইয়া মিছিলে নামছেন। সরকার বাহাদুরের সাথে লেয়াজো করতে করতে আর পথ নাটক মঞ্চ নাটক  নিয়ে আগাইতে পারেন নাই।  তাই  এখন কাম লইছেন --  ব্রান্ড প্রমোটরের কাম। কত রকমের  ব্রান্ড প্রমোশন আইডিয়া যে আছে, জগতে... !!
তবে  আশেকানদের বলি,  দেশীয় টিভি-অনুষ্ঠান নির্মাতাদের কষ্টটাও উপলব্ধি করতে হবে। ইনডিয়ার গুণ্ডা আগ্রাসন আর  বিদেশী সিরিয়ালের থাবা থামাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে সত্যি করে বলছি...  শিল্পটা টিকবে না।
ভালো বলে সব বাইরেরটা দেখবেন তা কিন্তু হয় না, জনাব।
নিজের একটা আত্ম পরিচয়, আত্ম অহঙ্কার  আত্ম মর্যাদার  বিষয় আছে! সে বিষয়টাই আসল।  ভালো সিরিয়াল ভালো নাটক তৈরিতে সরকারকে পৃষ্ঠপোষকত হতে হবে।  আর্ট ফিলিম বাদ দিয়া কমার্শিয়াল ফিলিমের দিকে নজর রাখতে হবে। কারণ ব্যবসা.. বিনোদন একসাথে না চললে... কোন  কিছুই টেকে না। 

অজ্ঞাতনামা: চেনা সমাজের চেনা গল্প

'আমি ক্রিতদাস নই, মানুষ!'--- ঘোষণা দিয়ে গানে গানে সিনেমাটির শুরু হলেও চলমান প্রবাস-কর্মসংস্থানের নামে মানুষের জীবন কিনে নেয়া চক্রের ঘেরটোপে হারানো মানব জীবনের গল্প--- অজ্ঞাতনামা। 

তৌকির আহমেদ দক্ষ অভিনেতা। দক্ষ পরিচালকও বটে। কিন্তু এ রকম একটি জীবন ঘনিষ্ঠ-বাস্তব ভিত্তিক কাহিনী 'অজ্ঞাতনামা' সিনেমার চিত্রনাট্যে হাজির করেছেন, সেটি নিঃসন্দেহে কেবল প্রশংসা নয়, সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতার একটা ভালো উদাহরণ হিসাবে মূল্যায়ন করতে হবে। 

নরীর শরীরের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ পুরুষ মাত্রই অনূভব করে থাকেন... সাধু-সন্নাসীরা ব্যতিক্রম। সিনেমাটিতে সেটিও এসেছে পরিশীলিতভাবে। 

মাত্র ২ হাজার টাকায় জাল পাসপোর্টের মামলা থেকে রেহাই পাওয়া দালাল রমজান এখানে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী। কারণ সিনেমাটি জ্ঞান বিতরণের বদলে বাস্তব অবস্থাই দৃশ্যমান । বিশ্লেষণধর্মী বয়ান। 

বাস্তবেও মানব পাচারকারী- প্রবাসী কর্মী পাঠানো প্রতারক দালাল চক্র খুবই শক্তিশালী এবং তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকে... রমজান এখানে সেই চরিত্র।  অত্যন্ত সফলতার সাথে চিত্রিত। 

হাতে সোনালী-রূপালী রঙ্গের ঘড়ি,  সাইকেলে টুংটাং শব্দ তুলে গ্রামের রাস্তা- যে বালকরা দাবড়ে বেড়ায়..., বিদ্যুৎহীন গ্রামে ব্যাটারি দিয়ে টেলিভিশন চালিয়ে যে বালিকারা আকাশ থেকে পাওয়া  অনুষ্ঠান উপভোগ করে... যাদের পুকুরে কচুরি ফেনার মত ভাসে শ্যাম্পুর দুধসাদা ফেনা ...তাদের প্রবাসী স্বজনরা কেমন আছেন?  সেটি তাদের প্রায় সবারই ভাবনায় নেই! 

মাস শেষে টাকা আসে দেশে... সে টাকা আনার  হুন্ডি, মানি ট্রান্সফার এজেন্সী  কিম্বা ব্যাংকগুলো মেলা করে... মানুষ বিক্রির লোকের সে সব দেখিয়ে নতুন কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার ধান্ধা করে... এভাবেই চলে প্রবাস-চাকুরী-জীবন চক্র। 

রিজার্ভ বাড়ে...কল্যাণ মন্ত্রী হয়... কিন্তু আধপ্লেট ভাত, দিনভর কাজ আর নেতিয়ে আসা শরীরটা টেনে তুলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর দায়িত্ব কার? রাষ্ট্র! পরিবার নাকি অন্য কারো! নাকি তার নিজেরই! সেটিও, অজানা!! 

অজ্ঞাতনামা সিনেমার গল্পটা  আমাদের প্রতিদিনের দেখা ঘটনারই একটা ! রমজান দাললের খপ্পরে পড়ে বসত বাড়ি মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে গলা কাটা পাসপোর্টে আরব আমিরাত পাড়ি জমায় আছির উদ্দিন প্রামাণিক। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তার লাশ দেশে পাঠানো হয়.... পাসপোর্টের নামানুসারে... আছিরের লাশ আসে শেখ আবদুল ওয়াহাব প্রামাণিকের নামে... সে লাশ গ্রহণ করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রকের ফোন যায় থানায়। সুকগাছা গ্রামে মধ্যরাতে সে খবর নিয়ে যায় পুলিশ। 

... জালাল মেম্বারকে সাথে নিয়ে শেখ আবদুল হাকিমের বাড়ি যায় থানার ওসি ও ডিউটি অফিসার... জানা যায়, শেখ আবদুল ওয়াহাব এখন ইতালীতে।  
ইতালী যাওয়ার সময় ওয়াহাবের পুরনো পাসপোর্টটা রেখে দেয় রমজান দালাল। সেই পাসপোর্টে গলা কাটা ছবি লাগিয়ে  রমজান দালাল আছির উদ্দিন প্রামাণিককে পাঠিয়েছে আজমানে। মারা গেছে আছিরই! 

নিজের বসত ভিটে বন্ধক বাকি ছিল... সেটিও মহাজনের কব্জায় দিয়ে একজন পিতা ছুটে চলেন লাশ গ্রহণের জন্য .. সে লাশ আনা হয়... লাশের গোসলের সময় আবিষ্কার হয়, লোকটি আছিরও নয়। তাহলে... সে লাশ কার? ধারণা করা হয় সাউথ ইনডিয়ান। 

আছিরের বাবার ইচ্ছা সাউথ ইনডিয়ান লাশটা লাশের বাবা মায়ের কাছে ফেরৎ পাঠানো দরকার।  ওসি কুদ্দুস সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। ডিউটি অফিসার ফরহাদকে সিভিল ড্রেসে লাশ নিয়ে রমজানদের সাথে ঢাকায় পাঠানো হয়।সরকারি অফিসে অফিসে ঘুরতে থকেন কেফায়েত , পুলিশের এসআই ফরহাদ এবং দলাল রমজান। লাশ ফেরৎ পাঠানো কার দায়িত্বে পড়ে? সবাই নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়! 

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, ডিএমসি হয়ে এয়ারপোর্ট... লস্ট এন্ড ফাউন্ড ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করার বানী শুনে অবশেষে ওসি কুদ্দুসের ফোন... আছির সত্যি মারা গেছে। তাকে আমিরাতেরবাংলাদেশ দূতাবাস কনফার্ম করে। কিন্তু লাশের চেহারা বোঝা না যাওয়ার কারণে এ লাশটি বাংলাদেশে...কেফায়েত প্রামাণিক নিজের সন্তানের লাশের মতই অজ্ঞাতনামা লোকের লাশটি নিয়ে সুকগাছায় ফেরৎ আসেন। সেখানেই তার দাফন হয়... কেফায়েত প্রামাণিকের সংলাপ... 'একটা মানুষের বড় পরিচয় হলো- সে মানুষ, সৎকারের অধিকার তো তার আছে।'

এটাই সিনেমার কহিনী!

সিনেমাটিতে দালালের বহুরূপ উঠে এসেছে... বিউটি বিদেশ যেতে চায়--- নানার ভাষায় 'পোড়া কপাইল্লা মেয়ে'... এ মেয়ের জন্মের পর দিনই তার বাবা মারা গেছে। বিউটির ছেলের জন্মের এক বছর পর স্বামী। তাই বিদেশ গিয়ে সে পরিবারে অভাব -চাহিদা মেটাতে চায়। লাগবে তিন লাখ টাকা। পুরুষের কাছে এ টাকার জন্য দালালের পরামর্শ- জমি জিরাত মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে টাকা আনা! তবে বিউটির জন্য ছাড় তার... পাঠাবে... বিনিময়ে.. বাধা পড়ে বিউটি! কিন্তু একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আটকা পড়ে তার ভিসা ... দালাল রমজান আছিরের বউ করে বিউটিকে বিদেশ পাঠানোর বন্দবোস্ত করবে বলে আশা দেয়। সে আশা পূরন পর্যন্ত বাধা বিউটি! 

নারীরে চোখে দালাল পুলিশ সবই সমান! সবাই তাকে লুটে... তার শরীরের উপর চোখ রেখে কাজ করে দেবে বলে আশ্বাস দেয় এবং বাস্তবতাও অনেকটা এ রকমই!! 

থানার ডিউটি অফিসার ফরহাদ যখন বিউটিকে বলে আমি তোমাকে চাই... তখন বিউটির সংলাপ দুর্দান্ত সত্যটা তুলে আনে---''..মাগনা কেউ কিছু করে?... এই যে আমি তোমার কাছে গেলাম (পুলিশ) ক্লিয়ারেন্সের জন্য... তুমি কি দিছ... কেউ দেয় না ... আগে কিলিয়ারেন্স নিয়া আস... তারপর আমারে পাবা...'' 

ফরহাদ মুখে যদিও বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু বাস্তবেও তো সেই ক্লিয়ারেন্স নিয়ে আসো... বিছানায় তা হস্তান্তর করে... কিন্তু বিউটির আর বিদেশ যাওয়া হয়না। কারণ এ ফাঁকেই জানা যায় আছির উদ্দিন প্রামাণিক মারা গেছে... 

সিনেমাটি সমাজে বিদ্যমান মিথকে চ্যালেঞ্জ করেনি। সম্ভবত একটা চলমান সময়ের চিত্র আঁকতে চেয়েছেন তৌকির। যেখানে মিথ মিথই। অন্তত পোড়া কোপাইল্লা হিসাবে নানার স্বীকৃতি দিয়ে বলা সংলাপ এখানে প্রমাণিত--বিউটি পোড়া কপাইল্লা। নিজের বাপ স্বামীর পর যার বউ হয়ে বিদেশ পাড়ি জমাতে চেয়েছে সেও মারা গেছে...! 

সিনেমাটিতে গানের ব্যবহারও অসাধারণ... সন্তানের জন্য কেফায়েত প্রমাণিকের বুকের ভেতরে আর্তনাদ --- '
''আমার সোনা জাদুর মুখ/ জগতের সবচেয়ে সুন্দরআমার সোনা জাদুর কথা/ জগতের সবচেয়ে মধুর ... ক্ষমা কইরা দিও বাজান ক্ষমা কইরা দিও/ কেমন কইরা তোমার দেহ মাটি চাপা দেবে!!''

কিম্বা টাইটেল সং 'অজ্ঞাতনামা' গানটিও তুলে এনেছে প্রবাসের যন্ত্রণা কাতর সময়ে প্রতিচ্ছবি। 

সিনেমাটি এ সমাজ রাষ্ট্র এবং সামাজিক অর্থনীতির ভেতর নষ্ট লোকেরা কীভাবে টিকে থাকে, সেটা খুব চসমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন তৌকির। বলেছেন, কষ্টের এক অনবদ্য গল্প। 
কেফায়েত প্রমাণিকের চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় এতটাই বাস্তবত যে, যে কারো দেখা অঘটনের শিকার মানুষের সাথে এর অমিল পাওয়া যাবে না। রমজানের অভিনয়টা একটা বেশি সিনেমেটিক মনে হয়েছে... দালালরা এতটা প্রতিভ থাকেন না, অন্তত পুলিশের সামনে।