রাজনীতির খেলা ও গণজাগরণমঞ্চ!

গণ জাগরণ মঞ্চ নিয়ে যা হয়েছে, এখন হচ্ছে এবং সামনে হবে বলে আশঙ্কা- তা নিয়ে  আমার কোনো রকমের মাথা ব্যাথা নাই। কারণ আমার মত কেরানীর গণজাগরণ বা হেফাজত দর্শণ উপলব্ধি করার মত সক্ষমতা পুরোপুরি নাই। 

শুরু থেকেই  গণজাগরণমঞ্চকে স্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনা হিসাবে দেখে আসছি। দুটো কারণে এটা হয়েছে- এক. আমি রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র। আর এ বিজ্ঞানের  লোক প্লেটো, এরিস্টল, ম্যাকেয়াভিলি এবং আমার ডিপার্টমেন্টের গুরু জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক স্যারের লেকা আকারে পাওয়া ঘটনাগুলো মন দিয়ে পড়ে যতটুকু বুঝেছি- রাজনীতি মানে হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং এর মধ্য দিয়ে নিজের বা দলের স্বার্থসিদ্ধি লাভ করা। সুতরাং জেনে শুনে আমি কারো রাজনৈতিক খেলার পুতুল হতে চাইনি, আর আমার মত কেরানী সেই সময়ও ছিল না, এখনো নাই। 

'জবাই কর' 'জবাই কর' টাইপের উচ্চারণ,কাউকে বিচার ছাড়া এক ঘরে রাখার সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অস্ত্র হিসাবে গণ জাগরণ মঞ্চের ভূমিকার সাথে আমার দ্বিমত ছিল। এখনো আছে।

তবে আমি  জানি এ ধরণের মোহ।  এক সময় ভেঙ্গে যায়। যার যার ধান্ধা ফুরিয়ে গেলে এটা হয়, আমরা সব সময় এ রকম। আমরা আসলে টানা রেসে থাকতে পারি না। ওয়ানডে বা টি টুয়েন্টি টাইপের খেলা আমাদের তাই টানে বেশি। টেস্ট মেসের খবর রাখি কিন্তু উপভোগ করি না।
এ রকম একটা অনুসিদ্ধান্তে পৌছাতে আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাটানো ৮ টি বছর সহায়তা করেছে। মানুষের ভেতরের ও বাইরের দুটো রূপ  এবং রাজনীতির খেলা দেখতে দেখতে  এটা সহজবোধ্য এখন!

শাহবাগে না গেলে রাজাকার- টাইপের ধারণা যারা লালন এবং এটাতে বিশ্বাস  করতেন, বা এখনো করেন তাদের সাথে একমত ছিলাম না। হুজুগে আমরা অনেক কিছু করি, বিবেচনা-ইনসাফ তখন কাজ করে না। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে ইনসাফ জীয় হয়। 

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার  অবশ্যই হবে।  এ নিয়ে আমার দ্বিমত নাই। তার জন্য আমাদের চাপও সৃষ্টি করতে হবে, এটা নিয়েওে সন্দেহ নাই। 

তবে গণজাগরণমঞ্চের  আয়োজন ছিল নির্বাচন ঘিরে।  যুদ্ধাপরাধের  ইস্যু তুলে  অনেক রকমের রাজনীতি এ দেশে হয়, রাজনৈতিক আচার আচরণ এবং এ সব চূড়ান্ত ভাবে  'পাবলিক খায়' এমন উপযোগি করার বিষয়ে সরকার মানে ১৪ দল যথেষ্ট সফল হয়েছে- এতে সন্দেহ নাই। অন্তত ডেভিড বার্গম্যানের মত ইয়াহুদি সম্বাদিকও যখন  যুদ্ধাপরাধীদের ফেভার করেন বলে অভিযোগ ওঠে তখন এ নিয়ে আলাপ একান্তই  অনাহুত। 

আর এ রকম স্পর্শকারত ইস্যুতে বিম্পি বরাবরই একটা 'মফিজ'। এ বিষয়ে সন্দেহ নাই। কারণ এটা নিয়ে মোটেও খেলতে পারেনি, বরং একটা অস্বস্তি ছির তাদের মধ্যে। জামায়ত টাকা পয়সা দিয়ে 'ম্যানেজ'  সিস্টেম ফলো করেছে। মাঝখানে আমপাবলিকের অবস্থা বেহাল। 

আমরা এ রকম বক্তব্য সংসদ থেকে  বিটিভি মারফত শুনেছি  'মন পড়ে আছে শাহবাগে।' ফেসবুকের  আপডেট ছিল গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে। পক্ষে বিপক্ষে বেহুদা প্রচারণা ছিল। এখনো আছে।  ফেসবুক-ব্লগ হলো আবেগি কারখানা, এখানে সব প্রডিউস করা যায়।

মঞ্চ নিয়া গত বইমেলায় অনেকগুলো বইও বেরিয়েছে। ৫ জানুয়ারি ঐতিহাসিক ও গিনেস বুকে নাম লেখানোর মত অভূতপূর্ব  ইলেকশ হালাল হিসাবেও স্বীকৃতি পেযেছে। কিন্তু ইলেকশনের পর গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে  সরকারের উৎসাহে ভাটা পড়ে।  ধাক্কাটা লাগে ফেব্রুয়ারিতে বর্ষপূর্তি ঘিরে। কারণ বর্ষপূর্তির আয়োজনে এবং গণজাগরণমঞ্চের সঠিক ইতিহাসায়ন হয়নি বলে সারাসরি  অভিযোগ তোলেন-অনেকে। আমি মনে করি তাদের সেই ন্যায্যতা রয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতের আল্লামা শফির আন্দোলন- হেফাজত নিয়ে তলে তলে অনেক পানি গড়িয়েছে। ক্র্যাকডাউন হয়েছে। সে উছিলা ধরে টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয় হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারকে হেনস্তা করা  হয়েছে।
আমার মনে হয় একটা রাজনৈতিক সরকার- রাজনীতিকভাবে এ সব সফলভাবে মোকাবিলা করেছে! সেখানে প্রতিপক্ষ রাজনীতিকরা পুরাই 'মফিজ'। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নাই। 

সেই সব দিনের কথা ভাবছি- যখন শাহবাগে পুলিশ  পাহারা দেয়, রাস্তা আটকে যানজটে আমাদের ভোগায়, আর  গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনা করলে  তেড়ে আসে যে কেউ। খেযে ফেলবে অবস্থা যাকে বলে।

কিন্তু মোহ তো ভাঙ্গে।  হিস্ট্রি রচনা হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে।  অ্যাক্টিভিস্ট কাম সম্বাদিক একজন  ফেসবুকে  ইমরান এইচ সরকারকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করে লিখেলেন। জানালেন- যারা আসলে আন্দোলন শুরু করেছেন, তারা নাই। হতে পারে। 

আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে গণ জাগরণ মঞ্চের সাথে লেয়াজো করতেন তারাও ক্ষিপ্ত।  তাহলে  চূড়ান্ত বিচারে সরকারের সমর্থন উঠে গেছে। তাই এখন  গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা আদর্শচ্যুত হিসাবে বিবেচিত।  সেই বিচেনায় এনে তাদের ঠেঙ্গানো হয়েছে। রক্ত মুছা হচ্ছে দেখলাম। পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে।

আমার কষ্ট হলো- গরিব মানুষের ছেলে পুলে আমরা, দেশটাকে গড়ার জন্য সবাই একসাথে কাজ করবো। কিন্তু সেটি না করে বুড়ো রাজনৈতিক নেতারা পরিকল্পনা করে ফাঁদ পাতেন আমরা সেই ফাঁদে পা দিয়ে সমাজে বিভক্তি তৈরির  কাজে ব্যবহৃত হই। কেন হই আমি জানি না। আমরা কি ভাবি- আমাদের  খাদ্যের যোগানটা কে দেয়? আম্লীগ, বিম্পি না জামায়াত। তাই বলে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো না, তা কিন্তু নয়। করবো , অবশ্যই করবো, কিন্তু কারো পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নয়।

অটিস্টিক বেবি, অটিস্টিক সরকার এবং আমাদের অসহায়ত্ব!

অটিজম- এখন একটা বাণিজ্যের নাম। দেশে এ রোগের চিকিৎসার   নামে, বেনামে ফান্ড এবং ব্যাঙের ছাতার মত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর অসহায়- বিপন্ন  মা বাবার সন্তানদের ঘিরে এক ধরণের কুৎসিত নোংরা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। এটা নিয়ে কথা বলাটাও একটা অরুচির পর্যায়ে এখন।

যাদের  অটিস্টিটিক বেবি আছে, তারাই জানেন  সে সন্তান ঘিরে প্রতিদিনকার ব্যস্ততা, দু:শিচ্ন্তা এবং ভারাক্রান্ত মনের জোর খোঁজার চেষ্টা কতটা কঠিন ও দুর্বিসহ।

সেই সব বাবা মায়ের চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায় পৃথিবী কতটা নির্মম-কঠিন এবং অন্যায্যাতায়পূর্ণ। তবুও সন্তানের সুস্থ্যতার জন্য বিচ্ছিন্নভাবে সবাই ছোটেন, এখানে সেখানে-সবখানে।

সামর্থ থাকলে দেশের বাইরে যান অনেকে। কিন্তু এর আসলে করণীয় এবং সঠিক শিক্ষা সম্পর্কে আমরা মোটেও অবগত নই।

আমার নিজেরও একটা সন্তান আছে, যার কথাটা বলাটা এখনো স্বত:স্ফূর্ত নয়।  তার প্রশ্ন বা প্রত্যা্শাটা সে বডি ল্যাংয়েজে প্রকাশ করতে চায়। একজন চিকিৎসকের অধীনে তার  ব্যায়াম, থেরাপি চলছে।  একটি স্কুলে তার শিক্ষাজীবনের হাতে খড়ি দেয়া হচ্ছে।

আমরা শুরুটা করেছিলাম তার অল্প বয়সে, দু'বছর তখন ও। শিশু হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে তাকে নিয়ে প্রথম গেলাম, চিকিৎসকরা তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন, ২ বছর বয়সে তার যতটুকু বিকাশের কথা, ততটুকু হয়নি। দু চারটে ব্যায়ামের নির্দেশনা দিয়ে তারা মুক্তি চাইলেন।

ডা. নায়লা হক নামে যে ভদ্র মহিলা অনেক দয়া করে শিশু বিকাশ প্রকল্পের পরিচালকের ভার গ্রহণ করে বাংলাদেশের অটিজম শিশুদের বাবা মা কে ধন্য করেছেন, তার সাথে দেখা করার দুর্লভ সুযোগ আমি কখনো পাইনি।

শিশু বিকাশ কেন্দ্র থেকে আমাদের বলা হলো বাচ্চাকে একটি স্পেশাল স্কুলে দেবার জন্য।  সে হিসাবে মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলে দেয়া হয়। বছর দেড়েক বা দুয়েক ধরে সেখানে ৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন এবং তিরিশ হাজার সেশন ফি এবং আরো ভালো করার জন্য স্কুলের শিক্ষিকাকে বাসায় হায়ার করে মাসে আরো ৫ হাজার টাকা গুনে  কোনো ফল পাওয়া গেলো না।

 তবে স্কুল প্রধানের মতে, আমার বাচ্চার অবস্থা ভালো। আলহামদুলিল্লাহ - তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তার কোনো সমস্যা আছে। আমাদের মূল কনসার্ন সে হাইপার এবং তার ওয়ার্ডিংটা ঠিক নেই। অর্থাৎ তার যা বলার কথা তা না বলে অন্যকথা বার বার বলছে।

তবে পড়াশোনা ও মনে রাখার ব্যাপারে সে খুবই  দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছে। এর মধ্যে দুবছরের শিক্ষা সমাপন করে তৃতীয় বর্ষে যাবার আগে বঙ্গবন্ধু হসপিটালের একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ হয়। এখন তার অধীনে আছে।

যে অভিজ্ঞতা বলতে এ লেখা, সেটি হলো শহরের মুখোশধারী মানুষগুলো সহানুভূতির আড়ালে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বাবা মায়ের এক ধরণের হয়রানি ও ভুল চিকিৎসা করে থাকেন। এ থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই।

প্রথম দিকে যে ভাবে কথা বলেন, পরে সেটি ঠিক থাকে না। বা ঠিক রাখতে পারেন না। কারণ টাকার কচকচে শব্দ আর  নোংরা গন্ধটা তাদের ঘ্রাণ শক্তিকে আরো তীব্র করে, তাই আরো বেশি টাকার জন্য তারা ছুটোছুটি করতে থাকেন।

চূড়ান্ত বিচারের রাষ্ট্র এখানে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে কাজটা সারে।  মোহনীয় ছবি দেখা যায় খবরে। মন খারাপ করা ভাব ধরা ছবি। আর ভিজুয়াল মিডয়াতে  অটিস্টিক বাচ্চাদের  সহানুভূতি জাগানিয়া ছবি দিয়ে খবর করা হয়। তারপর দিবসটি চলে গেলে আবার সব আগের মত। আজ সেই দিন- বিশ্ব অটিজম দিবস।


আসলে কেউ কি খবর নিযেছেন- অটিস্টিক বাচ্চাদের বাবা মায়েদের সংগ্রাম সম্পর্কে।

অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য সরকারের করণীয় কি? সরকার কি ভাবছে? তাদের আগামী দিনে কী হবে? তা নিয়ে সরকারে কোনো বিষয়ই খোলাসা নয়।   এখানেও রাষ্ট্র প্রতিবন্ধী। তার চরিত্র অটিস্টিক। তাই একজন অটিস্টিক হয়ে আরেকজন অটিস্টিক বাচ্চার জন্য রাষ্ট্র কিছু করতে পারে না।


সবাই আমরা চাকুার করি, সমাজ সেবা করি- প্রচার, প্রচারণা আর পুরস্কারের জন্য। কিন্তু কাজটা ভালোবাসেন কয় জনে।  প্রশ্নটা এ জন্য করলাম- যে দেশে দেড় লাখেরো বেশি অটিস্টিক বাচ্চা আছে সে দেশের সরকার বা কোনো সামাজিক সংস্থা বা কেউ কি তাদের জন্য কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছেন, বা নিচ্ছেন।

অনেকে হয়ত বলবেন, শিশু বিকাশ কেন্দ্র আছে, বঙ্গবন্ধু হসপিটালে অটিজম সেন্টার আছে, সেনাবাহিনীর স্কুল আছে, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। যারা এ বিষয়ে উপদেশ বিলাইতে চান, তারা দয়া করে এই সব জায়গায় রোগীদের সাথে গিয়ে পরে ফিডব্যাক দিলে ভালো হয়। 

কুৎসিত মনোবৃত্তির একটা লোকের নাম মোবারক অয় ক্যামনে

মানুষের বয়স বাড়লে, অনেক সমস্যা হয়। আবার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সঙ্কট হলেও মানুষ ভিন্ন রকমের শব্দ কয়। ভাবনা করে। সেটা সে দেখতে পায়। হুমায়ূন আহমেদ'র হিমু সিরিজের একটা বই-আঙ্গুলকাটা জগলুতে এইটা পড়েছিলাম।

হিমুকে তার বাবা জল থেরাপি দিচ্ছে, জলের মধ্যে ডুবাইয়া রাখছে, নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আর হিমুর মাথা অক্সিজেন কমে যাওয়ায় নানা রকমের অদ্ভূত দৃশ্য আসছে। সেটি তার চোখে ভাসছে।

মোবারকের কি এমন কিছু অইছে।

মোবারকের ইচ্ছা অইছে তিনি  তার মত যত্ত ইচ্ছা কতা কইবো, কাউরে অনুকরণ করবো, কারো লগে হুক্কাহুয়া করবো, এইটা তিনি করতেই পারেন। কিন্তু পাছে তার যে একটা পদ পদবি আছে সেইটা কি সে ভুইলাই গেছে।

'গোলাপী' বেগমরে গাইলাতাছে দেইখা যারা মজা লুটতাছে, তারা কি জানেন এ রকম ভয়ঙ্কর কুৎসিত লোকরা কিন্তু যে কারো জন্য বিপাজ্জনক। কোপালী গোপালীরাও এ রকম লোকের কাছ থেকে রক্ষে পাবেন সেটাও কিন্তু নয়।

তিনি বা তার সহকর্মীরা যে নিব্বাচনের নামে শতাব্দীর কুৎসিত 'গণতান্ত্রিক' খেলা খেলছেন, তা কি আমরা বুঝতে পারছি। ঢাকার শহরে বইসা অবশ্য বিবেক বন্দক দেয়া লোকেরা এইটা উপলব্ধি করতে সক্ষম অইবেন না।

চাটিগার পোয়া মোবারকের কতা বার্তা ও নাকে খত দেয়া নিয়া নান রকমের কতা মনে অইতে পারে।

রূপবান প্রকাশ অইছে মাস দুয়েক আগে। সমকামিদের প্রথম ম্যাগাজিন। সঙ্ঘবদ্ধ সমকামিতার আগে চাঁটিগার  'লাল পোয়া' নিয়ে অনেক রসাত্মক গল্প আছে। আমার কয়েকজন বড় ভাই ও ছোট ভাই চাটিগাঁর তাই এ বিষয়ে আলাপ না করে বিরত থাকলাম।

চাটুকারিতার অতিশয্যে তিনি এ রকম কুতর্ক তৈরি করেছেন, তা খুবই নিন্দনীয়।



এভারেস্টর চূড়ায় ওঠা না ওঠা কি আমাদের জাতীয় সমস্যা!

এভারেস্টর চূড়ায় ওঠা না ওঠা কি আমাদের জাতীয় সমস্যা! আমি জানি না। জানতে চাইও না। তবে নৈতিক বিচারে যারা এটা নিয়ে তর্ক করছেন, তারা মানকি দৈন্যতা প৪্রকাশ করছেন।

মুসা আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ারমেট। ওর লগে আমার দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল না। হাই হ্যালো দু'চাইবার হইছে। ওরা নিজেরা ঘুরতো, আইইআর থেকে। আমরা সে সময় অভ্যন্তরীন পর্যটন বৃদ্ধির জন্য কাজ করতাম। ট্যুরিস্ট সোসাইটির ব্যানারে।

ওরা পাহাড়ে চড়তো, আমরা শিক্ষার্থীদের বলতাম- তোমরা ঘোরো। শিক্ষকদের বলতাম, স্যার পুলাপাইনরে লইয়া এসকারশনে যান। সব এন্তজাম আমরা মাগনা কইরা দিমু। দিতামও।

সে যাই হোক- মুসা মিয়ার এভারেস্ট জয় নিয়ে তর্কের চেয়ে আমাদের মানসিক দৈন্যতা নিয়ে তর্ক হতে পারে। আমরা একটা বিকারগ্রস্থ।  আমরা সব মাইনা লই, যদি সেইটা আমাদের জন্য বা আমাদের দলের জন্য  সুবিধার হয়।

অন্যরে ঠাটায়া গালি দিই। আরম লাগে। কিন্তু ভুলেই যাই থুতু আসমানের দিকে মারলে নিজের গায়ে পড়ে।

মিডিয়ার একটু সমালোচনা করতেই হয়- এ দেশে মুসা এভারেস্টে গেলে তিনদিন লিড অয়, ইনাম আল হক  উত্তর মেরু এক কলাম নিউজ ছাপা হয়।  নিশাত প্রথম এভারেস্টে উঠেও থার্ড পেজে নিউজ, হয় ওয়াসফিয়া দ্বিতীয় স্থান  অর্জন করেও প্রথম পাতার খবরে আসে। 

কতাটা ক্যান কইলাম- কইলাম পাহাড়ে চড়া নিয়া যে একটা সংগঠন করেছেন ইনাম আল হক। এটাই আমাদের অভিযাত্রীদের বাতিঘর। পরে মুসা ২০০৮ সালে সেখান থেকে বের হয়ে নর্থ আলপাইন ক্লাব করেছে। সেটার সভাপতি  লেখক আনিসুল হক।

খালি যে মাইলেজ পাওন বা  ইনাম আল হকরে 'মফিজ' বানানোর আয়োজন এটা, সেটি নিশ্চয় আমরা বুঝি।

তাই বলে মুসার এভারেস্ট জয় নিয়া  কুতর্কের অর্থ খুঁজে পাই না।

বিকালটা আসলেই অসাধারণ। সিগাল উড়ছে। জাহাজের পেছনে। ঢেউ ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে জলদানব। ফেনা উছলে উঠছে।


সন্ধ্যার একটু আগে আমরা সবাই বিচে নেমে এলাম। কালো প্রবালের বিচে আগে নিজে দৌড়ে নেমে যেতাম, এবার নিজের ছেলেকে সামলানোর  পালা। একবারেই স্ববিরোধি কাজটি করতে হয়েছে ছেলের মায়ের জন্য। আমি এ সব  বাধা--ভয় মানতে চাইনি কখনো। এখনো চাইনা।

 সেন্টমার্টিনে ২২ মার্চ, শনি বার বেলা সাড়ে ১২ টায় নামলাম। এ প্রথম কোনো গ্রুপ ছাড়া পরিবার পরিজন  নিয়ে সেন্টমার্টিন গেলাম। আমার দু সন্তান- নাজিব ও নাকিব, প্রথম সেন্টমার্টিন্সে পা রাখলো। সে সাথে আমাদের আরো  তিনজন- নুহা , রীতি ও আসমা।

আগের মত স্যাঁত স্যাঁতে কিম্বা বালিময় রেস্তোরা নেই। এখন নগরে ছোয়া আনার চেষ্টা সবখানে। যাত্রা পথে বড় রকমের বিপত্ত। রমেশের শ্যামলী পরিবহনের এসি নষ্ট হয়ে গেলো কুমিল্লাতে। তারপর এসি ঠিক করার বৃথা চেষ্টার পর পরকীয়া চাচার চাপে আমরা এসি বিহীন গাড়িতে দম আটকানো ভ্রমণে বাধ্য হয়ে  পৌছালাম- দমদমিয়া ঘাটে।

নে টং পাহাড়ের কোলে সুন্দর একটা সকাল। এ রকম এক সকালে -বহু সকালে টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন যেতাম আমরা, এখনো যাই। কিন্তু মন ভরে না। একমাসে সেন্টমার্টিন তিনবার যাওয়ার রেকর্ড আমার আছে।  কী যে আনন্দ-তার সীমা নাই।

জাহাজ চালু হবার পরেও বাণিজ্যিক ট্যুর না হলে ট্রলারেই সেন্টমার্টিন আমার যাত্রা। আমারা বন্ধুরা ট্রলার জার্ণিটা দারুন এনজয় করি। মাতাল সমুদ্রের ওপর হেলে দুলে চলা  ট্রলার আর জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ এবং লোনা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া ক্লান্তি - এক কথায় অসাধারণ ভ্রমণ।

আমাদের জাহাজ ছেড়ে দেবে, উঠে বসার পর দুঘণ্টার জার্ণি। সকালের তেতে ওঠা রোদের ভেতর আমরা যাচ্ছি সেন্টমার্টিন। নামলাম সুরকি-সিমেন্টর ঢালাই করার জেটিতে। আগে ট্রলার থেকে প্যান্ট গুটিয়ে ট্রলার থেকে লাফ দিতাম, তারপর কিনারে ভিড়ো এবং হেঁটে চলো হোটেলে। এখন সেটি করতে হয় না। কারণ ভ্রমন এখন  সায়েবী আরামের পরিণত হয়েছে। টানা ৫ বছর কসরত করে সরকার একটা জেটি বানিয়েছে। সেই জেটিতে অনেক 'পর্যটক' যান সেখানে।  তবে এত বেশি পর্যটক ধারণ ক্ষমতা সেন্টমার্টিনের নেই।

জেটিতে পা রেখে দু সন্তানকে দু হাতে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে রঙ্গিন কাপড়ের ঝরকাঅলা ভ্যান গাড়ি। তার দুটোতে আমরা ছয়জন বসে পড়লাম। হোটেল চেক ইন ২ টায়। ভোলা যাওয়া মাত্রই একটা রুম দিলো, বললো-ফ্রেশ অন তারেক ভাই। তারপর  মাছি ভন ভন রেস্তোরায় দুপুরের খাবার- মেন্যু লাল কোরাল, আলুভর্তা, সবজি এবং ডাল।

রুম বুঝে পাওয়ার পর একটু সময় নিতেই হলো। তবে ঘুম শামীম ছাড়া কেউ যায়নি। বিকালে সবাই নেমে এলাম বিচে। অবকাশের বিচে ইদানিং ভিড়টা বেশি। শিপু ও রীতিকে খুঁজে পাওয়া গেলো প্রবালের লম্বা আইলের মাথায়। আমি আর লিনা মাত্র নামলাম। তারপর কোনা পাড়ার দিকে হাঁটা শুরু করলাম, এর মধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিযেছে শামীম, আসমা ও তাদের কন্যা নুহা।

মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে ধীরে অস্তায়মান সূর্যটা দেখতে দেখতে আমরা তখন কোনপাড়ায়।  নারকেল গাছ, কেওড়া বন আর প্রবাল-সমুদ্র এ সব মিলিয়ে আমাদের বিকাল।  শিপুর টর্চের আলো ফেলছে, আমরা দক্ষিণ পাড়ার নারকেল বাগান থেকে সদ্য নামিয়ে আনা  ডাবের পানি খেয়ে ফিরছি।

কথা ছিল  লাবিবার দ্বিতল রেস্তোরায়  সন্ধ্রার  খাবারটা হবে- সেটি হয়নি। কারণ 'পইযযটক ' কম তাই পূর্ব আদেশ না পেলে রান্না হয় না। মন খারাপ করের ফিরে এলাম আমরা।  তার পর আরো কিছু সময় বিচে কাটানোর পর  মনে হলো মাছ ভাজা খাওন দরকার।  ডুবো তেলে মাছ ভাজি  করার পাঁচক ছিদ্দিক। তার হাসান রেস্তোরায়  ঢুঁ মারতে হবে।  আমরা গেলামও।

 বছর দেড়েক পরে  ছিদ্দিকের সাথে  দেখা, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে- সে খবরটাও জানালেন। ফাঁকে  রূপচান্দা, উড়ুক্কু মাছ ফ্রাই করার অর্ডার করা হলো। রীতি মাছ খায় না। কিন্তু এ রকম আয়োজন টা সে মিস করলো না। রাতের খাবারটাও আমরা সেখানে খেয়েছিলাম।

লম্বা একটা ঘুমের পর  আমরা সকালে উঠলাম। নাশতাটা সেরে ছুটছি  প্রাসাদের বিচে। উদ্দেশ্য জলে ভেজা। এ বিচটা এক সময় অচেনাই ছিল। সেন্টমার্টিনে আসলে কেউ বয়ে পানিতে নামতো না।  কোথায় প্রবাল আছে, কোথায় নাই সেটি বোঝা মুশকিল ছির এক সময়। কিন্তু প্রাসাদের বিচ  প্রবাল মুক্ত।  এটা ১৯৯৯ সালের দিকে আমাদের দেশের একজন পর্যটক নিশ্চিত হন। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ২০০০ সাল থেকে আমরা এখানেই ভিজতাম। এখনো। তবে এখন অনেক বেশি লোকের সমাগম ঘটে থাকে।

প্রাসাদের বিচে , ঢেউয়ের সাথে, অনেকক্ষণ মিতালী শেষে আমরা ফিরছি হোটেলে। বিকালে ছেড়াদ্বীপ যাওয়ার ভাবনা ছিল। কিন্তু আকাশের মন খারাপ।  বাচ্চা কাচ্চা নিয়া  'সাহস' করতে পারলাম না।  বিকালটাও তাই কাটলো বিচে।

দুপুরেন সেই মাছি ভন ভন রেস্তোরায় খাবার। তবে মাছিটা একটু পরিমান বেশি হয়ে গেছে। তবুও খেলুম।

সন্ধ্যায় রীতির সৌজন্যে  মৎস্য ফ্রাই ভক্ষণ পর্ব সমাপ্ত এবং নাজিবকে সামলাতে  শিপু  ও রীতির প্রণান্ত চেষ্টায় আমি একটু হাওয়া খেলাম, সাথে তিন কাপ চা!

রাত করেই আমরা ফিরলাম। তবে এরকটা পর্ব বাকি ছিল। বার বি কিউ। লাল কোরাল, কালো চাঁন্দা মাছ আর মুরগি- তিনটা আইটেমের বার বি কিউ অর্ডার করা হয়েছে। আমাদের সাথে আরো দু চারটে দম্পতির আয়োজনও ছিল।

তবে বার বি কিউটা নিরামিষ। অনেকটা কর্পোরেটের মতন। কারণ এখানে গান বাজনা বা  জলপানের কোনো আয়োজন ছিল না। মারাত্মক ব্যাপার... তবুও আমরা মজটা করেই  বার বি কিউ ডিনারটা সেমরে নিলাম গোল ঘরে বসেই।

রাতটা কেটে গেলো ভালোই । সকালে হালকা স্বাস্থ্যগত সমস্যা-পেইন! তাই ছেড়াদ্বীপ যাত্রা বাতিল। তাতে কি। আবার আসবো- তখন যাবো, জানালো রীতি। কিন্তু আমি শামীম কিম্বা শিপু যারা ছেড়াদ্বীপ গেছি, তাদের কাছে বরাবরই মনে হচ্ছিলো- মিস করছি ছেড়াদ্বীপ তোমাকে। তোমার জন্য কলজে ছিঁড়ে যাচ্ছে।

 ফিরবো ঢাকায়, সিদ্ধান্ত হলো সাড়ে ২৪ মার্চ বেলা ১২ টার দিকে। আমার কেনাকাটা করার মত কিচ্ছু নাই। কিন্তু লিনার শুটকি লাগবে।  শিপু ও শামীম  শুটকি কিনবে। শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের কাছে জমি বিক্রেতা ফজলুর পোলা  আয়াজের কাছ থেকে শুটকি কেনা হলো।  বাকি পর্যন্ত দিতে চায়, পোলাটা- বলে শুটকি ভালো হলে টাকা দিয়েন।

আমরা নগদেই কিনলাম। দুপুর ২ টা রুম ছেড়ে ভ্যানে। এর মধ্যে কেনা হয়ে গেলো বার্মিজ ক্যালশিয়াম,  বাসার দারোয়ানের জন্য গেঞ্জি। নুহার ক্যাপ। আরো কিছু হয়ত কেনা হয়েছে- সবটা আমি জানি না!! 

জাহাজ ছাড়বে- আমরা চেপে বসলাম। বিকাল আসলেই অসাধারণ। সিগাল উড়ছে। জাহাজের পেছনে। ঢেউ ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে জলদানব। ফেনা উছলে উঠছে। আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি। সিগালগুলো পেছণে ঝাঁকে ঝাঁকে। কী এক অপূর্ব দৃশ্য। মনে রাখার মত একটা বিকাল।

সন্ধ্যার একটু আগে আমরা তখন দমদমিয়া ঘাটে। কাঠের জেটি হয়ে উপরে উঠে এলাম। বাসের জন্য অপেক্ষা। তিনদিনের ভ্রমন পর্ব সাঙ্গ হবার আগে  আবারো কেনাকটায় ওরা তিনজন-। বাসে চেপে বসতে বসতে সুপার ভাইজার রাসেল হাত মেলালো। বল ভাই সরি, সেদিন হালকা প্রবলেম এর কারণে এসিটা চালাতে পারিনি।

গাড়ি ছুটছে, আমরা ঢাকা ফিরছি।  ইয়াবা সম্রাট বদি ভাইয়ের এলাকা থেকে ফিরছি, তার কিছু ছিঁড়তে অক্ষম নিরাপত্তা রক্ষীরা যাত্রিবাহি বাসে চেক করছে। চেকিং । ঢাকার কাছে মেঘণাঘাটের কাছে শেষ চেকপোস্টে একজনকে পুলিশ নামিয়ে রেখে দিলো। জানা গেলো এ রকম ঘটনা হামেশাই হয়।

তাই বিকার হীন আমরা ফিরে এলাম। বাস থেকে নেমেই নগরে পোড়া আলোর ঝলকানি। সকাল তখন ৯ টা। আরাম বাগ থেকে আমরা ফিরছি বাসায়। শামীম অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে গেছে। রাতে। ফিরেছে পর দিন রাতে।

আমরা ফিরে যাচ্ছি বাসায়। ইচ্ছে ছিল ২৫ মার্চ দুপুরে অফিসে বসেই  সেন্টমার্টিন অভিযান নিযে লিখবো। এর মধ্যে জানলাম আমাদের সাবেক ইয়ারমেট ও হালের ব্যাংকার কবি মারা গেছে।  যাবার সময় শুনেছিলাম, ও আইসিইউতে।  মনটা খুব খারাপ ছিল বলে দুদিন পরে লিখলাম।








২৫ মার্চ, মানব হত্যা এবং পাকি ও ইনডিয়া প্রেম!


কোনো যুক্তিতে আমি পাকিদের বাঙালি নিধনকে মেনে নেবার মত শক্তি খুঁজে পাই না। তবুও যারা রাজনীতি করেন, মানুষ মারাকে জায়েজ করার নানা রকমের ফতোয়ার কারবারি তারা এ সব জায়েজ করতে চান।

কখনো কেউ ইসলাম ও মুসলমানিত্ব রক্ষার নামে, কেউ চেতনা রক্ষার স্লোগানে- মানুষ হত্যাকে জায়েজ করে নেন নিজেদের মতানুসারে।
আমি এর কেবল বিরোধী নই, নিজের যে শক্তি আছে, সেটি নিয়ে লড়ছি। সামনেও লড়বো।

একাত্তুরের  ২৫ মার্চের অন্ধকার রাতে যে হামলা চালালো পাকি কুত্তারা, সে বর্বরতার পরেও  মুসলমানিত্ব রক্ষার ইজারাদাররা তাদের পক্ষ লইলো! তারা কেন মানব হত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো না- এটা এক অপার বিস্ময় এবং মানব সভ্যতা নিয়ে একটা জিজ্ঞাসার  সৃষ্টি করেছে। কীভাবে একজন  সুস্থ্য মানুষ এটা মেনে নেয়, আমি  ভাবতে পারিনা কখনোই। ইসলাম ধর্ম তো বলে মানব হত্যা সবচেয়ে জঘন্য পাপ। হত্যার বদলা বদলা হত্যা- ধর্মে যেটাকে বলে কিসাস।

আমি জন্মগতভাবে ইনডিয়া ও পাকিস্তানের বিরোধী। পাকিস্তানিরা আমাদের রক্ত চুষে নিয়েছে, বেয়নেটের খোঁচায় জীবন নিয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে। আর ইনডিয়ানরা আমাদের দিনের পর  পর শোষন করে চলেছে, আমাদের নদীতে বাঁধ দিয়ে আমরা দেশের শিরা উপশিরা বন্ধ করে দিচ্ছে।

আগ্রাসনের মাধ্যমে আমাদের সর্বশেষ টিকে থাকা সংস্কৃতির ওপর প্রলয় বইয়ে দিচ্ছে। আর মাদক, মরণ নেশা এবং সীমান্ত হত্যার ভেতর দিয়ে আমরা ৪৩ বছর পার করছি। ধর্ষণের ঘটনা আমরা চেপে যাই। তবুও যদি তারা আমাদের জীবনটা রক্ষে করে!

নিজেকে বাংলাদেশের দালাল হিসাবে পরিচয় দিতে অহঙ্কার বোধ করি। আমার কোনো ব্যাক্তিগত  ধান্ধা ফিকির নাই। তাই রাজনৈতিক গন্ধ নিয়ে ভাবনায় থাকি না।  আমরা ধীরে ধীরে ব্যাক্তিগত ধান্ধা ফিকির মুক্ত ব্যাক্তি থেকে পরিবার, সমাজ হয়ে রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাই।  সবাই সবার তরে কাজ করতে চাই। এ প্রত্যয়ের প্রত্যাশা!

সম্বাদিকের বাড়িতে যৌথ বাহিনী!


দলীয় নিক্তিতে সম্বাদিকতাকে মাপাটাকে আমি কখনই সমীচীন মনে করিনি, এখনো করি না। সামনেও করবো না। এ আস্থা ও বিশ্বাস আমার ওপর আছে।

আম্লীগ সরকারন গঠনের পর সম্বাদিকদের গ্রেপ্তার করার বিষয়ঠা কঠিন করে একটা আইন করা হয়েছে বকলে প্রচার আছে। এতে খুশিতে পা চাটা নেতারা লাফাইয়া উঠলো- দেখছো আম্লীগের কি দয়া! 

 এখন ওরা কই

মাহমুদুর রহমান না হয় অসাংবাদিক সম্পাদক। কিন্তু আবু সালেহ আকন!   ক্যাম্পাস লাইফ থেকে সাংবাদিকতা করছেন। তার ওপর ক্রাইম রিপোর্টার। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  জার্নালিজমে।  ক্রাইম রিপোর্টারদের সংগঠন ক্র্যাবের  সাধারণ সম্পাদক। নয়া দিগন্তের স্পেশাল করেসপনডেন্ট।

বরিশালে তার গ্রামের বাড়িতে যৌথবাহিনী সন্ত্রাসমী খুঁজতে গেছে।- কী নির্মম  প্রতিশোধ পরায়ণ যৌথ বাহিনী। বিরোধি মতের পত্রিকায় কাজ করে বলে তাকেও দলীয় বিবেচনায় এনেছে  যৌথ বাহিনী। এ রকম বিবেচনা কেবল কাপুরোষিতই নয়, আত্মঘাতিও বটে।

আমি ভাবছি-  কাল যে আমার বাড়িতে হানা দেবে না- যৌথ বাহিনী!  তার নিশ্চয়তা কই। নিজের চেয়ে পডিরবারের জণ্য বেশি অনিশ্চয়তা বোধ করছি। সম্বাদিকরা যেখানে হয়রানির শিকার সেখানে আমার মত কেরানী পাবলিকের কী অবস্থা! 

যারা  চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ বলে ধরে নিয়ে এখন যৌথ বাহিনীর  অভিযানের পক্ষে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে দাঁড়াবেন- তারা  যে নিরাপদ সেটাও মনে হয় না। কারণ  প্রলয়  কখনো ভালো মন্দের বিচার করে না। এ এক অশুভ অসুর!

আমরা শুনে আসছি যৌথ বাহিনী নিষ্পাপ- নিষ্কলঙ্ক। কিন্তু নদীর জলে মানুষের ফুলে ওঠা লাশ, কচুরি ফেনার নিচে বনি আদমের লুকায়িত শরীর, আর সাংবাদিকের বাসায় হানার পর তাদের পক্ষে আর ওকালতি করা যায় না।

অবশ্য ক্ষমতার লোভে- অনেকেই তা করবেন। করুণ না। তাদের জন্য পেটে পড়লে পিঠে সয়। কিন্তু সম্বাদিকগো তো  সে ধান্ধা নাই।  তাই সম্বাদিক ও তাদের পরিবারের সুরক্ষায় সরকার কি করে সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি!

লাভ ইউ সেন্টমার্টিন্স, লাভ ইউ অল

সাগরের গর্জন, আঁধার ভেদ করে ফসফরাসের ঝলকনি, জোনাকি জ্বলে ওঠা মধ্যরাত-প্রচণ্ড রকমের উপভোগ্য আমার কাছে সেন্টমার্টিন্স আইসল্যান্ড।

সেই ২০০০ সাল থেকে এখনো। বয়স হয়েছে, আগের মত ট্রলারে ছুট দেই না ঠিকই, তবুও যাই। বেড়াতে কিম্বা বাণিজিক্য ভ্রমণে। বছওের ৬ থেকে ৭ বার। তবুও মন ভরে না।

এবারের আয়োজনটা ভিন্ন। আমার দুই পুত্র নাজিব ও নাকিবকে নিয়ে সেন্টমার্টিন্স যাচ্ছি। সব ঠিকঠাক থাকলে আজ শুক্কুরবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় গাড়ি ছাড়বে।

এটা একটা ভিন্ন রকমের অনুভূতি- নাজিব এর আগে কক্সবাজার গেছে। সেন্টমার্টিনে তার প্রথম যাত্রা। দেশে এই একটি দ্বীপ আমার কাছে অপার বিস্ময় এবং ভালোলাগার।

যে সময় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরস্ট সোসাইটিতে ছিলাম, ট্যুরের দায়িত্বে থাকতাম, সে সময় দল বেঁধে যেতাম,  ঘোরঘুরিতে আমি একলা দুই চারজন নিয়া আনন্দ পাই কম, খুবই কম।  আমার  বন্ধু ও শত্রু বাবু আমার  এক সময়কার ভ্রমণসঙ্গী। সেন্টমার্টিন্সে আমি আর ও একসাথে গেছিলাম।

 তার পর বার বার অনেক বার। এ দ্বীপে যেতে আমার কখনো খারাপ লাগে না। মনে হলেই ছুটে যাই, সে রকম এক আনন্দময় এক দ্বীপ-সেন্টমার্টিন্স। পুরনো নাম নারকেল জিঞ্জিরা, দারুচিনি দ্বীপও বলা হয়্। আগে আরব্য  ব্যবসায়ীরা এ দ্বীপে বিশ্রাম করতেন, দক্ষিণ পাড়ায় অনেক নারকেল গাছ।  এক সময় কেবল নারকেলে জলপান নয়, মুখ ধোয়ার কাজেও ব্যবহার করতাম। এখন সেটা স্বপ্ন।
সেন্টমার্টিন্সের ডাবের চাহিদা মেটাতে মায়ানমার হাল ধরেছে!

সেন্টমার্টিন্সের নেক ঘটনার মধ্যে নেক স্মৃতি আছে- প্রথম আমরা যখন দল বেঁধে গেলাম, সেবার জোছনা রাত। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তাম- জোছনা মানে আমার কাছে অন্য রকম একটা ব্যাপার।

এক রাতে আমরা পুরো দ্বীপ চক্কর মারলাম। সমুদ্রের মাঝখানে একটা রূপময়  দ্বীপ ভেসে থাকলো, সন্ধ্যার পরে ছেড়াদ্বীপ থেকে ফিরতে ফিরতে  আমাদের এ জোছনা দর্শন।  মানুষ আমরা গোটা চল্লিশেক। সে সময় ছেড়দ্বীপ যাবার  বাহন ছিল পা।

 ফেরার পথে  পানি বেড়ে গেছে, মানে জোয়ার। আমরা সে জোয়ারে হাবুডুবু খেয়ে ফিরছিলাম! তবুও আনন্দ, সীমাহীন সেই আনন্দ ছাড়াও সেন্টমার্টিনসের  দক্ষিণ পাড়ার যাবার পথে অনেকগুলো প্রবাল পড়ে, সেখানে এক সন্ধ্যায়  পা ডুবিয়ে সূর্যাস্ত দেখেছি, এমন মুগ্ধ আমাকে আর কিছুই করতে পারেনি, আমার ছেলেদের হাসি ছাড়া।

সেন্টমার্টিন্সের প্রেমে আমি মজনু। থাকতেও চা্ই। আজকে যখন   গোত্তা মেরে জলের  ভেতর আঁচড়ে পড়ে জাহাজের  নোঙর, মনে হয় আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। লঞ্চের খট খট শব্দ, সিগালের ওড়াওড়ি দেখতে দেখতে  নৌকার নাচন আর মাঝির ভিজ্ঞতা শুনতে শুনতে যে সেন্টমার্টিনস যাত্রা করতাম, সেই আমেজ পাই না।

 তবুও

আজ যখন যাবো  তখন অনেক স্মৃতি ভিড় করছে।  আমরা যখন ট্যুর আয়োজন করতাম, ট্যুরের আগে সকালে আমি আর বাবু কেনাকটা করতে যেতাম বঙ্গবাজারে। ফিরতাম হলে, ফ্রেশ হয়ে ট্যুরিস্ট সোসাইটি অফিসে বসতাম। সবাই আসতো, গল্পে আড্ডায় আমরা ছুটতাম।

আজকের ভ্রমনটা একেবারই ভিন্ন। টিকিট করা গাড়ি একজন বয়সী-তরুণ উঠবে পরিবার পরিজন নিয়ে। সাথে ছোট ভাই, সেও বউ নিয়ে এবং বন্ধু সেও বউ-কন্যা নিয়ে। সময়ের স্রোতে কি দারুণ এক বদল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে, মধুর ক্যান্টিনের বাটার টোস্ট খেয়ে, মিস্টির রস চুষে নিয়ে আনোয়ারের সিগারেটে ফুঁ দেয়া ছেলেপুলো সব বড় হয়ে গেছে!

তবে এ অবকাশ যাপান আমরা কাছে একটা অনন্য ও অসাধারণ ঘটনা। আমার দুটো ছেলেই সাথে যাচ্ছে। সাথে তাদের মা। পিতা হিসাবে  নিজেকে স্বার্থক মনে হচ্ছে। ওরা যখন বড় হবে, বার বার যাবে, নিজে যাবে, বান্ধবী-বউ নিয়ে যাবে।  বুড়ো বাবা মাকেও নিয়ে যেতে পারে, যদি ততদিন তারা বেঁচে থাকে।

নাজিবের মুখের দিকে তাকালে আমার মনে হয়, পৃথিবীতে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি চাইনি। বয়স ওর ৫ । বুদ্ধিভিত্তিক কিছু জটিলতা আছে। তবুও  এ ছেলেটার কারণে আমি আজ  অন্যরকম এক মানুষ। নাকিবকেও রাখতে হবে সে দলে, গুট গুট করে হাঁটে, টুক টুক করে কথা বলে। এত মায়াবী দুইখান পুত্র আমার।  সাথে যাচ্ছে বন্ধু শামীম ও তার কন্যা এবং স্ত্রী আসমা এবং ছোটভাই শিপু ও তার স্ত্রী রীতি।  আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে আমরা একসাথে বেড়ে উঠেছি।

তবুও আমি এখানে কারো শূণ্যতা খুব  অনুভব করি, সামনেও করবো- মীর মামুন, বাবু, মাহমুদ, সাদিয়া , লিপি, মিটি, নিম্মি, খালিদ, দিলরুবা, গ্লোরিয়া- আরো অনেকে। মিস ইউ মাই ডিয়ার ফ্রেন্ডস, এনিমিজ, সিস্টারস অ্যান্ড ব্রাদারস।

 লাভ ইউ সেন্টমার্টিন্স, লাভ ইউ অল। 

তিস্তা, ক্যাটরিনা... মাল এবং আসল মাল!


মমতার বুক শুকায়া আছে, তাই তিনি তিস্তার জল চুইষা নিতাছেন। তিস্তা তিস্তা কইরা কত জনরে দেখলাম হেইলা দুইলা কলকাতা, দিল্লি ঢাক্কা করলো, কিন্তু জল আইলো না।

আমাগো দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য  হারাম ইলেকশন, বিম্পির পেছন দিকটা মারা, হঠাৎ কইরা মানুষ হাওয়া অন, বনি আদমের ফুলে ওঠা লাশ নিয়ে কুত্তার টানাটানি,  মৃত্যু পরওয়ানা - সব বিষয়ে ইনডিয়ার মুখের কতা মাইনা লইছি, তবুও তিস্তার জল আর আইলো না।

সানি লিওনের টপলেস বডির কী যে ইন্দ্রজাল, আহারে, যদি একবার পাইতাম..., বলতে বলতে বাঙালি যে হারে হাত কচলায়, আরো কিছু কচলায়... সেটা কওন যাইতাছে না। বাথরুমে যায়, খবরের কাগজে তার বড় ছবি, অনলাইনে তারে নিয়া মউজ মাস্তি... আহারে চেতনা!

তিস্তারে মাইরা ফালাইছে ইনডিয়া। সেটার দিকে নজর নাই, থাকব ক্যামনে, নজর তো সবার  স্টারপ্লাস, স্টার জলসার দিকে। ঐশ্বরিয়ার মাইয়ার ছব্বি দেখবার অপেক্ষা।

আলাপ আলোচনাও সেই রকম দেখছন, বাসে-ক্যাম্পাসে তরুণদের আলোচনা -'ক্যটারিনা রে ... যা  একটা মাল মাম্মা। ' এই মাল দেখতে দেখতে  আসল মালই গায়েব হয়ে যাচ্ছে, সেই দিকে আমাদের তরুণদের কোনো  চোখ নাই! আমগোরে যে  এমনই এক আফিম খাওইয়েছে, ইনডিয়া।


পাকিস্তান, হিন্দুস্তান অইবার পর পাকিরা মারছে, তাগো বিরুদ্ধে লইড়া্ দেশ স্বাধীন অইছে। ভাগ্য ভালো বঙ্গবন্ধুর মত এক অসাধারণ নেতার স্পর্শ পাইছলো বাংলাদেশ। কিন্তু  তাকে হত্যার পর ভারতের আধিপত্য বাড়ছে, পাকিস্তানও তলে তলে কাম করে। ওপেনে গোপনে।

দেশে তো ইনডিয়ান দালালে ভইরা গেছে। পানি না দিলে কি অইবো, তাগো পানি তো বিদেশ থেকে আসে, পেরি পেরি ...। আর আমগো দেশের  গরিব মাইনষে  চাপ কলে পানি পায় না।

নদীর অস্তিত্ব রাখার জন্য যেখানে ৪ হাজার কিউসেক পাওন দরকার। সেখানে আছে মাত্র ৪ থেকে ৫ শ কিউসেক। এর রকম পানি নালা নর্দমায়ও তাকে। ঢাকার শহরের নর্দমায় এর চেয়ে বেশি পানির প্রবাহ।

 হে মোর দুর্ভাগা স্বদেশ।

অভিযান:-ছেড়াদ্বীপ-সেন্টমার্টিন


২১ মার্চ, শুক্কুরবার সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে আরামবাগ বাস স্ট্যান্ডে রিপোর্টিং। সাড়ে ৭ টায় টেকনাফের উদ্দেশে যাত্রা। রাত দেড়টায়  কুমিল্লায় হোটেলে বিরতি।  ফ্রেশ হয়ে চা ও হালকা খাবার গ্রহণ। ভোর ৬ টার দিকে কক্সবাজারের  ইনানী হাইওয়ে ইনে ব্রেক। ফ্রেশ হয়ে, ফের যাত্রা। সকাল ৭ টা ৩০ মিনিট নাগাদ টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট!

বাস থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে, সকালেরর নাশতা। খোলা রেস্তোরায়- ডিম ভাজি, পরটা, সবজি, কনডেন্সড মিল্কের চা!

ন’টার দিকে কাঠের লম্বা পথ বেয়ে জাহাজে ওঠা।  সাড়ে ন’টায় জাহাজের ওপেন ডেকে আসন খুঁজে বসে পড়া। রোদ চশমা খুলে টেকনাফ পাহাড়, স্থলবন্দর, মায়ানমার, কেওড়াবন, শাহপরীর দ্বীপ দেখতে দেখতে  নীল সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে সেন্টমার্টিন পৌছানো। সাড়ে ১২ টায় জাহাজ থেকে  সিমেন্টের  সিঁড়ি বেড়ে সেন্টমার্টিনের বালি স্পর্শ।

রঙ্গিন কাপড়ে সাজানো ভ্যান গাড়ির কোনো একটাতে চেপে বসা।  গন্তব্য সেন্টমার্টিন রিসোর্ট।  পৌঁছে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা। রুম তখন খালি হতে থাকবে। দুপুর দেড় টায় রিসোর্ট রুমে ফ্রেশ হয়ে, খাবার  রিসোর্ট রেস্তারায়, বুফে! মাছি ভন ভন আর বালি ওড়াউড়ির ভেতর সুমুদ্রের মৎস দিয়ে ভক্ষণ পর্ব সমাপ্ত করার পর ১ ঘণ্টা রেস্ট।


বিকাল ৪ টা। অবকাশের বিচে নেমে আসা। ভেজার দরকার নাই। আপাতত কেবল দেখা। পাশেই হুমায়ূন আহমেদের এক সময়কার বিলাস-ভবন। সেখানে ঝটপট ছব্বি তোলা শেষ করে। সামনে হাঁটা।  ছেড়া দ্বীপের দিকে হাঁটতে হাঁটতে  কালো পাথরে স্তুপে বসে নীলজলে পা ডুবিয়ে সূর্যাস্ত দর্শন। তার ওপর আস্তে করে উঠতে থাকা ঠাণ্ডা চাঁদের আলোয় হেঁটে ফেরা। 


রাত নেমে এলে দ্বিতল রেস্তারায় বসে আড্ডা। হালকা খানাপিনা।  অতপর হোটেলে প্রত্যার্বতন। নিশ্চিত ঘুম পাবে। রাতের খাবার ১০ টায়। বুফে। শেষ করে  অবকাশের পেছনে টিলার ওপর  চেয়ার শুইয়া পড়া।  যতক্ষন ইচ্ছা থাকার পর রুমে ফেরা। ১১ টার পর ফিরলে দেখা যাবে জোনাক বাত্তির মত বাথরুমের সামনে লাইট জ্বলছে। বাকি সব বন্ধ!

দে ঘুম।

ভোরে রিসোর্টের বারান্দা থেকেই দেখা যাবে সূর্যোদয়। নীল সমুদ্রের বুক ভেঙ্গে উঠে আসছে অসাধারণ এক সূর্য! অসাধারণ।  রুমে ফিরে সকালের নাশতা। তবে পরাটা খাবার জন্য আমাদের হাছন রেস্তোরায় বিশিষ্ট পাঁচক ছিদ্দিকের দর্শন  লাগবে।  ডিম খিচুড়ি হলে রিসোর্টেই।

সকাল ৯ টা।  এখন সময় জলে ভেজার।  ছুটো তবে  প্রাসাদের বিচে।  পাক্কা তিন ঘণ্টা।  জল ছেড়ে উঠে সেনট্টমার্টিনের  ডাবের জলপান। এটি অবশ্য পুরো তিনদিনই চলবে! সাড়ে ১২ টায় প্রসাদ বিচ থেকে ফেরা। রিসোর্টে ফিরতে ইচ্ছে না করলেও ফিরতে হবে।  দুপুর ১ টায় আবার মাছি ভন ভন রেস্তোরায় সুস্বাদু খাবার!

দুপুর দেড়টা। ছুটো এবার ঘাটে।  স্টার্ট নেবে  ট্রলার কিম্বা  স্পিড বোট। গন্তব্য ছেঁড়া দ্বীপ। চোখ জুড়িয়ে যাবে, মন খারাপ হবে, এত সুন্দর একটা জায়গা কেন বার বার দেখতে আসি না। আরো মন খারাপ হবে, মাত্র দু’ঘণ্টা থাকবো বলে।  সূর্যটা ডুবে যাবে যাবে করবে, আমরা ফিরবো ট্রলার কিম্বা স্পিড বোটে।

সন্ধ্যা ৭ টা, রিসোর্টে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফের অবকাশ বিচে। সেন্টমার্টিনের ডাবের স্বাদ গ্রহণ, রাতে মুরগি পোড়ানোর ! এন্তেজাম। তবে ফার্মের মুরগি!  তার সাথে হালকা খাবার। না ঘুমিয়ে বিচে। ভোরের আগে  হোটেলে ফেরা। ঘুৃম হবে ৬ ঘণ্টা।

সকালে  অবকাশ বিচে- বাবুদের সাথে জলে ভেজা। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বিচে। ১ টার মধ্যে রেড়ি। দেড়াটায় খাবার। আড়াইটার মধ্যে শিপে সিট বুঝে নেয়া। তিনটায় গুড বাই সেন্টমার্টিন, বাজছে ভেঁপু, মনে হবে আর একটা দিন থাকলে কী হতো। ততক্ষণে মাঝ সমুদ্রে জাহাজ। ফিরবো- টেকনাফ। নেমে চা, পুরি,কিছু একটা পেটে দিয়ে বাসে আসন গেঁড়ে বসা।

চলছে গাড়ি-যাত্রাবাড়ি। পর দিন সকাল সহিহ সালামতে ঢাকায় পৌঁছানোর ইচ্ছে। আবার সেই ব্যস্ততা, কর্মকান্ত সময়।  


পরামর্শ:

ট্যুরে যাবার সময় সঙ্গে নিবেন-
ঢিলেঢালা পোশাক, নিয়মিত খান এ রকম ওষুধ, শীতের কাপড়, টুথপেস্ট-ব্রাশ, চিরুনি, কেডস, সেন্ডেল, জিনস প্যান্ট, শর্ট প্যান্ট, টি শার্ট, ক্যামেরা, ব্যাটারি ও টর্চ লাইট ইত্যাদি।
নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।

দ্রষ্টব্য: এইটা facebook.com/touristplusbd বানানো একটা ফরমেট।

নির্ভার হতে চাইছি-কত শত বার

চোখের জলে তোমার হাতটা ভিজিয়ে 
নির্ভার হতে চাইছি-কত শত বার

কিছু ভুলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করে
পারিনি

তোমার ওদার্যে মুগ্ধ আমি, কৃতজ্ঞ 

আমার সাথে একবেলা খাবে বলে আগে থেকে বসে থাকো 
টেবিলে এটা ওটা নাড়াচাড়া করো
ডাক দাও, ‌'বেলা অনেক হলো, খেতে বোস।'

এভাবে কত দিন, অনেক দিন
তবুও বলা হয় না -বাবা তোমায়, ভালোবাসি।।

বঙ্গবন্ধু, সাংস্কৃতিক পরাধীনতা, আম জনতা এবং একটি কৌতুক!


একজন মানুষ পুরো উপমহাদেশের মানচিত্র বদলের তিনটি ধাপের আন্দোলন সৈনিক, তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু। তাকে নিয়ে রাজনীতি হয়, তার প্রশংসা করে নিজের অপরাধ ঢাকেন কেউ। কেউ তাকে ফেরি করে চান্দাবাজি টেন্ডারবাজি করেন। সে সব কথা বাদ দিয়ে আমি ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ তুলতে চাই। সেটি প্রাসঙ্গিকও বটে। 

গত বিষুদবারে আমাদের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম আলো আলো দুর্দান্ত এক কনসার্ট হলো। সেই কনসার্টে আমাদের শিল্পীরা ছিল অচ্যুত। এ নিয়ে এবি মঞ্চেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার ফেসবুকে পেজে দেখলাম পরের জন্মে তার বিদেশী হয়ে জন্মানোর ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন।

ডিজিটাল দুনিয়াতে সে দিনের কনসার্ট নিয়ে ব্যাপক আলাপ চলছে। এ নিয়ে নানা রকমের গেম হচ্ছে। এর মধ্যে যখন লিখছি, তখন সময়ের চাকা আমাকের ১৭ মার্চে নিয়ে গেলো। শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু। আল্লাহ আপনাকে পরকালীন জীবনে শান্তিতে রাখুন।

ডিজিটাল মিডিয়াতে দেখলাম, আমাদের নাই, তাই বিদেশ থেকে হায়ার করলে কোনো দোষ নাই টাইপের কথা বার্তা। এ নিয়ে অনেক যুক্তি। তর্ক।

সাত মার্চে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, তোমাদের যার যা আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। তবুও বাংলার মানুষকে  মুক্ত করে ছাড়বো... ইনশাল্লাহ।

এ রকম অনুপ্রেরণা দেয়া দ্বিতীয় কথাটি দ্বিতীয় কোনো রাজনীতিক বলতে পারেননি। এখানে তিনি অনন্য-সাধারণ। তার এ কথার মর্ম আমরা বুঝিনি। অথবা বুঝেও এড়িয়ে যাচ্ছি।

সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের ওপর ঝেঁকে বসে নাই, আমাদের রক্তের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নির্মম সত্যটা উপলব্ধি করার বদলে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে তারে আমরা সন্দেহ করি।

স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরের এ সময়ে আমাদের অনেক কিছু করার ছিল, আমরা করিনি। সে জ্ঞান কাউকে দিতে হবে না। এটা সবাই জানেন।

আমি কেবল বঙ্গবন্ধুর কথা ফিরে আসছি- বঙ্গবন্ধু কিন্তু একবারো বলেননি, পাকিস্তানিরা ট্যাঙ্ক, গোলাবারুদ নিয়া আসবো, জাহাজে করে অস্ত্র নিয়া আসবো, তোমরা সেই সব ঠেকানোর জন্য ততোধিক শক্তিশালী অস্ত্র সংগ্রহ করো।(গোপনেও বলেছেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না।) তিনি আমাদের ভেতরের শক্তিতে জাগিয়ে দিয়েছেন, আমরা লড়েছি, দেশ স্বাধীন হয়েছে।

আসলে আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি। আমাদের রক্তে বইছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন নিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ যাওয়া মানুষের রক্ত। আমরা কোনোভাবেই নিজেদের সাংস্কৃতিক পরাধীনতা মেনে নিতে পারি না। সেটা যে কোনো ফরমেটেই হতে পারে। তাই প্রতিরোধের সময় এখনই।

শেষে একটা কৌতুক শুনাই-

এক ভদ্রলোক বুড়ো বয়সে অল্প বয়সি এক মাইয়া বিয়া করছে। কিন্তু কন্যার যৌবনজ্বালা মিটাইতে পারে না। কন্যার খালি গরম লাগে।

ভদ্রলোক একটা হাত পাখা নিয়ে আসলেন। কন্যার গরম কমে না।

ভদ্রলোক পাখাঅলা লোককে বললেন, কী পাখা দাও তুমার চাচীর গরম কমে না। এবার পাখাঅলার বুদ্ধিতে একটা জুয়ান ছোকরাকে ভাড়া করে আনা হলো, ছোকরা বাতাস করে ভদ্রলোক তার বউয়ের যৌবনজ্বালা মিটাইবার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে বাতাস করা জুয়ানপুলারে কইলো তুই চেষ্টা কর.... জুয়ান পুলা শুরু করলো....কন্যার রাগমোচন হচ্ছে। সব ঠাণ্ডা হয়ে আসছে, আর বুড়ো ভদ্রলোক বলছে দেখলে ছোকরা ক্যামনে বাতাস করতে অয়! আমাদের কি সেই অবস্থা!

আমরা কি ওই বুড়ো ভদ্রলোকের মত করবো, নাকি আমরা আমাদের মানসিকতা ঠিক করবো!

তবে বিসিবি কর্মকর্তাদের বিচি নাই!

শীলার জওয়ানি, মল্লিকার নাভি, ক্যাটরিনার পিঠ,দীপিকার বুক কিম্বা সানি লিওনের উদোম শরীর লইয়া আমাদের যে অতি উচ্চ আগ্রহ এবং ওপেনে গোপনে উপভোগ- সেখানে বিসিবিরে ফেরশেতা মনে করণের কোনো কারণ নাই। তারা আমগো পালস বোঝে- তাই তো লইয়া আইছে এক দঙ্গল।

কনসার্টের ৭ দিন আগেই টিকিটি শেষ। এক বন্ধু গ্রে থেকে টিকিট কিনতে চাইছে, সেখানে ২ হাজার টাকা টিকিট ৫ হাজার ট্যাকা চায়। আবার কয় ম্যানেজ করণ খুব কষ্ট!

তবে বিসিবি কর্মকর্তাদের বিচি নাই। এটা নিশ্চিত। নইলে মূল অনুষ্ঠানের আগে ক্যামেনে দেশশিয় শিল্পীদের গান গাওয়ার পর্ব শেষ করা অয়, বুঝলাম না। দু' পক্ষের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থাটাও মেনে নিতে পারলাম না।

কলকাতার সিনেমা টান দেখছিলাম, সেখানে জলবেশ্যার এক ‌'মাসি' সুন্দরীর খুব প্রশংসা করছিলেন। বলছিলেন, সুন্দরী আছে বইলা 'খইদ্দের পাও'। আমাগো মনে লয় একই হাল। ইনডিয়ানরা দয়া করে বইলা আমরা বাঁইচা আছি!
নইলে আমরা ক্যান সব কিছু খুইলা দিমু, ইনডিয়া কি আমাগো বাপ।

হ বাপই তো!


ক'দিন আগে ইনডিয়া সিনামা বানাইলো গুন্ডে। সেইখানে বাংলাদেশের ইতিহাসের ইজ্জত মারছে। তারপরেও আমরা তাদের খুব ইজ্জত দিলাম। নিজের কাপর খুলইয়া তাগোরে সোন্দর কইরলাম। পুরা মঞ্চ প্রস্তুত করলাম তাগোর জন্য। স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষ। টিভি সেটের ওপর থেকে কারো চোখ সরে না।

তাইলে আমগো ... মারবো না তো, থুইয়া দিবো।

আমাগো য়ৌবন জ্বালা আর হিন্দি প্রেম দেইখা তো মনে লয়, পাকিস্তানিরাও যদি একই রকম হইতো আমরা তাগোও এ রকমই চাটতাম! যে রকম অগো কিরকেট দেইখা এইখানকার কিছু লোক পাগল অইয়া যায়!

আমারা ভানার অতীত বাংলাদেশের খেরার মাঠে ক্যামনে পাকিস্তানি ও হিন্দুস্তানি পতাকা ওড়ে। ক্যামনে সম্ভব। এইটা ক্যামনে আমরা মানি।

অবশ্য আমগোরে চেতনার আফিম খাওয়াইছে সরকার। বিভক্ত অইয়া আমরা একে অন্যের গুষ্টি উদ্ধার করি। কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে এক অইতে পারি না।

তিস্তার বুক খাঁ খাঁ করতাছে, আমরা এ আর রহমানের সুর সুধায় মগ্ন। ভারতীয় চিকনাই ঝরানোর কচি মাইয়া গো রান দেখনের লাইগা হা কইরা স্টেডিয়ামে বইসা গেছি। ৭৫ হা্জার টাকায় টিকি কিনছি। কিন্তু বাংলাদেশি শিল্পীদের গানের অনুষ্ঠানে টাকা খরচা করতে গেলে কইলজা ফাইট্টা যায়।

আহারে মানুষ। আহা ভোগ।

সম্বাদিক, উকিল ও বিচারালয় লইয়া আম পাব্লিকের বিনুদন



সম্বাদিক গো লইয়া আইনজীবী ও বিচারপতিরা যে মজা লুটলো, আম জনতা তা দেইখা ব্যাপক বিনুদন পাইলো। গত কয়দিন ধইরা টান টান উত্তেজনা, তয় সিনেমার না, কুকামের!

সুশীল গো কোনো বিবৃতি দেইখলাম না। সরকার ও বিরোধি পক্ষেরও না। সবাই মনে লয় সম্বাদিক  আদালত পাড়ায় নিয়া খুব মজা লইলো। আর মনে মনে কইলো- পাইছ মাম্মা!  কিন্তু কি পাইবো, সব তো ধান্ধাবাজ।

কিন্তুক ধরেন কাইলকা কোনো মুন্ত্রি, সাবেক মুন্ত্রি  কিম্বা প্রতাপশালী কারো বিচি আটকা পরলো- সঙ্গে সঙ্গে ফোনাইবো- হ্যালো... অনেক দিন দ্যাখা নাই। আসো না, একটু গল্প করি, চা খাই! তারপর  বুক থাপড়ায়া মনের কতা কইবো, শেষ কালে হাতটা চাইপা কইবো, তুমারে খুব বালা জানি, আমার লাইগা এ রিপুর্টটা এট্টু কইরা দাও!

সম্বাদিকরা এই রিকুয়েস্টটা ফালাইতে পারবনা, যত্ত খারাপই হোক না ক্যান,পারবো না। কইরা দিবো একটা রিপুট।

এই মানবিক দিকটা এখনো রহিত হয় নাই, সম্বাদিক গো। তয়  তাদেরও  মানুষ না অইয়া উকিল অওন দরকার।

রোক মামার কতা কই। মাত্র আইনজীবি সমুতির সভাপতি অইছে। ২০০২ বা ০৩ সালের দিকে। বাংলামোটরে চেম্বারে। নিউজটা ধরাইবার লাইগা কয়বার ফুন করছে, শেষ নাই। আইজ এ সভা, কাইল ওই সভা, এট্টু কভারেজ লাগবো। দিছে, সম্বাদিকরা। কিন্তু রোকন মামা খুব মাইন্ড খা্ইছে।  ক্যান খাইছে  জানি না।

মনে লয়, তার বাড়া ভাতে ছাই দিছে কেউ! নইলে বয়স হইছে তো, তাই এট্টু প্রবলেম চলতাছে।

এ বিষয়ে তসলিমা খালা (তসলিমা নাসরিন) ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবো।

নষ্ট রাজনীতির কবলে উকিল ও বিচারক



নষ্ট রাজনীতির কবলে উকিল ও বিচারক

জগতে দুই জায়গায় একই রকম দৃশ্য চোখে পড়ছে- একটা হইলো ' মাগি পাড়া' আরেকটা 'উকিল পাড়া'! দরদাম, হাঁকডাক, কুৎসিক কথা বার্তা, নারীর শরীর উপভোগের চেষ্টা- সবই এখানে হয়। হলফ করে বলছি  হয়।

তবে কিছু ব্যাতিক্রম তো অবশ্যই আছে! তাদের কাতারে ব্যারিস্টার রোকনকে মনে করতাম। চূড়ান্ত বিচারে সেটি তিনি  টেকাতে পারেননি।

একজন নারী বিচার প্রার্থী সেদিন বলছিলেন, এক আইনজীবীর চেম্বারে বসেছিলেন। কথা বলার এক ফাঁকে কারেন্ট চলে গেলে তার ভাষায় 'দুইটাকার উকিল' তার শরীর খামছে ধরেছিল।

এ রকম অভিজ্ঞতা কম মানুষের না।

আর দিনের পর দিন বিচারের প্রার্থনা, বটতলার উকিলদের বিচারক হওয়া, অবৈধ সম্পদ অর্জন, দলীয় আনুগত্য এবং 'আমাদের লোক' হিসাবে পরিচয় দিতে সুরার টেবিলে গর্ববোধ করা লোকরা তো চেনা।

উনারা এখন সম্বাদিকগো সবক দিতাছেন। খুব মজা লইতাছেন।  কিন্তু বিচি আটকা পড়লে সম্বাদিকগো কাছে ছুইটা আসেন। তয় সম্বাদিকরা উনাগো মতন না, বিপদে পড়লে হাতড়াইয়া ওঠান। সমবেদনা জানান। পারলে দুইচারটা রিপোর্ট কইরা উদ্ধার করেন।

আমার ওকালতি করবার কোনো দরকার নাই যে সব সম্বাদিক ভালো। কোনো কালেই এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে কেউ যদি টাকার বিনিময়ে খবর করেন, তাকে সবাই নিন্দা করেন, নিজের কমিউনিটিতেই তারা ঘৃণিত হন।

 কিন্তু মাগি পাড়া, উকিল পাড়া কিম্বা বিচারালয়ে এমনটা হয় না!

আসলে সবখানে নষ্ট রাজনীতি! এ রাজনীতি আমাদের জীবন সম্মান এবং নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে- প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্তে।

সাত মার্চ, বন্দুকযুদ্ধ ও একজন বঙ্গবন্ধু

টেপ রিকর্ডার বাজিয়ে আমি অবাক এবং বিস্মাভিভূত হয়ে এক মহান রাজনীতিকের দরাজ কণ্ঠের বক্তব্য শুনেছি। তিনি বঙ্গবন্ধু ।  তার অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার কারণে তার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা।

জাতি হিসাবে আমাদের অহঙ্কার তার মত একজন রাজনীতিবিদের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশ রচনার সুযোগ আমরা পেয়েছি।

কিন্তু আমরা কি তার কথা গুলো অনুসরণ করি। তিনি সারাজীবন যা আমাদের বলেছেন, তার সবই অনুসরণযোগ্য।  এটা দল হিসাবে কেবল আম্লীগ চর্চা করবে তা নয়, সবারই এর চর্চা থাকাটা জরুরী।
আজ ৭ মার্চ। রাজধাণীর যে প্রান্তেই যাচ্ছিলাম, সেখানে কানে আসছিল... ভায়েরা আমার..। উদার দিল এক মহান নেতার  ভালোবাসার সম্বোধন।

স্বাধীনতা অর্জনের এতগুলো বছর পরে যখন আমরা তার বক্তব্য শুনছি, উদ্দীপ্ত হচ্ছি। সে সময় তার নিজের দলের সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু তারা দেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কঠিন ও ভয়াবহভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।

শাহবাগ থেকে বাসায় ফিরছিলাম, কানে বাজছিলো বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা... 'কী পেলাম আমরা? জামার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্র“র আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরীব-দুঃখী নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে- তার বুকের ওপরে হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু- আমরা বাঙালীরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ' (বক্তৃতার শব্দমালা ঠিক রাখার জন্য ইউকির হেল্প নিছি) ।

কথাটা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং এখনো সত্য। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বন্দুকযুদ্ধ চলছে। আমার মনে হয় সরকার একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন- সেটি হলো কাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে, আর কাকে এরশাদের মত  মানসিকভাবে  বিপর্যস্ত করতে হবে আর কাদের মেরে ফেলতে হবে তার জণ্য মাবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান  ড. মিজান কিম্বা সিইসি রকিবের জন্য  উচ্চ স্তরের  গৃহপালিত লোক দিয়ে একটা কমিশন করতে পারেন। তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট বানানোর পর  তা দ্রুত কার্যকর করে জাতিকে আতঙ্ক মুক্ত করবেন!

তাহলে যেটা হয় তাহলো আইন ব্যবসায়ীদের থাবা আর  বিচারপতিদের পেছনে সরকারি খরচা বাঁচে। এত টাই হয়তো বাঁচবে যে, একটা পদ্মা সেতু হতে পারে!!!

বঙ্গবন্ধু আমাদের ক্ষমা করুণ, আমরা আপনার কথামালা চর্চা করতে পারছি না।  পারবো বলেও মনে হয় না।  আমরা এখন ক্ষমতায় অন্ধ! ক্ষমা করুণ বঙ্গবন্ধু।

ফেসবুক: কামকলা ও কামাগুন!

ফেসবুকের পাতায় অনেকের অনেক রকম ছবি দেখি। এক সময় বাংলা সিনেমার পোস্টমর্টেম লিখতাম। এখন সেটা করা হয় না। ফেসবুকের ছবি নিয়া ক'টা কথা বাধ্য হয়ে লিখছি।  বিষয়টা আমার কাছে সুরুচির মনে হয়নি বলে বলা।

সাধারণত কামকলা, কামাগুন এবং নারীর ঝলসানো রূপের বন্দনা করা কবি-সাহিত্যিকরে অভাব নাই। তার ওপর এ সব নিয়ে অনেক পুস্তক রচিত হয়েছে।

আমার পড়া এ রকম পুস্তিকার মধ্যে সবচেয়ে নোংরা  গল্প হলো-সৈয়দ শাসুল হকের বাজার সুন্দুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে যোদ্ধাদের হাতে পাওয়া এক কিশোরীকে নিয়ে সেই গল্প। নোংরা মানোবৃত্তির এ গল্পটা শিল্পগুণ বর্জিত।

তবে একই লেখকের বাবর আলি খারাপ না। যদিও বাবর আলা নাকি সৈয়দ হক নিজেই, এমন অভিযোগ আমার নয়, প্রমাণ সহ হাজির করেছিলেন তসলিমা নাসরীন। তার একটা বইয়ে।

কামকলা ও কামাগুন নিয়ে আল মাহমুদও কম যান না। তার জলবেশ্যা এবং পানকৌড়ির রক্ত মুগ্ধ করার মত। তবে পাতার শিহরণ আমাকে টানতে পারেনি। সেখানে গৃহকর্মীর শরেরে বর্ণণাটা এক্কেবারেই নোংরা!

এ সব কথা কেন বলছি, বলছি আগে গল্পে পড়তাম, সিনেমায় দেখতাম, এখন ফেসবুকে দেখি।   অনেকের ছবি দেখা যায়। এ সব ছবি কোন অংশে বাংলা সিনেমার  অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত  নায়িকা বা নায়কদের চেয়ে কম নয়।

মাসখানেক আগে আমার  হোমে একটা পিকচার হাজির,  তাকে আমি চিনি। তিনি একজন রক্ষনশীল চিকিৎসক। কিন্তু থাইল্যান্ডে গিয়ে হাফ প্যান্ট পরে ছবি তুলে সেটি আবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।  একই ভদ্র-বিবাহিত বালিকার  আরেকটি ছবি দেখলাম তার বর-প্রেমিককে চুমু খাচ্ছেন। সেই ছবি পোস্ট করতে।

তা না হয় মানলাম, তিনি কর্পোরেট চিকিৎসক, বড় লোকের কন্যা, তাদের কালচারটা এমন হয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু স্কুৃল মাস্টারের কন্যার পিঠ উদোম করা ছবিটাও কি মানতে হবে। হিন্দি সিনেমার নায়িকার মত পোস দেয়া এমন ছবি না হয় মানলামই। কলেজ পড়ুয়া মেয়ের বয় ফ্রেন্ডের সাথে রাত পোশাকের ছবিটিও ভালো লাগবে? কিম্বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকার গলার হার, কানের দুল, বাহু কিম্বা আরো কিছুৃ দেখানোর প্রবণতা কি মানতে হবে!

তবে এ সব অভ্যস্ততার ব্যাপার বলে অনেকে মানেন। মানতে চান। আবার অনেকে এ সবকে ভয় পান। এটা নিয়ে কথা বললে, পাছে লোকে জামায়াত বা হেফাজত বলে। আমার সেই ভয় টা নাই।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে  কিছু বিষয় গোপন রাখার পক্ষে, অন্তত ফেসবুকের মত বাজারে তোলার পক্ষে নই। এটা আমি না চাইলেও উঠবে। তবে যারা ওঠান তাদের চোখে যদি লেকাটা পড়ে এবং তারা সচেতন হন তাহলে  খুবই কুশি হবো।

আমার খুশি হবার চেয়ে আপনার নিরাপত্তাটা জরুরী।  ফেসবুকে বাংলাদেশের মেয়েদের নিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু পেজ চোখে পড়ে, যেখানে ফেসবুকে এ সব ছবি  আপ করা হয়, বিকৃত বর্ণণায়।

কেউ না খেয়ে নেই, কিন্তু কীভাবে খাচ্ছেন!

'না খেয়ে কেউ থাকছে না।' কথাটা অনেকদিন ধরে শুনছি। কিন্তু কীভাবে খাচ্ছে মানুষ। সে খবরটা কি আমরা কেউ নিয়ে থাকি! নাগরিক হিসাবে আমরা আমাদের যাপিত জীবনের ক্ষুধার কষ্ট অনেকটা কমিয়ে এনেছি। এটা নিয়ে দ্বিমত করার কিছু নাই।
এর কৃতিত্বটা কার। সরকারের? এনজিও এর। আমি এটা মানতে চাইনি কখনো, এখনো না। আমাদের দেশের মানুষ নিজেদের চেষ্টায় এগিয়েছে। সামনেও এগুবে।
এখানে রাজনীতি বরং একটা বড় বাধা। রাজনীতিকর গুণ্ডা পোষেন, তাদের জন্য যে চান্দা ওঠে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শোধ করতে হয় আম জনতাকে।
তবুও মানুষ অদম্য। মানুষের এই এগিয়ে যাওয়াটাকে আমি সম্মান করি। ধারণ করি এবং নিজেও চেষ্টা করি।
ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর জন্য অনেকে অনেক রকম পথ বেছে নেন। একজন মানুষের যে রকম বেতন কড়ি পাওয়ার কথা সে রকম পান না। আবার পেলেও আবার কেউ স্বভাবগতভাবে আরো পাবার লোভে সমাজে একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেন।
চূড়ান্ত বিচারে সৎ মানুষরাই এগিয়ে থাকেন। সে সততা কেবল কথার নয় কাজের সততা। তবে সমাজের ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতা সততার সাথে চলা মানুষের জীবন যাপনকে কঠিন করে তুলেছে।
সাভারের একটা মেয়ে সেলাইয়ের কাজ করে। যে টাকা সে পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। সবার মত তার মনেও আকু পাকু করে ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক, ক্রিম মাখার। একটা কারুকাজ করা জামা পড়ার শখ তারো। কিন্তু বাবা মা নিয়ে যেখানে খাবার জোটানোর সংগ্রাম, খাবার জোটেনা ঠিকমত, সেখানে সে অসহায়। কেবল তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করতে মেয়েটা লড়ে, ইচ্ছের বিরুদ্ধে লড়ে।
নেটওয়ার্কে ধরা পড়ে মেয়েটা। অথবা ধরা দেয়। সপ্তাহে একদিন করে খদ্দের সামলায়। তার শরীরের স্বাদ নিতে ছোটেন উঠতি পয়সাঅলারা।
তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- ক্যান এ সব করো। সোজা সাপ্টা উত্তর নগরে দু মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য।
মতিয়া আপা এভাবে না খাওয়ার জন্যবিক্রি হয়ে যাওয়া নারীর সংখ্যা কম নয়। সমাজতন্ত্র এক সময় আপনার প্রচার মন্ত্র ছিল। এখন কি আছে। সমাজতন্ত্র মানুষকে মানবিক করে। কিন্তু আপনি কৃষি মন্ত্রী, আপনি বলছেন, মানুষ না খেযে থাকছে না। এ ভাবে কারো কারো শরীর বেচে খাবার যোগাড় করাকে কি বলে। আমি জানি না।
কেবল পৃথিবীর আদিম পেশা বলে আমরা এটাকে কবুল করি। কিন্তু এ মানুষগুলোর জন্য আমরা ভাবি না। যারা অভাবে এবং স্বভাবে এ সঙ্কট সময় পার করছেন। তাদের পাশে দাঁড়ান। কারো দরকার ভাত, কারো চিকিৎসা। বলছি না কালই সব মানুষের সমস্যা সমাধান করে ফেলবেন। শুরুটা করেন না। বদলাবে সবাই।

বিডিআর বিদ্রোহ ও গণমাধ্যম

অন্য দশটা সকালের মতই ঘুম থেকে উঠেছিলাম। মোহাম্মদপুরে থাকতাম তখন। বাসা থেকে বের হবো- এমন সময় মিল্টন ফোন করলো। বললাম, কিরে এত্ত দিন পরে মনে পড়লো।

গোপালগঞ্জের এই পোলাটা আমার মেস মেট ছিল। এক সাথে পুরাণ ঢাকার ললিত মোহন দাস লেনে থাকতাম। দুর্দান্ত আড্ডা আর প্রতি শুক্রবারে বিডিআর সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখার সে সব দুর্লভ অনন্দঘন দিন ছিল আমাদের। কিন্তু সংসারী হবার কারণে সে দিকে যাওয়া হয় না। মিল্টন বলল, ভাই বিডিআরের ভিতরে দুই গ্রুপে গোলাগুলি চলছে। অনেক গ্যাঞ্জাম।

আমি অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোর বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেখানে বিডিআর আইলো ক্যামেনে। ও বলল আরে ভাই ও খানে না। আজিমপুরে। আমার ভুল ভাঙলো। ঘর ছেড়ে বের হলাম। সংসদ ভবনের কোনায় আসতে গুলি আওয়াজ পেলাম। দিন বাড়ছে, টিভি সম্প্রচার চলছে। এভাবে দেখতে থাকলাম, শুনতে থাকলাম এবং একটা সময় ওই এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ।

ঘটনার অনেক নাটুকে মোড়ের পর জানা গেলো অনেক সেনা কর্মকর্তার লাশ ম্যান হোলের ভেতর ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ের সাথে চলে গেছে বুড়িগঙ্গায়। পুলিশ লাশ গুনছে। ডিএডি তৌহিদ বৈঠক করছে। আমরা উদ্বিগ্ন। উৎকণ্ঠিত। কিন্তু দোয়া দরুদ পড়া ছাড়া আমাদের আর কিচ্ছু করার নাই!

সন্ধ্যার দিকে আমাদের ক্যাম্পাসের এক ছোট বোন জানালো তার দুলাভাইও নিহত হয়েছেন। আমি খুবই শকড হলাম। নিহত সেনা কর্মকর্তার একটা অটিস্টিক বাচ্চা আছে। আমার এত খারাপ লাগলো, বলে বোঝানো যাবে না। এমনিতেই এত মানুষ মারা গেলো, তার মধ্যে অটিস্টিক একটা বাচ্চার বাবাও। আমি অনেকক্ষন চুপ করে রলাম। একজন অসহায় মানুষের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিই বা করার থাকতে পারে। ফোনটা নামিয়ে রেখে ভাবছিলাম, বেঁচে থাকটাই মনে হয় মিরাকল!

আজ 25 February বিডিআর বিদ্রোহের সেই অভিশপ্ত দিন। কি নির্মম, বিভৎস দিনটি ছিল। সেটি প্রতি বছর ফিরে আসে। ফিরে আসবে। আমরা না চাইলেও।

আমি বিডিআরের দোকানের খদ্দের ছিলাম। চাল ডাল, আটা কিনতাম। তাদের নিজস্ব আউটলেট থেকে। যেটাকে বিডিআর বিদ্রোহের একটা কারণ মনে করা হয়। ১/১১ এর পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় ‌'ডক্টরস ক্লাব' মানে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানুষকে কম মূল্যে খাওয়ানের জন্য ডাল ভাত কর্মসূচী জোরদার করেছিল।

সেখান থেকে নাকি এ রকম একটা বিদ্রোহ। আমি অবশ্য ইংরেজি জানি না। এত্ত বড় একটা ঘটনা থেকে আমার একটা অর্জন হলো আমি দুটো ইংরেজি শব্দ 'মিউটিনি' ও 'রিভেল হান্ট ' শিখলাম! এ শব্দ দুটোর অনেক ক্যারিকেচার এবং পর্দার অন্তরালের দৃশ্য সম্পর্কে জানতে পারলাম না। পারবোও না।

ঘটনার পর আমার সে সময়কার কর্মস্থল থেকে একজন ক্ষুদ্র ও গোনার বাইরের সম্বাদিক হিসাবে আমাকে বিষয়টা নিযে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছিল। আমি তা করিনি। করিনি- একেবারেই সচেনতন ভাবে। কারণ এ নিয়ে তদন্ত করার আগে সরকার, বিরোধী দল একে অন্যকে দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। এখান কে কত ফায়দা তুলবেন সে পরিকল্পনা চূড়ান্ত এবং গণ মাধ্যম এ সব ভালো ট্রিটমেন্টে প্রচার করে যাচ্ছে।

সেখানে আমার অনুসন্ধানের দরকার কি। আবার আমার অনুসন্ধান যদি ক্ষমাতাবানদের বিপক্ষে যায়, সেখানে আমরা মত চুনোপুটি সম্বাদিকের টিকে থাকা মুশকিল। আমি অতিকায় হস্তি নই, তেলাপোকার থিওরিতে বিশ্বাসী। হস্তি হয়ে লোপ পাওয়ার চেয়ে, তেলাপোকা হিসাবে টিকে থাকা ভালো। আমি কথিত মহান এবং মহৎ কোনো কালেই হতে চাইনি, এখনো চাই না।

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার আসল ছবি আমরা এখনো দেখিনি। দেখার ভাগ্য আমাদের হবে না। কারণ লরেন্স লিফশুলৎজরা নিজস্ব অ্যাজেন্ডার বাইরে এ সব নিয়ে অনুসন্ধান করবেন না, বা করেন না। বা করতে পারেন না।

আর বাংলাদেশ থেকে যে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে যারা খবর পরিবেশন করেন, যাদের কাছে আমরা নিরপেক্ষ সংবাদের আশা করি, তাদের ব্যাক্তিগতভাবেই জানি, তারা বিশেষ দলের প্রতি নিজ থেকে অনুগত। এ আনুগত্য জাতি হিসাবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। সত্য প্রকাশে সবচেয়ে বড় বাধার। তবুও মবিলে ভাজা জিলাপি হজম করতে পারলে, এ টুকু না করতে পারার কোনো কারণ দেখি না।

তাই আপাত কোনো আশা নেই। আশার দরকারও নেই। কেবল বিডিআর সদস্যদের হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবার ঘটনা আমাকে বিব্রত করেছে। আসলে বিচার প্রার্থীরা এখানে কতটা অসহায় এবং দলান্ধরা এখানকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মোসাহেব হিসাবে প্রমাণে কতটা ব্যস্ত, সে সব বোঝার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার নাই! কোর্টের বারান্দায় যাবার দুর্ভাগ্য হলেই সহজে জানা যায়!

দেশে ও দেশের বাইরের রাজনীতির বেশি জ্ঞান অর্জন আমি করতে চাই না। আমার সে রকম মেধাও নাই। আমি খেটে খাওয়া মুটে মুজুর। আর মুটে মুজুরের এ সব নিয়ে ভাবা ঠিক না। বাংলাদেশের চলমান সম্বাদিকতার স্বাধীনতাও ভোগ করবার সাহস আমার নাই। বরং সরকারের সাথে বুক উঁচা করে বজ্র কণ্ঠে কই 'দেশের গণ মাধ্যম স্বাধীন।' খুবই স্বাধীন এতেও যদি শেষ রক্ষা হয়। মন্দ কি।

আর সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি- সারা দিন আমি যেনো ভালো হয়ে চলি। সবাই যেনো একই রকম কথা মনে মনে বলেন। সবাইয়ের দলে যদি বিচারক আইন রক্ষী ও রাজনীতিকরা পড়েন, তাহলে আনন্দের সীমা থাকবে না।

জওহরি, ভাটি বাঙলা এবং আম জনতার জীবন

খেলাটা ভালোই জমেছে। খেলোয়াড়রা খেলবেনই। এতে আম জনতার আপত্তি করবার কিছু নাই। কিন্তু সে খেলায় যদি আম জনতার জীবন বিপন্ন হবার আশঙ্কা থাকে, তখন বিষয়টা আলাপের জায়গায়।

বলছি জওহরি না ফাওহরির অডিও ক্লিপটার কথা। বাংলাদেশে মুসলিম রাষ্ট্র। এখানে ইসলামি রাষ্ট্র না। হবার সম্ভাবনাও নাই। কারণ এখানকার ইসলামী দলগুলো আম্রিকার পোষ্য। মুসলমানিত্ব হেফাজতকারীর ভারতীয় দর্শনে আসক্ত।কারো কারো যোগাযোগ পাপিস্তানে। এ সব এখানকার মানুষ জানে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন নামীয় একটি অসাধারণ মঞ্চ নাটকের মহড়াকে আমজনতা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মেনে নিতে বাধ্য বা সচেতনভাবে মেনে নেবার পর তাদের জীবনেকে ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাওয়া আম্লীগের জন্য একটা মানবিক বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

কোনোভাবেই সন্দেহ করছি না যে, জওহরির অডিও ক্লিপটার পেছনে আম্লীগের হাত আছে। তবে আমি এটা ঠিক জওহরি বার্তা বাঙালি মুসলমানের মনের কথা হতে পারেনা।

আমি নিশ্চিত করে এটা বলতে পারি। জওহরির জেহাদে বা ইন্তিফাদায় সাড়া দেবার মত বোকা মানুষ আমরা নই। এটা এক সময় থাকতে পারতো যে সময়টা অভাব অনটন ছিল। তাও সম্ভব হতো না, কারণ ভৌগলিক কারণেও এখানটায় জঙ্গি চাষ অসম্ভব।

আমাদের পকেটে টাকা পয়সা জমেছে। মানুষ নির্বিঘ্ন, আনন্দময় এবং সম্পদ জমানোর সংগ্রামে ব্যস্ত, সেখানে জওহরির আহবান অটোমেটিক প্রত্যাখ্যাত। কারণ এখানকার মানুষ রক্তে মাংসে জঙ্গিবাদ বিরোধী। এটা জওহরি ভালোই জানার কথা। না জানলে কান পরিষ্কার করে শুনে নিতে হবে, তার খায়েশ বাস্তবায়নের লোক এ দেশে চাওয়ার সাহসটা খুবই নোংলা মনোবৃত্তি থেকে ওঠা। মনে রাখা ভালো এটা আফগানিস্তান, পাপিস্তান কিম্বা ইরাক না।

জওহরি ও আল কয়েদারা যে সব অঞ্চলে তাদের অবস্থান পোক্ত করেছে, সে সব অঞ্চল অনেক পেছনে। তারা সভ্যতার আলো বাতাস থেকে দূরে। জীবন চালাতেই কষ্ট তাদের, নারীর সাথে সময় কাটানো-খুনসুটির সময় বা সামর্থ কোথায়!

এ রকম অনগ্রসর, উগ্র গোষ্ঠীর বিস্তার ঘটে সে সব এলাকায় যারা জীবন-জীবিকা নারী সংসর্গ সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা এ সবে মোহ নেই। বাংলার হিস্ট্রি এটা প্রমাণ করেনা। সুতরাং জওহরির আহবান একটা পোক্ত ছাগলামি ছাড়া কিচ্ছু না।

কালনী নদীর তীরে শাহ আবদুল করিম গায়- গ্রামের নও জযোয়ান, হিন্দু মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম । আবার চট্টগ্রামে শেফালী ঘোষ গায়- ও রে সাম্পান অলা তুই আমারে করলি দেওয়ানা। কিম্বা কাঙালি সুফিয়া গায়- কোনবা পথে নিতাই গঞ্জ যাই।

সেই দেশে উগ্রবাদের বিস্তারে চেষ্টা হতে পারে বা হয়েছে তবে তা সফল হবার কোনো নজির কি আছে? নাই। হতে পারে না।

কেন নাই? কারণ হলো ভাটি বাঙলার এ দেশে মানুষ ধর্ম কর্মও করে, একটু আধু স্পিরিট, ছোলা মদও খায়, সাথে বিড়ি, হুঁকো কিম্বা সিগ্রেট। আবার টাকা হলে একটু নারী শরীরের স্বাদও নেয়। মদের দোকানে যায়। আবার হজের মৌসুমে সৌদি যায়। সেখানে জওহরিদের এই অডিও ক্লিপ আমাদের মত দেশের মানুষের মনন এবং মনোবৃত্তি না বুঝে ফায়দা হাসিলে সহায়তা ছাড়া অন্য কিছু না।

বাংলাদেশের মানুষ শিখছে, পড়ছে, উপার্জন করছে এবং ভালোভাবে বাঁচার লড়াই করছে। যেখানে প্রিয়জনের সঙ্গ দেবার সময় মিলছে না, সেখানে জওহরির ইসলাম উদ্ধার অভিযানে এ দেশের মানুষ ছুটবে।এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে সবার আগে নিশ্চিত হওনের কাম হলো - এ অডিও বার্তা আদৌ জওহরির নাকি । তবে আমি জওহরির বলেই বিশ্বাস করে এ সব কথা বলেছি।

একটা কথা অবশ্য মনে আছে সবার বুশের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচরে আগে ওসামা বিন লাদেনের একটা ভিডিও বার্তা নিয়ে পুরা জুজুর ভয়ে কাতর ছিল আম্রিকা। বুশ দ্বিতীয়বার নির্বাচিত।

এখন তো আম্লীগ নির্বাচিত । তারপরেও কারা এ জুজ ডাকছে। আম জনতার জীবন বিপন্ন করা কতটা যৌক্তিক, তা ভাবতে হবে। জওহরি শিষ্য থাকার অজুহাত খাড়া করে স্বাধীন বাংলার আকাশে কারা পরাশক্তির ড্রোন ওড়াতে চায়, কারা বাঙালির রক্তে লাল করতে চায় হাত! তাদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।